‘কিছুই খুঁজি নি আমি, যতবার এসেছি এ তীরে, নীরব তৃপ্তির জন্যে আনমনে বসে থেকে ঘাসে, নির্মল বাতাস টেনে বহুক্ষণ ভরেছি এ বুক’- তিতাসের বুকে বড় হওয়া কবি আল মাহমুদ লিখেছিলেন এই কবিতা। সেই নির্মল বাতাসের টানে তিতাসের বুকে বিচরণের সাধ জাগে আমারও।
ভারতীয় অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে নদীটি প্রবেশ করে। শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে এটি আরও দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে বহমান অন্যতম বৃহৎ নদী মেঘনার সাথে একীভূত হয়ে যায়। তিতাসের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিলোমিটার।
তিতাস ও মেঘনা নদীকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাষ্ট্র বাংলাদেশে অনেক উপকথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি হলো তিতাসকে মেঘনার কন্যা বলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানা এলাকা পুরোটাই তিতাসের পাড়ে। রিক্সা দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে উপভোগ করা যায় তিতাস।
বিশেষ কারণ ছাড়া এখন আর ঘুরতে যাওয়া হয় না আগের মতো। এবার ঈদের পর ছুটিতে গেলাম তিতাস পাড়ে নবীনগর উপজেলায়। দিনটি রোদেলা হলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আকাশের রং পাল্টে যায়। এই রোদ এই বৃষ্টি। যেন কিছুতেই মানছে না প্রকৃতি। প্রকৃতির এই লীলাখেলার মাঝে গোধূলি লগনে আকাশ নিজের চেহারা বদলে ধারণ করলো ভয়ংকর সাতরঙা রূপ। একপাশে রক্ত লাল, কিছু বেগুনি, কিছুটা হলুদ আবার কিছুটা কমলা। তার সাথে খেলায় মেতেছিল মেঘ। সারি সারি মেঘ জমে তৈরি করেছিল বিভিন্ন আকৃতি। মনে হচ্ছিলো যেন জীবন্ত ক্যানভাস দেখছি। যে ক্যানভাসে শিল্পী তার তুলির আঁচড় দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক।
এরই মধ্যে রংয়ের খেলা উপভোগ করতে করতে নৌকা নিয়ে চলে এলাম মাঝনদীতে। মৃদু বাতাস কিছুটা ঠাণ্ডা। নদী সেদিন শান্ত ছিল, হালকা ঢেউয়ের তালে তালে দুলছিল নৌকা। আকাশ পানে চেয়ে রইলাম, মুগ্ধ হলাম আর ভাবলাম মানুষও এমন ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায়। আকাশের সাথে হয়তো মানুষের মিল এখানেই!
এক সময় তিতাসের পাড় দেখা দুষ্কর হলেও এখন ছোট হয়ে আসছে গতিপথ। তাই এই পাড়ে দাঁড়ালেই দেখা যায় ঐ পাড়। এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির পাশাপাশি গাঙচিলের দেখা মিললেও বর্তমানে তা নেই বললে চলে। তিতাসের পাড়ে একসময় সবচেয়ে বেশি বিচরণ ছিল মৎস্যজীবীদের। এখন তারও দেখা পাওয়া ভার। পাশাপাশি পাড়ের অবৈধ স্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে অদ্বৈত মল্লবর্মণের বিখ্যাত উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এর কালজয়ী নদী তিতাস।
/এনএ/