কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়ায় অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এর আধুনিক স্থাপত্যশৈলী বেশ দর্শনীয়। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো তিনতলা মসজিদটির মিনার পাঁচ তলা উঁচু। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এটি দেখতে আসেন।
ইসলামসহ সব ধর্মাবলম্বীদের কাছেই পাগলা মসজিদ অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। অনেকের বদ্ধমূল বিশ্বাস, কেহ সহি নিয়তে এখানে দান-খয়রাত করলে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়।এবার দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৩ টাকা। নগদ টাকার পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়। সেগুলোতে জড়ো হওয়া টাকা বস্তায় ভরে রাখেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। এতে অংশ নেন মসজিদ মাদ্রাসার ৬০ জন ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাবিবুর রহমান। এ সময় ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুল আলম ও মো. নাসির উদ্দিন।
ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবার উপস্থিতিতে আমরা আজ সিন্দুক খুলে গণনার কাজ শেষ করেছি। প্রাপ্ত টাকা রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গাপুরি ডলার, সৌদি রিয়াল, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতসহ স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।’
দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটির নামকরণ হয়েছে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স। এর আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়ে থাকে।
মসজিদটির দান-খয়রাতের সিন্দুক খোলা হয় তিন মাস পরপর। এর আগে গত বছরের ১৩ অক্টোবর দান সিন্দুক খোলার পর পাওয়া যায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৪১৬ টাকা। তারও আগে ৩০ মার্চ পাওয়া যায় ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
গত বছরের ১৩ মে পাগলা মসজিদে দুর্বৃত্তরা টাকা চুরির চেষ্টা চালায়। তখন একটি দানবাক্স খুলে এক বস্তা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও তারা সফল হয়নি। নৈশপ্রহরীর ধাওয়া খেয়ে টাকার বস্তা ফেলে রেখেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। সেই সময় বস্তায় পাওয়া যায় ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৮১ টাকা।
২০১৮ সালের শুরুতে ৬ জানুয়ারি মসজিদের পাঁচটি দানসিন্দুক খুলে গণনা করে সর্বোচ্চ ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট মসজিদের দানসিন্দুক খুলে গণনা করে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পাওয়া যায়।
জনশ্রুতি আছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিত হন। তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হয়। পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে পরবর্তী সময়ে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কালক্রমে এটি ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।