X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
৩ পেরিয়ে বাংলা ট্রিবিউন

চলুন নিজেদের তুলে ধরি

পল্লব মোহাইমেন
১৩ মে ২০১৭, ০০:০০আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ১৫:০৮
image

‘ফ্যাশনটা হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতার ব্যারিস্টার অমিত রায়ের কথা এটা। এই যুগে কিংবা ওই যুগে, সবসময়ই মুখ আর মুখশ্রীর ব্যাপার সত্য। আবার সেই গানটির কথা যদি বলি, ‘মুখ দেখে ভুল করো না মুখটা তো নয় মনের আয়না...’।
মুখ ও মুখশ্রী কিংবা মুখ ও মন- যাই বলি না কেন, বাইরে থেকে যা দেখা যায়, তা যদি ভেতরে না থাকে তবে তা মেকি। স্টাইলই কি ফ্যাশনকে সুন্দর করে তুলতে পারে? এর উত্তরে কমবেশি সবাই বলবেন ‘হ্যাঁ। খুব সুন্দর একটা শাড়িতে কি সবাইকে সুন্দর লাগে?’
কৈশোরের একটা ঘটনা মনে দাগ কেটে গেছে। ঈদের আগে শহরে গেছি কেনাকাটা করতে, সঙ্গে আমার বাবা। এক দোকানে খুব সুন্দর, সুশ্রী এক নারী শাড়ি দেখছেন। দোকানির সঙ্গে যখন কথা বলা শুরু করলেন তিনি, তখন কথা শুনে আমার বাবা বললেন, ‘মহিলা তো কথা বলেই সব শেষ করে দিল।’ একে আঞ্চলিক টান, তার মধ্যে কথা বলার ধরনটাও সুবিধার নয়। মানুষ সুন্দর করে কথা বললেও তাকে সুন্দর দেখায়। সেদিন উল্টোটাই দেখেছিলাম হয়তো।

মসলিন উৎসব, ছবি- সাজ্জাদ হোসেন


ফ্যাশন, জীবনযাপন নিয়ে যে পত্রপত্রিকার প্রকাশনা সেখানেও কি এ কথাটা খাটে না? বাজারে যা আছে তাই তুলে ধরব, নাকি মানুষের রুচি তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করব? আবার সেই অমিতের কথা চলে আসে। মুখ আর মুখশ্রী। দুটোই দুটোর পরিপূরক যেন।
‘হার্ডকোর’ সংবাদের পাশাপাশি আমাদের দেশে তো বটেই, সারাবিশ্বেই নানা বিষয়ের সংবাদ, প্রতিবেদনের চাহিদা গড়ে উঠেছে। বিশেষায়িত সাময়িকী তো বটেই, মূল ধারার পত্রপত্রিকায় এগুলো বেশ পোক্ত হয়েছে অনেকদিন ধরেই। সুচিত্রা সেন কী পরতেন, তার শাড়ি পরার ধরনটা কেমন কিংবা তার চাহনিটা কেমন? এসব থেকেই তো আমাদের ফ্যাশন শেখা। বলা হয় জোড়া সাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের অনুকরণে গড়ে উঠেছে বাঙালি নারীর পরার স্টাইল।

ফ্যাশন আইকনদের ছবি দেখে পোশাক পরা কিংবা রূপচর্চা- এ ধারার প্রচলন ছিল; কারণ তখন গণমাধ্যমে ফ্যাশন নিয়ে আলাদা করে কোনও আয়োজন তেমন একটা ছিল না। ফ্যাশনও যে সাংবাদিকতার বিষয় সে বিষয়টাই তো নতুন। নতুন হলে যা হয় আর কি! ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’-এর মধ্য দিয়ে এগোতে থাকে বিষয়টা। এই ২০১৭ সালে এসে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোনো সংবাদপত্র, অনলাইন পত্রিকা কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল জীবনযাপন, বিশেষ করে নাগরিক জীবনের চাহিদা উপেক্ষা করতে পারে না। নিদেনপক্ষে সপ্তাহে একটি ক্রোড়পত্র, অনলাইনে একটা বিভাগ, টিভিতে একটা অনুষ্ঠান রাখতেই হবে ফ্যাশন বা জীবনযাপন নিয়ে।

খাদি উৎসব

যেহেতু গণমাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে, তাই সেটা পোশাক-আশাক হোক আর বেড়ানো কিংবা খাওয়া-দাওয়া- সাংবাদিকতা সঠিকভাবেই সেখানে করতে হয়। না হলে পাঠকের মানে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায় না। গণমাধ্যমের যে দায়দায়িত্ব, সেটাকেও এখানে মাথায় রাখতে হয়। নিজের দেশকে তুলে ধরা, দেশি পোশাক, দেশি কাপড়কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভাবতে হয়।
গত দুই দশকে দেশে দারুণ কিছু ব্যাপার ঘটে গেছে। তৈরি পোশাক বা বস্ত্র কারখানার শিল্প খাত তো ছিলই- ফ্যাশন হাউস, মানে পোশাক বানানোর বুটিক দোকানগুলোও শিল্পে পরিণত হয়েছে। সৌন্দর্যচর্চার প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ পারলারও শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। আবার রান্নাবান্নাও এখন শিল্প। এই জায়গাগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। নতুন নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। জীবনযাপনে এসেছে নতুন নতুন নানা অনুষঙ্গ, ছুটি পেলেই বেড়াতে যাওয়া, হোটেল-রিসোর্টে থাকা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া, নতুন প্রযুক্তি পণ্য কেনা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকা- একুশ শতকে এসবই আমাদের প্রতিদিনকার চর্চার বিষয়।

এসব কারণেই জীবনযাপনের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটা অনেক বড়। দায়িত্ব অনেক বেশি। বৈশ্বিক সংস্কৃতির হাতছানি সর্বত্রই। আর সব তথ্য হাতের মুঠোয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, বিশ্বায়ন যত প্রবল, নিজস্বতা তুলে ধরার প্রয়াসটাও তত বেশি। চীন, জাপান, ভারত কিংবা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে তাই দেখা যায়। কথায় আছে ‘থিঙ্ক গ্লোবালি অ্যাক্ট লোকালি’। তাই পোশাক-আশাক, সাজসজ্জায় দেশীয় বিষয়গুলোকে সবার আগে তুলে ধরার দায়িত্বটা আমাদের ওপরই বর্তায়। নিজের ঐতিহ্য, নিজের সংস্কৃতিকে কতটা আধুনিকতার সঙ্গে পাঠক বা দর্শকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, সেটাই মূল কথা। পশ্চিমা তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু কিছু পোশাকও আমাদের এখানে প্রভাব বিস্তার করছে। যেগুলো ধর্মীয় ধারার ওপর ভর করে বাজার দখল করছে। সেসবে আবার ফ্যাশন ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমি বেশ জোরালোভাবেই মনে করি ধর্মীয় আচার-আচরণের পোশাকের সঙ্গে ফ্যাশনকে মিশিয়ে ফেলার এ চেষ্টাটা ঠিক নয়।
গত কয়েক বছর ধরে পহেলা বৈশাখ আমাদের সবচেয়ে বড় সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশীয় পোশাক-বাজার ঈদের পরে এই সময়টাতেই থাকে রমরমা। খাবার আর জীবনযাপনের সব উপাদানেই দেশজ গন্ধ। সোঁদা মাটির এই গন্ধটাই তো আমার। অন্যান্য উৎসব, পালা-পার্বণে এই গন্ধটাকেই তো উসকে দিতে হবে। আর তার জন্য তো গণমাধ্যমই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমার নিজস্বতা, আমার স্টাইল-মুখশ্রীই তো সুন্দর করে তুলবে মুখটাকে।

পল্লব মোহাইমেন

পল্লব মোহাইমেন : সাংবাদিক ও লেখক।

/এনএ/   

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা