সফলতার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল এবং কঠোর পরিশ্রম। আর এসবের মাধ্যমেই একজন মানুষ হয়ে ওঠে সেরাদের সেরা। তেমনি একজন হচ্ছেন তানভীনা মহসিন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এর মেয়ে তানভীনা ১২ বছর বয়সে পারিবারিক সূত্রে পাড়ি জমান সুইডেনে। সেখানের একটি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে যোগদান করেন ইনসুরেন্স কোম্পানিতে। বছর দেড়েক সেখানে কাজ করলেও নিজের মধ্যে একটি অস্থিরতা কাজ করতো সবসময়। কারণ কলেজে পড়াকালীন সময় থেকেই নিজে কিছু করতে চাইতেন। এরই মধ্যে বিয়ে করেন সিলেটের ছেলে করিম রেজাউলকে। নতুন সংসারে ভালোই সময় কাটছিল দুজনের। সেসময় স্বামী করিম রেজাউল কাজ করতেন একটি হোটেলে। হঠাৎ তানভীনা ভাবলেন, নিজেই একটা রেস্টুরেন্ট দিলে কেমন হয়? সেই ভাবনা থেকেই ইনসুরেন্স কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দেন তিনি এবং ‘থ্রি ইন্ডিয়া’ নামক একটি রেষ্টুরেন্টে স্বামীসহ যোগ দেন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। সেই সঙ্গে খুঁজতে থাকেন পছন্দমত জায়গা, যেখানে রেস্টুরেন্ট করতে পারবেন।
অভিজ্ঞতা অর্জনের দেড় বছরের মাথায় পেয়ে যান পছন্দমত জায়গাসহ চলমান একটি রেস্টুরেন্ট। কিন্তু মালিকের শর্ত একটাই, রেস্টুরেন্ট নাম পরিবর্তন করা যাবে না। তবেই তিনি বিক্রি করবেন। শর্ত মতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ২০০১ সালে ‘ইন্ডিয়ান গার্ডেন’ নামের সেই রেস্টুরেন্টটি ক্রয় করে আবার নতুনভাবে চালু করেন তানভীনা ও রেজাউল। এটিই ছিল তাদের প্রথম রেস্টুরেন্ট।
‘ইন্ডিয়ান গার্ডেন’ শুরুর দিকে খুব একটা ভালো করে উঠতে পারেনি। সেসময় অনেকটা ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে তানভীনাকে। বছর দেড়েক বাদে ঘুরে দাঁড়ায় ইন্ডিয়ান গার্ডেন। নাম অপরিবর্তিত থাকলেও নিজস্ব ধাঁচে পরিবেশন করা ও মান বজায় রেখে তৈরি করা হয় খাবার। রেস্টুরেন্টে সুইডিশ কাস্টমারদের গুরুত্ব দিয়ে বিশেষভাবে সুইডিশ পরিবেশ তৈরি করেছিলেন তিনি।
এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তানভীনা-রেজাউলকে। বর্তমানে স্টকহোমেই ইন্ডিয়ান গার্ডেন নামে তাদের রয়েছে মোট ছয়টি রেস্টুরেন্টসহ একটি ফুড ইন্ডাস্ট্রি। এই ফুড ইন্ডাস্ট্রি থেকেই মূলত তাদের ছয়টি রেস্টুরেন্টের প্রয়োজনীয় কাচাঁমালের সরবরাহ করা হয়।
এই সতের বছরের রেস্টুরেন্ট পরিচালনায় তানভীনা অর্জন করেছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোল্ড ড্রাগন পুরস্কার, ব্রিটিশ অ্যাওয়ার্ড, সেরা ইউরোপিয়ান কারি শেফ পুরস্কার, লন্ডনে সেরা ইউরোপিয়ান কারি শেফ পুরস্কার। তিনি বর্তমানে সুইডেনে বাঙালি সফল নারীদের আইডল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তাদের ছয়টি রেস্টুরেন্টে সাড়ে চার'শ মানুষ কাজ করে। এর মধ্যে বাঙালি আছেন ২০০ জন।
এই সফল নারীর মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে সামনে আছে একটি বড় পরিকল্পনা। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সুইডিশ স্টাইলে বড় একটা রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি। যেখানে কেবল মাত্র শিক্ষিত মেয়েরাই কাজ করবে। তার রেষ্টুরেন্টের শেফদের নিয়ে আসবেন সুইডেন থেকে। আর রেষ্টুরেন্টের নামকরণ করবেন অবশ্যই বাংলাতেই।