X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদের ছুটিতে বেড়ানো

প্রকৃতির সঙ্গে পুরাকীর্তি

আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:০০আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:১০
image

প্রকৃতির সাথে পুরাকীর্তি যাদের সমানভাবে আকর্ষণ করে এবং ছুটি কাটানোর জন্য যারা একটু নিরিবিলি প্রকৃতির সান্নিধ্য চান তারা চলে আসতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সীমান্ত জনপথ প্রাচীন বাংলার রাজধানী ঐতিহাসিক গৌড় নগরী চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলার সর্বাধিক গুরুত্ব এবং ধনজনপূর্ণ একটি ভৌগলিক অঞ্চল এ গৌড় নগরী। এ অঞ্চলের মাটি নানান ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের নিরব সাক্ষী। নানা ধর্মাবলম্বী রাজা, মহারাজা, সুলতান, সম্রাট ঐতিহাসিক গৌড় নগরীর বুকে সগৌরবে দাঁড়িয়ে রাজ্য শাসন করে গেছেন যুগে যুগে। ইতিহাসই এর অমর সাক্ষী।

আম, রেশম, কাঁসা, পিতল, লাক্ষা, নকশীকাঁথা, মাছ আর ধানে ধন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা গান, আলকাপ, মেয়েলী গীত, টপ্পা গান ও লোক কাহিনীর মত লোকজ উপাদানে উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধশালী এ অঞ্চলের অতীত অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও গৌরবময়। অজস্র বৌদ্ধ, হিন্দু ও ইসলামী স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন আজও বুকে ধারণ করে রেখেছে এ জনপদ।

জেনে নিন এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে-

ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ

গোটা জেলাজুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় নানা পুরাকীর্তির নিদর্শন। যার অন্যতম গৌড়ের ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ। মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন এটি। মসজিদের চার কোণায় ৪টি অষ্টকোণাকৃতির মিনার বা টারেট এবং উপরে ১২টি অর্ধগোলাকৃতির ও ৩টি চৌচালা আকৃতির মোট ১৫টি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলোতে একসময় সোনার পিণ্ড করা ছিল বলে জানা যায়। এ কারণেই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে সোনা মসজিদ। স্থাপত্যকলা ও শৈল্পিক সৌন্দর্যের বিচারে এ মসজিদ গৌড়ের রত্নহিসেবে পরিচিত। মসজিদটি সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে ওয়ালী মুহাম্মাদ কর্তৃক ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত হয়।

ছোট সোনা মসজিদ

তোহাখানা

ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদের থেকে খানিকটা দূরেই অবস্থিত তোহাখানা। ১৬৫৫সালে শাহ সূজা এটি নির্মাণ করেন। কথিত আছে শীতকালীন তাপ নিয়ন্ত্রক ইমারত হিসেবে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আর এর পাশেই রয়েছে মোঘল আমলের একটি মসজিদ ও হযরত শাহনেয়ামতুল্লাহ (রাঃ) মাজার।

তোহাখানা

দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদিঘী গ্রামের পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীন স্থাপত্য কলার আরেক নিদর্শন দারাসবাড়ি মসজিদ। মসজিদটি বাংলার মুসলিম শাসনামলের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শন। মসজিদের পূর্বে ছোট দীঘির পাশেই বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে দারাসবাড়ি মাদ্রাসা। ধারণা করা হয় ১৫ শতকে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ-এর আমলে নির্মিত এই মাদ্রাসাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন মাদ্রাসার নিদর্শন। একসময় মাদ্রাসাটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল; যেখানে নদীয়া, পশ্চিম দিনাজপুর, মালদহ, দেশর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের লোকজন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতেন। মাদ্রাসাটিতে ৩০০ জন শিক্ষক সে সময় শিক্ষা দিতেন। এছাড়া জেলায় যে সকল মুসলিম শাসনামলের মসজিদ রয়েছে এটি তার মধ্যে সর্ববৃহৎ।

দারাসবাড়ি মসজিদ

ষাঁড় বরুজ বা নওদা বরুজ  

জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে অবস্থিত বর্তমানে সর্ব প্রাচীন প্রত্নসম্পদ ও লুকায়িত ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থানের নাম নওদা বুরুজ। রহনপুর খোয়াড়ের মোড় হতে সোজা প্রায় ১ কি.মি উত্তরে এটি অবস্থিত। স্থানীয়রা একে বলেন ষাঁঢ় বুরুজ।

জেলার ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে আরো রয়েছে, দাদনচক মসজিদ, খঞ্জন দীঘি বা রাজাবিবির মসজিদ, ধনিয়াচক মসজিদ, বালিয়া দীঘি, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত মাঝপাড়া বালিগ্রাম ৬ গম্বুজ মসজিদ, নবাবী আমলে নির্মিত মহারাজপুর জামে মসজিদ, ঐতিহাসিক নীলকুঠি, ভোলাহাটের চামচিকা মন্দির, গিলাবাড়ি প্রাচীন শিব মন্দির, কাজী সাহেবের মসজিদ, রহনপুরের গম্বুজ ও  অতি প্রাচীন ঠাকুরবাড়ি যা মাহান্ত বাড়ি নামে সমধিক পরিচিত।

এছাড়াও রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা মসজিদ স্থলবন্দর।

যাবেন যেভাবে

ঢাকা থেকে প্রতিদিন নিদিষ্ট সময় পর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা। আর ঐতিহাসিক এসব স্থাপনার বেশিরভাগই অবস্থিত জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় এবং প্রতিটি স্থাপনার দূরত্ব খুব সামান্যই। আবার ঢাকা থেকে প্রতিটি বাসই শিবগঞ্জ যায়; বিশেষ করে হানিফ, শ্যামলী, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ পরিবহনের গাড়িগুলো। শিবগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে শাহাবাজপুর ইউনিয়ন। এখানেই সোনামসজিদ, তোহাখানা, দারাসবাড়ি মসজিদ, স্থল বন্দর, খঞ্জণ দিঘির মসজিদ ও ধনিয়াচক মসজিদ পাশাপাশি দূরত্বে অবস্থিত।

থাকার ব্যবস্থা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর ও শিবগঞ্জ উপজেলা শহরে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে স্বল্প খরচে হোটেলের ব্যবস্থা। অন্যদিকে, জেলা শহরের হোটেলে থাকলে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে পারেন শহরের পাশেই মহানন্দা নদীর উপর অবস্থিত শেখ হাসিনা সেতুতে। জেলা শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত, প্রকৃতির নৈসর্গিক লীলাভূমি বাবুডাইং-এ ঢুঁ মারতে ভুলবেন না।

 

/এনএ/ 

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!