X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফটোগ্রাফি শিক্ষা ও সঙ্কট

সুদীপ্ত সালাম
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:০৪আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:০৬

 

 

photography

 শিক্ষাব্যবসা একটি সমাজসেবামূলক ব্যবসা। এই খাতে বিনিয়োগকারী ও সরকার বিনিয়োগ করতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। শিক্ষাব্যবসায় কী শিক্ষা দেয়া হচ্ছে সেবিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে শিক্ষার চাহিদা নেই, বাজার নেই সে শিক্ষা ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়, এটাই স্বাভাবিক।

সেরকম একটি শিক্ষা ফটোগ্রাফি‍-অন্তত বর্তমান প্রেক্ষাপটে। তারপরও কিছু ফটোগ্রাফি প্রেমী মানুষ শুধু ভালোবাসা থেকে ফটোগ্রাফি শিক্ষাকে কামড়ে পড়ে থাকেন, থাকবেন। ফটোগ্রাফিবিষয়ক পণ্যের কদর যে হারে হুহু করে বাড়ছে, সে হারে ফটোগ্রাফিশিক্ষার প্রসার বাড়ছে না কেন? তার কারণ অনুসন্ধান করা যাক।    

এখনো যে দেশে ফটোগ্রাশিক্ষাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষা বিতরণের জন্য শুক্রবার, শনিবার ও অন্যান্য ছুটির দিন খুঁজে বেড়াতে হয় সে দেশে ফটোগ্রাফি শিক্ষাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান চালানো কতটা কঠিন তা সহজেই অনুমেয়। তারপরও যারা ফটোগ্রাফি শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছেন তারাও খুব বেশি দূর যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ইতোমধ্যে অনেকে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছেন। ফটোগ্রাফিবিষয়ক কর্মশালা করানো কঠিন নয়, এক দেড় মাসের কোর্সও কোনোমতে উতরে যায়, কিন্তু সঙ্কটটা দীর্ঘমেয়াদী কোর্স দিয়ে শুরু হয়। বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী ফটোগ্রাফি কোর্স করা কঠিন। দীর্ঘমেয়াদী কোর্স করার পথে প্রধানত ৩টি প্রতিবন্ধতা রয়েছে : ১. সময়ের অভাব, ২. অর্থ সংস্থানে অনিশ্চিয়তা এবং ৩. অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি শিক্ষা যেহেতু মূলধারার শিক্ষা নয় এবং মূলধারার শিক্ষার সাথে সরাসরি এর কোনো সম্পর্কও নেই সেহেতু অন্যান্য কাজের পর দীর্ঘমেয়াদী ফটোগ্রাফি শিক্ষা গ্রহণের জন্য সময় বের করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই কর্মশালা ও অন্যান্য ছোট কোর্সের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের ফি বেশি। এই ফি’র অর্থ সংস্থানের জন্য শিক্ষার্থীকে পরিবারের শরণাপন্ন হতেই হয়। পরিবারগুলো ফটোগ্রাফি শিক্ষার পেছনে টাকা খরচ করতে আগ্রহী নয়। তাছাড়া বেশিরভাগ পরিবারের কর্তা ব্যক্তি চান না সন্তান মূলধারার পড়ালেখার বাইরে অন্যকোনো শিক্ষা গ্রহণে সময় ‘নষ্ট’ করুক। আর তা যদি হয় ফটোগ্রাফির মতো প্রায় অলাভজনক একটি শিক্ষা তাহলে সরাসরি নিষেধাজ্ঞাই জারি করা হয়। পরিবারের অভিভাবকরা চান এমন এক ব্যবস্থার শিক্ষা যা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎকে সুনিশ্চিত করে, তাদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী করে এবং সমাজে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করে। ফটোগ্রাফির মধ্য দিয়ে সবার এমন চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে অভিভাবকরা কেন তাদের সন্তানদেরকে ‘ফটোগ্রাফির কানাগলি’তে ছেড়ে দেবেন? এই প্রশ্ন শিক্ষার্থীরও। ফটোগ্রাফি করে দেশের বাইরে থেকে অর্থ উপার্জন করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার মেধাও সমান নয়। সুতরাং বিদেশের কথা বলে ফটোগ্রাফি শিক্ষা গ্রহণের প্রতি বেশি মানুষকে আকর্ষিত করা দুষ্কর।

মজার ব্যাপার হলো এই ৩ নম্বর সঙ্কটের একটি সমাধান বের করতে পারলেই অন্যান্য সকল সঙ্কট আপনাআপনিই দূর হয়ে যেতো। 

          কিন্তু শুধু এজন্যই যে ফটোগ্রাফি শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড় করানো যাচ্ছে না তা নয়। ফটোগ্রাফি শিক্ষা নিয়ে যারা ভাবেন তাদের অভিজ্ঞতা বলে, সমগ্র ফটোগ্রাফিশিক্ষার প্রতিই একধরণের সামাজিক অবহেলাও এর জন্য দায়ী। যদি তাই না হতো তাহলে ছোট কোর্সগুলোর আসনও খালি থাকে কেন? কর্মশালার সময় ক্লাসরুম কানায় কানায় পূর্ণ থাকে না কেন? ধরে নিলাম উপরে বর্ণিত সঙ্কটগুলোর কারণে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘমেয়াদী কোর্স করছে না বা করতে পারছে না। কিন্তু আমরা তো দেখি এক-দেড় মাসের কোর্স, যে কোর্সের ক্লাসগুলো শিক্ষার্থীদের সুবিধাজনক সময়কে মাথায় রেখে সাজানো হয় সেগুলোও আশানুরূপ নয়। এর কারণ নেতিবাচক মানসিকতা, ‘ফটোগ্রাফি শিখতে হয় না’। বেশিরভাগ ক্যামেরা মালিকের ধারণা, অত্যাধুনিক ক্যামেরা ও গিয়ার কিনলেই হয়, আর বেশি প্রয়োজন হলে ইন্টারনেটে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে নিলেই কেল্লা ফতে। যদি তাই হতো তাহলে পৃথিবীতে কোটি কোটি লাইব্রেরি ও অগণিত বই থাকার পরও অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতো না। এই ভ্রান্ত ধারণা সেদিন দূর হবে যেদিন গোটা ফটোগ্রাফি প্রকৃত অর্থেই পেশাদারদের হাতে চলে যাবে এবং ফটোগ্রাফি উচ্চতর আসনে অধিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু কচ্ছপের গতিতে।

          ফটোগ্রাফিকে মূলধারার না হোক অন্তত প্রয়োজনীয় একটি শিক্ষা হিসেবে যদি প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফির বিস্তার তরান্বিত এবং ফটোগ্রাফি শিক্ষাসেবা লাভজনক হবে। তা করতে প্রথমেই ফটোগ্রাফারদের কর্মসংস্থানের দুয়ার অবারিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, লাভজনক-অলাভজনক এবং সেবা ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপে বসা যেতে পারে। তাদেরকে বুঝাতে হবে, ফটোগ্রাফার শুধু পত্র-পত্রিকার জন্যই প্রয়োজনীয় নয়, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই পেশাদার ও শিক্ষিত ফটোগ্রাফার বাঞ্ছনীয়। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই ফটোগ্রাফারের পদ সৃষ্টি করা জরুরি। ফটোগ্রাফার নিয়োগ দিলে প্রতিষ্ঠানের লাভ কি তা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের বুঝাতে হবে। আমি নিশ্চিত বুঝানো কঠিন হবে না। এই লাভজনক-অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ফটোগ্রাফার নিয়োগ দেয়া শুরু করে তাহলে ফটোগ্রাফি শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। তখন ফটোগ্রাফি শিক্ষা কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানও বাড়বে এবং সেগুলো অন্যান্য শিক্ষাসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মতোই টিকে যাবে।

/এফএএন/   

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ সফরে জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
বাংলাদেশ সফরে জিম্বাবুয়ে দলে কিংবদন্তির ছেলে
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে  ইসরায়েল?
রাফাহ শহরে আবারও অভিযান চালাবে ইসরায়েল?
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে স্মরণ
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা