X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে উত্তরা গণভবনে দর্শনার্থীদের ভিড়

কামাল মৃধা, নাটোর
০৬ জুন ২০১৯, ১৬:৩০আপডেট : ০৬ জুন ২০১৯, ১৬:৩৩

নাটোরের উত্তরা গণভবন নাটোর শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে ৪১ দশমিক ৫ একর জমির ওপর স্থাপিত উত্তরা গণভবন আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্য। দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এটি। ঈদের দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবারও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে এর সামনে। সকাল ৯টা থেকে গণভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন তারা। পায়ে হেঁটে, অটো চার্জারে উঠে কিংবা দূরপাল্লার বাসে চড়ে এসেছেন ভ্রমণপ্রেমীরা।

ঈদের দুই দিনই গণভবনের সামনে টিকিটের জন্য ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ৩০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে সংগ্রহশালটি ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে পৃথকভাবে সপরিবারে এসেছেন মাসুদ ও মেহেদী হাসান রন্টু। গণভবনের অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেন তারা।

উত্তরা গণভবনের মূল ফটক পেরোলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির সারি সারি ফুলের গাছ। এগুলোতে ফুটে আছে নানান রঙের দৃষ্টিনন্দন ফুল। এসবের সঙ্গে মিনি চিড়িয়াখানা আর সংগ্রহশালা দেখে খুশি শিশু-কিশোররা।

রাজপ্রাসাদের চারপাশ ঘিরে থাকা ১০ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর ও ১৪ একর আয়তনের লেক, সিংহদুয়ারের ওপর স্থাপন করা বিশাল ঘড়ির ঘণ্টা, ইতালিয়ান গার্ডেনে শ্বেতপাথরের অপরূপ চারটি ভাস্কর্য, মার্বেল পাথরের আসনসহ সভা মঞ্চ, হৈমন্তী, পারিজাত, ম্যাগনোলিয়াসহ অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষ দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ।

মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে বানর, ময়ূরসহ দেশি-বিদেশি পাখি। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ সাপের অভয়ারণ্য। এছাড়া রানীমহলে দেশি-বিদেশি আকর্ষণীয় ফুলের গাছগুলোর থোকা থোকা ফুল দৃষ্টিনন্দন। মাঝে পায়ে হাঁটার পথ রেখে দু’দিকে ফুলের গাছ লাগানোর ফলে স্থানটি দৃষ্টি কাড়ে ভ্রমণপ্রেমীদের। পাশেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে রোপণ করা ‘হৈমন্তী’ গাছটি ফুলে ফুলে সুশোভিত।

স্থানীয় দোকানিরা জানান, দর্শনার্থী বেশি হওয়ায় তাদের বিক্রি বেড়েছে। ঈদের দিন দিবাগত রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত বেচাকেনায় ব্যস্ত ছিলেন তারা।

গণভবন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক শাহ রিয়াজ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি। তাদের জন্য ঈদের আগেই রঙ দেওয়ার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে গণভবনের সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে। আর নিরাপত্তার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক মনিটরিং করা হচ্ছে।

মূল প্যালেস ও ইতালিয়ান গার্ডেনের মাঝের ভবনটিতে রয়েছে সংগ্রহশালা। রাজা-রানির ছবি, রাজকুমারী ইন্দুমতির নিজ হাতে লেখা ২৮৫টি চিঠি, রাজপরিবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী, চাকাওয়ালা চেয়ার, টেবিল, সিংহাসন, দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের ইতিহাসের মতো ঐতিহাসিক সব নিদর্শন সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে। সংগ্রহশালার করিডোরে রয়েছে রাজা প্রমদানাথ রায় ও সস্ত্রীক রাজা দয়ারাম রায়ের ছবি, সঙ্গে রাজবাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণ। রয়েছে মার্বেল পাথরের রাজকীয় বাথটাব। রাজার পালঙ্ক, ঘূর্ণায়মান চেয়ার, টেবিল, আরাম চেয়ার আর ড্রেসিং টেবিল দিয়ে পাশের ঘরটি যেন রাজার শয়নকক্ষের প্রতিরূপ।

বাঁ-পাশের দ্বিতীয় কক্ষের শোভা রাজ সিংহাসন, রাজার মুকুট ও গাউন। আরও আছে মার্বেল পাথরের থালা, বাটি, কাচের জার, পিতলের গোলাপ জলদানি আর চিনামাটির ডিনার সেট। এই কক্ষে রয়েছে রাজপরিবারের লাইব্রেরির বই আর শেষ রাজা প্রতিভা নাথ রায়ের ইন্স্যুরেন্স বিষয়ক কাগজপত্র।

পাশের কক্ষটি রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা চৌধুরানির বিভিন্ন সামগ্রীতে সুশোভিত। ইন্দুপ্রভার একটি ছবি রাখা হয়েছে পিতলের একটি ফ্রেমে। তার ব্যক্তিগত ডায়েরি, আত্মজীবনী, পাণ্ডুলিপি, তাকে লেখা স্বামী মহেন্দ্রনাথ চৌধুরীর রাশি রাশি চিঠি ও সেগুলো রাখার পিতলের স্যুটকেস দেখার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। ইন্দুপ্রভার লেখা ‘বঙ্গোপসাগর’ কবিতাটি ফ্রেমে বাঁধাই করে দেয়ালে টানানো হয়েছে। ৬৭ লাইনের এই কবিতায় বঙ্গোপসাগরের অপরূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন তিনি।

সংগ্রহশালার ১০টি কক্ষের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের ব্যবহৃত দৃষ্টিনন্দন সব আসবাবপত্র। এর মধ্যে রয়েছে ডিম্বাকৃতি, গোলাকার, অষ্টভুজাকৃতি, চতুর্ভুজাকৃতি ছাড়াও দোতলা, প্রসাধনী ব্যবহারের উপযোগী ও কর্নার টেবিল, গার্ডেন ফ্যান কাম টি-টেবিল।

উত্তরা গণভবনের সংগ্রহশালায় রয়েছে ১৬৭ বছরের পুরনো সোনার প্রলেপযুক্ত বই ‘বানিয়ানস পিলগ্রিনস প্রোগ্রেস’। এর প্রচ্ছদ ও পৃষ্ঠার বাঁধানো পাশ ছাড়া অন্য তিন পাশ সোনার প্রলেপযুক্ত। বইটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানচিত্র ‘ভিক্টোরিয়া অ্যাটলাস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, রাজার স্মৃতিবিজড়িত একটি দেয়াল ঘড়ি ও কলিংবেল সংগ্রহশালাকে দান করে দিঘাপতিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া স্কুলের পক্ষ থেকে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের সবশেষ রাজা প্রতিভানাথ রায়ের বড় ছেলে প্রভাত কুমার রায়ের ১৯৯৭ সালের দুটি ছবি দেওয়া হয়।

জানা যায়, ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম রায় নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এটি। এরপর ১১ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, চিত্রশিল্পী ও কারিগরদের পরিশ্রমের ফল হিসেবে গড়ে ওঠে এই নয়নাভিরাম রাজপ্রাসাদ।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাস হলে প্রাসাদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৯৬৬ সালে ইস্ট পাকিস্তান হাউস ও ১৯৬৭ সালে গভর্নর হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে বেড়াতে আসেন। তিনি তখন এটিকে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলীয় বাসভবন হিসেবে ‘উত্তরা গণভবন’ নাম দেন।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী ভবনটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুযোগ সংকুচিত ছিল। ২০১২ সালে এই রাজবাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন প্রবেশমূল্য ছিল ১০ টাকা। কিন্তু তারা রাজবাড়ির মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা দেখতে পেতেন। পরে এতে প্রবেশের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২০ টাকা। গত বছরের ৯ মার্চ রাজবাড়ির ট্রেজারি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহশালা উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। এ সময় গণভবনের ৮০ ভাগ এলাকা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫