X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদ প্রস্তুতি

বরিশালে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা

বরিশাল প্রতিনিধি
২৭ জুন ২০১৬, ১৪:৪৯আপডেট : ৩০ জুন ২০১৬, ১৫:২২
image

পোশাকের দাম বেশি হলেও ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত নগরীর মার্কেটগুলো। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। সরজমিনে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও ছোট দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সবখানেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে মার্কেটগুলোতে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের ভিড় বেশি।অপরদিকে বয়স্কদের চেয়ে তরুণ-তরুণীরা কেনাকাটায় ব্যস্ত বেশি।

বরিশালে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা

শাড়ি, থ্রি-পিসসহ অন্যান্য পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছে নগরীর চকবাজার, গীর্জা মহল্লা,  ফজলুল হক এভিনিউ, কুয়েত প্লাজা, পোশাক বাজার, মহাসিন মার্কেট, সিটি মার্কেট, ফাতেমা কমপ্লেক্সসহ ছোট বড় বিভিন্ন মার্কেট। পাশাপাশি তৈরি পোশাকের দোকান, জুতা-স্যান্ডেল ও কসমেটিকসের দোকানগুলোতেও উপচে পড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। 

তরুণদের শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে চোখে পড়ার মত ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। বিপণীগুলোতে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভারতীয় পোশাক জিসা, হিরকানি, চকোর, ফিয়োনা, পাকিস্তানি লোন, কটন, জর্জেট, গাউন ড্রেস, শেরওয়ানি কাট থ্রি পিস যা প্রকার ভেদে দেড় হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বরিশালে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা

শাড়ির মধ্যে ক্রেতারা পছন্দ করছেন টিস্যু সিল্ক, এম ক্রাফট, টাঙ্গাইলের শাড়ি, মিরপুরের কাতান ও ঢাকাই জামদানি শাড়ি। গতবারের তুলনায় এবার শাড়ির দাম বেড়েছে বলে জানান ক্রেতারা।

ঈদে কেনাকাটা করতে আসা নগরীর রুপাতলী এলাকার সোহেল মোল্লা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের পোশাক ও শাড়ির সমাহার ঘটেছে বটে, কিন্তু দাম অনেক বেশি হওয়ায় তা মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালের বাইরে। এক ক্রেতা জানালেন গত বছর যে ধরণের পাঞ্জাবি ৮০০ টাকায় পাওয়া গেছে, তার দাম এবার নেওয়া হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা!

ভালো মানের শাড়ি ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা, লেহেঙ্গা ২ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার ২০০ টাকা, লাসা ১ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকা, পাঞ্জাবী ৮০০  টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা, প্যান্ট ৬০০ থেকে তিন হাজার টাকা, ফতুয়া ৪৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের শার্ট ৮৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা, জুতা এক হাজার ২০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, বাচ্চাদের বিভিন্ন পোশাক ৪০০ টাকার থেকে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত দরে পাওয়া যাচ্ছে।

নগরীর আলেকান্দা এলাকার মহিউদ্দিন জানান, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের দাম ততই বাড়িয়ে চলছে। এতে করে বাজেট ঘাটতির সাথে সাথে বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেককে। তিনি বলেন, মনে হয় সারা বছরের ব্যবসা ঈদ মৌসুমেই করে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা! নগরীর মহাসিন মার্কেটের কাশবন গার্মেন্সের মালিক আল-আমিন হোসেন নীরব জানান, ১০ রোজার পর থেকে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে।

নগরীর রুপাতলি এলাকার মনসুর হোসেন জানান, ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মার্কেটে এসে বিভিন্ন দোকান ঘুরছি। সব দোকানেই শাড়ি, থ্রিপিস এবং তৈরি পোশাকগুলোর আকাশ ছোঁয়া দাম। এত দাম দিয়ে পোশাক কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ আরও বেশ কয়েকজন ক্রেতা একই রকম কথা বললেন।

এ বিষয়ে নগরীর ফাতেমা সেন্টারের শৈলী ফ্যাশনের মালিক শামিম আরা লিপি জানান, এ মাসের প্রথম থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর দাম কিছুটা বেড়েছে। তারপরও ক্রেতারা তাদের সাধ্যমত পছেন্দের জিনিস কিনছেন। সবমিলিয়ে বিক্রি ভালই!  

মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি দামে কেনা হয়েছে। তাছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে। সবমিলিয়ে দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

বরিশালে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা  

নগরীর বিপণীবিতানের পাশাপাশি শহরের আশেপাশের এলাকাগুলোর হাট-বাজারের ছোট খাট দোকানগুলোতে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষরা তাদের পছন্দের জিনিস কিনছেন। অনেক ক্রেতাই মূল্য শুনছেন আর এ দোকান ও দোকান ঘুরছেন। অনেকে দামে বনে গেলে কিনে ফেলছেন পছন্দের জিনিসটি। নগরীর দি প্রেস ইউর চয়েজ টেইলার্সের মালিক হৃদয় হাবিব জানান, ‘এ বছর রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পোশাক তৈরির অর্ডার শুরু হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে অর্ডার নেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি।’

 

এদিকে গত ২০ জুন নগরীর তৈরি পোশাক বিক্রয়কারী দোকানগুলোতে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দ্বিগুণ দামের পোশাক বিক্রির প্রমাণ পেয়েও প্রথমবারের মতো অভিযান হওয়ার কারনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম ছাড় দেন। ভবিষ্যতে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে দেন তিনি। কোন পোশাকে ৩০ ভাগের বেশি লাভ করা যাবে না বলে সতর্ক করেন তিনি।

নির্দেশনা পালন হয়েছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণে গত মঙ্গলবার আবার অভিযানে নামার কথা ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের। কিন্তু সেই অভিযান আর হয়নি। যার সুযোগ পুরোটাই নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নামপ্রকাশ না করার শর্তে নগরীর পোশাক বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, এখন পোশাক ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য দুইটি ক্যাশ মেমো ও খাতা রাখা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের ক্যাশ মেমো ও খাতা থাকবে। অভিযানের সময় ঐগুলো প্রদর্শন করা হবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলেন, বর্তমানে বাজারদর অনুযায়ী দ্বিগুণ মূল্য না রাখলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হবে। এতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাবে না।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম সুখময় সরকার বলেন, ‘আবারও অভিযান চালানো হবে। তখন বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ঈদের কেনাকাটায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে এজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ক্রেতাদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন মার্কেটের সামনে পুলিশ টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকেও পুলিশ নজরদারি করছে।

 

/এনএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা