X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ লেখা

আমাদের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি

সুন্নাহ ইবনে হাসান
১৩ মে ২০১৮, ১০:৩৪আপডেট : ১৩ মে ২০১৮, ১০:৪৭

 

আমাদের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি

বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ

বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ! এই শব্দ শুনলেই আমার চোখে ভাসে আনন্দ বেকারির টানা পরোটা, ইউসুফের গরম গরম কেক, বিস্কুট, স্টারের লেগ রোস্ট, কাচ্চি, ফালুদা, বিউটি বোর্ডিংয়ের চিতল মাছের কোপ্তা, দেশবন্ধুর সকালের নাস্তা, মিরপুরের রাব্বানি, মোহাম্মদপুরের মোস্তাকিমের চাপ, কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের বাঁশমতি রেস্তোরাঁ, হোটেল জামান, বগুড়ার হোটেল আকবরিয়া, খুলনার রয়েলের ফালুদা, সিলেটের পানসীর টাকি মাছের ভর্তা, বরিশালের সুভাষ বাবুর পটল ভাজা, গুঠিয়ার সন্দেশ, রাজবাড়ী ও নাটোরের মিষ্টি।

বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রি এতটাই সমৃদ্ধ যে আসলে এত অল্প করে বলে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে উল্লিখিত এমন আরও অনেক উদ্যোক্তার হাত ধরেই বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ সম্প্রসারিত হয়েছে।

ব্র্যান্ডিংয়ের অভাব...

লেখাটা যখন লিখছি, তখন আমি কলকাতায় বসে আমিনিয়ার মাটন পনির টিক্কা চিবুচ্ছি। এই রেস্তোরাঁর বয়স ১০০ বছরের কাছাকাছি। এদের ব্র্যান্ডিং, সার্ভিস, সাজসজ্জা প্রায় সব দোকানের একই। ঠিক এই বিষয়ের অভাব দেখি আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী নামজাদা রেস্তোরাঁগুলোর ক্ষেত্রে। স্টার কাবাব, হোটেল রাজ্জাক, আনন্দ বেকারি, ডিসেন্ট, আকবরিয়া, হাতেগোনা কিছু রেস্তোরাঁ ছাড়া অধিকাংশ ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। তবে ইদানীং ফুড রিভিউ কালচারের কারণে ক্যাফে কর্নার, বরিশাল মুসলিম হোটেলের মতো পুরনো রেস্তোরাঁগুলো আবার সবার সামনে পরিচিত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনের ভূমিকা এখানে ব্যাপক।

তবে নতুন রেস্তোরাঁ যারা আসছে, তারা এই ব্যাপারে দারুণ সচেতন ও সুন্দর করে এদের ফুড ফিলোসফি ব্র্যান্ডিং করতে সক্ষম হচ্ছে। যেমন, অজো, ফুলস ডিনার, ক্যাফে ম্যাঙ্গো, জমিদারি ভোজ, খানাস, ডাইনিং লাউঞ্জ থেকে শুরু করে বার্গারে কেল্লাফতে, চিলোক্সসহ অনেক রেস্তোরাঁ সুপরিচিত হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের রেস্তোরাঁগুলোর প্রচার-প্রসার তো রয়েছেই।

ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ফুডকোর্টের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ জায়গাগুলোতে স্বল্পমূল্যে অনেক ধরনের খাবার পাওয়া যায়। ফুডকোর্টের মতো জায়গাগুলো থেকেও অনেক ভালো মানের রেস্তোরাঁ ও ব্র্যান্ড উঠে এসেছে। এর মধ্যে রাইফেলস স্কয়ারের টেক আউট, ৩শ' ফিটের খানাস জ্বলন্ত উদাহরণ। তবে স্বল্পমূল্যে দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই খাবারের মান ছাড় দেয় কোর্টের অনেক দোকানই। এই দিকগুলো অবশ্যই বিবেচনার বিষয়। সব মিলিয়ে ফুডকোর্ট কনসেপ্টকে আমি ইতিবাচক মনে করি। তবে এর জন্য মান ধরে রাখতে হবে।

লেখক: সুন্নাহ ইবনে হাসান

প্রতিদিনের ফুড ব্লগ ‘খায়ালামু-৩৬৫ দিন’...

আমি নিজে ফুড ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য অনলাইনকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। ‘খায়ালামু-৩৬৫ দিন’ নামে একটি ফুড ব্লগ লিখছি। ‘খায়ালামু ৩৬৫ দিন’ লিখে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে সার্চ দিলেই ছবিসহ জানবেন বাংলাদেশের নানা রেস্তোরাঁর খাবারের কথা। সঙ্গে ঘরের খাবারও রয়েছে। আসলে এটি আমার প্রতিদিনকার ডিজিটাল ফুড ডায়েরি। এতে প্রতিদিনের খাবারের অভিজ্ঞতা ছাড়াও দেশি খাবার ও রেস্তোরাঁর ঐতিহ্য, নতুন খাবারের সন্ধান বের করে এর গল্পটা লেখা হয়। মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার সঙ্গে খাবার ও এর সম্পর্কিত তথ্য শেয়ার করাই এই ব্লগের উদ্দেশ্য। যেহেতু প্রতিদিনের খাবারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়, তাই এর নাম ‘খায়ালামু ৩৬৫ দিন’।

চাই অনলাইন রিভিউ...

বাইরের দেশগুলোতে ফুড রিভিউ খুব জনপ্রিয়। রিভিউর ওপর নির্ভর করে ফুডিরা খাবারের জায়গাগুলো বেছে নেয়। আমাদের দেশেও এই বিষয়টি ৪/৫ বছর ধরে জনপ্রিয় হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে ঢাকা ফুডিস, ফুড ব্যাংক, ফুড ব্লগার্স বিডি, নুনেতে ভাতেতে, রসনা বিলাস-এর মতো অনেক জনপ্রিয় ফুড গ্র“প রয়েছ। মূলত এসব গ্র“পে রিভিউ দেখে ফুডিরা নানান রেস্তোরাঁ বেছে নেয় খাবারের জন্য। এর যেমন সুবিধাও আছে তেমন অসুবিধাও আছে।

সুবিধা যেমন, অনেক পুরনো ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁর ও তাদের সিগনেচার আইটেমের খাবারের সন্ধান পাওয়া যায়। তেমনি, খাবারের স্বাদ টেকশ্চার না বুঝে উঠেই রিভিউ দেয়। এ ক্ষেত্রেই অসঙ্গতির ব্যাপারগুলো চোখে পড়ে। অনেক স্বল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ব্যবসায় সফল হতে দেখা যায় নিজেদের লোক দিয়ে রিভিউ দেয় বা ফুডিদের প্রলোভন দেখায়। তবে সত্যি বলতে এই ধরনের রেস্তোরাঁ একটা হাইপে পড়ে হারিয়ে যায়। তাই আমার মনে হয়ে ফুড ব্যবসায় স্বল্প সময়ে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা না করে সফল হওয়ার একটাই প্রধান মন্ত্র হওয়া উচিত। একইসঙ্গে খাবারের মান ও সার্ভিস উন্নত হওয়া উচিত।

সেক্ষেত্রে মূল্য যাই হোক না কেন, আমরা সেই খাবারের স্বাদ নিতে সেখানে ঠিকই যাই। টুকটাক ফুড এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারের খাতিরে বেশ কিছু ফুড ও ফুড রিভিউয়ারের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। এদের মধ্যে আহসানুল কবির সাইফুল, ফারুখ আহমেদ, কে এইচ মাহমুদ, নাইম, আখলাক, বাদশাহ’র সুলতান ফুড রিভিউ ফুডিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য।

আমাদের রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি দেশের খাবার ব্র্যান্ড হোক...

কচুশাক, সরষে ইলিশ আর চিংড়ি দিয়ে চচ্চরি বা মুড়িঘণ্ট, ইলিশ পাতুরি, করলার ডাল, বেগুন ভাজা, সরষে ঢেড়স পাবদা চচ্চরি, লাউ-শৈল মাছ ইত্যাদি বাঙালি খাবারগুলো আসলে বাসাবাড়িতে আয়োজন ছাড়া রেস্তোরাঁয় পাওয়া দুর্লভ। এক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের চাহিদার জন্য আমার মনে হয়,  আমরাই অধিকাংশ সময় ভাবি বাইরে গেলে বিরিয়ানি, সাউথ কুজিন বা কন্টিনেন্টাল খাবো। সেই অনুযায়ী দেশের রেস্তোরাঁগুলোর গড়ে ওঠা। দেশের বাইরে কন্টিনেন্টাল, ওরিয়েন্টাল ফুডগুলোর সঙ্গে সমানতালে তাদের দেশি ফুডগুলোও স্ট্রিটফুড থেকে শুরু করে পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে সহজলভ্য পাওয়া যায় ও সমান তালে জনপ্রিয়।

আমাদের ইদানীং ভাত, মেজবান, চুই ঝালের দেশীয় খাবার বেশ কিছু ব্র্যান্ডেড রেস্তোরাঁ গড়ে উঠলেও ঘরে তৈরি মায়েদের হাতে নিপুণ কায়দায় রান্না করা দেশীয় খাবারের বাণিজ্যিক প্রসার আরও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করা দরকার।

বাড়িতে আসবে রেস্তোরাঁর খাবার...

টিএলসি টিভি চ্যানেলে একটা শো দেখতে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ‘টারকিস রোস্টেড হোলডাক’ যদি খেতে পারতাম। এর কিছুদিন পরেই কুকস অ্যাপে দেখলাম বাংলাদেশে থাকা এক টারকিশ নাগরিক রোজমেরি দিয়ে রোস্টেড ডাক অর্ডার করছে। সঙ্গে সঙ্গে আমিও অর্ডার করলে নির্ধারিত ডেটে তা ডেলিভারি করে কুকস অ্যাপ। দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলাম ওইদিন দেশে বসেই অথেনটিক টারকিস খাবারের স্বাদ নিতে পারলাম এসব শেফ বেসড আনলাইন সার্ভিসের কারণে। হোম শেফ, সালাম ক্যাটারিং, রুদমিল ক্যাটারিংয়ের এসব শেফ স্পেশাল অনলাইন ফুড সার্ভিস ফুডিদের জন্য যেমন ভালো, তেমনি ঘরে অনেক বড় রান্নার আয়োজন করতে না চাইলে এদের কাছে অর্ডার করলে আখেরে বাণিজ্যিক লাভটাও ঘটে। কর্মব্যস্ততার এই শহরে শেফ অনলাইন সার্ভিসগুলোর চাহিদাও অনেক ভালো।

অফিসে বসে প্রায়ই মনে হয় কাচ্চি খাই, বা বৃষ্টির দিনে ঘরে বসে আছি খিচুড়ি খেতে ইচ্ছা করলো কিন্তু রাঁধতে ইচ্ছা করছে না। এই সময়গুলোর বন্ধু হিসেবে আমাদের কাছে চলে এসেছে ফুডপান্ডা, হাংরি নাকি, পাঠাও ফুড কিংবা হারিক্যানের মতো অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিসগুলো। একটি নির্দিষ্ট ডেলিভারি চার্জের মাধ্যমে মন চাইলেই ঘরে বসে বা অফিসে বসে সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি মিলে যায় আধঘণ্টার মধ্যে।

খাবারের মেলা...

এদিকে বাংলার খাদ্য সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাবারের মেলা বা ফুড ফেস্টিভ্যাল। বিশেষ বিশেষ অফার ও রেগুলার মূল্য থেকে ডিসকাউন্ট মূল্য দিয়ে ফুড ফেস্টগুলো আয়োজন হয় ফুডিদের নতুন নতুন খাবারের আয়োজন জানিয়ে দিতে। ইদানীং এটা আমাদের দেশে জনপ্রিয় হলেও ফেস্টিভ্যালে আমাদের দেশে চড়া দামে তা বিক্রয় করা হয়। কিন্তু আমার দেখা বাইরের ফুড ফেস্টিভ্যালগুলো পুরো উল্টো।

খাবার একটি অন্যতম অনুষঙ্গ বলে ঢাকা লিট ফেস্ট, বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব, বা ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টের মতো বড় আয়োজনে ছোটখাটো ফুড ফেস্টিভ্যালও বেশ জাঁকালো রূপ নেয়। অন্যদিকে নিত্যনৈমিত্তিক মেলা তো রয়েছেই। শুধুই খাদ্যমেলা করার ক্ষেত্রে ঢাকা ফুডিসের প্রতিষ্ঠাতা আশিকুর রহমান রিয়ানের নাম নিতেই হবে। সেহরি নাইট ও ফুডল্যান্ডের মতো বেশ বড় বড় ফুড ফেস্টের আয়োজন হচ্ছে, সামনে এই আয়োজন আরও বেশি দরকার ফুডিদের শান্ত রাখার জন্য। এদিক থেকে পিঠা উৎসবের মতো আয়োজন একটু শান্তি দেয়। এরকম উৎসবের দরকার প্রচুর।

 

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
সনদ বাণিজ্য: কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ওয়ারীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
ওয়ারীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা