পৃথিবীতে পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে কানাডার অন্টারিও প্রদেশের নায়াগ্রা জলপ্রপাত অন্যতম। সারাবছরই সেখানে অবিরাম রাশি রাশি জল গড়িয়ে পড়ে। বিস্ময় জাগানিয়া এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে যান বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপ্রেমী। কিন্তু আপাতত সেখানে জলপ্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে না।
নায়াগ্রা ফলসে এখন অন্যচিত্র। এর একটি অংশ জমে বরফ হয়ে গেছে! কারণ শীতের প্রকোপে তুষারে কানাডার অনেক জায়গায় জবুথবু অবস্থা। এ কারণে জলপ্রপাতটির পানি এখন যেন ধবধবে সাদা বরফ। হাড়কাঁপুনি শীতের কারণেই মূলত এমন হয়েছে।
অবশ্য জল জমে বরফ হয়ে যাওয়ায় নায়াগ্রা ফলসের অন্যরকম রূপ দেখা যাচ্ছে। নতুনরূপে এই জায়গাকে দেখে ভ্রমণপিপাসুরা বিস্মিত। এমন কয়েকটি মুহূর্তের ছবি তুলে দর্শনার্থীরা ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। তাদের মধ্যে এমা গ্রাফহাম জানিয়েছেন, তার নাকি মনে হচ্ছিল এলসার দুর্গে আছেন! এলসা হলো হলিউডের ‘ফ্রোজেন’ ছবির জনপ্রিয় চরিত্র। বরফপ্রধান অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে এটি।
সিএনএনকে এমা গ্রাফহাম বলেন, ‘নায়াগ্রা ফলসের সৌন্দর্য দেখার জন্য বাইরে যেসব সিঁড়ি রাখা হয়েছে সেগুলোও ঢেকে গেছে বরফে। তখন মনে হচ্ছিল, সিনেমার মতোই এলসা সিঁড়িতে উঠে হিম পরিবেশ উপভোগের আহ্বান জানাচ্ছে।’
মাইনাস ৫ থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবহাওয়ার কারণে কানাডায় এখন তুষারের আধিপত্য। আরও কিছুদিন কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ার পরিস্থিতি থাকবে বলে জানান সিএনএনের আবহাওয়াবিদ মাইকেল গাই।
প্রতিদিন প্রতি মিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ৬০ লাখ ঘনফুট মাত্রাধিক জল প্রবাহিত করে। যার গড় পরিমাণ ৪০ লাখ ঘনফুট। নায়াগ্রার ওপারেই আমেরিকার বাফেলো। কানাডা-আমেরিকার দু’প্রান্তেই গ্রীষ্মকাল আর বসন্তে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। ‘মেড অব দ্য মিস্ট’ নামের একটি জাহাজ আছে সেখানে। এতে চড়ে খুব কাছে গিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
নায়াগ্রা নদী প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো। এরও ১৮০০ বছর আগে এটি অন্টারিওর দক্ষিণে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বরফে ঢাকা ছিল। সময়ের সঙ্গে আর নিয়মিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবর্তনের ফলে গলতে শুরু করে বরফ। পর্যায়ক্রমে গ্রেট লেকস বেসিনে প্রচুর পানি জমতে থাকে এবং লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী ও লেক অন্টারিও থেকে আসা পানি মিলে সৃষ্টি হয় এই বিশাল জলপ্রপাত।
কানাডায় নদীকে বলা হয় লেক। নায়াগ্রার জলপ্রপাত সৃষ্টিতে লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী ও লেক অন্টারিও থেকে বয়ে আসা জলের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলপ্রপাত। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তিন ভাগের এক ভাগ আমেরিকায়। যা ‘আমেরিকান ফলস’ নামে পরিচিত। বাকি দুই ভাগ কানাডায়, অর্থাৎ তা ‘কানাডিয়ান ফলস’। কানাডার প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখলাম— প্রায় ১৬৭ ফুট উঁচু থেকে তীব্রগতিতে আছড়ে পড়ে স্বচ্ছ জল।