X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন

হাসনাত নাঈম
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:৪৫আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:৪৫
image

শহর থেকে দূরের কোলাহলমুক্ত নির্জনতা, চারদিকে সবুজ গাছপালা, মাঝে মাঝে পশু-পাখির ডাক আর শীতল বাতাস। এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি আপনাকে দেবে এক পাহাড়সম মানসিক প্রশান্তি। হ্যাঁ, বলছিলাম সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কথা। আপনি যদি দুর্গম পাহাড়ি পথে হাঁটতে পছন্দ করেন, তবে চন্দ্রনাথ পাহাড় আপনার জন্যই।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন
হঠাৎ চায়ের আড্ডা থেকেই শুরু হয় চন্দ্রনাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। আমি, বন্ধু শফিক আর ছোট ভাই পরাগ। সিদ্ধান্তটা ছিল মাত্র পাঁচ মিনিটের। যেই কথা, সেই কাজ। দেড় ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে যখন আমরা বিমানবন্দর স্টেশনে, তখনই দেখি প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম মেইল। কোনও কথা না বুঝে মানুষের ভিড়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে, টিকিট ছাড়াই। কারণ টিকিট করার সময়টুকুও হাতে ছিল না। পরে একজনের কেবিন শেয়ার করে ভোরে পৌঁছলাম সীতাকুণ্ড স্টেশনে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন তখন বেশ কুয়াশা ছিল। শহরের রাস্তায় হাঁটছি, মনে হচ্ছে সীতাকুণ্ড নয়, যেন কুয়াশার বাড়িতে হাঁটছি। ছোট্ট একটা ছনের ছাউনি ঘেরা হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে রওনা হলাম কাছেই অবস্থিত গোলাবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের দিকে। কিন্তু বিধিবাম। কুয়াশায় অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, আশেপাশের দশ মিটার জায়গার মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। পরে অনেকটা গোমড়া মুখে শহরের ফিরে একটা হোটেল খুঁজলাম। সেখানে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ রেখে কিছু সময় বিশ্রাম করে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পথে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন

শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। এ দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মনে হলো সীতাকুণ্ড যেন মন্দিরের শহর। রাস্তার দুই দিকেই বিভিন্ন ধরনের অনেক মন্দির আপনার নজর কাড়বে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারলাম, এই ছোট্ট এলাকায় প্রায় আড়াইশোর বেশি মন্দির আছে। এবং আমরা যে পাহাড়ের চূড়ায় চড়তে যাচ্ছি সেখানেও নাকি দুটি শিব মন্দির আছে। আগ্রহটা আরও বেড়ে গেল ১২০০ ফুট চন্দ্রনাথের চূড়ায় চড়ার।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন
প্রথমদিকে তেমন কষ্ট না হলেও তিনশো ফুট থেকে আপনাকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে। কখনোবা চলতে হবে এক পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে আর অন্য পাশে খাদ নিয়ে। একবার পা ফসকালেই পড়তে হবে ২৫০-৩০০ ফুট নিচে। কোনও কোনও জায়গায় পথটা এতটাই সরু যে, দুজন মানুষ একসঙ্গে উঠা-নামা করা প্রায় অসম্ভব। মাঝে মাঝে পাবেন প্রাচীনকালের তৈরি সিঁড়ি। কে কত সালে সে সিঁড়ি কেন বানিয়েছেন সাথে আছে তার নামফলকও। চারদিকে নিরব-নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে শুনতে পাবেন চেনা-অচেনা পাখির ডাক। দেখতে পাবেন ঝরনাও।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন
প্রায় ঘন্টা দেড় পর আমরা পৌঁছলাম প্রথম পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে রয়েছে শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির। মন্দিরে অবস্থারতরা জানালেন, এটা তাদের শিব দেবতার বাড়ি। প্রতিবছর এই মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকেন। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন। পাহাড়ে এবারের মেলা চলে ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর পাহাড়ের নিচে মেলা চলবে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন
কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে। সেখানেও নাকি একটা মন্দির আছে নাম, চন্দ্রনাথ মন্দির। বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের ১৫০ ফুট রাস্তার প্রায় ১০০ ফুটই আপনাকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে। সেখানে নিজেকে সামলে রাখা অনেকটাই কষ্টকর। অবশেষে খাড়া পাহাড় বেয়ে মাটি থেকে ১২০০ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠলাম আমরা।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন


সীতাকুণ্ডের সর্বোচ্চ উঁচু পাহাড় চন্দ্রনাথে দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে যাবে চোখ।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন
পাহাড় থেকে নিচে নামার সময়ও আপনি মুগ্ধ হবে। কারণ, এই পাহাড়ের দুটি রাস্তা রয়েছে। আপনি যদি আগে বিরূপাক্ষ মন্দির হয়ে উঠেন সেটা হবে আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, চন্দ্রনাথ মন্দির থেকে নামার রাস্তার সিড়ির ধাপগুলো অনেক বড় বড়। এই পথে উঠতে গেলে আপনাকে খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যাবেন। আর নামতে গেলে আপনি পাবেন দুই পাহাড়ের মাঝের সুরঙ্গ রাস্তা। এখানে সব সময়ই বাতাস থাকে। যা আপনার ক্লান্ত দেহকে এক মুহূর্তেই শীতল করে দেবে। এবং এই পাহাড় থেকে নিচে নামা একদম সহজ।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন
পাহাড় থেকে নেমে সোজা হোটেল রুমে। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে তিন ঘন্টার একটা হালকা ঘুম দিয়ে রাতে পুরো শহরটা ঘুরে দেখলাম। সীতাকুণ্ড মডেল থানার পাশেই রয়েছে সোহেল মামার হালিমের দোকান। খাবারের স্বাদ অসাধারণ। এরপর হোটেল রুমে ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে সোজা রাতে বাসে ঢাকায়। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য এটাকে একদিনের আদর্শ ট্যুরও বলা যায়।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ে একদিন

যাতায়াত
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ট্রেনে ও বাসে যাওয়া যায়। বাসে ভাড়া পড়বে ৪৮০ টাকা এবং ঢাকায় ফেরার জন্য সীতাকুণ্ড থেকে সর্বশেষ বাস রাত সাড়ে বারটায়। কোন আন্তঃনগর ট্রেন সীতাকুণ্ড স্টেশনে থামে না। তাই রাতের চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনটাই সবচেয়ে উপযোগী ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে। কারণ, সকাল সাড়ে ছ'টা নাগাদ আপনি সীতাকুণ্ড পৌঁছতে পারেবেন।

মনে রাখবেন

  • পাহাড়ের গায়ে আগুন জ্বালাবেন না।
  • পাহাড়ে ওঠার সময় শুকনো খাবার ও পানি রাখবেন সঙ্গে।
  • পাহাড়ি রাস্তায় বিশ্রায় নিয়ে নিয়ে উঠবেন।
  • রাস্তায় কিছু দোকান পাবেন, দোকানিদের ব্যবহার ভালো। কিন্তু পণ্যের দাম দ্বিগুণ।
  • একা কখনো পাহাড়ে যাবেন না।
  • সীতাকুণ্ড শহরে বেশকিছু হোটেল আছে বিশ্রামের জন্য। রুম ভেদে ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।
/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী