X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে আসুন অপরূপ সেন্টমার্টিন দ্বীপ (ভিডিও)

জার্নি রিপোর্ট
২৯ আগস্ট ২০১৯, ২২:২৯আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ২২:৩৯

সেন্টমার্টিন দ্বীপ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কি.মি দক্ষিণে গড়ে ওঠা ছোট দ্বীপ এটি। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে ৮ কি.মি পশ্চিমে নাফ নদীর মুখে এর অবস্থান। স্থানীয়রা এটিকে ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামে চেনে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ সমতল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩ দশমিক ৬ মিটার ওপরে। মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপের মধ্যবর্তী ৯ দশমিক ৬৬ কি.মি প্রশস্ত প্রণালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের উন্মুক্ত সাগরের তুলনায় অনেক অগভীর। এখানে পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে ১০-১৫ কি.মি প্রবাল প্রাচীর। ভৌগলিকভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্ত।
উত্তরাঞ্চলীয় অংশকে বলা হয় নারিকেল জিনজিরা বা উত্তর পাড়া, এই অংশ ২ হাজার ১৩৪ মিটার দীর্ঘ ও ১ হাজার ৪০২ মিটার প্রশস্ত। দক্ষিণাঞ্চলীয় অংশটি দক্ষিণ পাড়া হিসেবে পরিচিত, যা ১ হাজার ৯২৯ মিটার দীর্ঘ এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত একটি সংকীর্ণ লেজের মতো এলাকা, যার সর্বোচ্চ প্রশস্ততা ৯৭৫ মিটার। একটি সংকীর্ণ কেন্দ্রীয় অঞ্চল বা মধ্য পাড়া দুটি অংশকে সংযুক্ত করেছে। বেল্ট বা ফিতার মতো এই অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১ হাজার ৫২৪ মিটার ও ৫১৮ মিটার এবং সংকীর্ণতম অংশটি গলাচিপা নামে পরিচিত।

মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া নামে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। উত্তর পাড়ার মাঝামাঝি অঞ্চলে একটি অগভীর উপহ্রদ রয়েছে এবং জোয়ারের সময় পশ্চিম তীরের একটি সংকীর্ণ নদীখাতের মাধ্যমে এর সঙ্গে সমুদ্রের সংযোগ ঘটে। উত্তর পাড়ার পৃষ্ঠমৃত্তিকা গঠিত হয়েছে বালি ও ঝিনুক-শামুকের খোলস সহযোগে। দক্ষিণ পাড়া অঞ্চলে রয়েছে দুটি ক্ষুদ্র মৃত উপহ্রদ ও একটি বিস্তৃত জলাভূমি। মাছ সংগ্রহস্থল, বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু উত্তর পাড়াতেই অবস্থিত।

টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে নিয়মিত লঞ্চ ও দেশি নৌকা চলাচল করে। দ্বীপের অধিবাসীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০, যাদের অধিকাংশই মৎস্যজীবী। এই মৎস্যজীবী পরিবারের সংখ্যা ৫৩৫। দ্বীপে ১৮২টি বন্য জীব প্রজাতির অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বীপের উত্তরাংশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস পর্যটন মৌসুম। দ্বীপের সর্বাপেক্ষা ঘনবসতি পূর্ণ অংশ হলো জিনজিরা।

সমস্ত দ্বীপে স্বাদু পানির অভাব রয়েছে। শুধু অল্প কিছু পুকুর ও কিছুসংখ্যক নলকূপের মাধ্যমে সমগ্র দ্বীপে পানীয় জল আর চাষাবাদের জন্য স্বাদু পানি সরবরাহ করা হয়। সেন্টমার্টিনের প্রকৃত আনন্দ একরাত না থাকলে উপভোগ করা সম্ভব নয়। আরও ভালো হয় দুই রাত থাকলে। সেক্ষেত্রে একটি দিন ছেড়া দ্বীপের জন্য, আরেক দিন সেন্টমার্টিনের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

দ্বীপের কয়েক জায়গা বিশেষ করে পশ্চিম বিচ থেকে সাইকেল ভাড়া নেওয়া যায় ঘণ্টাপ্রতি ৬০-৮০ টাকায়। সাইকেল নিয়ে বিচ ধরে ঘোরা যাবে কিন্তু দ্বীপের সরু রাস্তায় ভ্যানের সঙ্গে চলতে পারবেন না। সেন্টমার্টিনে পিডিবি বা পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নেই। পুরোটাই জেনারেটর নির্ভর। রিসোর্ট-হোটেলগুলো সন্ধ্যা থেকে সাধারণত রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত জেনারেটর চালায়। দিনের বেলায় পানির পাম্প ছাড়ার জন্য কিছুটা সময় চালু রাখতে পারে। শীতকালে ফ্যান লাগে না বলে দিনে বিদ্যুতের অভাব টের পাওয়া যায় না। মোবাইল ফোন, ক্যামেরা ও ল্যাপটপ চার্জ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।

সেন্টমার্টিন যেতে হলে দেশের যেকোনও জায়গা থেকে প্রথমে চলে যান কক্সবাজার, সেখান থেকে বাসে চড়ে বা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে টেকনাফ যাওয়া যায়। টেকনাফের জাহাজঘাটে গিয়ে সি-ট্রাকের টিকিট কাটতে হবে। ভাড়া ৪৫০-৫৫০ টাকা (ফেরতসহ)। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব ৯ কি.মি। উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে হয় এখানে। শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকে, তাই এই সময় এখানে যাওয়া অনেক বেশি নিরাপদ। এই পর্যটন মৌসুমে এখানে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত কেয়ারি সিন্দবাদসহ বেশ কয়েকটি সি-ট্রাক চলাচল করে। সকাল ১০টায় এই নৌযান সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ও বিকাল ৩টায় ফিরে আসে। দ্বীপ থেকে জাহাজে চড়ে ফেরার সময় সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্যের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে!

সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য সেখানে না গেলে কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব নয়। দেশের সেরা এই স্থানে তাই বারবার ঘুরতে চলে যাওয়া যায়।

ভিডিও সম্পাদনা: নাঈম সিদ্দিকী, পাণ্ডুলিপি: আহসান রনি

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী