X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাদা পাথরের দেশে

ফারুখ আহমেদ
২৪ আগস্ট ২০১৬, ১৪:৪০আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৬, ১৪:৪৭
image

সবুজ পাহাড়বন্দী এলাকাজুড়ে অজস্র সাদা পাথর, আকাশের নীল ছায়া রেখে যায় পাথর জমে থাকা স্ফটিক জলে। সবুজের মায়াঘেরা শুভ্রতার সে রাজ্যের হাতছানিতে এবার পথে নামলাম আমরা কয়জন।  

যাত্রাপথে মিলবে এমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বর্ষার শেষ, তবু বৃষ্টি একটুও কমেনি। সারাদেশেই প্রতিদিন বৃষ্টি, সিলেটে একটু বেশি। বৃষ্টি মাথায় আমাদের যাত্রা শুরু হলো সুরমা নদীর সিলেট বাদাঘাট প্রান্ত থেকে। চলা শুরুর একটু পরই বিশাল সুরমা নদী সরু হয়ে গেল! আমরা সুরমার শাখা নদী দিয়ে চলা শুরু করলাম। স্বচ্ছ পানি দেখে এক আঁজলা পানি মুখে মাখলাম, পা ঝুলিয়ে দিলাম নদীর জলে। এভাবেই এক সময় আমাদের বজরা গিলে নিল বিশাল এক বিল। আঁকাবাঁকা সে বিলের দু’পাশ অসাধারণ সবুজ। হিজল গাছগুলো দিব্যি ডুবে ডুবে দাঁড়িয়ে। এখন ধানকাটার মৌসুম নয়, ধানের চারা লাগানোর দিন। বিলের জল থইথই, সেই বিলের পাশে সবুজ জমিতে ধানের চারা লাগানোর উৎসব চলছে। বাংলার শ্বাশত রূপ দেখতে দেখতে তিন থেকে চার ঘন্টার লম্বা পথ পাড়ি দিলাম আমরা। এখানে কৃষকের দিন শুরু হয় চারা লাগানোর ব্যস্ততা নিয়ে।

আকাশ যেখানে ছায়া রেখে যায়

বিলে শাপলা ছিল তবে খুব কম আর কচুরিপানা দেখিনি বললেই চলে। বিল থেকে এবার আমরা ছোট্ট খালে এসে পড়লাম। স্থানীয়রা যাকে চেনেন কাটাগাঙ হিসেবে। একসময় ছোট্ট নালার মতো ছিল, মাঝখানে রাস্তা। নালা বড় করে পানির ব্যবস্থা করতেই খাল কাটা হয়। সেই থেকে এর নাম কাটা খাল। আমরা কাটাগাঙের পাশের গ্রামে প্রথম যাত্রা বিরতি নিলাম, গ্রামের নাম উমর গাঁও। উমর গাঁওয়ে চা পান করে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হলো। এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। ট্রলার চালক গতি বাড়িয়ে দেয়। আমরা বাম দিকে পাহাড় আর ডান দিকে সবুজ গ্রাম দেখতে দেখতে ভোলাগঞ্জ অভিমুখে চলি। এভাবেই চলতে চলতে খালির গাঁও ও ডাকাতের বাড়ি (গ্রামের নাম) ওপর দিয়ে ট্রলার চালিয়ে একসময় ধলাই নদীতে পড়ি।

সাদা পাথরের দেশে

কোম্পানীগঞ্জ বাজারে যাত্রা বিরতি নিয়ে বাজার ঘুরে দেখলাম। এরপর চলে আসি বিয়াম ল্যারেটরি স্কুল চত্বরে। ২০০২ সালে স্থাপিত এই স্কুলটির শহীদ মিনারটি দেখার মতো। কিছুক্ষণ পর আবার শুরু হয় যাত্রা। তারপরের গল্প শুধু ধলাই নদী আর ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের। কোম্পানীগঞ্জ যতই পেছনে পড়ছিল ততই চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছিল ভোলাগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে আর মেঘালয় রাজ্য। ভোলাগঞ্জ দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারির অঞ্চল। ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বা রজ্জুপথ। ভারতের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড় থেকে বর্ষা মৌসুমে ঢল নামে, সেই ঢলে নেমে আসা পাথর বহন করার জন্য ১৯৬৪ সালে এই রোপওয়েটি নির্মাণ করা হয়। সাদা পাথর ও তার স্বচ্ছ জল দেখতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে ধলাই নদী, খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় আর সীমান্ত এলাকার মতোই জনপ্রিয় রোপওয়েটি। যদিও ১২ বছর ধরে রোপওয়েটির বেকার জীবনযাপন চলছে।

সাদা পাথরের দেশে

আমাদের সামনে এখন খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়। এই পর্বতমালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত আমরা মন খারাপ করে দেখি বোমা মেশিন। বোমা মেশিনের গর্জন আর তর্জনে ধলাই নদী পেরিয়ে এরমধ্যে আমরা চলে এসেছি ভোলাগঞ্জ বাজার। এখানে ট্রলার পরিবর্তন। শেষ হয় সবুজ চোখের কাজলের সঙ্গে তিন ঘন্টার সম্পর্ক। ভোলাগঞ্জ বাজারে সামান্য নাস্তা সেরে নতুন একটি ট্রলার ভাড়া করে এগিয়ে চলি জিরো পয়েন্টের দিকে,  আমাদের কাঙ্ক্ষিত সাদা পাথর এলাকায়।

সবুজ প্রকৃতির চমৎকার রূপ

শান্ত স্তব্ধ পাহাড়, তার সঙ্গে মিশেছে আকাশের নীল। শরৎকাল শুরু না হলেও আকাশের গায়ে ছোপছোপ শরতের শুভ্র মেঘ। আমরা জিরো পয়েন্টে দৃষ্টি প্রসারিত করি, চারদিকে পাথর আর পাথর! এখানে সব পাথর সাদা রঙা। পাথর তোলার প্রচুর নৌকা চোখে পড়লো, তবে এখানে দর্শনার্থী নেই। নির্জন সাদা পাথরের অসাধারণ এলাকায় আমরা পা রাখি। সামনে সবুজ পাহাড়, সঙ্গে গড়িয়ে আসা প্রচণ্ড স্রোতের স্বচ্ছ শীতল জল আর সে জল থেকে গড়িয়ে নামা সাদা পাথর। কী অপরূপ তা বলে বোঝানোর নয়। আমরা পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া শীতল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ি, আহা কী ঠাণ্ডা! জীবনের বিস্ময়কর এক অভিজ্ঞতা বটে। একসঙ্গে এত এত সাদা পাথর জীবনে কখনো দেখিনি। সাদা পাথর দেখে আর পাথর জলে গোসল করে সময় এগিয়ে যায়। অন্ধকার জেঁকে বসার আগেই তাই সেই অসম্ভব সুন্দরকে বিদায় জানাই!

স্ফটিক জলে আর পাথরে...

দরকারি তথ্য

অক্টোবর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় যাওয়ার মোক্ষম সময়। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটারের মতো। এই পথে কোনো বাস চলাচল নেই, কোনও লেগুনাও চলে না। যাতায়াতের একমাত্র বাহন সিএনজিচালিত অটো রিক্সা, জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ টাকা। তবে রাস্তা ভয়ংকর খারাপ। রাস্তা খারাপের জন্যই আমরা নদী পথ বেছে নিয়েছিলাম। এই পথে জন প্রতিখরচ ২০০ টাকা। সংখ্যায় বেশি হলে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে নিন। ভাড়া নিবে ৬ হাজার টাকা যাওয়া-আসা। সময় লাগবে তিন ঘন্টা। দিনে গিয়ে দিনেই ফেরত আসা যাবে। ভোলাগঞ্জ থেকে সিলেট বাদাঘাটের শেষ ট্রলার ছেড়ে আসে বিকেল চারটায়। তাই সময়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখা জরুরি। ট্রলার মিস করলে সড়ক পথ ভরসা, সেক্ষেত্রে ভাঙা রাস্তার ভোগান্তি পোহাতে হবে আপনাকে।

সাদা পাথরের দেশে

সচেতনতা

নদী পথে যাতায়াতে একটু বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। সম্ভব হলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখবেন। শুকনা খাবার এবং প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সঙ্গে রাখবেন। এবং অবশ্যই আপনার বা আপনার ভ্রমণ সঙ্গীদের দ্বারা পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কোনও কিছু করবেন না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় তেমন কিছু ফেলে আসবেন না।

ছবি: লেখক

 

/এনএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!