মিসরের ২২০০ বছরের পুরনো মন্দির আবিষ্কার করলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ছিল ফেরাউন চতুর্থ টলেমির। মিসরের টলেমায়েক রাজবংশের চতুর্থ ফেরাউন তিনি। পাথরের শিলালিপি পর্যবেক্ষণ করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা দ্রুতই তার নাম বের করেন।
নীলনদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত সোহাজ শহরের তামা পৌরসভার কম শাকাউ গ্রামে ড্রেনে কাজ করার সময় আকস্মিকভাবে প্রাচীন কাঠামোটি খুঁজে পান নির্মাণ শ্রমিকরা। আবিষ্কারের পরপরই ড্রিলিং কাজ স্থগিত করা হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানায় মিসরের পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞরা এখন মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ রক্ষার্থে কাজ করছেন।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত চুনাপাথরের কাঠামোটির উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম দেয়াল আর দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নার উন্মোচিত হয়েছে। এগুলোতে খোদাই রয়েছে নীলনদের বার্ষিক বন্যার মিসরীয় দেবতা। তার চারপাশে পাখি ও ফুল।
ধারণা করা হয়, ২২১ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ২০৪ খ্রিষ্টপূর্ব পর্যন্ত মিসরে রাজত্ব করেছিলেন রাজা চতুর্থ টলেমি। তবে তার শাসনামল সফল ছিল না। সিংহাসনের চেয়ে খেলাধুলা ও শিল্পকলায় বেশি আগ্রহী ছিলেন তিনি।
প্রাচীন পুস্তকে আভাস পাওয়া যায়, ফেরাউন চতুর্থ টলেমি ইতিহাসের বৃহত্তম জাহাজ তৈরি করেছিলেন, যা মানব-চালিত। এর নাম রাখা হয় ‘ফোর্টি’, গ্রিক ভাষায় ‘তেসারাকোনতেরেস’। জাহাজের গ্যালিতে ৪০টি দাঁড় টানার জায়গা ছিল। এগুলো চালাতেন ৪ হাজার মাঝি-মাল্লা।
২০১৯ সালে মিসরে ধারাবাহিকভাবে চালানো প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের সবশেষ আবিষ্কার প্রাচীন মন্দিরটি। ২০১১ সালের বিপ্লবের কারণে সংকটে পড়া দেশটির পর্যটনের বিকাশে খনন কার্যক্রম শুরু হয়। আশার কথা হলো, জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) ২০১৮ সালের ট্যুরিজম হাইলাইটস রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুত পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশ্বের এমন ১০টি দেশের তালিকার শীর্ষে আছে মিসর।
গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর মধ্যে আছে টলেমায়েক রাজবংশের (৩২৩-৩০ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়কার আটটি মমি, কায়রোর দক্ষিণে সাকারার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে ৪৪০০ বছর আগের পুরনো একটি সমাধি, সোহাজ শহর থেকে চার মাইল দূরে আখমিম এলাকায় ইঁদুর, বিড়াল, ঈগল, বাজপাখিসহ অর্ধশত পশু-পাখির মমি, নীল নদের কাছে প্রাচীন বন্দর, পিরামিড চত্বর গিজার কাছে ৪ হাজার বছরের পুরনো সমাধি, দক্ষিণ মিসরীয় শহর আসওয়ানের একটি সমাধিতে ফেরাউন ও গ্রেকো-রোমান সময়কালের (খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে চতুর্থ শতাব্দী) নারী, পুরুষ ও শিশুর ৩৪টি মমি।
প্রাচীন এসব সম্পদ আবিষ্কারের সুবাদে মিসরে নতুন জাদুঘর নির্মাণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া বহুল প্রতীক্ষিত গ্র্যান্ড ইজিপ্টিয়ান মিউজিয়ামের কাজ শেষের পথে। এটাই হতে যাচ্ছে কোনও একটি একক সভ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ জাদুঘর। ২০২০ সালের মাঝামাঝি এর উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র: সিএনএন ট্রাভেল