X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবীর দীর্ঘতম ফ্লাইটে ১৯ ঘণ্টা কীভাবে কাটালেন যাত্রীরা

জনি হক
২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:১৪

কোয়ান্টাসের উড়োজাহাজ ইতিহাস গড়েছে কোয়ান্টাস। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে রওনা দেওয়া দীর্ঘতম বিরতিহীন বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পতাকাবাহী এই বিমান সংস্থা। রবিবার (২০ অক্টোবর) সিডনিতে সফলভাবে অবতরণ করে এটি। এজন্য লেগেছে ১৯ ঘণ্টা ১৬ মিনিট।

পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটি জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ১৮ অক্টোবর স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২৭ মিনিটে উড্ডয়ন করে। আজ অস্ট্রেলীয় সময় সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটে সিডনি বিমানবন্দরের মাটি ছুঁয়েছে কোয়ান্টাসের বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ। সব মিলিয়ে পুনরায় জ্বালানি না নিয়েই ১০ হাজারেরও বেশি মাইল (১৬ হাজার ২০০ কিলোমিটার) পাড়ি দিয়েছে এটি। অন্য কোনও বিমান সংস্থার এই অর্জন নেই।

যোগব্যায়াম করছেন যাত্রী ও কেবিন ক্রুরা কম ওজন নিয়ে দীর্ঘযাত্রার পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। এজন্য উড়োজাহাজে যাত্রী ছিলেন ৫০ জন। তাদের বেশিরভাগই কোয়ান্টাসের কর্মী। তারা উড়োজাহাজে উঠে নিজেদের ঘড়ির কাঁটা সিডনির সময় অনুযায়ী সাজিয়ে নেন। পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় রাত নামার আগ পর্যন্ত জেগেই ছিলেন সবাই। যোগব্যায়াম, শরীরচর্চা, কফিতে চুমুক ও মসলাদার খাবার খেয়ে সময় কেটেছে তাদের।

কোয়ান্টাসের খাবার নিউ ইয়র্ক থেকে ওড়ার ছয় ঘণ্টা পর যাত্রীদের উচ্চকার্বোহাইড্রেট খাবার দেওয়া হয়। যেমন টমেটো স্যুপ, চীনা বাধাকপি দিয়ে রান্না করা গরুর মাংস, ভাত, আচার ইত্যাদি। ওয়াইন কিংবা এমন পানীয় পরিবেশন করেননি কেবিন ক্রুরা। তবে অনুরোধ করলে মান্ডালা ২০১৮ শারডোনে ও লিওগেট শিরাজ ২০১৫ পানীয় পেয়েছেন যাত্রীরা। আসনের সামনে টিভি পর্দা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের। এছাড়া রাতে আলো কমিয়ে রাখায় ঘুমাতে উৎসাহ পেয়েছেন তারা।

কোয়ান্টাস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালান জয়েস বলেন, ‘আমাদের গন্তব্য সিডনির দিনের সময়ের সঙ্গে মেলাতে প্রথম ছয় ঘণ্টা আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল। এর অর্থ সোজাসুজি জেটল্যাগ কমানো।’

ব্যায়াম করছেন যাত্রী ও কেবিন ক্রুরা ইউনিভার্সিটি অব সিডনির অধ্যাপক মারি ক্যারোল জানান, জেটল্যাগ এড়াতে সহযাত্রীদের নিয়ে দলবেঁধে ব্যায়াম করেছেন উড়োজাহাজে। তার প্রত্যাশা, স্বাভাবিক দিন কাটানোর পাশাপাশি যাত্রীদের রাতে ঘুম ভালো হবে। ফ্লাইটে থাকাকালে দারুণ ভালো সময় কেটেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তার কথায়, ‘গন্তব্য সময়ের সঙ্গে বিমান সংস্থা খাবার, পানীয়, ব্যায়াম ও আলোর শিডিউলের সামঞ্জস্য করতে পারে কিনা তা দেখতেই এমন পরীক্ষামূলক ফ্লাইট। আমরা ইকোনমি কেবিনে লাতিন ছন্দে নেচেছি।’

রেকর্ড গড়া ফ্লাইটটি কোয়ান্টাসের প্রজেক্ট সানরাইজের অংশ। দীর্ঘ রুটে বিরতিহীন ভ্রমণে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করাই এর লক্ষ্য। ২০ ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ের ফ্লাইটগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে অস্ট্রেলিয়ান সিভিল এভিয়েশন সেফটি অথরিটিকে এমন তথ্যাদি ভাগাভাগি করবে কোয়ান্টাস।

কোয়ান্টাসের দুই পাইলট বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য কোয়ান্টাসের বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজে ছয়জন স্বেচ্ছাসেবককে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আমেরিকান টেলিভিশন চ্যানেল সিএনবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটির দুই সপ্তাহ আগে ওই ছয় ব্যক্তিকে তাদের ঘুম ও খাবারের খতিয়ান রাখতে বলা হয়। এছাড়া সিডনি পৌঁছানোর পরের দুই সপ্তাহের ঘুমের হিসাবও জমা দিতে হবে তাদের।

ইউনিভার্সিটি অব সিডনির গবেষকরা উড়োজাহাজের ফাঁকা জায়গাগুলোকে ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহার করে আবহাওয়া, আলোক পরিকল্পনা, রেসিপি, ব্যায়াম ও জেটল্যাগের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন।

ইউনিভার্সিটি অব সিডনির অধ্যাপক স্টিফেন সিম্পসন মনে করেন, গবেষণাটি জেটল্যাগের ধরন বুঝতে গবেষকদের সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ‘দিনরাতের যে বৃত্ত রয়েছে সেই প্রাথমিক বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি, প্রস্থান ও আগমনের জায়গাগুলোর মধ্যে সময়ের বিশাল পার্থক্য থাকা এবং পশ্চিমের চেয়ে পূর্ব দিকে ভ্রমণের কারণে বেশি জেটল্যাগ অনুভূত হয়। তবে জেটল্যাগের অভিজ্ঞতার বেলায় একেকজন একেকরকম কথা বলেন। তাই জেটল্যাগ ও ভ্রমণের ক্লান্তি কী কী ভূমিকা রাখে তা জানতে আমাদের আরও গবেষণা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে আকাশপথে দীর্ঘযাত্রার প্রভাব কমানো যেতে পারে।’

কোয়ান্টাসের দুই পাইলটের মাথায় বিশেষ হেডব্যান্ড ফ্লাইটটিতে চারজন পাইলট পালা করে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া আরও দুই পাইলট কেবিনে ছিলেন। তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ হেডব্যান্ড পরতে দেওয়া হয়। পাইলটদের সতর্কতা রেকর্ড করতে ক্যামেরা বসানো হয় ককপিটে।

ঘুম নিয়ন্ত্রণ করা হরমোনে মেলাটোনিনের মাত্রা পরিমাপের জন্য মোনাশ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা যাত্রীদের মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছেন।

মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করছেন ড. ট্রেসি স্লেটেন কোয়ান্টাসের একজন মুখপাত্র জানান, দীর্ঘতম রুটে কীভাবে বিরতিহীন নিরাপদ ফ্লাইট পরিচালনা করা যায়, তা মূল্যায়ন করতেই নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনি গেছে তাদের উড়োজাহাজ।

কোয়ান্টাসের সিইও অ্যালান জয়েস জানান, শিগগিরই প্রতিদিন পৃথিবীর দীর্ঘতম বিরতিহীন ফ্লাইট চালু করা তাদের চূড়ান্ত ব্যবসায়িক লক্ষ্য। তার মন্তব্য, নিউ ইয়র্ক থেকে সফলভাবে সিডনি যাওয়া এভিয়েশন শিল্পের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এক ষংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনিতে বিরতিহীন উড়োজাহাজ নিয়ে যেতে পারা প্রথম বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা আমরাই।’

আইপ্যাডে যাত্রীদের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করছেন একজন কেবিন ক্রু আগামী মাসে লন্ডন থেকে সিডনিতে কোয়ান্টাসের দ্বিতীয় পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এরপর ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনি যাবে আরেকটি বিরতিহীন পরীক্ষামূলক ফ্লাইট।

পরীক্ষামূলক ফ্লাইটগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখে যদি মনে হয়, দীর্ঘতম বিরতিহীন ফ্লাইট যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হবে না তাহলে ২০২২ অথবা ২০২৩ সালে এটি চালু হওয়ার কথা। সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেন থেকে নিউ ইয়ক ও লন্ডনে এগুলো চলাচল করবে। এর ফলে যাত্রীদের মোট ভ্রমণ সময়ের মধ্যে চার ঘণ্টা সাশ্রয় হবে।

কোয়ান্টাসের পাইলট, কেবিন ক্রু ও একজন যাত্রী দীর্ঘতম ফ্লাইটের স্বাস্থ্যঝুঁকি
* ডিহাইড্রেশন: উড়োজাহাজের কেবিনে সাধারণত বাতাসের আর্দ্রতা থাকে ২০ শতাংশ। অর্থাৎ সাহারা মরুভূমির চেয়ে শুকনো। কফি কিংবা অ্যালকোহল পান করলে তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ১০ ঘণ্টার ফ্লাইটে পুরুষরা দুই লিটার পানি ও নারীরা ১ দশমিক ৬ লিটার পানি নির্গমন করতে পারেন। অ্যালকোহল এড়ালে শরীরে জল অবশিষ্ট থাকবে।

* সংক্রমণ: অন্যান্য সময়ের চেয়ে উড়োজাহাজে ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা ১০০ গুণ বেশি! আর্দ্রতা পরিবেশের কারণে মানুষ সহজে সংক্রমিত হয়। অপরিচিতদের সঙ্গে ২০ ঘণ্টার মতো থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।

* শিরা ও রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা: দীর্ঘ ভ্রমণে রক্তপ্রবাহ ধীরগতির হয়ে থাকে। এ কারণে আকাশপথে বেশিক্ষণ থাকলে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। তাই যাত্রীদের নিয়মিত কেবিনে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়।

* বিকিরণ: আকাশপথে ঘন ঘন চলাচলের কারণে পাইলট ও কেবিন ক্রুরা উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের মধ্যে থাকেন। এ কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়।

* ডায়রিয়া: বাতাসের চাপ শরীরে গ্যাস বৃদ্ধি করতে পারে। এ কারণে পেট ফুলে যাওয়া, ডায়রিয়া ও অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দেয়।

* মাথা ঘোরা: অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে সামান্য হালকা মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা ও হায়পোক্সিয়া দেখা দিতে পারে।

সূত্র: ডেইলি মেইল



/জেএইচ/
সম্পর্কিত
তলিয়ে গেছে দুবাই বিমানবন্দর, বিপাকে প্রবাসীরা
আ.লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালো বিমান
এভিয়েশন-ট্যুরিজম খাতে সম্মাননা পেলেন ১০ নারী
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা