নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে শুরু হলো মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। দেশের হারিয়ে যাওয়া লোকজ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করে দিতেই এর আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকজ মঞ্চে মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মেলা চলবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানান, বাংলার হারিয়ে যাওয়া চারু ও কারুশিল্পীদের আদি ঐতিহ্য সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। তার প্রত্যাশা, ১৬৮ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত লোকশিল্প জাদুঘর ও পাশের পানাম সিটিকে সঠিকভাবে সাজানো গেলে সোনারগাঁও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, আগামী বাজেটে সোনারগাঁওকে কেন্দ্র করে একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
ইতিহাসে রয়েছে, ১৩৩৮ সালে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ সোনারগাঁওয়ে প্রথম প্রাচীন বাংলার রাজধানী প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৬০৮ সালে মোগল সম্রাট সুলতান ইসলাম খাঁর আমলে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর হয়। সোনারগাঁওয়ের পানাম সিটি ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার করেন ঈশা খাঁ।
কে এম খালিদ মনে করেন, এসব ইতিহাস এমন একটি জায়গায় লিপিবদ্ধ করতে হবে যেন এখানে আসা পর্যটকরা একনজরে জানতে পারে। এজন্য ব্যবস্থা নিতে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালককে নির্দেশ দেন তিনি।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে সোনারগাঁওয়ে বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ একটি হোটেল গড়ে তোলার ওপর জোর দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার হচ্ছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে শহরের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিয়ে শহরমুখী মানুষের ঢল রোধ করা হবে।’
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খোরশেদ আলমসহ অনেকে।
এবারের মেলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ৬০ জন কারুশিল্পী ১৭০টি স্টলে অংশ নিচ্ছেন। এই আয়োজনে রয়েছে ঝিনাইদহের শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, চট্টগ্রামের নকশী পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁওয়ের পাটের কারুশিল্প এবং হাতি-ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশীকাঁথা, নকশী হাতপাখা, মুন্সীগঞ্জের শীতল পাটি ও পটচিত্র, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারু পণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা শিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, ঢাকার কাগজের হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন চারু ও কারুপণ্য।
এবারের মেলার আকর্ষণ গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম ‘ভালোবাসার তামা-কাঁসা-পিতল শিল্প’ বিশেষ প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে গবেষণামূলক একটি ক্যাটালগ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলা লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী থাকবে প্রতিদিন।
প্রতিদিন কারুমঞ্চে পরিবেশিত হবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, জারি-সারি, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান। দেশের প্রায় চার হাজারের বেশি শিল্পী এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
ঢাকা থেকে গুলিস্তান হয়ে নারায়ণগঞ্জে আসা যায় সহজে। এরপর অটোতে চড়ে সোনারগাঁও পৌঁছালেই চোখে পড়বে লোককারুশিল্প জাদুঘর।
ছবি: প্রণব রায়