পর্যটকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাচু অব লিবার্টি বেশ আকর্ষণীয়। উচ্চতার সুবাদেই এটি ভ্রমণপিপাসুদের টেনে নিয়ে যায় আমেরিকায়। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, স্ট্যাচু অব লিবার্টির (৩০৫ ফুট) চেয়ে দ্বিগুণ উচ্চতার একটি মূর্তি তৈরি হলো ভারতে। অতি উচ্চ মূর্তিটি রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শামিল ছিলেন তিনি।
বুধবার (৩১ অক্টোবর) গুজরাটের নর্মদা জেলার সরদার সারোয়ার বাঁধের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর নাম রাখা হয়েছে ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’। ২০১০ সালে এটি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। মোদি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী।
মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি উল্লেখ করেন, এটি ভারতের প্রকৌশল ও কারিগরি সক্ষমতার নিদর্শন। তার কথায়, ‘ভারতকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার সাহস দেখিয়ে অমর হয়ে আছেন সরদার বল্লভভাই প্যাটেল।’
মোদি ক্ষমতাসীন বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) করলেও সরদার বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন কংগ্রেস পার্টির সদস্য। ভারতের লোকসভায় কংগ্রেস এখন বিরোধী দল। ভারতে রেকর্ডসংখ্যক উচ্চতার এই মূর্তি তৈরির জন্য তহবিল বরাদ্দ দেয় গুজরাট রাজ্য সরকার। এতে দাতা হিসেবে অংশ নিয়েছে সারা ভারতের কৃষকরা।
সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তির উচ্চতা ৫৯৭ ফুট (১৮২ মিটার)। ৭০ হাজার টনেরও বেশি সিমেন্ট, ২৪ হাজার ৫০০ টন স্টিল ও ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন তামা দিয়ে এটি গঠিত। মূর্তির ভেতরে ১৩৫ মিটার উঁচু গ্যালারি রয়েছে। পর্যটকরা সেখানে ঢুকে বাঁধ ও চারপাশের পাহাড়-পর্বতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
স্ট্যাচু অব ইউনিটির দিকে তাকালে দেখা যাবে, ‘ভারতের লৌহমানব’ হিসেবে পরিচিত সরদার প্যাটেল সাদাসিধা পোশাক পরে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তামার স্যান্ডেল পরা তার পা যেন সামনের দিকে এগোচ্ছে! বুধবার তার ১৪৩তম জন্মবার্ষিকী। তাই মূর্তি উন্মোচন করা হলো এই দিনে।
ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হতে অহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছিলেন সরদার বল্লভভাই প্যাটেল। তিনিই ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
ঔপনিবেশিক ভারতে ৫৬০টিরও বেশি স্থানে রাজার শাসন প্রথা ছিল। সেগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা ছিল সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের। এক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ায় তিনি হয়ে ওঠেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতীক।
দিল্লির শিল্প সমালোচক ও কিউরেটর গায়ত্রী সিনহা বলেন, ‘ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের দৃঢ় রাজনীতিক ছিলেন সরদার প্যাটেল। উপনিবেশবাদের পর ভারতের গৌরব ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে এই মূর্তি।’
এদিকে ভারতে এমন বিশাল আরেকটি মূর্তি তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। সপ্তদশ শতকে মহারাষ্ট্রের যোদ্ধা শিবাজিকে উৎসর্গ করে মুম্বাইয়ের উপকূলে আরব সাগরে গড়ে তোলা হচ্ছে এটি। এর উচ্চতা হবে ৬৯৬ ফুট (২১২ মিটার)। মোদির এই স্বপ্নের প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে ২০২১ সালে। সরদার প্যাটেল ছাড়া নয়াদিল্লিতে হিন্দু দেবতা হনুমানের ১০৮ ফুট উঁচু একটি মূর্তি আছে।
সূত্র: সিএনএন