X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আস্ত উড়োজাহাজই রেস্তোরাঁ!

ওয়াসিদ রাজা
০১ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৪৪আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৪৪

ভোজনরসিকদের কবজি ডুবিয়ে খেতে নির্দিষ্ট কোনও সময় লাগে না! সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা কিংবা রাত– নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিতে মাইলের পর মাইলও ছুটে বেড়ান অনেকে। সেই খাবারের স্বাদ যদি ৩০ হাজার ফুট ওপরে নেওয়া যায়, তাহলে? আকাশপথে যারা যাতায়াত করেন, তারা হয়তো বলবেন, ‘এ আর এমন কী!’

উড়োজাহাজে হরেক রকম খাবারের স্বাদ দিতে অনেক এয়ারলাইনস তো নামিদামি শেফ নিয়োগ দেয়। আকাশপথে রোমাঞ্চকর ভ্রমণের পথে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট ওপরে খাবারের স্বাদ নেওয়াটা প্রথমবার বিমানে চড়া যাত্রীর জন্য অন্যরকম অনভূতির। এই ব্যাপারটি যদি একটু অন্যরকম হয়?

ধরুন, আপনি উড়োজাহাজেই খাবার খাচ্ছেন, কিন্তু মাটিতে থেকেই, তাহলে? যেখানে আস্ত উড়োজাহাজই রেস্তোরাঁ! অব্যবহৃত কিংবা নষ্ট উড়োজাহাজকে রূপান্তর করে বানানো হয়েছে এমন কিছু রেস্তোরাঁ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এমন কিছু খাবারের দোকান নিয়ে এই আয়োজন।

এল আভিয়ন এল আভিয়ন (মানুয়েল আন্তোনিও, কোস্টারিকা)
স্প্যানিশ শব্দ ‘এল আভিয়ন’-এর অর্থ হলো বিমান। এতে মূলত রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। খাবারের বিষয়ে যাওয়ার আগে এই রেস্তোরাঁর ইতিহাস জানা জরুরি। ফায়ারচাইল্ড সি-১২৩ বিমানকে বানানো হয়েছে এই রেস্তোরাঁ। কোস্টারিকার জঙ্গল থেকে এটি আনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র বিমানটি কিনেছিল কন্ট্রাসের জন্য, যারা আশির দশকে নিকারাগুয়ার সেই সময়কার সরকারবিরোধী একটি দল। তাদের মাধ্যমে নিকারাগুয়ার অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার ওপর ‘এল আভিয়ন’ বিমান দিয়ে নজরদারি করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ১৯৮৬ সালে এটি ভূপাতিত করে নিকারাগুয়া।

সেই থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এর খোঁজ-খবর আর কেউ রাখেনি। সেই ‘এল আভিয়ন’ এখন ভোজনরসিকদের গন্তব্যস্থল। এই শতাব্দীর শুরুতে বিমানটি কিনে খাবারের দোকানে রূপ দেওয়া হয় কোস্টারিকায়।

যে রেস্তোরাঁর সঙ্গে এমন ইতিহাস জড়িয়ে আছে, সেখানে গিয়ে প্রতিদিনই অসংখ্য খাবারপ্রেমী ভিড় জমান। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে উৎসবে মেতে ওঠেন।

লা তান্তে ডিসি-১০ লা তান্তে ডিসি-১০ (আকারা, ঘানা)
১৯৮৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আকাশে উড়ে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতো ম্যাকডোনেল ডগসাল ডিসি-১০। ঘানা এয়ারওয়েজের বিমানটির আকাশে ওড়া বন্ধ হলেও সেবা দেওয়া থামেনি। এখন ভোজনরসিকদের চাহিদা মেটানো হয় এতে। প্রথম শ্রেণির জায়গাটি খাবার খেতে আসা মানুষদের ‘ওয়েটিং’ এলাকা। আর ইকোনোমি শ্রেণিকে ড্রিংকস ও ডিনারের জন্য সাজানো হয়েছে। বাকিটা আছে আগের মতোই। টেবিলের নিচে পা রাখার জায়গা অবশ্য আরও বাড়ানো হয়েছে।

হাওয়াই আড্ডা হাওয়াই আড্ডা (লুধিয়ানা, ভারত)
বিশ্বের অন্য উড়োজাহাজ রেস্তোরাঁগুলোর চেয়ে হাওয়াই আড্ডা আলাদা। এটি অনেক আকর্ষণীয় ও বিলাসবহুল। এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিমানে অনেক ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তবে সেখানে ভেজিটেরিয়ান খাবারেরই আধিপত্য। ভারতের সবচেয়ে বিলাসবহুল ট্রেন মহারাজ এক্সপ্রেসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাপ রয়েছে হাওয়াই আড্ডার সাজসজ্জা ও বিলাসিতায়। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের প্রথম রেস্তোরাঁ বলে কথা!

স্টিকস অন অ্যা প্লেন স্টিকস অন অ্যা প্লেন (বোল্টন, যুক্তরাজ্য)
ডানাবিহীন বোয়িং ৭৩৭ স্টিকস অন অ্যা প্লেনের অবস্থান ও ভেতরের সৌন্দর্য এককথায় মুগ্ধকর। বিশেষ করে জানালা কিংবা ওপরের দিকের লাইটিং। বিমানের সবকিছু ঠিক রেখে সাজসজ্জায় আনা হয়েছে নতুনত্ব। আসন সরিয়ে বসানো হয়েছে রেস্তোরাঁর মতো টেবিল ও বসার জায়গা। রেস্তোরাঁটির সবচেয়ে উপভোগ্য বিষয় হলো ককপিট। বিমানের অনেক অংশে পরিবর্তন আনা হলেও ককপিট রাখা হয়েছে আগের মতোই। তাই বোল্টনের রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে ককপিটকে পেছনে রেখে ছবি তোলেননি এমন লোক পাওয়া যাবে না!

রানওয়ে ওয়ান (হরিয়ানা, ভারত)
শুধু হাওয়াই আড্ডা নয়, ভারতের হরিয়ানায় গিয়েও উড়োজাহাজ রেস্তোরাঁ দেখা ও খাওয়ার শখ পূরণ করা যাবে। ওখানে রয়েছে ‘রানওয়ে ওয়ান’ নামের রেস্তোরাঁ। অবশ্য ‘হাওয়াই আড্ডা’ দেখেই ২০১৭ সালে তৈরি হয় এটি।

দ্য এয়ারপ্লেন রেস্টুরেন্ট দ্য এয়ারপ্লেন রেস্টুরেন্ট (কলোরাডো স্প্রিংস, যুক্তরাষ্ট্র)
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোয় অবস্থিত এই উড়োজাহাজ রেস্তোরাঁ ১৯৫৩ সালের বোয়িং কেসি-৯৭ ট্র্যাঙ্কার দিয়ে বানানো হয়েছে। ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে ‘দ্য এয়ারপ্লেন রেস্টুরেন্ট’। আভিজাত্য ও ঐতিহ্যে ভোজনরসিকদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে রূপ দেওয়া হয়েছে এই বিমানকে। উড়োজাহাজের আসন নয়, রেস্তোরাঁর আদলেই বানানো হয়েছে বসার জায়গা। টানেলের ভেতর দিয়ে লম্বা করে সাজানো চেয়ার-টেবিলের একেবারে সামনে আছে ককপিট।

ম্যাকডোনাল্ডস ম্যাকডোনাল্ডস (টাউপো, নিউজিল্যান্ড)
নিউজিল্যান্ডের টাউপোতে অন্যতম আকর্ষণীয় ম্যাকডোনাল্ডস। যদিও এর বাইরের দিক দেখে পর্যটকরা ধন্দে পড়ে যেতে পারেন। বোঝার উপায় নেই এটি একটি রেস্তোরাঁ! ডগলাস ডিসি-৩ বিমানকে খাবারের দোকানে রূপ দেওয়া হয়েছে। পাখার অংশ পুরোটা লাল। আর অবয়বে সাদার মধ্যে লাল স্ট্রিপ। এতে বড় করে লেখা ‘ম্যাকডোনাল্ডস’।

সূত্র: সিএনএন

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা