X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

জমিদারি মেজাজে একদিন

সোহেলী তাহমিনা
০৬ নভেম্বর ২০১৮, ২৩:০২আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৩৫

জমিদারি মেজাজে একদিন ছোটবেলা থেকেই পুরনো জমিদারি আমলের বাড়ি বা রাজপ্রাসাদ ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে আমার। তাই একদিনে তিনটি জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখার সুযোগটা পেয়ে হাতছাড়া করলাম না। ফেসবুকে একটি গ্রুপ ইভেন্ট পোস্ট দেখে ফোন করে বিস্তারিত জেনে নিই। এর ঠিক পরদিন দেখলাম, আমার পরিচিত আরেকটি গ্রুপ একই ধরনের একটি ইভেন্ট দিয়েছে কিন্তু ভিন্ন জমিদার বাড়ি। বলাই বাহুল্য, সেখানেও কনফার্ম করে দিলাম। এভাবেই দুই দিনে টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার ছয়টি জমিদার বাড়ি চষে ফেলেছি। প্রথম দিনের গল্পটা ছোট করে বলি।

সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পর আগারগাঁওস্থ আইডিবি ভবনের সামনে থেকে বাস যাত্রা শুরু করলো। মিরপুর পৌঁছে সকালের নাশতার জন্য কিছুক্ষণ বাস থামে। তখন আয়োজকেরা সবার হাতে একটি করে খাবারের প্যাকেট আর এক বোতল পানি তুলে দেন। প্যাকেট খুলেই মনটা ভালো হয়ে গেলো— খিঁচুড়ি আর ডিম ভাজি। আমাদের পরবর্তী বিশ্রাম ছিল একেবারে আমাদের প্রথম গন্তব্যে। অবশ্য পরে জানতে পারি, সেটি ছিল বাড়তি পাওনা।

পাকুল্লা জমিদার বাড়ি
জমিদারি মেজাজে একদিন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এই জমিদার বাড়ি বেশ ছোট। সেজন্যই বোধ হয় এটা বেশি ভালো লেগেছে আমার। বাইরে লাল ইটের সঙ্গে ঝাপসা হয়ে আসা পেস্টেল রঙের জানালা-দরজার বাড়িটি প্রথম দর্শনেই প্রধান ফটক বা সদর দরজার সুবাদে মন কেড়ে নেয়। ভেতরে ঢুকতেই আকৃষ্ট করবে এর ছোট্ট উঠোন ও বাগান। সেখানে আমাদের সবার বিশেষভাবে ভালো লেগেছিল গাছের নিচে পড়ে থাকা অসংখ্য ছোট-বড় পাকা কামরাঙ্গা। একটি ছোট্ট ঘটনা শেয়ার না করলেই নয়। এর আগেও একা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকায় আত্মবিশ্বাস ছিল, খুব দ্রুতই সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যাবে। একইসঙ্গে একজন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে তা মোটেও ভাবিনি। তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালিতে বেড়ানোর সময়।

দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি
জমিদারি মেজাজে একদিন পাকুল্লা পেছনে ফেলে প্রায় আধঘণ্টার মতো সোজা রাস্তায় গিয়ে আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি। সেখানে ঢোকার পথে প্রথমেই নজর কাড়ে দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি বিশাল গাছ। এসব বৃক্ষরাজির ছায়াঢাকা পিচ ঢালা পথ প্রশান্তি এনে দেয় মনে। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে জমিদার বাড়ির সামনের ছোট্ট মসজিদ। এর কারুকাজ মনোমুগ্ধকর। মসজিদের সামনেই শানবাঁধানো পুকুর ঘাট। নির্মল হাওয়ায় আমাদের শরীর ও মন দুটোই জুড়িয়ে যায়।

জমিদারি মেজাজে একদিন একটু পেছন দিয়ে ঘুরে আমরা জমিদার বাড়ির মূল প্রাঙ্গণে ঢুকি। বিশাল সেই প্রাঙ্গণে সবাই ইচ্ছেমতো ছবি তুলতে থাকি। কড়ইসহ বেশকিছু বড় গাছের ছায়ায় বসে থেকে নাম না জানা পাখির ডাক শুনে বেশ ভালো লাগছিল। তারপর বেশ কয়েকজন মিলে প্রাচীন আমলের লোহার তৈরি ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম ছাদে। রোদে বসে চললো আমাদের ফটোসেশন ও আড্ডা।

করটিয়া জমিদার বাড়ি
জমিদারি মেজাজে একদিন টাঙ্গাইলের করটিয়ায় বিখ্যাত জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পান্নী নির্মিত এই প্রাসাদ আমাদের অনেকেরই পরিচিত। বিশেষ করে বাংলা সিনেমার সঙ্গে যাদের মোটামুটি পরিচয় আছে আর যারা বন্দুক হাতে বাড়ির সদর ব্যালকনিতে নায়ক-নায়িকার ধনী ও ক্রুদ্ধ পিতার বেরিয়ে আসার দৃশ্য দেখেছেন; তারা দেখামাত্রই এই বাড়ি চিনতে পারবেন।
জমিদারি মেজাজে একদিন আইনি জটিলতার কারণে সর্বসাধারণের প্রবেশে বাধা থাকায় লাল টুকটুকে রঙের এই প্রাসাদে ঢুকতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু নাছোড়বান্দা একদল ভ্রমণপাগল মিলে কিছুক্ষণের জন্য ঠিকই অনুমতি আদায় করে নিয়েছিলাম। আর বাড়তি পাওনা হিসবে ছিল এই প্রাসাদের দিকে ঢোকার পথে অন্য একটি বনেদি পরিবারের পারিবারিক গোরস্থান ও অত্যন্ত সৌন্দর্যমণ্ডিত ছোট্ট একটি মসজিদ দর্শন।

মহেড়া জমিদার বাড়ি
জমিদারি মেজাজে একদিন টাঙ্গাইলের নটিয়াপাড়ার মহেড়ায় চৌধুরী লজ নামে পরিচিত এই অনন্য সুন্দর সাদা ধবধবে জমিদার বাড়ি বেশ কয়েকটি প্রাসাদ নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের অধীন পুলিশ প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রথম দিনের শেষ এই গন্তব্যে পৌঁছাতে সন্ধ্যা নেমে যায়। আর ঘরে ফিরতে থাকা অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির আমাদের এই ভবনে স্বাগত জানায়। সরকারের নিয়মিত সংরক্ষণের সুবাদে আজও বাড়িটির চাকচিক্য বহাল রয়েছে। এখানে ছবি তুলতে গিয়ে বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণরত পুলিশের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।

দেলদুয়ার জমিদার বাড়ির ছাদে লেখক ব্যক্তিগত খরচ হিসেবে তিন জমিদার বাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আমার খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পুরো ট্রিপের পরিচালনায় ছিল অভিজ্ঞ ও দক্ষ ট্যুর অপারেটর। নিরাপত্তাজনিত দুশ্চিন্তার কিছুই ছিল না। কিন্তু এ ধরনের দিনব্যাপী ট্রিপের ক্ষেত্রে শারীরিক সামর্থ্যরে দিকে সচেতন থাকবেন। কারণ প্রচুর হাঁটতে হয়। সারাদিন রোদের তেজ থাকতে পারে। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন।

ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রুশ সাংবাদিক নিহত
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রুশ সাংবাদিক নিহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি