হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ পাশের ট্যাক্সিওয়ে। সেখানে অবতরণের পর হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবিসি এয়ারলাইনসের একটি আকাশযান। বিমানবন্দরে অবতরণের সময় এর ডান পাশের ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিমানে। এ ঘটনায় আহত হন ১০০ জন যাত্রী। দুর্ঘটনার প্রায় দেড় মিনিটের মাথায় ঘটনাস্থলে আসে বিমানবন্দরের ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। যাত্রীদের উদ্ধারে আসে মেডিক্যাল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স। গুরুতর আহত দুইজনকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। ওপরের পুরো ঘটনাই ছিল মহড়া। শাহজালালে বিমান দুর্ঘটনা মোকাবিলার এই অনুশীলন আয়োজন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় মহড়া। ব্যাপক তৎপরতায় পুরো অনুশীলন চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
বেবিচকের এই আয়োজনে অংশ নেয় বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। এছাড়া অংশ নেন কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও ফাস্ট এইড কর্মীরা।
বিমান দুর্ঘটনা মোকাবিলার এ মহড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনা চাই না। তবু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি হলে দ্রুত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে এই মহড়ার আয়োজন। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নিদের্শনা অনুযায়ী প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি দুই বছরে একবার জরুরি দুর্যোগ মোকাবিলার মহড়া অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী এটি অনুষ্ঠিত হলো।’
মন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান জানান, অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশনা মেনে চলা। একইসঙ্গে কোনও বিমান দুর্ঘটনা কবলিত হলে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সচেষ্ট হওয়া। তার কথায়, ‘ফায়ার ক্রুদের দক্ষতা, সচেতনতা ও পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি করাসহ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিগুলো দুর্যোগের সময় ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাই করা হয়েছে মহড়ায়। কোনও ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে তা সমাধানের মাধ্যমে সত্যিকারের দুর্যোগের সময় অনুসন্ধান ও উদ্ধার (সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ) কাজের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত থাকতে এই অনুশীলন।’
দুর্ঘটনা ঘটলে যেন সবাই সমন্বিতভাবে উদ্ধার কাজ করতে পারেন এজন্য মহড়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক। তার মন্তব্য, ‘মহড়া আর বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। তবু যেন দ্রুত আগুন নিভিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষকে উদ্ধার করা যায় সেজন্যই এই উদ্যোগ।’
মহড়া অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন বেবিচকের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর এম মোস্তাফিজুর রহমান। সার্বিক তত্ত্বাবধান কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বেবিচকের পরিচালক (প্রশাসন) একেএম নুরুন্নবী, পরিচালক (এটিএস অ্যান্ড অ্যারোড্রামস) নুরুল ইসলাম, পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, আইন কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী প্রমুখ।
ছবি: মোহাম্মদ আব্বাস আলি