ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার। তার নিত্যদিনের প্রতিটি মুহূর্ত ভীষণ ব্যস্ত। তবে একটু সময় করে ঘুরতে যাওয়া, রাতের বেলা বই নিয়ে কিছুক্ষণ পড়া, পছন্দের শাড়িটি খুঁজে নেওয়া কিংবা পরিবারকে সময় দেওয়া, রান্না করা থেমে নেই। সব সামলেই তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার। বাংলা ট্রিবিউন জানাচ্ছে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পছন্দ-অপছন্দ...
পছন্দ...
ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার । তবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য তার পছন্দের সুনির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। এ ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশ যেকোনও স্থানই তার পছন্দ। তবে পাহাড়ের তুলনায় তার পছন্দ পানি। তাকে টানে পানি। ‘সমুদ্র আমাকে টানে’।
সমুদ্র...
একাধিকবার সমু্দ্রে গিয়েছি। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের কক্সবাজারটা খুবই পছন্দের। গত জানুয়ারিতেও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিয়েছি, ঘুরে এসেছি।
দ্বিতীয় পছন্দ ‘বইপড়া’...
এখন বিষয়ভিত্তিক বই বেশি পড়া হয়। তিনি জানান, সবসময় সংসদ সম্পর্কিত বা কখনও কোথাও গিয়ে যদি কথা বলার থাকে, সেই বিষয়গুলোই বেশি পড়ি। কারণ কোনও টপিক নিয়ে কথা বলতে হলে কিন্তু আপনাকে তা ভালো করে জানতে হবে। এখন কিন্তু সাদামাটা জ্ঞান নিয়ে বা ভাসাভাসা জেনে কোনও বিষয় কথা বললে চলে না। সত্যিকার অর্থে সারবস্তুসহ কোনও বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আপনার থাকতে হবে। যে কারণে এসব বিষয়ে বেশি বেশি পড়তে হয়। প্রত্যেকটা বিষয়ের গভীরে যেতে হবে এবং আপনাকে ওই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
আমি কোনও বিষয়ে কথা বলতে চাইলে একটি দিক-নির্দেশনা বা সুপারিশ/পরামর্শ আকারে কিছু বলার চেষ্টা করি।
রবীন্দ্রনাথ আমি গভীরভাবে পড়তে চেষ্টা করি। রবীন্দ্রনাথের কবিতা-গীতবিতান, গীতাঞ্জলি, সঞ্চয়িতা সবই আমি পড়েছি। কেবল যে বরীন্দ্রনাথ পড়ি তা নয়, আমি নজরুলও পড়েছি। বিশেষ সঞ্চিতা-এর মধ্যে যে কবিতাগুলো রয়েছে সেগুলো আমি অনেক পড়েছি। কবিতা পড়তে আমি সব সময় পছন্দ করি। কবিতার প্রতি আমার খুবই টান ছিল।
সৈয়দ হকের (সৈয়দ শামসুল হকের) ‘আমার পরিচয়’, শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’, রবীন্দ্রনাথের একাধিক কবিতা; যেমন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’, ‘কৃপণ’, ‘পরশ পাথর’, নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ এগুলো আমার খুবই প্রিয় কবিতা।
গানের মধ্যে রবীন্দ্র-নজরুলসঙ্গীত পুরনো দিনের বাংলা গান আমার পছন্দ। আগে নিয়মিত গান শুনলেও এখনতো একদমই সময় পাই না। তবে মাঝে মাঝে ইউটিউবে বা গাড়িতে থাকার সময় পছন্দের গান শোনা হয়। আগের মতো ঠিক আলাদা করে সময় বের করে গান শোনা হয় না।
অবসরে রান্না...
অবসর পেলে ছেলেকে সময় দিতে চেষ্টা করি। ও যে ধরনের খাবার পছন্দ করে সেগুলো রান্না করে দেই। আমি রান্না করতে পছন্দ করি। সুযোগ পেলে রান্না করি।
কোন রান্নাটি ভালো পারেন—এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা বেশ কঠিন। একরম কী নিজের কথা নিজে বলা যায়? কোন রান্নাটি বেশি ভালো হয়, সেটা আমি কী করে বলব? যারা খান তারাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন। আপনাদের একদিন খাওয়ালে বলতে পারবেন, কোন রান্নাটি ভালো হয়েছে।
প্রিয় পোশাক...
শাড়ি আমার বেশি পছন্দ। আমাদের দেশের আবহাওয়াটা একটু গরম। এজন্য বেশিরভাগ সময়ই আমি সুতির শাড়ি পরতে পছন্দ করি। আমি অনেক টাঙ্গাইল শাড়ি পরি। আর আমাদের দেশের টাঙ্গাইল শাড়িগুলো কিন্তু সুন্দর এবং সুলভ। আর শতভাগ সুতি। এরকম শাড়ি কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোথাও এত কম দামে পাওয়া যাবে না। এক সময় আমাদের মায়েরা কেবল সুতি শাড়িই পরতেন। এখন আমাদের এখানে নানা রকম শাড়ি পাওয়া যায়। আর এগুলোর মানও দারুণ। জামদানি, টাঙ্গাইল, রাজশাহীর সফুরা সিল্ক কিন্তু খুবই উন্নতমানের। বাংলাদেশের কাতানের মতো কাতান কিন্তু অন্য দেশে পাওয়া যাবে না। ও হ্যাঁ, বেনারসিটাও কিন্তু দারুণ। সেটিও আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে।
এটা না বললেই নয়, বাংলাদেশের শাড়িশিল্প ভীষণ এগিয়ে গেছে। আমাদের উচিত এটিকে প্রমোট করা।
মিশতে ভালো লাগে...
আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করি। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাইরে যেতে পারি না, বিষয়টি তা নয়। সময় পাই না, তাই যাওয়া হয় না। এই যে কিছুদিন আগে বাণিজ্য মেলায় ঘুরে এলাম, এখানে কিন্তু আমি কোনও সমস্যায় পড়িনি। একেবারে স্বাচ্ছন্দ্যে আমি ঘুরে এসেছি। একেক জায়গায় গেলে মানুষের ভালোবাসাটা পাওয়া যায়। আমি কিন্তু সময় পেলে এভাবে নেমে পড়ি। শাড়ি কিনতে দোকানে ঢুকে পরি।
পছন্দের খাবার...
দেশি খাবারই আমার পছন্দ, ডাল ভাত-ভর্তা- শুঁটকি। আমার মরিচ-পেঁয়াজ ডলে পান্তা ভাত খেতেও ভালো লাগে। হালিম ও তেহারিও ভীষণ পছন্দ। আবার কাবাব জাতীয় খাবার আমার খুব ভালো লাগে।
পছন্দের রং...
সবচেয়ে প্রিয় রং লাল।
সাজসজ্জা...
সাজসজ্জা যখন যেটা মানায় মনে করি সেটাই করি। গহনা পড়তে তেমন আগ্রহ তৈরি হয়নি কখনও। তবে সিম্পল কোনও গহনা দেখলে ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে।
ফুল...
বেলী ফুল পছন্দের। বেলী ফুলের সুগন্ধিযুক্ত পারফিউমও ভালো লাগে।
সবসময়...
সার্বক্ষণিক ঘড়ি ব্যবহার করি। হাতে এটি আমার থাকবেই থাকবে।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
/এফএএন/এনএ/