X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি

তাহির মুহাম্মদ তৌকির
২০ নভেম্বর ২০১৮, ২২:৩২আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০১৮, ২২:৩৫

ভোরের আকাশে আলো ছড়িয়ে দেওয়া শুরু করেছে সূর্য। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেজে গেলো সকাল ৭টা। দ্রুত ব্যাগপত্র গুছিয়ে হোটেল থেকে চেক-আউট করলাম। রাস্তায় বেশ মানুষজন। সবাই ব্যস্ত। চারদিকে প্যাপু আর টুংটাং শব্দ। দোকানগুলোতে দিনের বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। হোটেলেও সকালের নাশতার জন্য ভিড়। যাত্রীর অপেক্ষায় সড়কের পাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে দূরপাল্লার বাস। রাস্তা দিয়ে ছুটে চলছে ট্যাক্সি, জিপ গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন। অন্যসময়ের তুলনায় ট্যাক্সিগুলো একটু বেশি ভাড়া নিচ্ছে মনে হলো। বেশ কিছুক্ষণ পর দরদাম করে একটা ট্যাক্সি পেলাম।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি দিনের ছুটোছুটি শুরু হলো। জানালায় মুখ রেখে হিম হাওয়ায় শীতল হওয়ার চেষ্টা করছি। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে ট্যাক্সি ছুটে চললো। কখনও বহুদূরের পাহাড়ি এলাকা, কখনও ঝাউবন চোখে পড়ছে। ওদিকে মেঘের আনাগোনা চলছে দূরের নীল আকাশে। ছোট ছোট বাচ্চারা ইউনিফর্ম পরে স্কুলের দিকে ছুটছে। কেউ কেউ হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানালো! সবকিছু দেখতে দেখতে গন্তব্যপানে ছুটে চললাম আমরা।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি সেদিন আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল লিভিং রুট ব্রিজ। অনেক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে এই সেতুতে যেতে হয়। জনপ্রতি ১০ রুপি করে টিকিট। সিঁড়িপথ বেশ পরিষ্কার। একটু পরপর ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ি রেখে দেওয়া আছে। সিড়িপথের দু’ধারে জাম্বুরা, পেঁপে, কলাসহ বিভিন্ন ফল নিয়ে বসে আছেন নারী দোকানিরা। এসব দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম সেতুতে।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি লিভিংরুট ব্রিজ মূলত কয়েকটি গাছ একটিকে অন্যটির শেকড়ের মাধ্যমে জড়িয়ে ধরায় সেতু সৃষ্টি হয়েছে। সুতরায় এটি একটি প্রাকৃতিক সেতু। পরিবেশ থেকেই জন্ম তার! সেতুর নিচে স্বচ্ছ শীতল পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এটি দেখে বেশ অবাক হলাম। গাছের সঙ্গে গাছের শেকড় মিলে সেতু সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারটা অসাধারণ। লোকজনও বছরের পর বছর এটি ব্যবহার করছে।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি সেতু থেকে কিছুটা দূরেই একটা ঝুপড়ি ঘর। চারপাশে গাছপালা। ঘরটিও গাছের তৈরি। প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতির বসবাস। কাছে যেতেই দেখলাম সাইনবোর্ড টানানো। তাতে লেখা— ভেতরে চা পাওয়া যায়।

সকাল থেকে তখনও পেটে তেমন কিছু পড়েনি। তাই মনে হলো, এই প্রকৃতির বুকে সকালের চা মন্দ লাগবে না। অর্ডার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই চা চলে এলো। বাঁশের বেঞ্চিতে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছি। পাশেই ঝিরিপথ দিয়ে বয়ে চলছে জলস্রোত।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি লিভিংরুট ব্রিজ ঘোরা শেষে ট্যাক্সির কাছে উঠে এলাম। সেইসঙ্গে কিনে নিলাম জাম্বুরা ও পেঁপে। ফলগুলো খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি। খেতে বেশ মজা।

ট্যাক্সিতে চড়ে নিরিবিলি পথ ও সবুজের মাঝ দিয়ে ফের চলতে শুরু করলাম। এবারের গন্তব্য মাওলিংডং ভিলেজ। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রামের খেতাব আছে এই গ্রামের। সেখানে ঢুকতে প্রবেশ ফি দিতে হলো জনপ্রতি ৫০ রুপি (সম্ভবত)।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি গ্রামে ঢুকে পুরো অবাক আমরা। সবকিছু ছবির মতো সাজানো গোছানো। কোনও হইচই বা হৈ-হুল্লোড় নেই। চারদিক পুরোপুরি শান্ত ও নিরিবিলি। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে ছোট ছোট ফুলের বাগান। রাস্তাঘাটে ময়লা-আবর্জনা নেই। আমরা পুরো গ্রাম ঘুরে দেখলাম। ততক্ষণে প্রায় দুপুর হয়ে যাওয়ায় মাওলিংডং ভিলেজেই লাঞ্চ সেরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। হোটেলে কোনও পুরুষ নেই। রাঁধুনি, ক্যাশিয়ার, ওয়েটার সবাই নারী। খাবার পরিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে সবাই মিলে বেশ আড্ডা দিচ্ছিলেন।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি লাঞ্চ সেরে আবারও ট্যাক্সিতে চেপে বসলাম। ট্যাক্সি ছুটে চললো পাহাড়ি পথে। এবার যাচ্ছি বড়হিল ফলস। শীতকাল শুরু হওয়ায় দানবাকৃতির এই ফলসে পানি কিছুটা কম থাকলেও সৌন্দর্য কমেনি খুব একটা। বহু ধাপ পেরিয়ে এই ফলসের পানি গড়িয়ে যায় বাংলাদেশে। ফলসের নিচে স্বচ্ছ পানির সুইমিং পুল! অনেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে সেখানে।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি বড়হিলের সৌন্দর্য উপভোগের পর উমেক্রাম ফলসের উদ্দেশে রওনা হলাম। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে চলছে ট্যাক্সি। পাহাড়গুলো গাছগাছালিতে ভরপুর। গাছের ওপর দিয়ে কখনও বাংলাদেশের জাফলংয়ের অংশ দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের গায়ে প্রচুর সুপারি গাছ। এ যেন সুপারির বন!

চলতে চলতে একসময় ট্যাক্সিচালক জানালেন, উমেক্রাম ফলস চলে এসেছি। মন চাইলে এই ফলসে গোসলও করতে পারি! উমেক্রাম ফলস প্রাকৃতিকভাবেই সুইমিং পুলের মতো হয়ে আছে। ফলস থেকে পানি পড়ে জমা হচ্ছে বিশাল পাথুরে সুইমিং পুলে। সেখান থেকে আবার উপচে পড়ছে নিচে। পানিগুলো স্বচ্ছ সবুজ বর্ণের। পানিতে মাছের ছুটোছুটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তর সইতে না পেরে তিনজন মিলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম প্রাকৃতিক সুইমিং পুলে। দাপাদাপি, ছবি তোলা আর সাতার কাঁটা হলো অনেকক্ষণ।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি সময় পেরিয়েছে বহু। ট্যাক্সিচালক আমাদের তাগাদা দিলেন। কারণ আমাদের সীমান্তে রেখে তিনি ফিরে যাবেন শিলং শহরে। তাই ফলস থেকে উঠে পোশাক বদলে নিতে হলো।

পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি শেষ বিকালে ট্যাক্সিচালক আমাদের নামিয়ে দিলেন ডাউকিতে। ভারতীয় ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বহু অভিজ্ঞতা আর গল্পের ঝুলি নিয়ে হেঁটে চললাম তামাবিল পোর্টের দিকে। ওই তো আমার দেশ, আমার লাল সবুজের পতাকা উড়ছে।
পথিকের ডায়েরি: শিলং থেকে ডাউকি ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা