জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছোটে মানুষ। স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের খোঁজে সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে একসময় পৌঁছায় অন্য দেশে। হাড়ভাঙা পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ পাঠিয়ে চাঙ্গা রাখে নিজ দেশের অর্থনীতি। তাদেরও সহ্য করতে অবর্ণনীয় কষ্ট। থাকার কষ্ট, খাবারের কষ্ট কিংবা রোজগারের কষ্ট।
এই জীবন-জীবিকার গল্প থেকে যায় পর্দার আড়ালে। তাদের এই গল্প শোনার প্রয়োজন আছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত সিউল অভিবাসী শিল্প ও চলচ্চিত্র উৎসব, ঢাকা ২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন, লেখক ও শিক্ষক অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, শ্রমিক নেতা মোশারেফা মিশু এবং শিল্পকলা একাডেমির সহযোগী পরিচালক মাসুদ সুমন।
মিলনায়তনে গানের দল ‘সমগীত’এর গাওয়া দুটি উৎসব সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সমগীতের শিল্পী অমল আকাশ ও সহযোগী শিল্পীরা রানা প্লাজার ওপর গান ‘হে স্বদেশ শুনতে পাচ্ছ কি, আমরা এখনও বেঁচে আছি’ ও সুন্দর পৃথিবী আবার জাগবো।’ এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান জলজ মুভি’র সাইফুল ইসলাম জার্নাল। প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদুর রহিম অঞ্জন বলেন, এই উৎসব নির্মাতাদের জীবনের দিকে তাকাতে সহায়তা করবে। নির্মাতারা তো কেবল প্রেম-ভালবাসা নিয়ে সিনেমা তৈরি করেন। এই বাইরেও যে চলচ্চিত্রের জন্য বাস্তবতার গল্প রয়েছে, তা এই উৎসবে দেখা যাবে।
আলোচনায় অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, এই উৎসব আমাকে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আরও উজ্জ্বীবিত করেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর সাড়ে চার লাখ মানুষ অভিবাসী হচ্ছেন। উৎসবে প্রদর্শিত এই চলচ্চিত্রগুলো শ্রমিকদের নিয়ে অভিবাসী শ্রমিকরা নির্মাণ করেছেন। তাদের গল্প জানা প্রয়োজন আছে।
শিল্পকলা একাডেমির সহযোগী পরিচালক মাসুদ সুমন বলেন, শিল্পকলা একাডেমি পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। চলতি বছরে দুটি নির্মাণের অনুদান দেয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে নিয়মিতভাবে পাঁচটি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান দেয়া হবে।
শ্রমিকনেতা মোশরেফা মিশু বলেন, শ্রমিকদের যখন একটি সাবজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করে কাজ করা হয় তখন তারা অনেক উৎসাহ বোধ করে। তাদেরকে নিয়ে যখন কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় তখন তারা মনে করে তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
বক্তব্য শেষে অতিথিদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এরপর একে একে প্রদর্শিত হয়, চীনের জন শু’র চলচ্চিত্র ‘দ্যা হুড’, ফ্র্যান্সের ফরেন ইয়ান এসলার’র চলচ্চিত্র ‘দ্য ট্রাবল ট্রুবেডর”, বাংলাদেশের শেখ আল মামুন পরিচালিত ডায়াসপোরা, রবিন শেখ পরিচালিত ‘মুক্তার মামা’ ও ‘ সেইভিয়্যার ’, নেপালের পরিচালক দাম্বার সুবা’র চলচ্চিত্র ‘শী রেইজ এগেইন’, ফিলিপাইনের নাশ অঙ পরিচালিত ‘রিচ ডেড পুওর ডেড’ এবং কোরিয়ার লি হুয়াং জুং’র চলচ্চিত্র ‘দ্যা লেটার।’ প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের ওপর আলোচনা করেন অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, চলচ্চিত্র নির্মাতা আল আসাদ করিম, বেলায়েত হোসেন মামুন এবং অং রাখাইন।