ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে হয়ে গেলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যকার দ্বিতীয় সম্মেলন। সোফিটেল লিজেন্ড মেট্রোপোল হ্যানয়ে বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ও বৃহস্পতিবার তাদের বৈঠক হয়। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আগের সম্মেলনের মতো এবারও ট্রাম্প-কিমের কেউই সভার ভেন্যুতে রাতে থাকেননি। তবে হোটেলটির খাবারের স্বাদ ঠিকই নিয়েছেন উভয়ে।
ট্রাম্প ও কিম বুধবার রাতে মেট্রোপোল হোটেলে নৈশভোজ উপভোগ করেছেন। তাদের জন্য পশ্চিমা ও কোরিয়ান পদ তৈরি করেন সোফিটেন লিজেন্ড মেট্রোপোলের শেফ ও কোরিয়ার কয়েকজন শেফ।
সম্মেলনের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, মেন্যুতে ছিল লেটুস পাতার সঙ্গে চিংড়ির ককটেল, মসলার গুড়া দিয়ে অ্যাভোকাডো, কোরিয়ার জাতীয় খাবার কিমচি দিয়ে গ্রিল্ড গরুর মাংস ও চকোলেট লাভা কেক। বৃহস্পতিবার দুপুরেও সেখানে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছেন ট্রাম্প ও কিম। তাদের সম্মেলনের জন্য হোটেলের আঙিনা ব্লক করে দেওয়া হয়।
১৯০১ সালে চালু হয় সোফিটেল লিজেন্ড মেট্রোপোল হ্যানয়। এরপর থেকে বিশিষ্টজন ও তারকাদের প্রিয় স্থান হয়ে ওঠে হোটেলটির পথঘেঁষা রেস্তোরাঁ লা তেরাস। হ্যানয়ের ব্যস্ত নাগরিক জীবন দেখতে দেখতে সেখানে পুরো বিকাল কাটিয়ে দিতেন তারা। বিখ্যাত তারকাদের মধ্যে কারা এখানে এসেছিলেন তা হোটেলের একটি ফলকে উল্লেখ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাঁচতারকা হোটেলটির অতিথি হয়েছেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।
এই হোটেলে হানিমুন উদযাপন করেছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ইংরেজ ঔপন্যাসিক গ্রাহাম গ্রিন এখানেই তার ধ্রুপদী উপন্যাস ‘দ্য কোয়াইট আমেরিকান’-এর কাজ করেছিলেন। তার সম্মানে একটি স্যুটের নামকরণ হয়েছে ‘গ্রাহাম গ্রিন স্যুট’। মেট্রোপোল উইংয়ের দোতলায় এটি অবস্থিত। এতে রয়েছে ধ্রুপদী ফরাসি আবহ ও সাজসজ্জা।
সোফিটেল লিজেন্ড মেট্রোপোল হ্যানয়ে রয়েছে ৩৬৪টি রুম। এর পরতে পরতে রয়েছে ফরাসি ঔপনিবেশিক মুগ্ধতা। হ্যানয় শহরে সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল সম্ভবত এটাই। অন্তত আকর্ষণীয় গল্প জড়িয়ে থাকা বিলাসী হোটেল।
উত্তর ভিয়েতনামের ঐতিহাসিক জায়গা টংকিনের ফরাসি গভর্নরের বাসস্থান ছিল সোফিটেল লিজেন্ড মেট্রোপোল। হ্যানয় অপেরা হাউস ও সেন্ট জোসেফ ক্যাথেড্রালের কোণে হোটেলটি অবস্থিত। অপেরা উইংয়ে অবস্থিত গ্র্যান্ড প্রেস্টিজ স্যুটের দৈর্ঘ্য ১৭৬ বর্গমিটার। এতে আছে পৃথক স্পা রুম ও আটজনের বসে খাওয়ার মতো ডাইনিং এলাকা। একই শাখায় প্রেস্টিজ স্যুটে আছে একটি বেডরুম ও একটি স্মল লিভিং রুম।
হোটেলটির আরেক বিখ্যাত অতিথি নাট্যকার উইলিয়াম সমারসেট মমের নামে আছে একটি স্যুট। দোতলায় ঐতিহাসিক মেট্রোপোল শাখায় এই কক্ষ থেকে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ভিয়েতনামের যুদ্ধ কিংবা আমেরিকান যুদ্ধ চলাকালীন হোটেলটির চাকচিক্য ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। এই স্থাপনার অপব্যবহারের কারণে পরবর্তী সময়ে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়ে। যুদ্ধের পর কয়েক দশক ধরে হোটেলটি পুনরুজ্জীবিত করে তোলে পালম্যান হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় তারা।
পরে মর্যাদাসম্পন্ন হোটেলটির ব্যবস্থাপনা তথা পরিচালনার দায়িত্ব নেয় বর্তমান মালিক অ্যাকরহোটেলস। প্রাচীন আসবাবপত্র, প্রশস্ত রুম ও আকর্ষণীয় ডাইনিং স্পেস অতিথিদের সহজেই মন কাড়ে। রুমগুলোর মধ্যে মেট্রোপোল উইং ঐতহাসিক। এখানে আছে সংরক্ষিত আসবাবপত্র, সিল্কের ট্যাপেস্ট্রি, সবুজ জানালা, পেটা লোহার সামগ্রী।
পুলের পাশে ব্যাম্বু বার ও ফ্রান্সের ল্যঁ বিলিউতে খানাপিনার সুব্যবস্থা আছে। ৪০০ বর্গমিটারের লা স্পা দ্যু মেট্রোপোল থেকে বাগানের চত্বর ও পুল দেখা যায় অনায়াসে। অ্যাঞ্জেলিনা নামে সুদৃশ্য ককটেল বার/রেস্তোরাঁয় মিলবে বিশ্বমানের হুইস্কির সংগ্রহশালা ও হাতে বানানো গ্রামীণ খাবার।
সোফিটেল লিজেন্ড মেট্রোপোলের নিচে আছে একটি বাঙ্কার। হোটেলটির পাথ অব হিস্ট্রি ট্যুরের অংশ হিসেবে সেখানে গেলে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয় অতিথিদের। হোটেলের ইতিহাসবিদদের মতে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় বিমান হামলা থেকে অতিথিদের সুরক্ষা করতো মেট্রোপোলের এই বাঙ্কার। তাদের মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী জেন ফন্ডা ও জোয়ান বায়েজ। যুদ্ধের পর বাঙ্কারটি বন্ধ করে সিলগালা করে দেওয়া হয়।
বেশ কয়েক দশক পর ২০১১ সালে ব্যাম্বু বার সংস্কারের সময় হোটেলের প্রকৌশলী বিভাগ পুনরায় এটি আবিষ্কার করে। যুদ্ধকালীন ভয়াবহ সময়ে হোটেলের কর্মীদের অসাধারণ প্রচেষ্টার প্রতি সম্মান জানাতে ও তাদের সাহস আর অধ্যবসায়ের স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ২০১২ সালের মে মাসে বাঙ্কারটি ফের খোলা হয়। সেইসব কর্মীদের অবদান চিরকাল মনে রাখার মতো বলে উল্লেখ রয়েছে সোফিটেল লিজেন্ড মেট্রোপোল হ্যানয়ের ওয়েবসাইটে। পাথ অব হিস্ট্রি ট্যুর প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উপভোগ করতে পারেন অতিথিরা।
ঠিকানা: সোফিটেল লিজেন্ড মেট্রোপোল হোটেল হ্যানয়, ১৫ ন’কুয়েন স্ট্রিট, হোয়ান কিয়েম ডিস্ট্রিক্ট, হ্যানয়, ভিয়েতনাম। ফোন: +৮৪২৪৩৮২৬৬৯১৯
সূত্র: সিএনএন ট্রাভেল