রাজধানী ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে শুরু হয়েছে তিন দিনের ‘হুরেইন ফেব্রিক উইক ২০২৪’। এতে স্থান পেয়েছে বসন্ত ও গ্রীষ্মের উপযোগী বিশ্বমানের ফেব্রিক দিয়ে তৈরি পোশাক। এরমধ্যে রয়েছে সাড়ে চার হাজার ফেব্রিক। এগুলোর ১৬৫ ধরন নতুন। সবই হুরেইন উদ্ভাবিত।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হুরেইন ফেব্রিক উইক উদ্বোধন করেন যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম। তিনি বলেন, “প্রতিবছর হুরেইন এইচটিএফ দু’বার ফেব্রিক উইকের আয়োজন করে। এবার ২০২৫ সালের স্প্রিং (বসন্ত) ও সামার (গ্রীষ্ম) মৌসুমকে সামনে রেখে এই আয়োজন সাজানো হয়েছে। এরপর বর্ষা ও শীতের আয়োজন নিয়ে আসবো আমরা। মূলত মৌসুম শুরুর আট মাস আগেই সেই মৌসুমে ব্যবহার উপযোগী নতুন রঙ ও ডিজাইনের হুরেইন উদ্ভাবিত ফেব্রিক সম্পর্কে ধারণা দিতে এর আয়োজন করা হয়, যাতে বিদেশি ক্রেতা ও ডিজাইনারদের অর্ডার দিতে সুবিধা হয়। সেজন্য আমাদের ফেব্রিক উইক করা হচ্ছে।”
ফেব্রিক প্রদর্শনীতে বায়ার ও দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন জোন। শুরুতেই রয়েছে পুরো প্রদর্শনীর সারসংক্ষেপ। এরপর পর্যায়ক্রমে থাকা জোনগুলো হলো– সাসটেইনেবল জোন, ফ্লাক্স ফাইবার, কটন, পাইনআপেল ফাইবার হেম্প ফাইবার, ডেনিম কাটিং ফাইবার ডবি জোন, ব্লেন্ডেড বটম, স্ট্রেস বটম, শেপিং টেকনোলজিস, লিলেন ব্লেন্ডস, নিউ ব্লেন্ডস, ইয়ার্ন ডাইড বটমস, রিজিড টুইল, স্ট্রাকচারাল জোন, ওভার ডাই জোন (আরএফডি), ক্লিনিক্যাল ফ্যাশন, টেনসিল ব্লেন্ডস, স্ট্রেট টুইলস। এগুলো দেখতে আসছেন বিভিন্ন গার্মেন্টসের প্রধান, বিপণন কর্মকর্তা ও বায়িং হাউজ সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হুরেইন ইতোমধ্যেই বিখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেমন– সিঅ্যান্ডএ, জারা, আমেরিকান ঈগল, টম টেলর, এস অলিভার, লেভিস, বারশকাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছে।
সুমাইয়া রোজালিন ইসলামের কথায়, ‘জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল, হুরেইন শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্ববাজারেও এক নম্বর ব্র্যান্ড হবে। সেভাবেই আমরা কাজ করছি। শিগগিরই আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।’
হুরেইন বিশেষায়িত ফেব্রিক উৎপাদন করে জানিয়ে সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম যোগ করেন, ‘সচরাচর বাংলাদেশের অন্যান্য টেক্সটাইল মিল এমন ফেব্রিক উৎপাদন করে না। আমাদের উৎপাদিত ফেব্রিকের ব্যাপারে বিদেশি ক্রেতা ও ডিজাইনারদের জানাতে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা বিদেশি প্রদর্শনীতে ফেব্রিক প্রদর্শন করে থাকি। এর মাধ্যমে বায়ারদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। এ বছরের শেষ নাগাদ সিনথেটিক ফেব্রিক যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন, শিফন ও জর্জেট ফেব্রিক উৎপাদন শুরু করবো আমরা।’
নির্বাচনের পরে অর্ডার আসতে শুরু করেছে জানিয়ে সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, সামনে আরও বেশি অর্ডার আসবে। তবে আক্ষেপ নিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জানুয়ারিতে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার প্রণোদনা কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে সরকার নজর দিলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। তাছাড়া এলসি সংক্রান্ত যেসব সমস্যা আছে সেগুলো খুব দ্রুতই সমাধান করতে পারলে সবার জন্যই সুবিধা হবে।’
হুরেইনের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের ফেব্রিক উৎপাদন হয়। বায়ারদের এর উদাহরণ দিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। যদিও সরকার প্রতিবছর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মাধ্যমে টেক্স ওয়ার্ল্ড প্যারিস প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের টেক্সটাইল মিলগুলোকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
হুরেইন ফেব্রিক উইকের মতো প্রদর্শনী আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন আব্দুল হাকিম। তার পরামর্শ, ‘যেসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর আছে, সেসব দেশে সরকার নিজ উদ্যোগে প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারে। সেসব প্রদর্শনীতে টেক্সটাইল মিলগুলো ফেব্রিক প্রদর্শন করলে বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশি বায়ারদের চিন্তা বদলে যাবে।’
আব্দুল হাকিমের মন্তব্য, ‘বৈশ্বিক ফ্যাশনের হালচাল প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এখন ম্যান মেইড ফাইবারের যুগ চলছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে টেক্সটাইল মিলগুলোকে সঠিক নীতি সহায়তা দিতে পারলে এই খাতে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আয় সম্ভব। হুরেইন এইচটিএফ সিনথেটিক ফাইবারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ বছরের শেষে নতুন সেট-আপ চালু করা হবে, যার মাধ্যমে বছরে সাড়ে চার মিলিয়ন গজ কাপড় উৎপাদন সম্ভব।’
প্রধান বিপণন কর্মকর্তার তথ্যানুযায়ী, হুরেইনের ফেব্রিক গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় আমেরিকা, শ্রীলঙ্কা, নিকারাগুয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াতে সরাসরি রফতানি হচ্ছে। এছাড়া দেশের গার্মেন্টসগুলোর মাধ্যমে প্রচ্ছন্ন রফতানিও হচ্ছে।
হুরেইন ফেব্রিক উইকে আসা ফ্যাশন ডিজাইনার জান্নাতুন নাইম বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বমানের ফেব্রিক উৎপাদনে সক্ষম। অনেক টেক্সটাইল মিল ভালো ফেব্রিক বানাচ্ছে। এরমধ্যে হুরেইনের ফেব্রিকের আলাদা বিশেষত্ব আছে। হুরেইন সবসময় উদ্ভাবনীয় শক্তি দিয়ে নতুন কিছু করতে চায়। এবারও নতুন ফেব্রিক দেখতে পেয়েছি, যার রঙ ও ডিজাইন সত্যিই সুন্দর এবং আরামদায়ক।’
হুরেইন ফেব্রিক উইকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন যমুনা গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং, সেলস অ্যান্ড অপারেশনস) ড. মোহাম্মদ আলমগীর আলম।
যমুনা ফিউচার পার্কের লেভেল ৭-এ হুরাইন ফেব্রিক উইক চলবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে পোশাক ও কাপড়ের প্রদর্শনী।
