X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ লেখা

‘অনলাইনের আর্টিস্টরাও মেইনস্ট্রিমে আসুক’

আফরোজা পারভীন
১৪ মে ২০১৮, ১১:৩০আপডেট : ১৪ মে ২০১৮, ১৪:৫১
image

আফরোজা পারভীন বাংলাদেশের বিউটিশিয়ানদের উত্থান বা রূপচর্চাকেন্দ্রিক শিল্পটা গড়ে ওঠার পথটা এত সহজ ছিল না। যখন কোনও কাজকে ঘিরে কোনও ইন্ডাস্ট্রি শুরু হয়, তখন তার যথাযথ কাঠামো থাকা দরকার। কিন্তু বিউটিফিকেশনের জগতে বাংলাদেশ যখন প্রবেশ করে, তখন পথটা অনেক কঠিন ছিল। ছিল অবকাঠামোগত সংকটও। শুরুর দিককার কথা বললে জেরিন আজগর, গীতি বিল্লাহর নাম নিতেই হবে। তারা যখন শুরু করেন, তখন তাদের অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিতে হয়েছে। এরপর ৮০-র দশকের শেষে কানিজ আলমাস, ফারজানা শাকিল এসে হাল ধরেন। অনেক কষ্ট করেছেন, তারা বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন। এখানে এসে কাজ করেছেন, কাজ শিখিয়েছেন। তখন থেকে আসলে বাংলাদেশে বিউটি মার্কেটের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। তারপর মানুষ যখন দিন দিন আরও বেশি সৌন্দর্য সচেতন হতে থাকেন, তখন এই মার্কেট আরও বড় হতে থাকে। সরকারি-বেসরকারি হিসাব মিলিয়ে ঘরে-বাইরে ৭/৮ লাখ বিউটি সেলুন রয়েছে।

দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করছে বিউটিশিয়ানরা
মার্কেট যে এখন কত বড়, সেটা একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে। পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যচর্চা নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিউটি টিপস নিয়ে নিয়মিত অনুষ্ঠান করে, পত্রিকাগুলোও বিউটি টিপস নিয়ে প্রতিনিয়ত লিখছে। আমি বলবো, বাংলাদেশে বিউটি ইন্ডাস্ট্রির বিস্তারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মিডিয়া।
আর স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই কাজ করতে আসছে। এতে সংকট বিস্তার দুটোই হচ্ছে। অনভিজ্ঞ ও অপেশাদারদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। অনেকেই শুধু বিউটি সেলুনে সহযোগী হিসেবে কাজ করে নিজেই সেলুন খুলে বসছে। এতে সেবার মানে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। দেশে বিউটি স্কুল গড়ে না ওঠায় এবং সঠিক শিক্ষা না থাকায় তারা সঠিক সেবাটা দিতে পারছে না। এটি বিউটি মার্কেটের জন্য বড় হুমকি। তবে গত কয়েক বছর ধরে সরকার ও এনজিওগুলো এক্ষেত্রে বেশ কাজ করছে। আমার নিজের বিউটি সেলুন ‘রেড বিউটি সেলুন’-এর বিউটিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ‘উজ্জ্বলা’। নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে এই প্রতিষ্ঠান নানা কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। বিশেষ করে বিউটি মার্কেট বিস্তারে এটি কাজ করছে।
শহর গ্রাম মিলে অনেকেই সঠিক শিক্ষা নিয়ে বিউটি সেলুন করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আর যেহেতেু মার্কেট অনেক বড়, তাই এক্ষেত্রে আয়ও আনেক বেশি। ধরুন, আমার আয়ে আমার পরিবার চলছে, আমি বাজার থেকে বাজার করছি, দোকান থেকে জিনিস কিনছি। এভাবে করে একজন বিউটি এক্সপার্টের আয়ের টাকা এক থেকে দেড়শ’ লোকের হাতে পৌঁছাচ্ছে। আর সরকারকে আমরা ভ্যাট দিচ্ছি। সেক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে।
আর ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে, এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর পরিমাণে প্রতিযোগিতা রয়েছে। এটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাই। আমার মতে, যত বেশি প্রতিযোগিতা থাকবে, মার্কেট তত বেশি উন্নত হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের মান নেই, সেগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের প্রতিবন্ধকতা কিন্তু কম নয়। নানা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। এখানে মানসিক প্রতিবন্ধকতাটিকে আমি বড় করে দেখতে চাই। গ্রাম কিংবা শহরের অনেক পরিবারের মেয়েরা আগ্রহ এবং মেধা থাকার পরও ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে পারছে না। অথচ বিউটি এন্টারপ্রেনিয়র একটা আর্ট, এমনও হতে পারতো ওই মেধাবী মেয়েটি এই সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পেলে আরও দুইশ’ মেয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারতো। এটা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত ভুল সামাজিক শিক্ষার ফল। পৃথিবীতে সব দেশে বিউটি এক্সপার্টদের আলাদা রকমের সম্মান দেওয়া হয়, আমাদের দেশে সেটা নেই। এই জায়গাগুলো আমাদের বদলাতে হবে।
সমৃদ্ধির পথযাত্রায় আমিও একজন
বিউটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমার পথচলা ২০০৭ সাল থেকে। ২০০৯ সালে শুরু করি রেড বিউটি সেলুন। দেখতে দেখতে প্রায় এক যুগ কেটে গেলো এই ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি যখন প্রথম কাজ শুরু করি, তখন দুই বছর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করি। এরপর রেড প্রতিষ্ঠা করি, এখন রেডের তিনটি আউটলেট রয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যেই চর্তুথ আউটলেটের উদ্বোধন করা হবে। রেডের যাত্রাও একই রকম ভাবনা থেকে করা। ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জনই রেডের মূল উদ্দেশ্য।
এই সন্তুষ্টির ধারাবাহিকতাই আমাদের আরেকটি প্রয়াস ‘উজ্জ্বলা’। এটি একটি বিউটি ট্রেইনিং স্কুল। আমাদের দেশে চাহিদা আনুযায়ী বিউটি স্কুল গড়ে ওঠেনি। সেই জায়গা থেকে উজ্জ্বলার পথচলা শুরু। যেন আমাদের নারীরা সঠিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে সেবা দিতে পারে। অসংখ্য মেয়ে উজ্জ্বলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছেন। উজ্জ্বলা চেষ্টা করে সবচেয়ে কম সময়ে, কম খরচে, সেরা ও সঠিক প্রশিক্ষণটা দিতে। কোয়ালিটি ও ক্যাপাসিটি বাড়ানোই হচ্ছে উজ্জ্বলার প্রধান কাজ।
এটি ফ্যাশন নয়, প্রয়োজন...
বিউটিফিকেশন এখন আর ফ্যাশন নেই, এটা এখন নিত্য প্রয়োজন। নিত্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে উচ্চ হারে ভ্যাট দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত নয়। উচ্চ হারে ভ্যাটের কারণে ভ্যাট এখন ভীতির ব্যাপার। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, এই খাতের ভ্যাট ১৫% থেকে কমিয়ে ৫% করা। উচ্চ হারে ভ্যাটের কারণে অনেকেই টিন আইডি করছে না, কিন্তু সরকার যদি ভ্যাট কমিয়ে দেয়, তাহলে সবাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে টিন আইডি করবে। তাতে এই খাত থেকে সরকারের আয় আরও বাড়বে। বিউটি এডুকেশনকে যদি আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও অনেক বেশি উন্নত হবে।
প্রযুক্তি বড় বন্ধু...
প্রযুক্তি বিউটি মার্কেটের জন্য অনেক বেশি সহায়ক। বাংলাদেশে এখন প্রচুর মেয়ে ব্লগার রয়েছে। তারা নিয়মিত বিউটি টিপস নিয়ে ব্লগে লিখছে, যার মাধ্যমে মেয়েরা ঘরে বসে এ সম্পর্কে জানতে পারছে। ইউটিউবে দেখে এগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারছে। এক্ষেত্রে বিউটি মার্কেটের প্রচার প্রসারের জন্য প্রযুক্তির অবদান অনেক বেশি।

লেখক: কর্ণধার, রেড বিউটি সেলুন

 

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন