X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে আকাশলীনাকে ঘিরে আশার আলো

আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা
০৪ অক্টোবর ২০১৯, ২১:০০আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৯, ২২:৪৬

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। বিশ্বের একমাত্র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্টকে ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহ। সবুজের সমরোহে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকে বেড়াতে আসেন সুন্দরবনে।

খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবন। তবে সাতক্ষীরার অংশে পশ্চিম সুন্দরবন কিছুটা ব্যতিক্রম। সড়ক পথে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ দিয়েই কেবল সুন্দরবন দেখার সুযোগ রয়েছে।

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার একসময় সুন্দরবন অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের পেশা ছিল বন থেকে মধু আহরণ, নদী থেকে কাঁকড়া-মাছ ধরা, বনের গাছ কাটা। এসবের মাধ্যমে তারা পরিবার চালাতেন। তবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ পর্যটন খাতে ঝুঁকছেন। বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে তাদের অনেকের।

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার বদল দিয়েছে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান। এটি এখন সুন্দরবনের পর্যটনে অন্যতম আকর্ষণ। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এ যেন এক প্রাকৃতিক স্বপ্নপুরী। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জের চুনা নদীর তীরে ২০০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে এটি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু আকাশনীলা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারে আসেন।’

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার ইউএনও জানিয়েছেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে আকাশলীনায়। ভ্রমণপিপাসুরা উপভোগ করতে পারবেন জোয়ার-ভাটার সৌন্দর্য। এখানে পর্যটকদের আবাসন সুবিধার জন্য কটেজ আছে। পর্যটকদের জন্য ওয়াচ টাওয়ার আছে। যার মাধ্যমে সুন্দরবন ওপর থেকে দেখা যাবে। সাবেক বিভাগীয় কমিশনারের (বর্তমান নৌ-পরিবহন সচিব) নামে এখানে আছে আব্দুস সামাদ মিউজিয়াম। এতে নানান প্রজাতির মাছ ও জীবজন্তু আর সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে বাওয়ালীদের ব্যবহৃত নৌকা ও মাছ ধরার সরঞ্জাম আছে। এর চারপাশে দেখা যায় কেওড়া গাছের সারি।’

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের উন্নয়নে পর্যটন করপোরেশনের অধীনে বরাদ্দ পেয়েছেন বলে জানান ইউএনও। তার আশা, শীত মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবন ও আকাশলীনায় বেড়াতে আসবেন। তাদের জন্য ৬০টি গাড়ি রাখতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার শুধু আকাশলীনা নয়, শ্যামনগরে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট ও সরকারি-বেসরকারি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র, তালা উপজেলায় খোলা জানালা ইকোপার্ক, পাটকেলাঘাটায় নীলিমা ইকোপার্ক, মোজাফফর গার্ডেন, উড়াল উড়াল মন ট্যুরিজম, কারামোরা ম্যানগ্রোভ ভিলেজ।

সুন্দরবন সুন্দরবনের পাশে মুন্সিগঞ্জে পর্যটকদের থাকা-খাওয়া ও ঘোরাফেরার সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে জোয়ার, সুশীলন, বরষা ও ক্যারাম মুরা ইকোপার্ক। ফলে এই এলাকায় দিন দিন পর্যটক সমাগম বাড়ছে। একইসঙ্গে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার স্থানীয় বাসিন্দা অসিত মণ্ডল বলেন, ‘আগে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরা আর গাছ কেটে বাজারে বিক্রি করতাম। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনে যেতে হতো। কারণ বাঘ-কুমিরসহ সুন্দরবন বিভিন্ন জীবজন্তুর আক্রমণে প্রাণ দিতে হয়েছে এই এলাকার অনেককে। আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার গড়ে ওঠায় আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন অনেক পর্যটক সুন্দরবনে ঘুরতে আসেন, তাদের নৌকায় ঘুরিয়ে বন সম্পর্কে ধারণা দেই। তারা আমাদের পারিশ্রমিক দেন, তাতে মোটামুটি সংসার চলে যায়।’

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ পীযূষ বাউলিয়া পিন্টু জানান, ২০১৬ সালে পর্যটনবর্ষ ঘোষণার পরই সুন্দরবনের পাদদেশে গড়ে উঠেছে আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার। এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যেসব মানুষ সুন্দরবনের গাছ কাটার ওপর নির্ভরশীল ছিল তারা এখন পর্যটকদের গাছ দেখিয়ে সংসার চালান। মাছ-কাঁকড়া আহরণ বাদ দিয়ে স্থানীয়রা এখন নৌকায় পর্যটকদের সুন্দরবন ঘুরিয়ে রোজগার করেন। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল অনেকে এখন চা, মুড়ি, আচারসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আকাশলীনার মাধ্যমে এখানকার বাসিন্দাদের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখানে অনেক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে।’

আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার পীযূষ বাউলিয়া পিন্টু মনে করেন, স্থানীয়রা একেকজন সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও ট্যুর গাইড। তার কথায়, ‘এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে আছে সুন্দরবন। তারা সুন্দরবন সম্পর্কে সব তথ্য জানেন। সেই অভিজ্ঞতার সুবাদে অনেকে এখন কাজ করে পরিবার চালাচ্ছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা থাকলে এই অঞ্চলের ইকো-ট্যুরিজম সিস্টেম ও পর্যটন খাতের উন্নয়ন হবে।’

সুন্দরবন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ পর্যটনের দিকে ঝুঁকছেন। বেকার তরুণরা ট্যুর গাইডসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থান পাচ্ছে। সরকারিভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

সুন্দরবন ইউএনও মো. কামরুজ্জামানের আশ্বাস, আগামীতে শ্যামনগরে পিকনিক স্পট ও শিশুপার্ক গড়ে তোলা হবে। এছাড়া এই অঞ্চলে হোটেল-মোটেল ছাড়াও ভাসমান রেস্তোরাঁ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সুন্দরবন এলাকার আদিবাসীদের সম্পৃক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে পর্যটকরা আদিবাসীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।

রূপসী ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সাতক্ষীরার কলাগাছিয়া এলাকা সুন্দরবনের পর্যটনে আরেক আকর্ষণ। তবে জেলার রাস্তাঘাট নাজুক থাকায় দুর্ভোগে পড়েন পর্যটকরা। সুন্দরবনে বেড়াতে আসা ইমরান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার অসাধারণ। এখান থেকে সুন্দরবন খুব ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। কিন্তু রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। সুন্দরবন সম্পর্কে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি।’

রূপসী ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। পর্যটকদের কাছে সাতক্ষীরাকে আকর্ষণীয় করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আকাশলীনা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারসহ সব পর্যটন স্পটের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ জেলায় ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে এখন পর্যটন খাতে ঝুঁকছে।’


/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা