চুমকি-জরির কাজ করা ঝলমলে গাউনের নাম ‘বাহুবলী।’ পাশের দোকানে হাঁকডাক শুনে গিয়ে দেখা গেল একই ধরনের গাউন সাজিয়ে রাখা হয়েছে সুলতান-সোলেয়মান ও বেগমজান নামে। রাজধানীর গাউসিয়া, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে এসব চটকদার নামে দেদার বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পোশাক। বাহুবলী-২, বারবি গ্রাউন্ড, নয়নমণিসহ চমকপ্রদ নাম হলেও পোশাকের ধরন মোটামুটি একই।
বাহুবলী সিনেমার কোনও চরিত্র কি এমন পোশাক পরেছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে আমতা আমতা করে গাউসিয়ার আঁখি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী জানালেন, এমন পোশাক না পরলেও এই ধরনের গাউন এক দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল। তবে একই মার্কেটের ইমু ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী জহির সাফ জানিয়ে দিলেন এসব নাম তাদেরই দেওয়া। সিনেমা অথবা সিরিয়ালের কোনও চরিত্রই এইসব পোশাক পরেন না, তবুও কেন এমন নামকরণ? নিউ মার্কেটের তৈরি পোশাকের দোকানের বিক্রেতা মনজুর আলী বললেন, ‘এসব নাম মূলত ক্রেতা আকর্ষণ করতেই দেওয়া হয়। অনেকে পছন্দের সিনেমার নামে পোশাকের নাম দেখে খুশি হয়ে কিনে নিয়ে যান। একারণে আমরাই এসব নাম দিই পোশাকের।’
পুরান ঢাকার রোকেয়া বেগম এক দোকানে দরদাম করছিলেন বাহুবলী পোশাকের। তিনি জানালেন পোশাকের নাম দেখে আকৃষ্ট হয়েই মেয়ে বায়না ধরেছিল এই পোশাক কেনার। তারপর আর কোনও পোশাকই সে পছন্দ করতে পারছে না। ফলে একদিন পর আবার এখানেই এসেছেন ‘বাহুবলী’ পোশাক কিনতে। তবে আজিমপুর নিবাসী তাবাসসুম জানালেন, নাম নয়। ঈদের পোশাক কেনার সময় সেটির দাম, মান ও ঠিকঠাক মানাচ্ছে কিনা সেটা দেখাই জরুরি। এসব নামকরণকে বিরক্তিকর মনে করেন ঢাকা সিটি কলেজের এই শিক্ষার্থী। দাম নিয়েও করলেন অভিযোগ। জানালেন, অদ্ভুত নামকরণ করে ইচ্ছেমত দাম হাঁকাচ্ছেন দোকানিরা।
গাউসিয়ার দোতলায় ‘মা বুটিক’ এ বাহুবলী জামার দাম রাখা হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। আবার তার ঠিক কয়েক দোকান পরই রঙ্গিমা ফ্যাশনে ৮ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে বাহুবলী পোশাক। দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে বিক্রেতা আসগর প্রধান জানালেন, তাদের পোশাক বেশি মানসম্মত। একারণেই দাম বেশি। তবে ‘মানসম্মত’ পোশাকের নাম কিরণমালা রাখার উপযুক্ত কোনও কারণ সম্পর্কে জানাতে পারেননি এই দোকানি। ‘সবাই রাখে। এইসব নাম না দেখলে ক্রেতা আসে না’- বিরস মুখে জানালেন তিনি। ‘পোশাকের নাম বেশিরভাগ সময় আমরাই রাখি। তবে মাঝে মাঝে পোশাক আসার সময় বস্তার গায়েও এসব নাম লেখা থাকে’- এমন তথ্য দিলেন নূর ম্যানসনের দোকানি আব্দুল জব্বার।
এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘স্টার জলসার গোবিন্দ ডালির ড্রেস’ লেখা পোশাক দেখা গেল। পোশাকের এমন নামকরণ কেন করা হয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে ‘ডলির স্বপ্ননীড়’ দোকানের স্বত্বাধিকারী দিল আরা খানম ডলি জানালেন, স্টার জলসায় ভজ গোবিন্দ নামক সিরিয়াল হয়। সেখানকার চরিত্র ডালির নামে এই পোশাকের নাম রাখা হয়েছে। ডালি চরিত্র এমন পোশাক পরে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন এটা তার জানা নেই। সরাসরি ভারত থেকে নিয়ে আসা এসব পোশাকের নামকরণ আগেই করা থাকে। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে আগের কথা বদলে বললেন, ‘আসলে কাপড় ভারত থেকে আসে। কিন্তু আমাদের ফ্যাক্টরিতে সব জামা তৈরি হয়।’ তবে যে বললেন পোশাকের নামকরণ ভারত থেকেই করা হয়? এই প্রশ্নের জবাবে জানালেন তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তাই এখন আর কথা বলতে পারবেন না। ‘পাকিস্তানী ময়ূরী ড্রেস, ইন্ডিয়ান লেহেঙ্গা লেখা পোশাকগুলোও আপনারা তৈরি করেন কিনা’- এমন প্রশ্নেরও জবাব দেননি তিনি।
/এনএ/