ঈদে রাজধানী এখন পুরোপুরি ফাঁকা। প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার নিয়ে ঝামেলা ছাড়া ঘুরতে যাওয়ার এখন উপযুক্ত সময়। জ্যামহীন নগরীতে আড্ডায় মেতে উঠার জন্য অথবা খোলা আকাশের নিচে মুক্ত বাতাস খেতে হলেও প্রয়োজন সুন্দর জায়গা। দালান-কোঠার শহরে মুক্ত বাতাস খাওয়া দুঃসাধ্য। তারপরও ঈদে প্রয়োজন হয় ঘোরাঘুরির নাহলে তো ঈদের ছুটিই পুরোপুরি মাটি। তাই ঈদের আনন্দকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার বিকল্প নেই। কোথায় যাওয়া যায় ?
সচরাচর ঢাকায় ঘুরতে যাবার কথা বললেই যেসব স্থানের নাম আসে তা হলো শিশু পার্ক, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা, রায়েরবাজার বধ্যভুমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, নভো থিয়েটার, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, শাহবাগ জাদুঘর, কার্জন হল, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, ধানমন্ডি লেক, সামরিক জাদুঘর, হাতির ঝিল, বুড়িগঙ্গা নদী, সাভার স্মৃতিসৌধ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, রোজ গার্ডেন, সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান, শহীদ মিনার ইত্যাদি। এর বাইরেও কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে গেলে আপনার ঈদ আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে।
গোলাপগ্রাম, বিরুলিয়া
ঢাকার পাশেই একটি গ্রাম সাদুল্লাহপুর। সেখানকার মানুষের মুল পেশা ফুল চাষ। তাইতো সেখানে রয়েছে সারি সারি ফুলের বাগান। সবচেয়ে বেশি ফুলের বাগান গোলাপের। রাশি রাশি ফুলের সৌরভ নিতে যেতে পারেন গোলাপ গ্রামে। মিরপুর ১ নম্বর দিয়াবাড়ি নৌকার ঘাট থেকে আধা ঘণ্টা পর পর ট্রলার যায় সাদুল্লাপুর গ্রামে। ভাড়া মাত্র ২০ টাকা জনপ্রতি। কিছু কিছু বাগানে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুল্য নির্ধারণ করা রয়েছে। তাও দেখে নিতে হবে আগে।
জিন্দাপার্ক, ৩০০ ফিট হাইওয়ে
নিশ্চুপ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে যেতে পারেন পূর্বাচল ৩০০ ফিট হাইওয়ের কাছেই অবস্থিত জিন্দা পার্কে। সবুজের চাদরে মুড়ে থাকা এই পার্কে গেলে কখনোই মনে হবেনা আপনি ঢাকার ভেতরেই কোথাও আছেন। কোলাহলমুক্ত এই পার্কে গাছগাছালির পাশাপাশি আছে হরেক রকমের পাখি, মাছ ভর্তি পুকুর পাড়। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়। জিন্দা পার্কের প্রবেশ মুল্য ১০০ টাকা জনপ্রতি।
নুহাশপল্লী, গাজীপুর
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক এবং লেখক হুমায়ুন আহমেদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান নুহাশ পল্লী। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে প্রায় ৪০ মিনিটের পথ পেরলেই হোতাপাড়া থেকে একটু ভেতরে অবস্থিত নুহাশ পল্লী। পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকেও। এখানে প্রবেশ মুল্য ২০০ টাকা জনপ্রতি।
মাওয়াঘাট, মুন্সীগঞ্জ
সময় সাপেক্ষ হলেও ঘুরে আসতে পারেন পদ্মা সেতুর পাড় মাওয়া ঘাট থেকে। সৌন্দর্যমন্ডিত পদ্মা সেতু সংলগ্ন এপ্রচ সড়ক দেখতে প্রতিদিন ভীড় করেন অজস্র মানুষ। ইচ্ছে করলে মাওয়া ঘাট থেকে স্পিড বোট কিংবা নৌকা করে অথবা ফেরিতে চড়ে ওই পাড় ঘুরে আসতে পারেন এবং স্বপ্নের পদ্মা ব্রিজকে নিজের চোখেও দেখতে পারবেন।
ফ্যান্টাসি কিংডম, আশুলিয়া
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডম সারা দিন হই-হুল্লোড়, খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়ার জন্য চমৎকার বিনোদন কেন্দ্র। এখানে আছে ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, প্যাডেল বোট, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, ফ্লুম রাইড, বাউন্সি স্লাইড, বাউন্সি ক্যাসল, ব্যাটারি কার, সার্কাস সুইং, ঈগলু হাউসসহ বিভিন্ন রাইড। ওয়াটার কিংডমে রয়েছে ফ্যামিলি পুল, ওয়াইল্ড ওয়েভ রিভার, লেজি রিভারসহ নানা ধরনের রাইড। ভালো সময় কাটাতে ঘুরে আসতে পারেন ফ্যান্টাসি কিংডম থেকে।
নন্দনপার্ক, গাজীপুর
গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়ের কাছে আরেকটি বিনোদন কেন্দ্র হচ্ছে নন্দন পার্ক। ভেতরে বিশাল পরিসর। চাইলে পানিতে নেমে সাঁতারও কাটা যাবে এই পার্কের সুইমিং পুলে। পরিবার অথবা বন্ধুদের নিয়ে এখানে চলে আসতে পারেন।
ড্রিমহলিডেপার্ক , নরসিংদী
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর পাঁচদোনায় পার্কটির অবস্থিত। ছোট-বড় সবার জন্যই রয়েছে আলাদা সব রাইড। ঢাকা থেকে ঘণ্টা খানেক সময় লাগে সেখানে যেতে। ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত এ পার্কে রয়েছে নাগেট ক্যাসেল, এয়ার বাইসাইকেলসহ মজার মজার অনেক রাইড।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সাভার
সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকেও বেড়িয়ে আসতে পারেন ঈদের ছুটিতে। ঈদের ছুটির তিনদিনই দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
পানামনগর, সোনারগাঁও
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর পানাম নগর । এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূঁইয়াদের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগর। হাতে একটু সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন ঈদের দিন।
আলাদিন’স পার্ক, ধামরাই
ঢাকার কাছেই ধামরাইয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে সুবিশাল জায়গায় গড়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্র আলাদিন্স পার্ক। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই কুল্লা বাসস্ট্যান্ডের সেতুর দক্ষিণে কুল্লা ইউনিয়নের সিতি এলাকায় রয়েছে এ পার্ক। এ পার্কে রয়েছে ওয়াটার পার্ক ও রিসোর্ট,সু-বিশাল ড্রাই পার্ক ও আর্টিফিশিয়াল লেক। বড় ও ছোটদের জন্য অত্যাধুনিক রাইড,সু-বিশাল পিকনিক স্পট এবং কনভেনশন হল। বড় ও ছোটদের জন্য বিনোদনের রাইডগুলোর মধ্যে রয়েছে বাম্পার কার, বুল রাইড, ডাবল ডেক কেরোসেল, স্পিড স্পিনিং কার, হাইড্রলিক পেন্ডুলাম, সুপার সুয়িং, মিনি সুইট ড্যান্সিং, কিডি বল গান, মিনি গেমস, ট্রেন, কিডি রাইডস জোন,প্যাডেলে বোট ও ডায়নামিক সিনেমা হল।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, গাজীপুর
সাফারি পার্কটি দক্ষিণ এশীয় মডেল বিশেষ করে থাইল্যান্ডের সাফারী ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থাপন করা হয়েছে। সাফারী পার্কের চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী ঘেরা এবং এর মধ্যে দেশী-বিদেশী বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে পর্যটকগণ চলমান যানবাহনে অথবা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ লাভ করবেন। ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে সাফারী পার্কটি অবস্থিত।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।