X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
ট্রাভেলগ

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা

রবিউল ইসলাম
০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:৫৮আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:০২

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা দুবাইয়ের ফ্লাইটে ওঠার আগে থেকে মাথায় কেবল প্রশ্নটা ঘুরছে। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার ছাদে দাঁড়ালে কি আকাশছোঁয়ার অনুভূতি হয়? কে জানে! আপাতত অন্যরকম উত্তেজনার মধ্যে আছি। কয়েক ঘণ্টা বাদেই যে বুকটান করে দাঁড়িয়ে থাকা বুর্জ খলিফাকে দেখতে পারবো! এই ভবন দেখার পর মনে হলো, দুবাই শহরে এসে বুর্জ খলিফা না দেখলে পুরো ট্যুরই মাটি! তবে এর ওপরে উঠতে কিছু পয়সা খরচা করতে হবে।

বুর্জ খলিফায় ২০৬টি তলা। এর মধ্যে প্রায় ১০০ তলায় যাওয়ার টিকিটের মূল্য ১৬০ দিরহাম থেকে আড়াইশো দিরহাম পর্যন্ত (৩ হাজার ৬৮০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা)। ১৬০ তলা পর্যন্ত যেতে চাইলে অনুমতি নিয়ে আরও বেশি দিরহাম খরচ করতে হয়। বুর্জ খলিফার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনলাইনে টিকিট কেনার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তবে টাকা-পয়সা পর্যাপ্ত না থাকলেও অসুবিধে নেই, ভবনটির চারদিকের সৌন্দর্যও মুগ্ধতার আবেশ ছড়ায় মনে। বুর্জ খলিফার আশেপাশের মনোরম পরিবেশ দীর্ঘক্ষণ বিমোহিত করে রাখার মতো।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা নির্মাণের পর কয়েক বছরের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে বুর্জ খলিফা। রকেটের মতো দেখতে এই ভবন ২ হাজার ৭১৭ ফুট উঁচু। ৬০ মাইল দূর থেকেও এটি দেখা যায়। ভবনের ৭৬ তলায় রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত সুইমিং পুল। ১৫৮ তলায় আছে সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত মসজিদ। ৬ লাখ বর্গফুটের এই ভবনে একসঙ্গে ১২ হাজারেরও বেশি লোকের সমাবেশ হতে পারে। বুর্জ খলিফা ভবনে ৫৪টি লিফট আছে। এগুলো ঘণ্টায় ৪০ মাইল বেগে ছুটতে পারে।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা হোটেল আটানা থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুর্জ খলিফার উদ্দেশে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। দুবাই ইন্টার সিটি মেট্রো স্টেশন থেকে মেট্রো রেলে উঠে পড়লাম আমরা। আমাদের মেট্রো কার্ড ছিল না। দ্রুত ৫০ দিরহামের (১১৫০ টাকা) কার্ড করে নিলাম। এই শহরে বাস কিংবা মেট্রোরেলে চলতে কার্ড করে নিতে হবে। সর্বনিম্ন ১৫ দিরহামের (৮৫০ টাকা) কার্ড পাওয়া যায়। টাকা শেষ হয়ে গেলে কার্ড রিচার্জ করে নেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা আমাদের গন্তব্য বুর্জ খলিফা হলেও তার আগে দেখা হয়ে যায় দুবাই মল। এই বিপণিকেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বের নামিদামি সব ব্র্যান্ডের দোকান। মূলত দুবাই মল দিয়ে বুর্জ খলিফা ভবনে ঢোকার পথ। চাইলে অবশ্য অন্যপথেও যাওয়া যায়। তবে টিকিট কাটতে চাইলে এই মলের দোতলায় যেতেই হবে। ফলে দুবাই মলের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়ার সুযোগও মেলে।

বুর্জ খলিফার লিফটে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিল চমৎকার। ব্যাপারটা চমকে যাওয়ার মতো। ১ মিনিটের মধ্যে ১২৪ তলায় উঠে গেলাম। নিজেকে যেন স্পাইডার-ম্যান মনে হলো! একবারে ৩০ জন করে ওঠা যায় লিফটে। চোখের নিমিষেই বাটন সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৬০ সেকেণ্ডে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে সবাই।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা বিস্ময় কাটিয়ে ওঠার আগেই আবারও চমক। পুরো দুবাই শহর দেখি চোখের সামনে! হলুদ, লাল, সবুজসহ নানান রঙের বাতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে পুরো শহর। ১৬০ তলার এই ভবনের ১২৪ ও ১৪৮ তলায় আমরা থেমেছিলাম। ১৬০ থেকে ২০৬ তলা পর্যন্ত কেউ থাকে না। কারিগরি কাজে ব্যবহার হয় এই ফ্লোরগুলো।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা বিলাসবহুল ভবনটির একেকটি কামরা কেনার জন্য প্রতি বর্গমিটার অনুযায়ী ক্রেতাদের গুনতে হয়েছে গড়ে ৩৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার (৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা)। বুর্জ খলিফায় আমেরিকানদের বসবাসের অগ্রাধিকার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তাদের জন্য এই ভবনের ৯ থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মিশন: ইমপসিবল-গোস্ট প্রটোকল’ ছবির শুটিং হয় বুর্জ খলিফা টাওয়ারে। এখানে করা হলিউড সুপারস্টার টম ক্রুজের একটি স্টান্ট সাড়া ফেলেছিল। ১২৪ তলায় উঠে ওই ছবির দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেলো। স্বচ্ছ কাচের দেয়াল থেকে দৃষ্টি চলে যাচ্ছে দূরে, বহুদূরে। এমন সুন্দর দৃশ্য কখনোই দেখিনি। শহরের আকাশচূড়া থেকে পাখির মতো নিচে তাকালে থ বনে যেতে হয়। এমন দৃশ্য প্রথম দেখার পর সবার অনুভূতি একই হবে।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা ১২৪ তলার সিঁড়ি বেয়ে ১২৫ তলায় ওঠা যায়। দুটি ফ্লোরেই পর্যটকদের জন্য রয়েছে নানান সুযোগ-সুবিধা। এখানে বুর্জ খলিফা টাওয়ারের স্যুভেনির কিনতে পাওয়া যায়। নিজের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে সন্তুষ্ট না হলে আলোকচিত্রী দিয়ে ছবি তোলানোর ব্যবস্থাও আছে।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা বুর্জ খলিফা থেকে সবার আগে সূর্য দেখা যায়। ভবনে বসবাসকারীরা দিনের শুরুতে সমতলের অধিবাসীদের চেয়ে আগে সূর্য দেখেন। দিনের শেষেও সমতলের মানুষদের চেয়ে বেশি সময় সূর্য দেখার সুযোগ পান তারা। এজন্য তাদের কাছে দিনের পরিধি কিছুটা বেশি।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা বুর্জ খলিফার নিচের দিকের পুরোটা অংশই সুসজ্জিত কয়েকটি বাগানে ঘেরা। একইসঙ্গে আছে পায়ে হেঁটে চলার রাস্তা। ভবনের বাইরে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন বিশাল পার্ক। ভবনটির চারপাশে রয়েছে ৭ দশমিক ৪ একরের অপরূপ সুন্দর উদ্যান ও ৩০ একর আয়তনের কৃত্রিম হ্রদ। এর মধ্যে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ কৃত্রিম জলফোয়ারা ‘দুবাই ফাউন্টেন’। এর নকশা করা হয়েছে আমেরিকার লাস ভেগাসের বেলাজিও ফোয়ারাগুলোর অনুকরণে। ১৫ মিনিট পরপর পানির নাচনের প্রদর্শনী চলে সেখানে। দুবাই মল ও বুর্জ খলিফা ভবনে আসা হাজারও মানুষ লেকের চারপাশে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করেন। সেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে গেলাম আমরাও। শুরুতেই বাজলো অ্যারাবিয়ান মিউজিক। আরব্য রজনীর সুরের সঙ্গে অনেকটা মিলে পেলাম। সেই সুরের তালে পানির নাচন মুগ্ধ করার মতো।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা ২১ কোটি ৭০ লাখ ডলার খরচ করে কৃত্রিম এই ঝরনা তৈরি করেছে আমেরিকার ওয়েট এন্টারপ্রাইজ। বুর্জ খলিফার মূল প্রবেশপথের পাশেই এটি অবস্থিত। স্বচ্ছ নীলাভ পানির এই ঝরনাকে রাতে আলোকিত করে ৬ হাজার ৬০০টি রঙিন বৈদ্যুতিক বাতি। এই দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা ৪৯০ মিটার উঁচু পর্যন্ত পানি ছুড়তে পারে।

চোখের সামনে বুর্জ খলিফা প্রাচুর্যময় বুর্জ খলিফাকে কয়েক বছরের মধ্যে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে দুবাইয়ের আরেক উঁচু ভবন ‘ক্রিক হারবার টাওয়ার’। এর উচ্চতা ৩ হাজার ৪৫ ফুট। ইতোমধ্যেই বুর্জ খলিফা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্নের দিকে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এর কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে এটাই হয়ে যাবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন।
ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সীমান্তে গোলাগুলি: নাফ নদে ঘুরে গেলো মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ
সীমান্তে গোলাগুলি: নাফ নদে ঘুরে গেলো মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ