ইতালির মনোরম দ্বীপ সিসিলির ছোট্ট পাহাড়ি শহর সাম্বুকায় এক কাপ কফির চেয়েও কম দামে বাড়ি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটির দাম মাত্র ১ ইউরো (১০০ টাকা)! এসব বাড়ি থেকে ভূমধ্যসাগর দেখা যায়। এছাড়া কাছেই সৈকত।
ইতালিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রাম ছেড়ে মানুষ বড় শহরগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে। এ কারণে মফস্বলে তৈরি হয়েছে জনশূন্যতা। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামীণ পরিবেশ পুনরুজ্জীবিত করতে জলের দামে বাড়ি বিক্রি হচ্ছে। ইতালির গ্রামাঞ্চলে মানুষ যেন বসতি গড়ে তোলে সেজন্য তাদের বিভিন্নভাবে আকর্ষণ করার চেষ্টা চলছে। অবিশ্বাস্য কম দামে বাড়ি বিক্রি এরই অংশ।
১ ইউরোতেই ৪০ থেকে ১৫০ বর্গমিটার আয়তনের বাড়ি কেনা গেলেও একটি শর্ত আছে। নতুন মালিককে অবশ্যই নিজেদের পছন্দমাফিক বাড়িটি সংস্কার করতে হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য তিন বছর সময় পাওয়া যাবে। এজন্য ১৫ হাজার ইউরো (১৭ হাজার ২০০ ডলার) থেকে ব্যয় শুরু হবে। এছাড়া নিরাপত্তা আমানত হিসেবে নেওয়া হবে ৫ হাজার ইউরো। সংস্কার হয়ে গেলে তা ফেরত পাবেন নতুন মালিক।
সাম্বুকার উপ-মেয়র ও পর্যটক কাউন্সিলর জুসেপ্পে ক্যাসোপ্পো বলেন, ‘সাম্বুকায় বাড়ি কিনলে হতাশ হবেন না ক্রেতারা। এটি জাঁকজমকপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিত। সাম্বুকায় এলে সবারই মনে হবে ভূ-স্বর্গ। প্রাকৃতিক সম্পদের ভেতর শহরটি অবস্থিত। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। মনোরম সৈকতের পাশাপাশি নিঝুম ও প্রশান্ত সাম্বুকার চারদিকে রয়েছে গাছগাছালি ও পাহাড়-পর্বত। সাম্বুকার গ্রামাঞ্চল জুড়ে চোখে পড়বে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ।’
জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় সাম্বুকার উপ-মেয়র মনে করেন, শহরটিকে বাঁচাতে মানুষের বসতি স্থাপন প্রয়োজন। এজন্য বাড়ি দ্রুত বেচাকেনার সুযোগ সৃষ্টিতে কোনও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রাখা হয়নি। তার কথায়, ‘বিদেশিরা অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ও স্পেন থেকে অনেকে এখানে বাড়ি কেনার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তারা নিয়মিত বাড়ি বেচাকেনার খোঁজখবর নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ১০টি বাড়ি বিক্রি হয়ে গেছে।’
গোলাপি-লালচে রঙের দোতলা একটি বাড়ি সূর্যাস্তের সময় জ্বলজ্বল করে। এতে রয়েছে আঙিনা, পাম গাছের বাগান, কমলা গাছ, ফুলশোভিত সিঁড়ি, সিসিলীয় ধাঁচের ছাদ ও বারান্দা। বেশিরভাগ বাড়িতেই সাজানো উদ্যান রয়েছে।
জার্মানির সুজানা হাইনসন একটি বাড়ি কিনে নতুনভাবে সাজাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, আগামী গ্রীষ্মকাল সাম্বুকায় কাটাতে মুখিয়ে আছি। এটি সুদৃশ্য আর বিশেষ শহর। এখানকার মানুষ খুব মুক্তমনা আর বন্ধুসুলভ। ভালো রেস্তোরাঁও অনেক। মনে হচ্ছে নিজের শহর।’
মেয়রের দাবি, বিদেশি পর্যটকরা এখানে এসে বিস্ময় প্রকাশ করছেন! তার আশা, নতুন বাসিন্দাদের সুবাদে শহরটিতে প্রাণ ফিরে আসবে ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একইসঙ্গে সংরক্ষিত থাকবে অমূল্য স্থাপত্য।
২০১৬ সালে ইতালির সবচেয়ে সুন্দর শহর প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন পেয়েছিল সাম্বুকা। সেখানে এমন একটি হোটেল নির্মানের পরিকল্পনা চলছে যেটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়বে। পর্যটকদের সহায়তায় গাইড ট্যুরের ব্যবস্থা রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
ইতিহাস অনুযায়ী, সাম্বুকা গড়ে তোলে প্রাচীন গ্রিকরা। এরপর শহরটি জয় করে সারাসেনস। তিনি এটিকে সমৃদ্ধ বাণিজ্য নগরীতে রূপান্তরিত করেন। আমির আল জাবুতের নামে শহরটির নামকরণ হয়েছে। বর্তমানে শহরটির বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থাপত্যশৈলীতে আরব ও ব্যারোক প্রভাব স্পষ্ট। গির্জাগুলোতে আরব দেশের মতো গম্বুজ ও ঝকঝকে মেঝে দেখা যায়। সড়ক ও স্থানীয়দের নামের শেষাংশে আরবদের প্রাধান্য রয়েছে।
সাম্বুকা থেকেই অভিজাত সিসিলীয় ওয়াইনের নবজাগরণ শুরু হয়। শতাব্দী ধরে লাল আঙুর বিশেষ করে নেরো দাভোলা চাষ হচ্ছে এখানে। এই শহরে রয়েছে বিস্তীর্ণ আঙুর ক্ষেত। কৃত্রিম হ্রদ লেগো আরাঞ্চোতে এই সংখ্যা বেশি। গ্রীষ্মে এতে পানির স্তর কম থাকলে মাঝে মধ্যে আরব দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান হয়। মেরলো, সিরা ও শারদোনের মতো বিদেশি প্রজাতির আঙুর গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এগুলোর নির্যাস থেকে তৈরি বোতলজাত ওয়াইন বিশ্বব্যাপী রফতানি করা হবে।
ইতালির স্থানীয় খাবার সাম্বুকার অন্যতম আকর্ষণ। ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে বানানো রুটি ও পাস্তার চাহিদা ব্যাপক। ফুল ও লেবুর সমন্বয়ে ডিম ভাজাও অতুলনীয়। পিৎজা আর কেকের গ্রহণযোগ্যতা তো আছেই।
সাম্বুকায় বাড়ি কেনার যোগাযোগের ইমেইল ঠিকানা: [email protected]
সূত্র: সিএনএন ট্রাভেল