পুরাতন বছরের দুঃখ, কষ্ট, ও হতাশা মুছে ফেলে আসন্ন নতুন বছরে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন প্রত্যাশায় আজ শুক্রুবার (১৩ এপ্রিল) মূল বিজু পালন করছে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নানা ধরনের সবজি দিয়ে পাঁচন রান্না করেছে তারা। দুপুরের পর থেকে অতিথি আপ্যায়ন শুরু হয়েছে। চলবে মাঝরাত পর্যন্ত।
খাগড়াছড়ি জেলার সাবেক শিক্ষাবিদ ড. সুধীন কুমার চাকমা জানান, চাকমারা তিনদিন ধরে বিজু পালন করে। গতকাল বৃহস্পতিবার ফুল বিজু পালন করা হয়েছে। নদীতে ফুল ভাসিয়ে, নদীর চলমান পানিতে গোসল করে পবিত্র হয়ে ধর্মীয় বিহারগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে মোমবাতি জ্বালিয়ে আগত বছরে নিজেদের, দেশ ও জাতির শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়নের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন খেলাধুলা, ঘোরাঘুরিসহ আনন্দ করেছে সবাই। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আজ শুক্রুবার তারা মূল বিজু পালন করছে। এদিন নানা ধরনের শাক-সবজি দিয়ে পাঁচন রান্না করা হয়। সর্বনিম্ন ৩২টি থেকে ১০০ সবজির উপাদানে পাঁচন রান্না হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্নও তৈরি করা হয়। অতিথিদের জন্য এদিন ঘরের দরজা থাকে খোলা।
বিজুর তৃতীয় দিন অর্থাৎ আগামী শনিবার নববর্ষে চাকমারা গজ্যাপজ্যা পালন করবে। সেদিন সকালে বিহারে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হবে। এদিনও সবাই ভালো খাবার রান্না করে অতিথি আপ্যায়ন করেন। বিকেলে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করা হয়। পুরো দিনটি ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ আনন্দ ও বিনোদনের মধ্যে কাটে।
এছাড়া ত্রিপুরা সম্প্রদায় আজ থেকে তিনদিন এবং মারমা সম্প্রদায় আজ থেকে চারদিন পর্যন্ত নানা ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালন করবে ত্রিপুরা নববর্ষ ‘বৈসু’ এবং মারমা নববর্ষ ‘সাংগ্রাই।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নসহ শতাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ পালনের জন্য নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি বেড়াতে এসেছেন পর্যটক তানভীর হাসান ও তার স্ত্রী তানজিনা হাসান। তারা জানান, বৈসাবি দেখার জন্যই তারা এসেছেন পাহাড়ে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছেন বলেও জানালেন বাংলা ট্রিবিউনকে।
রাজশাহী থেকে আসা সাদ ইবনে তারেক বলেন, তিনি তার এক চাকমা বন্ধুর আমন্ত্রণে এসেছেন। তিনি অত্যান্ত আনন্দিত ফুল বিজুর অনুষ্ঠান দেখে।
জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার আলী আহম্মদ খান জানান, সকলের সহযোগিতায় এখানো নিরাপত্তাসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো। এই পরিস্থিতি বর্ষবরণের শেষ পর্যন্ত রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।