X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

‘২০০ টাকা দিলেই সব মুসিবত সমাধান!’

ওয়ালিউল বিশ্বাস
৩১ জুলাই ২০১৯, ২৩:৫১আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৯, ০০:১২

ভারতে সীমান্তে তিস্তা নদী চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন অফিস। আশ্চর্যজনকভাবে এখানে লোকজনের বসার জন্য ওয়েটিং রুম আছে! এর আগে বেনাপোল দিয়ে ভারত গেলেও এমন সুবিধা দেখিনি। ওয়েটিং রুমে সাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা নিজের হাত নিজে ধরেই বসে আছেন। তিনি লেখক মানুষ। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্মেলনে দাওয়াত পেয়ে উড়োজাহাজে চড়ে যান। সুন্দরী বিমানবালারা ১০ মিনিট পর পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। গলা ভাঁজ করে এনে বলেন, ‘স্যার কিছু লাগবে?’ আশিকের জবাব দিতে হয় না, হাসি দিয়েই অনেক কথা তিনি সেরে ফেলেন!

এখানে তেমন কিছুই নেই। ইমিগ্রেশন অফিসারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্যান্টের পা ভাঁজ করে রাখা এক ‘দালাল’। আর কয়েকজন একই ধরনের লোকজন ভিড় করছে। ২০০-২৫০ টাকা ঘুষের বিনিময়ে কাজ সেরে দেন তারা। ইমিগ্রেশনে তিনজন কর্মকর্তা বসা। তাদের আচরণও তেমন সুবিধার মনে হলো না। তবে আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। মানুষকে পড়ার জন্য বোধহয় তারা আলাদা তরিকা অনুসরণ করেন!

সিকিম ট্যুরের জন্য শুরুতে পাঁচজনের একটি দল গড়তে চেয়েছিলাম। এর মধ্যে একজন ভিসা হাতে পায়নি। একজন ব্যবসায়ী। সময় গণনা করে বলেছে, এখন যাওয়াটা তার জন্য লাভজনক নয়। ব্যবসায়ীদের অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। ধরে নিয়েছিলাম তিনজন। কিন্তু সেটাও হয়নি। শেষের জন নতুন বিয়ে করেছে। ভিসা যেদিন পেয়েছে, সেদিন বউ কোনও ইঙ্গিত না দিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে। অগত্যা ওই বন্ধুর সিকিম যাওয়া বাতিল।

চ্যাংড়াবান্ধা চেকপোস্ট ও ভারতীয় সীমান্তে মুদ্রা ভাঙানোর দোকান আগেই শুনেছিলাম সিকিম যাওয়ার জন্য গ্রুপ লাগবে। ওয়েটিং রুমে বসে তাই ভাবছি, এখান থেকেই হয়তো ঝক্কি-ঝামেলা শুরু। সামনে তাকিয়ে দেখি, সেই দালাল হাত উঁচু করে লাফাচ্ছে। মানে আমাদের সিরিয়াল এসে গেছে। আমার সামনে যে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা, তার কপাল ভাঁজ হয়ে আছে। আমার কাগজপত্র চেক করা হলো। তারপর তিনি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, ‘এনওসি কোথায়? এটা দিন।’

কাগজটা আমার সঙ্গে নেই। বুঝলাম, আজ খবর আছে! ঘড়িতে সকাল মাত্র সাড়ে ৯টা। পত্রিকা অফিস মূলত শুরু হয় দুপুরে। এত সকালে ফোন করে এনওসি নতুন করে ম্যানেজ করা কঠিন। এর চেয়ে অপেক্ষা করবো কিনা ভাবছি। আমাদের কোনও তাড়া নেই। অপেক্ষা করলেও চলে। তবে তাড়া আছে যিনি আমাদের সহযোগিতা করছেন, তার। মাঝে মধ্যে মিহি সুরে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন তিনি। যেমন– ‘এটা ছাড়া আপনাদের ভারতে যেতে দেবে না, আমার কাজ আছে যেতে হবে, তাড়াতাড়ি করেন’, ইত্যাদি।

চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত পার হওয়ার পর লেখক তবে মানুষ হিসেবে তিনি ভালো। কারণ এর পরপরই বলছেন, ‘ঝামেলার কিছু হবে না, খালি ২০০ টাকা দিলেই সব মুসিবত সমাধান!’ উপায়ন্তর না দেখে আমাদের অফিসের পরোপকারী অ্যাডমিন কর্মকর্তা আলমগীর ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি আমাকে ফোনে রেখেই জাদুকরের মতো দুই মিনিটে নতুন এনওসি লিখে আমাকে পাঠিয়ে দিলেন।

দালালের মুখ নিমিষেই চুন হয়ে গেলো! এবার গেলাম ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে। তিনি এনওসি হাতে নিলেন। লোকটা যে কেমন নাছোড়বান্দা তা টের পেলাম। মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এনওসি পড়লেন। আমি অপেক্ষা করছি নতুন কোনও ভুল পাওয়ার। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, তিনি পাসপোর্ট হাতে নিয়ে বললেন, ‘যান!’

এরপর পা রাখলাম ভারতের মাটিতে। একটু দূরে খাকি পোশাক পরা দাদারা অপেক্ষা করছেন। বলা যায়, এখান থেকেই শুরু হলো সিকিম ভ্রমণ... (চলবে)

ছবি: আশিক মুস্তাফা

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন