বসন্তে হলুদ -সবুজ প্রকৃতি পাহাড় জুড়ে, তরু পল্লবে সবুজের আচ্ছাদন। জুমের নতুন ফসল বোনার সময় প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। বর্ণিল পাহাড়জুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। বৈশাখকে বরণ করতে প্রস্তুত পার্বত্য শহর খাগড়াছড়ি। দরজায় কড়া নাড়ছে পাহাড়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি।
ত্রিপুরা, মারমা, চামকাদের যথাক্রমে বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু এই উৎসবের অদ্যক্ষরের মিলিত রূপ বৈসাবি। এটিই এখানকার সবচেয়ে বড় উৎসব। বৈসাবির সূচনা পর্বে থাকে ফুল বিজু। নদীর জলে দেবি গঙ্গার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে সূচিত হয় নতুন বছরকে বরণ করার মহা আয়োজন। আদিবাসী নারী-পুরুষ, শিশু সকলের অংশগ্রহণে পাহাড় সাজে উৎসবের বর্ণিল রঙে। আদিবাসী ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, পানিখেলা, ত্রিপুরাদের গরিয়া নৃত্য, ঘিলাখেলা, বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রায় নতুন বছরকে বরণ করা প্রস্তুতি চলে। পুরাতন বছরের গ্লানি আর অপ্রাপ্তি ভু্লে নতুন বছরের ছন্দে পাহাড়ের উৎসবের বর্ণিতায় ফিরে আসে –বৈসাবি। সবুজ পাহাড় যেন রঙিন রূপে সেজে উঠে। পাহাড়ে সর্বত্র উৎসবের আমেজ।
ভোরের আকাশে রক্তিম সূর্যের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ফু্ল বিজু মূলত চাকমাদের উৎসব হলেও, সবার অংশগ্রহণে তা সার্বজনীন রূপ নেয়। বাংলা ঋতু চৈত্র মাসের শেষ দিনে আয়োজন করা হয় ফুল বিজুর। পুরাতন বছরে গ্লানি -দুঃখ ভুলে নতুন দিনের মঙ্গল কামনায় গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসানো হয় নানা রঙের পাহাড়ি ফু্ল। বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু ফুল ছাড়াও মাধবীলতা, অলকানন্দা, নিম পাতা, রঙ্গন, জবাফুলসহ বাহারি ফুল কলাপাতায় করে নদীর জলে ভাসানো হয়। দেবী গঙ্গা'র উদ্দেশ্যে নদির পাড়ে মোমবাতি জ্বালানো হয়।
আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাকে ফুল বিজুতে অংশ নেয় চাকমা,ত্রিপুরা তরুণ-তরুনীরা। থামি, পিনন, কবই, খাদি, খবং পরে তরুণীরা ফুলবিজুতে অংশ নেয়। ধুতি, ফতুয়া আর কুতুক রি (মাথায় ব্যবহৃত মাফলার) পরে ফুল বিজুতে অংশ নেয় তরুণের।
দল বেধে নদির জলে মোমবাতি জ্বালানো পর্ব শেষ করে কলাপাতায় করে ফুল ভাসায়। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলা স্বনির্ভর এলাকায় খবং পরিয়ার পাড়ায় আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ফুল বিজুর। ‘উৎসব-ঐতিহ্যের বন্ধনের সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ করুন’ এই স্লোগানে সাবর্জনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি আয়োজন করে ফুল ভাসানোর (ফুল বিজু)। এর পাশাপাশি বৈশাবিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত গোটা পার্বত্য অঞ্চল।
/এফএএন/