X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কামাখ্যা মন্দিরে একদিন

নওরিন আক্তার
২৩ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৩০আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৭, ১৫:১৮
image

এক রহস্যের নাম ‘কামরূপ কামাখ্যা।’ কথিত আছে একসময় এখান থেকে কেউ ফিরে আসতো না! মন্ত্র ও যাদুবিদ্যার এক রহস্যময় স্থান বলা হয় কামাখ্যা মন্দিরকে।
মেঘালয় দেখার উদ্দেশ্যে আসাম যাওয়া হলো হঠাৎ করেই। আসাম হয়ে মেঘালয়ের দিকে চলে যাব, এমনটাই ছিল পরিকল্পনা। একদম ভোরে ট্রেন থেকে নামলাম আসামের গুয়াহাটিতে। এখানেই বিশ্বখ্যাত কামাখ্যা মন্দিরের অবস্থান। ভাবলাম এতো কাছে এসে কামরূপ কামাখ্যা না দেখে চলে যাওয়ার কোনও মানে নেই। সকাল সকালই তাই রওনা দিলাম মন্দির দেখার উদ্দেশ্যে।

মন্দিরের প্রবেশ পথ
ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পর্বতে হিন্দুদেবী কামাখ্যার মন্দিরটি অবস্থিত। যেকোনও ট্যাক্সিকে বললেই নিয়ে যাবে এখানে। ট্যাক্সি থেকে নামতেই সাইনবোর্ডে কামাখ্যা মন্দিরের রাস্তার নির্দেশনার দেখা মিলল। সামনে এগুতেই দুই পাশে সারি সারি দোকানে সাজানো পূজার উপকরণে চোখ গেল। এখানেই জুতা রেখে তারপর সামনে যেতে হবে।   

মন্দিরের মসৃণ চূড়া
মন্দিরের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো রঙিন ফুল দিয়ে সাজানো মন্দিরের এক অংশ। নিচে সিঁদুরের প্রলেপ পড়ে আছে। দেয়ালে দেয়ালে নিখুঁত কারুকাজে খোদাই করা আছে বিভিন্ন দেবীমূর্তি। রয়েছে খোদাই করা পৌরাণিক কাহিনীর খণ্ডচিত্র। কাজগুলো এতোটাই নিখুঁত যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।

নিখুঁত খোদাইয়ে ফুটে উঠেছে দেবদেবীর মূর্তি
সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলাম এই ভোরেও দর্শনার্থীদের ভিড়। অনেকগুলো সিড়ি সাজানো একটা অংশে কবুতর ঘুরে বেড়াচ্ছে ইচ্ছেমত।  তান্ত্রিকরা ব্যস্ত সাধনায়। দেবদেবীর মূর্তি দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সামনে। হঠাৎই গা ছমছম করে উঠলো নিভৃতে দাঁড়িয়ে থাকা বলি ঘর দেখে। দেবীর তুষ্টির জন্য এখানেই পশু বলি দেওয়া হয়।

বলি ঘর
কামাখ্যা মন্দিরে মোট চারটি কক্ষ আছে। এরমধ্যে একটি গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ। মন্দিরের চূড়াগুলো গোলাকার ও মসৃণ। গর্ভগৃহটি আসলে ভূগর্ভস্থ একটি গুহা। গুহার দেওয়ালে কোনও ছবি বা খোদাইয়ের কাজ নেই। সরু সিঁড়ির ধাপের শেষে যোনি আকৃতির পাথরের ফাটল থেকে ঝরে পড়ছে প্রাকৃতিক ঝরনা ধারা। জলের ধারা সৃষ্টি করেছে একরত্তি জলাশয় যার ধারে অবিরাম চলে পূজার্চনা। এই গর্তটিই দেবী কামাখ্যা নামে পূজিত এবং দেবীর পীঠ হিসেবে প্রসিদ্ধ।

দেবদেবীর মূর্তি দেয়ালজুড়ে
ইতিহাস থেকে...
শিবের তরুণী স্ত্রী ও মোক্ষদাত্রী শক্তিই কামাখ্যা নামে পরিচিত। কালিকা পুরাণ অনুসারে, কামাখ্যায় পূজা করলে সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয়। ধারণা করা হয় যে, প্রাচীনকালে কামাখ্যা ছিল খাসি উপজাতির বলিদানের জায়গা। এখনও বলিদান এখানে পূজার অঙ্গ। এখানে অনেক ভক্তই দেবীর উদ্দেশ্যে ছাগলবলি দেন।
এটি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম। এই মন্দির চত্বরে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও আছে। এর মধ্যে ত্রিপুরাসুন্দরী, মাতঙ্গী ও কমলা প্রধান মন্দিরে পূজিত হন। অন্যান্য দেবীর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা মন্দির। তন্ত্রসাধকদের কাছে এই মন্দির একটি পবিত্র তীর্থ।

পবিত্র তীর্থস্থান কামাখ্যা মন্দির
কামাখ্যা মন্দিরের রহস্য...
মন্ত্রতন্ত্র ও সাধনার এক রহস্যময় স্থান বলা হয় কামরূপ কামাখ্যাকে। জনশ্রুতি আছে, একসময় এখানে গেলে কেউ ফিরে আসতে পারতো না। এখান মন্ত্র বলে পুরুষদের বশ করে রাখা হতো। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, শিবঠাকুরের স্ত্রী ছিলেন সতী। সতীর মৃত্যু হলে তার দেহ নিয়ে প্রবল আস্ফালনে দাপিয়ে বড়াতে শুরু করেন শিব। শিবের স্পর্শে পবিত্র হয়ে ওঠে সতীর অঙ্গ। বিষ্ণু বা সৃষ্টিকর্তা জগতের মঙ্গল কামনার্থে সতীর দেহ একান্ন খণ্ডে বিভক্ত করেন। দেবীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধরাধামে পড়তে থাকে এক এক করে। যেখানে যেখানে পড়ে সেই পবিত্র অঙ্গ, সেখানেই পাথরে পরিণত হয়। এইসব স্থানকেই পবিত্র মহাপীঠ বলা হয়। একান্নটি মহাপীঠ ছাড়াও রয়েছে ছাব্বিশটি উপপীঠ। যেখানে দেবীর যোনি পতিত হয়েছিল সেই স্থানকে বলা হয় তীর্থচূড়ামণি। সব তীর্থের মধ্যে সেরা এই তীর্থচূড়ামণি। এ কারণেই কামাখ্যাকে বলা হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পীঠ।

পুণ্যলাভের আশায় এখানে সাধনা করেন যোগীরা
পুরুষদের ছলেবলে বশ করে আঁটকে ফেলা হতো সারাজীবনের জন্য। মন্ত্র পড়ে অদৃশ্য করে ফেলা হত তাদের। অনেক পুরুষ মন্ত্র শেখার জন্য সেখানে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। যারা ফিরতে পেরেছে তাদের মানসিক ভারসাম্য ছিল না- এমনই সব রহস্যময় কাহিনী আজও ঘুরে ফেরে এই মন্দির ঘিরে। 

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!