সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধে শুধু যুদ্ধের মাঠেই ছিল না বাঙালি, একইসঙ্গে দেশের বাইরেও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণসহ নানা রকম প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিল। সময়ের ধুলোয় চাপা পড়া সেই ইতিহাসের কিছু অংশ আবারও জীবন্ত করেছেন উজ্জ্বল দাশ। তার হাত ধরে আবার উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলাদেশের দাবিতে লন্ডনে জোরালো আওয়াজ তোলা বাঙালিদের কর্মকাণ্ডগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন। সুদীর্ঘ গবেষণা ও ব্যক্তিগত শ্রমে উজ্জ্বল দাশের খুঁজে বের করা এসব চিত্র ও নথি নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় শুরু হয়েছে ‘লন্ডন ৭১’ নামের একটি চিত্র প্রদর্শনী।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার ৫ নম্বর গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এছাড়াও সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এই প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে লন্ডনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ঘটে যাওয়া অনেক অজানা ইতিহাস। মুক্তিকামী বাঙালির পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে বিশ্ব জনমত গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন যেসব ব্রিটিশ এমপি, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মকাণ্ডের চিত্রিত ইতিহাস তুলে ধরেছেন উজ্জ্বল দাশ।
তার সুদীর্ঘ গবেষণায় পাওয়া গেছে ১৯৭১ সালের ৪ জুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট এর দিকে মহিলা সমিতি ইউকে এর দুর্বার মিছিলের ছবি, ১ আগস্ট ১৯৭১ সালে লন্ডন ট্রাফালগার স্কয়ারে অ্যাকশন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশে জনতার ঢল, ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে লন্ডন ক্ল্যারিজ হোটেলে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সংবাদ সম্মেলনের ছবি, লন্ডন হাইড পার্ক স্পিকারস কর্নারে মুক্তিকামী জনতার সমাবেশের ছবিসহ আরও শ’খানেক ছবি। উজ্জ্বল দাশ জানান, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে এই ছবিগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে।
এছাড়া এই গবেষণায় তিনি আরও পেয়েছেন ব্রিটিশ আলোকচিত্রী রজার গোয়েনের খোঁজ, যার তোলা দুর্লভ ছবি ভিনদেশে মুক্তিযুদ্ধের নানা অজানা ইতিহাসের সাক্ষী। তাছাড়াও সংগ্রহ করেছেন লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইউসুফ চৌধুরীর তোলা ছবিও। পাশাপাশি সংগ্রহ করেছেন লন্ডনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদের মূল কপি, নানা পোস্টার এবং প্রচারপত্র।
মুক্তিযুদ্ধের এসব দুর্লভ ছবির আর্কাইভকে খুব শীঘ্রই ডিজিটাল আর্কাইভে রূপান্তরিত করার ব্যাপারে আশাবাদী ‘লন্ডন ১৯৭১’ এর উদ্যোক্তা ও সমন্বয়কারী উজ্জ্বল দাশ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই সব সংগ্রহ নিয়ে একটি ডিজিটাল আর্কাইভ করার চিন্তা আছে এবং একটি বই শীঘ্রই বের করবো। আমার এই প্রদর্শনী দেখে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংগ্রহে রাখার অনুপ্রেরণা পাবে বলে আশা করি’।
প্রদর্শনীটি চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সব দর্শনার্থীর জন্য এই প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে।
/টিএন/
আরও পড়ুন: এইচএসসিতে পাসের হার ৭৪.৭০%