X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

উলুরুর লাল পাহাড়ে শেষবার ওঠার সুযোগ পেয়ে পর্যটকদের সমুদ্র!

জনি হক
২৫ অক্টোবর ২০১৯, ২১:১৩আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৩৬

উলুরুর লাল পাহাড়ে আরোহণ করতে পর্যটকদের ভিড় অস্ট্রেলিয়ার উলুরুতে বিশাল লাল রঙা পাথুরে পাহাড় সারাবিশ্বের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এর উচ্চতা ১ হাজার ১৪২ ফুট। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার ও লন্ডনের শার্ডের চেয়ে উঁচু এটি। দর্শনার্থীদের কাছে একসময় ‘আয়ার্স রক’ হিসেবে এর পরিচিতি ছিল বেশি। হতাশার খবর হলো, অভিযাত্রীরা আর এতে আরোহণ করতে পারবেন না। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ছিল শেষ সুযোগ। এদিন শেষবারের মতো এতে উঠতে ভিড় জমায় বিপুলসংখ্যক পর্যটক। আগামীকাল শনিবার থেকে পাথরটিতে যাওয়া স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রেলীয় সরকার।

১৯৮৭ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয় উলুরু। শুক্রবার শত শত পর্যটক এই পাহাড়ে ট্রেকিং করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে অলিভার গর্ডন নামের একজন একটি ভিডিওতে মানুষের লম্বা লাইন ধরার চিত্র তুলে ধরেছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় পাহাড়ে ওঠার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবাই নেমে যাওয়ার পর আরোহীদের সহায়ক হিসেবে রাখা একটি ধাতব চেইন ভেঙে দেওয়া হবে বলে জানান পার্ক কর্তৃপক্ষ।
ভ্রমণপ্রেমীদের একটি দল রোদের উত্তাপ মাথায় নিয়ে শেষবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম স্বীকৃত জায়গাটিতে আরোহণ করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। সিডনির একজন দর্শনার্থীর ভাষায়, ‘চূড়ায় ওঠার পর মনে হয়েছে অন্য গ্রহে এসেছি!’
উলুরুর পাহাড়ে আরোহণের সুযোগ না রাখার দাবি ছিল উপজাতিদের উলুরু স্থানীয় আদিবাসী আনাঙ্গুদের কাছে পুণ্যভূমি। পাহাড়টিতে আরোহণ না করতে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন তারা। এমনকি বিভিন্ন ব্যানার ও সাইনবোর্ডের মাধ্যমে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা ছিল তাদের। কিন্তু কে শোনে কার কথা! পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার ইচ্ছেপূরণের জন্য ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড় ঠিকই দেখা গেছে।

আনাঙ্গু সম্প্রদায়ের রামেথ থমাস ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘উলুরু খুব পবিত্র জায়গা ছিল। এটি আমাদের কাছে গির্জাতুল্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এসে পাহাড়ের ওপর উঠে যায়। তারা কোনও সম্মান দেখায়নি।’

উলুরু-কাটা জুটা ন্যাশনাল পার্কের ম্যানেজার মাইক মিসো অস্ট্রেলিয়ার টিভি নেটওয়ার্ক এসবিএসকে জানান, দিনে হাজারের কাছাকাছি মানুষ এতে আরোহণ করেছে। ২০১৫ সালে উলুরুতে তিন লাখ পর্যটক সমাগম হয়। তাদের মধ্যে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ পাহাড়ে ওঠেন। দিনে এই সংখ্যা ছিল ১৩৫ জন। অবশ্য নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ২০১৭ সালে মাত্র ১৭ শতাংশ পর্যটক ওপরে উঠেছিলেন। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে ফের দর্শনার্থীরা চূড়ান্ত উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। গত কয়েক মাসে উলরুতে ওঠার জন্য পর্যটকদের সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি মাউন্ট এভারেস্টের প্রতি উন্মাদনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। কোনও কিছু বন্ধ বা শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে ভিড় লেগে যাওয়া স্বাভাবিকই। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

উলুরুতে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য পাহাড়ের কাছের ক্যাম্প ও হোটেলগুলো গত সপ্তাহে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। তবে পাহাড়ে ওঠার সময় পর্যটকরা যত্রতত্র তাঁবু গেঁড়ে ও বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষিত করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাই তারা চেয়েছিলেন, পাহাড়ে আরোহণের সুযোগ উঠে যাক। তাদের দাবি, ‘অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে পাহাড়ি পথ ক্ষয় হয়েছে। কাছের জলাশয়গুলো দূষিত হয়ে পড়েছে।’

অবশেষে আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম অবশেষে সফল সমাপ্তি হলো। পার্ক অস্ট্রেলিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘উলুরু, কাটা জুটা ও এখানকার ভূমি সবসময় বিশেষ। আমাদের পাশাপাশি আনাঙ্গুরা এগুলো দেখভাল করে। আদিবাসীদের চাওয়া পূরণ করতে পেরে আমরা গর্বিত।’

শেষবার উলুরুর লাল পাহাড়ে ওঠার সুযোগ পেয়ে পর্যটকদের ভিড় বিভিন্ন কারণে উলুরুর লাল পাহাড়ে আরোহণ নিষিদ্ধ করেছে অস্ট্রেলীয় সরকার। এর মধ্যে অন্যতম প্রবল বাতাস। এ কারণে শুক্রবারও হিমশিম খেতে হয়েছে অভিযাত্রীদের। এছাড়া গ্রীষ্মে এলাকাটির তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। এ কারণে ডিহাইড্রেশনসহ তাপসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দর্শনার্থীদের। পঞ্চাশের দশক থেকে অন্তত ৩৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এতে। এখানে হাঁটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে খাড়া ও পিচ্ছিল পথ সবচেয়ে বিপজ্জনক। অনভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের জন্য ব্যাপারটা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে আহত হওয়ার ঘটনা দেখা যেতো অহরহ। গত বছর পাহাড়ের একটি খাড়া অংশে আরোহণের চেষ্টার সময় মৃত্যুবরণ করেন জাপানের ৭৬ বছর বয়সী একজন পর্যটক।

বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক আশ্চর্য ভাবা হয় উলুরুকে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম এবিসি জানিয়েছে, এ মাসেই পরিবারের সঙ্গে পাহাড়ে আরোহণের সময় ২০ মিটার নিচে পড়ে যায় ১২ বছরের এক বালিকা। আঙুল ও গোড়ালি মচকে যাওয়াসহ একাধিক চোট পেয়েছে সে। রয়েল ফ্লাইং ডক্টর সার্ভিসের ফ্লাইট নার্স ট্রয় ডিকস এসব তথ্য জানান।

আদিবাসীদের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও পরিবেশের কথা ভেবে ২০১৭ সালে উলুরু-কাটা জুটা ন্যাশনাল পার্ক বোর্ড সর্বসম্মত ভোট দিয়ে লাল পাহাড়ে পর্যটকদের আরোহণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কেউ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সংরক্ষিত এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে ৪৩০ মার্কিন ডলার জরিমানা গুনতে হবে। এমনকি বিদ্যমান আইন অনুযায়ী মামলার গ্যাড়াকলে পড়তে হতে পারে।
শেষবার উলুরুর লাল পাহাড়ে ওঠার সুযোগ পেয়ে পর্যটকদের ভিড় অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল ডারউইনের একজন মায়ের আশা, একদিন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। দেশটির বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীর মতে, নিজ দেশের পর্যটকদের উপভোগের জন্য লাল পাহাড়ে আরোহণের সুযোগ রাখা উচিত। পাইলট জিম মালেট নিয়মিত উলুরুর ওপর আকাশযান নিয়ে ওড়েন। ফলে তার এভিয়েশন ক্লাবের সদস্যরা পাহাড়ে চড়তেন। তিনি এই নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে। তার কথায়, ‘আমি মনে করি, এই দেশের সবকিছু অস্ট্রেলীয়দের। আমার বিশ্বাস, এটি ফের চালু করে কর্তৃপক্ষ বাহবা কুড়াবে।’



অনেক পর্যটক পাহাড়ে আরোহণ না করার পক্ষে। টি-শার্টে সেই বার্তা নিয়ে এসেছেন একজন তবে কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে। তাদেরই একজন সিডনির ভ্রমণপ্রেমী জোয়ি ব্লেকনি। গত আগস্টে উলুরুতে গেলেও পাহাড়ে ওঠেননি তিনি। সেগওয়ে চালিয়ে চারপাশে ঘুরে ঘুরে স্থানীয় গাইডের কাছে রূপকথার গল্প শুনেছেন। এছাড়া উটে চড়েছেন ও কাছের ওয়াটারকা ন্যাশনাল পার্কে হেঁটেছেন। টিভি ও অনলাইনে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা জেনে খুশি এই নারী। তার কাছে এটি হতাশার নয়, বরং উদযাপনের। তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা এবার বুঝবেন পাহাড়ে ওঠার চেয়ে আরও অনেক কিছু দেখার ও করার আছে এখানে।’

অবশ্য পাহাড়ে আরোহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দর্শনার্থীর সংখ্যায় তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না মনে করে উলুরু-কাটা জুটা ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষ ও পর্যটন অপারেটরগুলো। ট্যুরিজম সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ার সিইও স্টিফেন শোয়ার বলেন, ‘এবার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে জানা যাবে এখানকার পর্যটনের নতুন অভিজ্ঞতা কেমন হবে।’

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক