X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: নবাবগঞ্জ বাজার রোডে নানান খাবারের গল্প

সোহেলী তাহমিনা
২৬ মার্চ ২০১৯, ২০:০০আপডেট : ০৩ মে ২০১৯, ১৭:০৫

সুলতানি, মোগল, নবাবি, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলের পর আমাদের প্রাণের ঢাকা শহর ৪০০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসেছে। ইতিহাসের কিছু কিছু অংশের প্রভাব কোথাও খুব বেশি, কোথাওবা একেবারেই নেই। ইতিহাস ও আধুনিকতাকে একসঙ্গে বয়ে চলেছে এই শহরের বিশেষ অংশ পুরান ঢাকা। এখানে ইতিহাস এখনও কথা বলে, ঐতিহ্য সগৌরবে মাথা উঁচু করে চলে। এই পুরান ঢাকার ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্থান, সংস্কৃতি খাবার নিয়ে জার্নির ধারাবাহিক আয়োজন।

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: নবাবগঞ্জ বাজার রোডে নানান খাবারের গল্প পুরান ঢাকার খাবার নিয়ে কথা হবে আর বিরিয়ানি থাকবে না তা কী করে হয়! নবাবগঞ্জ বাজার রোডে রয়েছে পুরান ঢাকা তথা ঢাকা শহরের অন্যতম বিরিয়ানি রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘জমিদারি ভোজ’। স্বাদ, দাম, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার গুণে এবং সামাজিক গণমাধ্যমের সুবাদে এটি ইতোমধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাই অন্তত একবার এর খাবারের স্বাদ চেখে দেখলে মন্দ লাগবে না।

জমিদারি ভোজের আশেপাশেই দেখা যায় বেশ কয়েকটি ছোট আকারের বিরিয়ানির রেস্তোরাঁ। এসব দোকানে খাবারের মূল্য স্বাভাবিকভাবেই প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁর চেয়ে খানিকটা কম। তবে পরিমাণে ও স্বাদে পিছিয়ে নেই। মোটামুটি দুপুর থেকে প্রায় মাঝরাত অবধি এসব দোকানে মুরগি, গরু ও খাসির মাংস দিয়ে তৈরি পোলাও, তেহারি ও বিরিয়ানি পাওয়া যায়। এছাড়া আছে সাদা ভাত, সাদা পোলাও, বিভিন্ন ধরনের রোস্ট ও রেজালা। দাম মোটামুটি সব দোকানে একইরকম— হাফ সাইজের প্যাকেট বা প্লেট মোরগ পোলাও ১৫০ টাকার আশেপাশে, গরুর কাচ্চি ১৭০ টাকা, খাসির কাচ্চি ২০০ টাকার একটু কমবেশি হতে পারে।

এসব বিরিয়ানি দোকানের একটি আকর্ষণীয় খাবার হলো আস্ত মুরগির রোস্ট। এক গামলা পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে একটি গোটা মুরগি রোস্ট করে বিক্রি হয়। এটি তিনজনের জন্য নির্ধারিত হলেও অনায়াসেই চারজন খেতে পারে। মূল্য ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতিদিনই এই খাবার বিক্রি হয় এসব রেস্তোরাঁয়। তবে একটু আগে থেকে অর্ডার করে রাখলে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শাকিল মামার কাবাব পুরান ঢাকার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার শিক কাবাব। নবাবগঞ্জ বাজার রোডেই আছে তিনটি কাবাবের দোকান। নবাবগঞ্জ বড় মসজিদের ঠিক উল্টো দিকের রাস্তাটি ধরে একটু এগিয়ে গেলে বাঁ-দিকে পড়বে শাকিল মামার কাবাবের দোকান। ১৯৮১ সাল থেকে মো. শাকিল এখানে একই ধরনের রেসিপি ব্যবহার করে মুরগির মাংসের শিক কাবাব তৈরি করছেন। একসময় অন্যান্য কাবাব পাওয়া গেলেও বর্তমানে ২৫ টাকা প্রতি শিক হিসেবে শুধু এই এক ধরনের কাবাবই এখানে বিক্রি হয়। বেশকিছু নিয়মিত ক্রেতা রয়েছে দোকানটির। ঝাল ও রসালো আস্ত মুরগির মাংসের টুকরা দিয়ে তৈরি সুস্বাদু এই কাবাবের শুধু একটি শিকে মন ভরে না ভোজনরসিকদের! এখানে সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাবাব বিক্রি হয়।

চাঁন মিয়ার কাবাব নবাবগঞ্জ রোড ধরে এগোতে থাকলে মূল বাজারের আগেই দেখা যাবে চাঁন মিয়ার কাবাবের দোকান। প্রায় ১০ বছর ধরে মো. চাঁন মিয়া এখানে বিকাল ৪টা থেকে রাত ১টা অবধি গরু, গুর্দা ও মুরগির কাবাব তৈরি করেন। আরেকটু সামনে এগিয়ে ডানদিকের গলিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে বশির মিয়ার কাবাবের দোকান। এখানেও সন্ধ্যার পর থেকে মোটামুটি রাত ১০টা অবধি কাবাব বিক্রি হয়। দোকানটির বয়স প্রায় ৩২ বছর। মজার ব্যাপার হলো, চাঁন মিয়া হলেন মরহুম বশির মিয়ার জামাতা।

বশির মিয়ার কাবাব দুটি দোকানেই গরুর শিক কাবাব ৫০ টাকা। এটি এতই সুস্বাদু যে, মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়! আর গুর্দা (শুধু চাঁন মিয়ার দোকানে পাওয়া যায়) ও মুরগির কাবাব ২০ টাকা প্রতি শিক। শুধু পুরান ঢাকাবাসীই নয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাবাবপ্রেমীরা এসব দোকানে নিয়মিত ভিড় করে।

বাকরখানি পুরান ঢাকার শুধু ঐতিহ্যবাহী খাবারই নয়, এটি এখানকার একটি স্বকীয় পরিচিতি। পুরান ঢাকার প্রতিটি গলিতেই অন্তত একটি করে বাকরখানির দোকান আছে। খাবারটি এই অঞ্চলের নাশতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মো. আবেদ রুটিওয়ালার বাকরখানি বশির মিয়ার দোকানের ঠিক আগের দোকানে বিক্রি হয় বাকরখানি। প্রায় ১৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে ব্রিটিশ শাসনামলে এটি প্রতিষ্ঠা করেন মো. আবেদ রুটিওয়ালা। বর্তমানে তাঁর তৃতীয় প্রজন্ম এর দায়িত্বে রয়েছে। তবে মূল পরিচালনার কাজ করছেন মো. আজগর মিয়া। এখানে একইসঙ্গে ভালো মানের চা পাওয়া যায়। একই ধরনের অন্যান্য দোকানের সঙ্গে এর পার্থক্য এটাই। তাই চা-বাকরখানির প্রসিদ্ধ সমন্বয় উপভোগ করা যায় এখানে। আলাদাভাবে বাকরখানি কিনে চায়ের দোকানে গিয়ে বসতে হবে না। সব দোকানেই চিনি ছাড়া ও চিনিসহ দুই ধরনের বাকরখানি পাওয়া যায়। মূল্য প্রতি পিস পাঁচ টাকা। পরিমাণে বেশি নিলে দোকানভেদে কিছুটা ছাড় পাওয়া যেতে পারে। 

ছ্যাকা পুরি নবাবগঞ্জ বাজার পেরিয়ে একটু এগোলেই একটি সরু গলির কোণে দেখা যায় ছ্যাকা পুরির একটি স্থায়ী দোকান। সরু একটি বেঞ্চের ওপর এর স্থাপনা। প্রায় ৩০ বছর ধরে এভাবেই চলছে এটি। এখানেই একটি ছোট্ট চুলায় অবিরাম তৈরি হচ্ছে ঝাল ঝাল ছ্যাকা পুরি। একইসঙ্গে রয়েছে পুদিনার তৈরি টক-ঝাল সস। শেষ বিকাল থেকেই এই পুরি বিক্রি শুরু হয়। দোকানের প্রতিষ্ঠাতা মো. আতিকুল্লাহ আড়াই বছর আগে মারা যাওয়ার পর থেকে তার কাছে দীক্ষা নেওয়া মো. ইব্রাহীম বর্তমানে একই রেসিপি ব্যবহার করে ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছেন। খুব সহজে নজরে না পড়লেও সবসময়ই এখানে ভিড় থাকে।

ছবি: লেখক

আরও পড়ুন-
পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের খানাপিনা
পুরান ঢাকার অলিগলিতে: লালবাগ রোডের চা আর আড্ডা

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: নবাবগঞ্জ বাজার রোডে পেটপূজা

পুরান ঢাকার অলিগলিতে: খান মোহাম্মদ মির্জা মসজিদ ও আজিমপুর দায়রা শরীফ

 

 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ