X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের খানাপিনা

সোহেলী তাহমিনা
২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:২৬আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫২

সুলতানি, মোগল, নবাবি, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলের পর আমাদের প্রাণের ঢাকা শহর ৪০০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসেছে। ইতিহাসের কিছু কিছু অংশের প্রভাব কোথাও খুব বেশি, কোথাওবা একেবারেই নেই। ইতিহাস ও আধুনিকতাকে একসঙ্গে বয়ে চলেছে এই শহরের বিশেষ অংশ পুরান ঢাকা। এখানে ইতিহাস এখনও কথা বলে, ঐতিহ্য সগৌরবে মাথা উঁচু করে চলে। এই পুরান ঢাকার ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্থান, সংস্কৃতি খাবার নিয়ে জার্নির ধারাবাহিক আয়োজন।

সামাদের হোটেল ঐতিহাসিক স্থাপনার পাশাপাশি পুরান ঢাকার আনাচে-কানাচে ছোট ছোট রেস্তোরাঁ বা টং দোকানের ঐতিহ্য কম নয়। লালবাগের জগন্নাথ সাহা রোডের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ভবনে গড়ে ওঠা সামাদের হোটেলের কথাই ধরা যাক। সকাল থেকে নাশতার আয়োজন চলে এখানে। দুপুরের খাবারের পর একটু বিরতি দিয়ে শুরু হয় সান্ধ্যকারীন ভোজপর্ব। মোটামুটি রাত ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে দিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের ঘরে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
সামাদের হোটেল হোটেলটির সামনে কোনও নামধামের চিহ্ন নেই। শুধু বাইরে ভাজার সামান্য ব্যবস্থা আর খাবারের উপস্থাপনা এর প্রতি ভোজনরসিকদের আকৃষ্ট করে। ভেতরে কোনোরকম জৌলুস নেই। খানিকটা অপরিচ্ছন্নতাও চোখে পড়ে। তুলনামূলকভাবে বেশ ছোট একটি ঘরে দুটি টেবিলে কয়েকজনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত ক্রেতার কোনও কমতি নেই এখানে। তাদের মধ্যে দিনে নিয়মিত দু’বার পেটপূজা করতে আসা ভোজনরসিকও আছেন। তবে হোটেলটিতে বাড়তি কোনও যত্ন বা আতিথেয়তার আকাঙ্ক্ষা করে লাভ নেই। সাধারণ ভাজাভুজি খাবারের স্বাদ এখানে আহামরি কিছু নয়। তবে দাম চমৎকারভাবেই নাগালের মধ্যে।

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের খানাপিনা জগন্নাথ সাহা রোড থেকে নবাবগঞ্জ বাজার রোড দিয়ে লালবাগ রোডে পৌঁছানোর বেশ কয়েকটি রাস্তা রয়েছে। লালবাগ রোডে পৌঁছে ছোট ভাঁট মসজিদের একটু আগেই রয়েছে ‘মামা চটপটি হাউজ’। ৩৮ বছর ধরে এটি পরিচালনা করছেন মো. আব্দুর রশিদ। প্রায় চার যুগে দোকানটির সামান্য স্থান পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। বলে রাখা ভালো, সাধারণভাবে আমরা দই ফুচকা বলতে যা বুঝি তা কিন্তু এখানে পাওয়া যায় না। এর কারণ খরচ ও দাম।

মামা চটপটি হাউজে মো. আব্দুর রশিদ রশিদ সাহেবের মতে, টক দই দিয়ে পরিবেশিত দই ফুচকা যে দামে বিক্রি করতে হবে তা স্থানীয়রা দিতে রাজি নয়। বরং এখানে দই ফুচকা হিসেবে টক দই মিশ্রিত তেঁতুলের টক (যা সাদা টক নামে পরিচিত) দিয়ে সাধারণ ফুচকা পরিবেশন করা হয়। দই ছাড়া তেঁতুলের টকও রয়েছে। আর চটপটি তো আছেই। প্রতি প্লেট ২০ টাকা। এটি স্থানীয় অন্যান্য ফুচকার দোকানের চেয়েও কম। পরিবেশ, স্বাদ ও আতিথেয়তা সবদিক দিয়ে দোকানটি উন্নতমানের। একজন সহযোগী নিয়ে মো. আব্দুর রশিদ নিজেই এখানে কাজ করেন। দোকানের ভেতরে বসে খাওয়ার চেয়ে প্যাকেটে করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ক্রেতার সংখ্যাই এখানে বেশি।

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের খানাপিনা মামা চটপটি হাউজ থেকে এগোনো যাক বটতলার দিকে। সেখান থেকে ছাপড়া মসজিদে যাওয়ার সময় হাতের ডানদিকে রয়েছে ‘লাল মিয়ার শাহী বিরিয়ানী হাউজ’। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় এই রেস্তোরাঁটি শুরু করেন লাল মিয়া। তবে পুরোপুরি গুছিয়ে আয়োজন চলছে গত ৪২ বছর ধরে। ১০ বছর আগে লাল মিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা এর দায়িত্ব নিয়েছেন। স্থানীয়দের কাছে পুরির জন্য প্রসিদ্ধ হলেও এখানকার কাচ্চি বিরিয়ানি বেশ সুস্বাদু। তবে গরুর মাংস দিয়ে তৈরি কাচ্চি বিরিয়ানি প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে সাধারণত শেষ হয়ে যায়।
পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের খানাপিনা লাল মিয়ার শাহী বিরিয়ানী হাউজে সকালের নাশতায় এখানে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে খিচুড়িও পাওয়া যায়। ভাজাভুজি সব খাবারই আছে। একইসঙ্গে কম ঝোলে ভাজা বটভুনাও রয়েছে। যারা অতিরিক্ত ভাজা খাবার পছন্দ করেন না, এখানকার মোগলাই পরোটা তাদের জন্য জুতসই। মুরগির ঝাল ফ্রাইও বেশ সুস্বাদু আর দামের তুলনায় পরিমাণও অনেক। চা বা কোনও ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার এখানে পাওয়া যায় না। খাবারের দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যেই। স্বাদ ও আতিথেয়তার মান বেশ ভালো।

ছাপড়া মসজিদের ঠিক সামনে একটি ভ্রাম্যমাণ মুড়ি ভর্তার দোকান রয়েছে। পেঁয়াজ বেরেস্তাসহ হাতেমাখা এই মুড়ি ভর্তা সবার মুখেই নতুনত্বের স্বাদ এনে দেবে। সাধারণত প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এটি পাওয়া যায়। প্রায় সবসময়ই এই ভ্যানের চারপাশে থাকে উপচেপড়া ভিড়।

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের খানাপিনা আরেকটু সামনে এগিয়ে বাঁ-দিকে পড়বে ‘বার্গার হাট’। এখানে ৫০ টাকায় চিকেন ও বিফ বার্গার আর ৩০ টাকায় একপ্লেট নুডলস্ পাওয়া যায়। দাম অনুযায়ী বার্গারের স্বাদ মোটামুটি ভালো। এছাড়া আছে জিলাপি। জিলাপি একটু বেশি ভাজা আর কিছুটা শক্ত। স্বাদ হতাশাজনক।

বার্গার হাট থেকে সোজা এগিয়ে গেলেই মসজিদের একেবারে শেষ প্রান্তে হাতের ডানদিকে রয়েছে মনা ভাইয়ের চায়ের দোকান। কয়েক বছর ধরে দোকানটির কার্যক্রম চলছে। মূলত বিদেশফেরত মনা ভাই বেকারত্ব ঘোচাতে দোকানটি দিয়েছেন। ৬ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের চা ও কফি পাওয়া যায় এখানে। অন্যান্য টংয়ের চেয়ে এর আয়তন বেশ খানিকটা বড়।

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের খানাপিনা মনা ভাইয়ের চায়ের দোকানের একপাশে একটি কফির দোকান। অন্য পাশে ভাজাভুজি খাবারের ছোট একটি দোকান। পরিবেশ বা স্বাদ কোনোদিক থেকেই এই তিনটি দোকানের একটিও অন্যান্য স্থানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো নয়। কিন্তু এর অবস্থানের কারণে বিকাল থেকেই এখানে প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এখানে বেচাকেনা চলতে থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। বসার জায়গা না থাকলেও আড্ডা ও আলোচনার জন্য স্থানীয়দের কাছে এটি জনপ্রিয় স্থান।

*পুরান ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা আজিমপুর দায়রা শরীফ ও খান মোহাম্মদ মসজিদের গল্প থাকছে আগামী কিস্তিতে।

ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
খাদে পড়া গাড়ি উদ্ধারের সময় বাসচাপায় প্রাণ গেলো ২ জনের
খাদে পড়া গাড়ি উদ্ধারের সময় বাসচাপায় প্রাণ গেলো ২ জনের
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি