X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কালীগঞ্জের ঐতিহ্য খেজুরের গুড়ের হাট

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ
১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:৩৭আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:৩৭

বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসা খেজুরের গুড় (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন) কথায় আছে, ‘যশোরের যশ, খেজুরের রস’। যশোর জেলার পাশে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে খেজুরের রস থেকে উৎপাদিত গুড়ের বিশাল হাট বসে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে সোম ও শুক্রবার প্রচুর খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি হয় এখানে। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে এটি এখনও টিকে আছে। এই হাট এখানকার একটি ঐতিহ্য। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা (কৃষক) তাদের উৎপাদিত খেজুর গুড় ও পাটালি বিক্রির জন্য এখানে নিয়ে আসেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালীগঞ্জের গুড় সারাদেশে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। তাই মোকামিদের কাছে কালীগঞ্জের এই হাট ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছে। বড় বড় মোকামিরা ঠিলে (মাটির হাড়ি) থেকে গুড় ঢেলে ড্রামে ভরে নিয়ে যান। ট্রাক, ভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসব গুড় চলে যাচ্ছে কুষ্টিয়া, বাঘারপাড়া, ভাঙ্গা, ফরিদপুরসহ দেশের অন্যান্য জেলা ও উপজেলা শহরে।

কুষ্টিয়ার শালদহ গ্রামের মহির উদ্দীন, মোতালেব মিয়াসহ একাধিক ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাজারে কালীগঞ্জের গুড়ের অনেক চাহিদা। তাই প্রতি সোম ও শুক্রবার কালীগঞ্জে মোকাম করতে আসেন তারা।

মোতালেব মিয়া ৪৫ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রতি বছর কালীগঞ্জের হাটে গুড় কিনতে আসেন তিনি। ৮ থেকে ৯ কেজি ওজনের এক ঠিলে (হাড়ি) গুড় কিনতে লাগে ৬০০-৭০০ টাকা। এখান থেকে গুড় কিনে ৮০০-১০০০ টাকা দরে কুষ্টিয়া শহরে পাইকারি ও খুচরামূল্যে বিক্রি করেন তিনি।
হাট থেকে খেজুরের গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন মোকামিরা (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন) ৩৫ বছর ধরে গুড়ের ব্যবসা করছেন মহির উদ্দীন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে সাতমাইল, বারবাজার, ডাকবাংলা ও কালীগঞ্জে খেজুর রস দিয়ে বানানো গুড়ের হাট বসে। এর মধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড় ব্যাপক প্রসিদ্ধ বলে জানান তিনি। তার কথায়, ‘এখন কালীগঞ্জ ছাড়া অন্যান্য স্থানে তেমনভাবে খেজুর গুড় ওঠে না। কালীগঞ্জের মোকামটি এখনও বড়। তাই প্রতি শুক্রবার এখানে গুড় কিনতে আসি।’

শুক্রবার হাটে ১০৮ ঠিলে (হাড়ি) গুড় কিনেছেন যশোরের বাঘারপাড়া থেকে আসা ব্যবসায়ী সঞ্জীব কুমার কুণ্ড। তিনি জানান— কালীগঞ্জের হাটে চট্টগ্রাম, বরিশাল, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা গুড় কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। তবে হতাশার কথা শোনা গেলো তার মুখে, ‘দিন দিন খেজুর গুড়ের হাট হারিয়ে যাচ্ছে। এখনকার হাটে আগের মতো গুড় উঠছে না। এ কারণে দূর-দূরান্তের মোকামিরা এখন আর আগের মতো আসেন না।’

হাট থেকে খেজুরের গুড় কিনে ভরা হচ্ছে ড্রামে (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন) কালীগঞ্জ গুড়ের হাটের মালিক আতিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘কালীগঞ্জের খেজুর রসের গুড় ব্যাপক প্রসিদ্ধ। এই গুড়ে কাঁচা রসের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের এলাকার গুড়ের অনেক সুনাম রয়েছে। তাছাড়া শীত মৌসুমে গুড় দিয়ে অনেক পিঠা তৈরি হয়। শীতে কেনা গুড় ব্যবসায়ীরা সারাবছর বিক্রি করে থাকেন।’

আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করলেন কালীগঞ্জ গুড়ের হাটের মালিক। তিনি জানান, ইটভাটা মালিকরা খেজুর গাছ কিনে পুড়িয়ে ফেলছেন। অনেক গাছি গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই এখন আর আগের মতো হাটে গুড় আসছে না। তবে বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের মধ্যে কালীগঞ্জের খেজুর গুড়ের হাট এখনও টিকে আছে। বাজারটি এখানকার একটি ঐতিহ্য বলে জানান তিনি।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা