X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের অমিয়াখুম ভ্রমণের গল্প

ফারহানা ইয়াসমিন
২৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:০০আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:২৪
image

শরতের আকাশ আমার খুব পছন্দের। সঙ্গে যদি পূর্ণিমা পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই! এসব মাথায় রেখেই ট্যুর গ্রুপ বিডি এর সাথে অমিয়াখুম যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম। অমিয়াখুম ট্যুর ছিল আমার জন্য বহুল প্রতীক্ষিত একটি ট্যুর। ২০১৫ সাল থেকেই আমিয়াখুম দেখার স্বপ্নে বিভোর আমি ‘ট্যুর গ্রুপ বিডি’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা বন্ধু ইমরানকে কম জ্বালাইনি! শেষ পর্যন্ত স্বপ্নের অমিয়াখুমের নাগাল পেলাম।

যাত্রাপথে
যাত্রার শুরুতেই পা মচে পড়লাম বিপদে। তারপর রিমন ভাইয়ের বারণ উপেক্ষা করে ছুটলাম বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। সকালে নাস্তার পর্ব সেরে ৩ দলে ভাগ হয়ে ৩টা জীপে উঠে রওনা দিলাম থানচির উদ্দেশ্যে। ইমরান, নিশাত আর ফাতিমা আপুর দলের নাম রয়েল। ইমরান এ রহিম ভাই, সেতু আপু আর মাসুম এর দলের নাম বেঙ্গল আর নাঈম ভাই এবং আমার দলের নাম ছিল টাইগার। তিন দলের নামকরণ মিলিয়ে হয় 'রয়েল বেঙ্গল টাইগার'।

চান্দের গাড়িতে আড্ডা দিতে দিতে ছুটলাম থানচির পানে। থানচি পৌঁছে বিজিবি ক্যাম্পের ফর্মালিটি শেষ করে বোটে উঠলাম। অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে চলে গেলাম পদ্মমুখে। দুপুরের খাবার সেরে নিলাম বোটেই। 

ভেলায় যাত্রা

পদ্মমুখে নেমে টিম ভেঙে যে যার মতো এগিয়ে যেতে থাকলো। সবার পেছনে মালিহা আপু ও কায়সার ভাইকে নিয়ে আমি আস্তে আস্তে সামনে যাচ্ছিলাম। আমার সাথে তারেক ভাইও। এই প্রথম গাইড হারুন ভাইকে লক্ষ করলাম। উনি সবার শেষে আছেন শুধুমাত্র আমাদের দেখাশোনা করার জন্য। আমার সামনে ৩৬ জন। আর পেছনে আমিসহ ৪ জন ও গাইড হারুন ভাই।
প্রায় এক ঘণ্টা ঝিরি পথে হেঁটে পেলাম এক ঝরনার দেখা। প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর আগের টিমের সদস্যদের পাওয়া গেল। এর মাঝেই দেখা হলো আমাদের আরেক গাইড মানিক ভাইয়ের সঙ্গে। এভাবেই চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম হরিসচন্দ্র পাড়া।

দেবতার পাহাড়

সেখানে আমরা বেশ কয়েকজন রেস্ট না নিয়েই পাহাড় বেয়ে নামতে থাকি। আমাদের চিন্তা ছিলো থুইসা পাড়ায় গিয়েই রেস্ট নেবো। এর মধ্যেই আমাদের জোঁক আক্রমণ করে বসলো। জীবনের প্রথম জোঁকের কামড় খেলেও বেশ শান্ত থাকার চেষ্টা করলাম। জোঁক ছাড়াতে ছাড়াতে যাচ্ছিলাম সামনে। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে হতাশ। 'কোথাও কেউ নেই' অবস্থা।

রেমাক্রি খাল
আমি আর ফাতিমা আপু জোঁকের কামড় থেকে বাঁচার জন্য তাড়াতাড়ি পাহাড় মাড়িয়ে ঝিরি পথে নামি। সন্ধ্যা হতে চললো! আশিক আমাকে আর ফাতিমা আপুকে গলা ছেড়ে ডাকছে। আমরাও ওদের খুঁজছিলাম। সামনে কেউ নেই। পিছনেও কাউকে পাচ্ছি না। হাসিব ভাই আর রনি ভাইকে পেলাম। তারা টর্চ জ্বালিয়ে জানান দিল তাদের অবস্থান।

বহু কষ্টে আমরা ট্রেইল আগাতে থাকলাম। প্রায় দেড় ঘণ্টা ঝিরি পথ ধরে আর পাহাড় ডিঙ্গিয়ে চলেছি। টর্চের আলো আকাশে ফেলে স্থানীয়দের সাহায্য কামনা করতে করতে আগাচ্ছিলাম।


প্রায় ৮ টা বাজে। মনে মনে ধরেই নিলাম হারিয়ে গেছি এবং এই ১২ জনকে নিয়ে আজ রাত কাটাতে হবে কোনও জুম ঘরে। রাত ৯টার সময় আবিষ্কার করলাম আমরা ভুল ট্রেইলে চলে এসেছি! তখন মনে হলো তবে কি এত কাছে এসেও আমার আর অমিয়াখুম দেখা হবে না? ততক্ষণে সবার শরীরের সবটুকু শক্তি শেষ হয়ে গেছে। ক্লান্ত আমরা যখন বাধ্য হয়ে সামনের জুম ঘরের দিকে আগাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই ইমরানের কণ্ঠ শুনলাম। বাকিদের খুঁজে পেলাম। বুঝলাম যে আমরা ভুল ট্রেইলে ছিলাম না। সঠিক ট্রেইলেই পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম!

সবুজে ঘেরা পাহাড়

থুইসা পাড়ায় গিয়ে ক্লান্ত আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন ভোরে রওনা দিলাম অমিয়াখুমের উদ্দেশ্যে। অনেকে থেকে গেল থুইসা পাড়াতেই। বাকিরা চলে গেলাম অমিয়াখুম দেখতে। গত রাত থেকে প্রায় ৫০টা পাহাড় পাড়ি দিয়েছি মনে হচ্ছিল!  

টাইগার জোঁক
দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর পাওয়া গেল দেবতার পাহাড়। এই প্রথম কথা হলো হাফিজ ভাইয়ের সাথে। যিনি সবার আগে যেতে ব্যাকুল। কিন্তু এত সরু রাস্তায় আমি ওভারটেক করতে দিচ্ছি না! প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগলো দেবতার পাহাড় নামতে। নামার পর হারুন ভাইয়ের কঠোর সিদ্ধান্ত, একদল যাবে অমিয়াখুম দেখতে ও আরেক দল সাতভাই এবং  ভেলাখুম দেখতে। বেশিরভাগ অমিয়াখুম' যেতে চাইলে স্বপ্নটাকে জিইয়ে রেখে গেলাম সাতভাইখুম আর ভেলাখুম।

নাফাখুম ঝরনা
৩/৪ মিনিট হেঁটে গিয়েই পেয়ে গেলাম সাতভাইখুম আর ভেলাখুম। কিছুক্ষণ বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।
এবার সাতভাইখুমকে বিদায় দিয়ে গাইড সঙ্গে নিয়ে রওনা দিলাম স্বপ্নের অমিয়াখুম দেখতে। অমিয়াখুম পৌঁছে ভুলে গেলাম সকল কষ্ট। অবিরত ধারায় ও প্রচণ্ড আক্রোশে নেমে আসছে জলধারা। কী তার তেজ! কী তার রূপ! অমিয়াখুমকে এত কাছ থেকে দেখে চোখের কোণে পানি চলে এল। নিজেকে কিছুক্ষণ সময় দিলাম, দিলাম দলের বাকি সদস্যদেরও। আড্ডাবাজি ও ছবি তোলা শেষ করে ধরলাম ফিরতি পথ।

অমিয়াখুম ঝরনা

থুইসা পাড়া পৌঁছে দেখি ঝুম বৃষ্টি! পরদিন ভোরে থুইসা পাড়াকে বিদায় দিয়ে চললাম নাফাখুমের উদ্দেশ্যে। ৪/৫টি খাল পাড় করে রেমাক্রির পাড় ঘেঁষেই চলছিলাম আমরা। আবারও এক্সট্রিম ট্রেকাররা সামনে। কিন্তু এবার গাইড মানিক ভাইয়ের বিশেষ লক্ষ সবার দিকে। নাফাখুম পৌঁছে জলকেলি ও ক্লিকবাজি শেষে চললাম রেমাক্রির পথে। সেখানে আমাদের বোট অপেক্ষায় আছে আমাদের জন্য।

অমিয়াখুম ঝরনার উপরিভাগ
রেমাক্রির পৌঁছে ঘটলো এক মজার ঘটনা। বোটে চেপে বসার পর পানির স্রোত বাড়তে শুরু করলো হঠাৎ করেই। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। মনে হচ্ছিল বোট এখনই ডুবে যাবে। একদিকে অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ, অন্যদিকে পানিভীতি। এরমধ্যে নাইম ভাই ও হাসিব ভাই বড় পাথর জায়গাটা নিয়ে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন সবার মনে। বললেন জনশ্রুতি আছে এখানে মানুষ মারা যায়। কারণ স্থানীয়রা বিশ্বাস করে যে দেবতা চান না এখানে মানুষ আসুক ও পরিবেশ দূষণ করুক! পেছনের বোট আবার আঁটকে গেছে। ভয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর উপভোগ করার মতো অবস্থা নেই। শেষ পর্যন্ত সাঙ্গু নদী পার হলাম। চান্দের গাড়িতে করে ফিরে চললাম শহরে। শেষ হলো স্বপ্নের অমিয়াখুম দেখার মিশন।

ছবি: মাসুম হোসেন  

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া