X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্জন এক সৈকতের গল্প

ফারুখ আহমেদ
১০ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৫৭আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৬, ১৮:১১
image

কোলাহলহীন নিশ্চুপ সৈকতে বসে শুনতে চান সাগরের তীব্র গর্জন? প্রচণ্ড আক্রোশে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের সঙ্গে কথা বলতে চান আনমনে? যদি নির্জনতা আপনার পছন্দ হয় তবে ঘুরে আসতে পারেন শামলাপুর থেকে। দৃষ্টিনন্দন ঝাউবনে ঘেরা অপরূপ সৈকত আপনার পছন্দ হবে নিশ্চিত।

নির্জন এক সৈকতের গল্প

টেকনাফ থেকে হোয়াইক্যং রোড ধরে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের শামলাপুর গেলে যে সৌন্দর্য উন্মোচিত হবে তা যেকোনও প্রকৃতি প্রেমিককে মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। শামলাপুর সৈকত অনেকের কাছে বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত নামেও পরিচিত। আমরা কয়েকজন মাত্রই ঘুরে এলাম চমৎকার এই সৈকত থেকে।

টেকনাফ গেছি বহুবার। তবে টেকনাফ উদ্দেশ্য করে যাওয়া হয়েছে খুবই কম। এবারের ঘোরাফেরার মূল উদ্দেশ্যই ছিল টেকনাফের জালিয়ার দ্বীপ ও নাফ নদীর উপর ডকুমেন্টারি করা। খুব ভোরে বাস থেকে সাংবাদিক বোরহানুল হক সম্রাটসহ আমরা টেকনাফ লিংক রোডে নেমে সোজা চলে আসি জালিয়ার দ্বীপ। নাফ নদীর তীরের ছোট্ট দ্বীপ জালিয়া অসাধারণ সুন্দর। আমরা জালিয়ার দ্বীপ ভ্রমণ বা এখানে আমাদের ডকুমেন্টারির কাজ শেষ করে দুপুরে চলে আসি হোয়াইক্যং রোডে স্থানীয় সাংবাদিক আবসার কবির আকাশের বাড়ি। রাস্তার ঠিক পাশে আবসার কবিরের সে বাড়ি থেকে নাফ নদী ও পাহাড় দর্শন আর তার আপ্যায়ন অনেকদিন মনে থাকবে। আপ্যায়ন পর্ব শেষে দুপরের ভাত ঘুমের সময়টা আমরা আকাশের বাড়িতে কাটিয়ে ঠিক সাড়ে তিনটার সময় শামলাপুরের উদ্দেশ্যে ব্যাটারীচালিত অটো রিকশায় চেপে বসি। আগেই বলেছি শামলাপুর থেকে সমুদ্র সৈকত দেখা যায়।

যাওয়ার পথ এমনই সবুজে মোড়া

যাত্রা শুরু হয় হোয়াইক্যং রোড ধরে। কিছুটা পথ এগিয়ে ধমধমিয়ার পথে চলা শুরু করি, পাহাড়ি পথ। দুপাশের পুরোটাই ঘন জঙ্গল। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। পথ চলতে চলতে চোখে পড়ে রাস্তাজুড়ে বাচ্চাদের খেলাধুলা আর কাঠ কুড়ানোর দৃশ্য। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা কিছু ট্রেকারদেরও দেখা পেয়ে যাই। পুরো পথটাই যেন সবুজে মোড়া। অনেক নাম না জানা ফুলের সঙ্গে নীল বনলতা চোখে পড়লো। এভাবেই জাদিমুরা, লেদা, মুচনি, রঙ্গীখালি ও মৌলবী পাড়া পেছনে ফেলে লাতুরিখোলায় এসে যাত্রা বিরতি নেই।

খেলাধুলায় ব্যস্ত শিশুরা

লাতুরিখোলার আশেপাশে পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। এখানে জীবন অনেক ধীর স্থির। কোনও ব্যস্ততা নেই মানুষের মধ্যে। এখানে বেশিরভাগই চাকমা নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। যেহেতু এখানকার প্রকৃতি অসাধারণ সেহেতু ট্রেকারদের জন্য এমন প্রকৃতিতে চলাচল দারুণ বলা চলে। ভাবতে গিয়ে মনে হলো যদি স্থানীয়রা এখানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মতো হোমস্টের ব্যবস্থা করতো তাহলে বিষয়টা হতো সোনায় সোহাগা! ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গী শিক্ষক জুলকারনাইনের ছাত্রদের আপ্যায়ন ডাব চলে এসেছে। আমরা ডাবের পানি পান করে দ্রুত সামনে যাই আর ভাবি প্রকৃতির মতই সুন্দর আর ছবির মত এখানকার মানুষগুলো। এভাবে কতক্ষণ চলেছি মনে নেই।

দূর থেকে ঝাউগাছের সারি দেখে বুঝতে পারলাম সমুদ্র খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এরপরের সময়টুকু মেরিন ড্রাইভ রোডের। তারপরই পা রাখি শামলাপুর সমুদ্র সৈকতে। গত ফেব্রুয়ারিতে শামলাপুর সৈকতে মাসব্যাপী ঝাউবন কাটার খবর দেশের অনেকগুলো জাতীয় দৈনিকের হেডলাইন হয়েছিল!

শান্ত সৈকতে বসে দেখতে পারবেন সমুদ্রের এমন রূপ

ঝাউগাছের সারি, বালুর নরম বিছানা, তার সামনে বিশ্রামরত মাছ ধরার ট্রলার। আরপ সামনে অপরূপ বঙ্গপোসাগর। এখানকার নির্জনতাও চমৎকার। কক্সবাজার, হিমছড়ি বা ইনানী বিচ যেমন সবসময় কোলাহলে পূর্ণ থাকে, এখানে তার কিছুই নেই।

বেলা পড়ে আসায় মাছ ধরার ট্রলারগুলো টেনে তীরে তোলা হচ্ছে। অনেকেই জাল দিয়ে মাছ ধরছে। সবকিছু ছাপিয়ে চোখে পড়লো শুধুই সমুদ্র আর তার নীল জলরাশির শো শো গর্জন। পানি আমার খুব পছন্দ। তাই তো বারবার নদীর কাছে ছুটে যাই, ছুটে আসি সমুদ্রের কাছে। সমুদ্র বা নদী আমাকে কখনও নিরাশ করেনি। তাইতো আজ এখানে বা সমুদ্র সৈকতে পা দিয়েই দারুণ শিহরন অনুভব করি।

মাছ ধরার ট্রলার

এরমধ্যে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক খোকন স্যার আমাকে নিয়ে চলেন লাল কাঁকড়া দেখাতে। আমাদের সঙ্গে যোগ দেন জুলকারনাইন। অন্যদিকে বোরহানুল হক সম্রাট দলবল নিয়ে সমুদ্র জলে অবগাহনে মেতেছেন।

লাল কাঁকড়া

সব মিলে শামলাপুর এসে সমুদ্র সৈকতের রোমান্সের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে চমৎকার মিশেল পাওয়া গেল তা এক কথায় অসাধারণ। এমন অসাধারণে বারবার আমি ডুবতে চাই, কারণ সমুদ্র মানেই জীবনের উৎসব।

নির্জন সমুদ্র সৈকত

দরকারি তথ্য

কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে সোজা ঘন্টা দুয়েক গেলেই শামলাপুর বা বাহারছড়া সমুদ্র সৈকতের দেখা মিলবে। আমরা গিয়েছিলাম টেকনাফ থেকে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের জন্য আমাদের পথে যাওয়া অর্থাৎ হোয়াইক্যং রোড ধরে সামলাপুর পর্যন্ত পথটুকু দারুণ উপভোগ্য হবে নিঃসন্দেহে। সেজন্য আপনাদের টেকনাফের বাসে চড়ে টেকনাফ সড়কের হোয়াইক্যং রোডে নামতে হবে। তারপর ধমধমিয়া হয়ে চলে আসুন শামলাপুর সমুদ্র সৈকত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বা ব্যাটারিচালিত অটো বাহনই হোয়াইক্যং রোড থেকে শামলাপুর পর্যন্ত একমাত্র ভরসা। সেজন্য আপনাকে ঢাকা থেকে টেকনাফ বা কক্সবাজার আসতে হবে প্রথমে, তারপর শামলাপুর। শামলাপুরে থাকা খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। কক্সবাজার বা ইনানীই ভরসা। তবে চলতি পথে ছোটখাট কিছু বাজার ও দোকানের দেখা পাবেন। সেখানেই সারতে পারবেন প্রয়োজনীয় কাজ।

পড়ন্ত বেলায় সমুদ্র
একটা বিষয় সবসময় খেয়াল রাখবেন, আপনার বা আপনার ভ্রমণ সঙ্গীদের দ্বারা পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কোনও কিছু অবশ্যই করা চলবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় এমন কিছু ফেলে আসবেন না সমুদ্র সৈকতে।

ছবি: লেখক 

/এনএ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন