X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
নিভৃতচারী শিল্পী

কারু তিতাসের হাতের মধ্যে ফুল ফুটেছিল!

সাদ্দিফ অভি
৩০ জুলাই ২০১৬, ২১:১৩আপডেট : ৩০ জুলাই ২০১৬, ২২:০০

কারু তিতাস

 

বৃষ্টি এবং বাংলাদেশের ছয়টি ঋতুর সাথে যার প্রেম, যিনি বাংলার প্রকৃতিকে ক্যানভাসে তুলির আঁচড়ে জীবন্ত করে তোলেন তিনি কারু তিতাস। একজন নিভৃতচারি শিল্পী। শিল্পমণ্ডিত পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। মা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর নামটি আমাদের শ্রদ্ধায় অবনত করে যায় শুধু। সেই মায়ের কোলে বেড়ে ওঠা কারু তিতাস শিল্পী হবেন এমনটাই স্বাভাবিক।

তবু যেন শিল্পী সত্ত্বাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর করা। সারাদিনের কাজের তালিকায় সর্বাগ্রে রেখেছেন প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা। আর সেগুলো ক্যানভাসে বন্দি করা।তার চিত্রে গ্রামবাংলার বর্ষাকালের এক অচেনারূপ দেখতে পাওয়া যায়।রাজধানীর ধানমণ্ডি শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে চলছে তার ৩য় একক প্রদর্শনী।বাংলা ট্রিবিউনের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন বৃষ্টির সঙ্গে তার প্রেমের গল্প।

বাংলা ট্রিবিউন: একজন চিত্রশিল্পী হয়ে বেড়ে ওঠার পেছনের গল্পটা জানতে চাই?এর পেছনে মা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীর শিল্পীসত্ত্বার প্রভাব কতটুকু ছিল বা আছে?

কারু তিতাস: আমার অনুপ্রেরণার জায়গা বাংলাদেশ।বেশ আগে থেকেই ঢাকা আমার একদম ভালো লাগে না। সে কারণে আমি প্রথমেই পড়াশোনা করতে রাজশাহী চলে যাই।পরে ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করি ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিংয়ে। দেশটা আমাকে অনেক বেশি টানে। আমরা ছুটি পেলে কক্সবাজারে চলে যাই,কক্সবাজার শুধু না ঢাকার বাইরে সবজায়গা অপূর্ব। এরকম ছয়টা ঋতু ছয় রকম বৈচিত্র্য পৃথিবীর কোথায় আছে আমার জানা নেই।আমি এভাবেই শিল্পী হিসেবে বড় হয়েছি।

মায়ের প্রভাব বলতে গেলে বলতে হয়, একসঙ্গে বসবাস করলে অবচেতন মনে অনেক কিছুই চলে আসে নিজের মধ্যে। আমার পরিবারের সবাই স্বাধীনভাবে মুক্তভাবে বেড়ে উঠতে পেরেছে।মা আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। আমি সবকিছু তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি। ছবি আঁকার শুরু হয়তো ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়। তখন আমি খাতার মধ্যে একটা ফুল একেছিলাম।তা দেখে আমি ভাবলাম হাতের মধ্যে ফুল ফুটিয়ে ফেললাম। তখন থেকে আমার ছবি আঁকার যাত্রা।

প্রদর্শনী

বাংলা ট্রিবিউন: চারুকলার জীবনটাকে যদি খুব অল্প কথায় বলতে বলি...

কারু তিতাস: চারুকলার জীবনটা ছিল আমার স্বর্ণযুগ। আমি যদি আবার জন্ম নেই তাহলে আমি শৈশবকে ফেরত চাইবো না বরং চারুকলার জীবন চাইবো।

বাংলা ট্রিবিউন: শিক্ষক, বন্ধু, স্বজন এদের মধ্যে কারা আপনাকে প্রভাবিত করেছে? কার প্রভাব এখনও নাড়া দেয়?

কারু তিতাস:চারুকলায় আমার শিক্ষক এবং আমার ভীষণ প্রিয় শিল্পী রফিকুন নবী স্যার। আমরা জলরঙে ছবি আঁকি কিন্তু উনি জলরঙে কবিতা লেখেন।স্যার এর কথায় রাজশাহী চারুকলায় ভর্তি হতে গিয়েছিলাম। তখন আমার বড় বড় চুল ছিল। স্যার আমাকে দেখে বললেন, চুল না কাটলে তোমার ভর্তি হবেনা। স্যার এর কথাটা আহ্বানের মত লাগলো। তাকে এতটা শ্রদ্ধা করি যে চুল আর বড় রাখতে পারিনি এবং এখনও তা পালন করি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার শিল্পী জীবন নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যায় আপনি ভীষণ প্রচারবিমুখএর কারণ কি?

কারু তিতাস: আমি ১৮ বছর পর একক প্রদর্শনী করছি। তাছাড়া সবসময় গ্রুপ প্রদর্শনী করছি। মানুষের সামনে আমার কাজ নিয়ে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস এখনও আমার মধ্যে তৈরি হয়নি। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রতি বছরই তৈরি হয় কিন্তু ১০০ বছরে একজন শিল্পী তৈরি হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: এভাবে প্রচারবিমুখ হয়ে থাকলে সাধারণ মানুষের কাছে আপনার শিল্প পৌঁছাবে কি?

কারু তিতাস: আমার বোধহয় আরও পথ হাটতে হবে, আমার যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। দেখা যাক।

নদী ও নৌকা

বাংলা ট্রিবিউন: চিত্রশিল্পের কোন মাধ্যম আপনাকে তাড়িত করে?

কারু তিতাস: এক সময় তেলরং খুব ভালো লাগতো। কিন্তু তেলরং আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য উপযোগী না। একসময় নষ্ট হয়ে যায়। তেলরঙে এজন্য খুব কম কাজ করি। এক্রিলিক আর জলরং আমাদের দেশের জন্য খুবই উপযোগী।তাই জলরঙে আমি খুব উপভোগ করি।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্যানভাস ছাড়া আর কিছুতে চিত্র আঁকার ইচ্ছে আছে কি?

কারু তিতাস: এ নিয়ে এখনও ভাবিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: জল রঙের সাথে সন্ধির গল্পটা বলবেন কি?

কারু তিতাস: জল রঙের প্রেমে পড়ি অনেক ছেলেবেলা থেকে। মেয়েরা খুব রহস্যময়ী আমি কখনও বুঝতে পারতাম না। জলরঙও একই এজন্য এখনও আমার সাথে তার যাত্রা।

বাংলা ট্রিবিউন: মায়ের মতো ভাস্কর হলেন না কেন?

কারু তিতাস: ভাস্কর্য আমার ভীষণ প্রিয়। একজন শিল্পী হিসেবে যখন মায়ের কাজ পর্যবেক্ষণ করি তখন দেখি একটি গাছের ডাল থেকে একটি পাখি বের হয়ে আসলো, একটি গাছের গুঁড়ি থেকে একজন রবীন্দ্রনাথ বের হয়ে আসল এই পর্যবেক্ষণ দৃষ্টি আমার নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: মায়ের সঙ্গে আপনি রৌদ্র-ছায়া নামে একটি যৌথ প্রদর্শনী করেছিলেন।মায়ের পাশে আপনার কাজ, মা-আর আপনি একসঙ্গে, সেটা কেমন লেগেছিল?  

কারু তিতাস: আমি আর মা কখনই এক কাতারে না। উনি অনেক বড় মাপের শিল্পী। তার সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনী আমার জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এজন্য বেঙ্গলকে ধন্যবাদ।

বাংলা ট্রিবিউন: এই প্রদর্শনী সম্পর্কে জানতে চাই, এটি আপনার কততম প্রদর্শনী, কি থাকছে এখানে?

কারু তিতাস: এটা আমার তৃতীয় একক প্রদর্শনী।এখানে বেশিরভাগ চিত্র আমার বর্ষা নিয়ে। কোনও এক শ্রাবণে করবো বলে অপেক্ষা করছিলাম। সেই কারণেই এই প্রদর্শনীর নাম ‘জলযাত্রা’। আমার প্রতিটি ছবিরও নাম দেওয়া হয়েছে জলযাত্রা।

বাংলা ট্রিবিউন: বেশ কিছু বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন আপনি, ভবিষ্যতেও এটি অব্যহত থাকবে বলে আশা করি, প্রচ্ছদশিল্প একজন শিল্পীর শিল্পসত্ত্বাকে প্রকাশ করতে কতটুকু সহায়ক বলে মনে করেন?

কারু তিতাস: বইয়ের প্রচ্ছদ করা আমি খুব উপভোগ করি। আমি কখনই কম্পিউটারে কোনও প্রচ্ছদ করি নাই এর কারণ হলো আমি কম্পিউটার একদমই চালাতে পারিনা এবং শিল্প জিনিসটার টেকনিক্যাল জায়গাটা আমার ভালো লাগেনা। ম্যানুয়াল জায়গাটা আমার খুব ভালো লাগে। আমি কখনওই কোন গল্প উপন্যাস না পড়ে প্রচ্ছদ করি না।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার বেড়ে ওঠা, ছেলেবেলা, পরিপার্শ্বের কথা জানতে চাই, যা আপনাকে আজকের কারু তিতাস তৈরি করেছে...

কারু তিতাস: ছেলেবেলা খুব একটা সুখকর ছিলনা। তবে খুবই সম্মানের। আমার শৈশব মুক্তিযুদ্ধের সময়। সেই সময়টা যদি আমার জীবনে না থাকতো দেশটাকে এভাবে দেখার আগ্রহ আমার ভেতরে তৈরি হতো কিনা আমি জানিনা।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার ছবিতে, নদী পানি-এর মধ্যে কোনটার প্রভাব বেশি? বাংলাদেশের ঋতু, প্রকৃতি, কোনটা অনেক বেশি তাড়িত করে?

কারু তিতাস: বৃষ্টি। বৃষ্টি আমাকে অনেক তাড়িত করে। আমার লেখায় লিখেছি আমি ‘বৃষ্টির শব্দের মত ভালো গান রবীন্দ্রনাথও হয়তো গায়নি’। বৃষ্টির শব্দ বৃষ্টির ছন্দ এবং এক এক এলাকার এক এক ধরনের সৌন্দর্য, উত্তরে এক ধরনের সৌন্দর্য, পাহাড়ে আরেক রকম সৌন্দর্য আমি অনেক উপভোগ করি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কিছু ছবির মধ্যে একটি ত্রিমাত্রিক ভাব আছে এই সম্পর্কে যদি একটু বলতেন।

কারু তিতাস: পৃথিবীর কোনও কিছুই ফ্ল্যাট না। ত্রিমাত্রিক জিনিসটা আমাকে খুব টানে তাই আমি চেষ্টা করি আমার ছবির মধ্যে এই অ্যাফেক্টটা দিতে। কেউ যখন দেখবে তখন সেটা অনুভব করবে।

বাংলা ট্রিবিউন: তরুণদের জন্য কিছু বলার আছে?  

কারু তিতাস: আমার একটি বার্তা আছে তরুণ প্রজন্মদের জন্য, দেশের এই মহাসংকটের সময় তারা যেন দেশটাকে সুন্দরভাবে মন থেকে দেখার চেষ্টা করে, ভালোবাসা এমনিতেই চলে আসবে। আমার দেশটা আমার অহংকার, দেশটাকে যেন ভালবাসে।

/এফএএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ