X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষায় সমুদ্রবিলাস

নওরিন আক্তার
১৬ জুলাই ২০১৮, ২০:১৫আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৮, ২০:২৩
image

রাত ১০টায় অফিস থেকে বের হয়ে দেখি আকাশে বিশাল একটা চাঁদ। সারি সারি দালানের উপর চাঁদটাকে কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখবো- সিদ্ধান্তটা ঠিক তখনই নেওয়া।

রৌদ্র ঝলমলে সাগর
এরপর তড়িঘড়ি করে বিমানের টিকিট করা। পরদিন দুপুরে বিমানে চেপে মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যেই লোনা জলের কাছাকাছি চলে যাওয়া। উঠলাম কলাতলী বিচের একদম সামনেই ‘সমুদ্র বিলাস’ হোটেলে। ব্যাকপ্যাক হোটেলে রেখেই ভৌ দৌড় সমুদ্রের কাছে! এরপর খুব প্রিয় কিছু সময় কাটানো। ছোট ছোট পায়ে হেঁটে চলা সাগর ঘেঁষে, হেডফোনে প্রিয় গান শোনা।

হঠাৎ এসে ছুঁয়ে যায় সাগর

সাগরের সঙ্গে প্রিয় কিছু সময় তখনও সূর্য তার তেজ ঢালছে বেশ আচ্ছা মতোই। যদিও সাগর পাড়ের মিষ্টি হাওয়ায় সেটা গায়ে লাগছে না। হঠাৎ রোদ গায়েব হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখি বিশাল একখণ্ড মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে শেষ বিকেলের সূর্য। আকাশে তখন অনেক রং। কোথাও নীল, কোথাও লাল। আবার কোথাও বেগুনি-গোলাপির মিশেল। সেসব রঙের প্রতিবিম্ব পড়েছে সাগরে। সমুদ্র ভর্তি রং যেন আছড়ে পড়ছে পায়ে।

মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিয়েছে শেষ বিকেলের সূর্য

সন্ধ্যে নামার মুখে...
সাগরের সঙ্গে সময় কাটাতে কাটাতে খাওয়ার কথা ভুলেই গেছি! মনে পড়লো সারাদিন তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি। অটো নিয়ে ছুটলাম পৌউষী রেস্তোরাঁয় ভাত-ভর্তা আর কাস্টার্ড খেতে। কক্সবাজার এসে পৌউষীর ভর্তা খাবো না সেটা তো হতেই পারে না!

পৌউষী রেস্তোরাঁর ভর্তা
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বের হয়ে দেখি সন্ধ্যাবাতি জ্বলে গেছে শহরজুড়ে। ফের সাগর পানে ছুটলাম। লোকজন খুব একটা নেই বিচে। হয়তো বর্ষাকাল বলেই পর্যটকদের আনাগোনা কম।

ড্রাগনরূপী মেঘ!
অন্ধকারের সমুদ্র যেন একদম অচেনা। শোঁ শোঁ গর্জন কেমন একটা ভয় ধরিয়ে দেয়। মনে হয় ঘাপটি মেরে থাকা কোনও দৈত্য বুঝি ছুটে আসছে উন্মাতাল হয়ে। আবার একই সঙ্গে কোথায় যেন ভালোলাগার পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায় আঁধারে ঢাকা সাগরের গান। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম, কিন্তু চাঁদের তো দেখা পাই না! নিকষ আঁধারে ঢেকে আছে চারপাশ। আকাশে থাকা কালো মেঘের আড়ালেই বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছে পূর্ণিমার চাঁদ। সমুদ্রের পাড়ে রাখা বেঞ্চিতে বসে পড়লাম ক্লান্ত হয়ে। কখন যে চোখ লেগে এসেছে টের পাইনি। হঠাৎ চোখ খুলেই চমকে উঠলাম। কোথায় যেন বিশাল একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। হুট করেই বদলে গেছে পৃথিবী। আকাশে তাকিয়ে দেখি বিশাল একটা চাঁদ। চাঁদের আলোয় ভাসছে সমুদ্র।

চাঁদের আলোয় দেখা ঝলমলে সাগর যেন আগুন লেগেছে চারপাশে। অচেনা সমুদ্রটা আরও বেশি রহস্যময়ী হয়ে পড়েছে। থালার মতো চাঁদ থেকে জোছনা চুইয়ে পড়ছে সাগরের জলে। চিকচিকে বালিতে আছড়ে পড়ছে সমুদ্র ভর্তি জোছনা! অদ্ভুত এক মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে পৃথিবী। যে মায়ার জন্ম চেনা কোনও জগতে নয়, এর জন্ম অন্য কোনও অলৌকিক পৃথিবীতে। এই অপার্থিব সৌন্দর্য কোথায় যেন অস্পষ্ট এক হাহাকার জাগিয়ে তোলে, মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বেঁচে থাকার আনন্দটা তখন প্রবলভাবে জাপটে ধরে। তাকিয়ে আছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো। সমুদ্রের গর্জন ছাপিয়ে কানে গোঁজা হেডফোনে বাজছে ওয়ারফেইজের ‘যেন চুনি হিরা পান্না সাগরের বুকে আলপনা এঁকে দিয়ে যায়, অবাক ভালোবাসায়...।’

বহু অপেক্ষার পর দেখা পাওয়া চাঁদ
হঠাৎ করেই হারিয়ে গেল চাঁদ, মেঘের আড়ালে। গা কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। বড় বড় ফোঁটায় পড়তে শুরু করলো বৃষ্টি। সবাই দৌড়াদৌড়ি করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস আর বৃষ্টির তোড়ে উঠে পড়লাম আমিও। বৃষ্টি শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। দৌড়ে বিচের পাশের বার্মিজ মার্কেটে ঢুকলাম। রঙিন শামুক-ঝিনুকের ছড়াছড়ি। চমৎকার দেখতে। ছোটখাট কিছু জিনিষ কিনে ফেললাম উপহার হিসেবে। বৃষ্টির ধরার নামই নেই। অগত্যা ফিরে আসতে হলো হোটেলে।

বার্মিজ মার্কেটে রঙের মেলা
পরদিন সারাদিনই ছিলাম সাগর পাড়ে। সমুদ্রের জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছি ইচ্ছে মতো, সাগর পাড়ে বসে বালু দিয়ে বানিয়েছি প্রাসাদ! ঘণ্টার পর ঘণ্টা হা করে তাকিয়ে থেকেছি আকাশের দিকে। রোদের তীব্রতায় যেমন চোখ জ্বালা করেনি একটিবারও, তেমনি বিব্রত করেনি বৃষ্টির বাড়াবাড়ি। মাত্র দেড় দিনের মধ্যেই অনেক রুপের সাগর দেখে ফেলেছি। কখনও রৌদ্র ঝলমলে সাগর, কখনও ধূসর মেঘলা। কখনও রিমঝিম বৃষ্টির উচ্ছ্বাস, কখনও জোছনা মাখা সমুদ্রের মুগ্ধতা।

সমুদ্রের সান্নিধ্যে কাটানো প্রিয় সময়
বর্ষার এই সময়টায় সাগরের রূপটা একটু বেশিই খোলে যেন। অনেকে মনে করেন সমুদ্রে আসার জন্য শীতকাল সেরা। তবে আমার মনে হয় বর্ষাকালের চাইতে আদর্শ সময় আর হয় না সাগর দেখার জন্য। আপনি যদি সমুদ্রে বৃষ্টি দেখে না থাকেন, তবে কিন্তু জীবনে অনেক কিছুই মিস করে ফেলেছেন!

দূরে জমেছে কালো মেঘ...

বর্ষাকালের সমুদ্র একটু বেশিই সুন্দর! বর্ষাকালে সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন দূরের কালো মেঘ থেকে বৃষ্টি নেমেছে। মুগ্ধতা কাটার আগেই বুঝবেন সেই একই মেঘের বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে আপনাকে! রিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সাগর থেকে ধেয়ে আসা ঢেউ ফিরিয়ে দেওয়ার উচ্ছ্বাসটা পেতে চাইলে বর্ষাকালেই আপনাকে ছুটতে হবে সমুদ্রে। এলোমেলো বাতাস আর বৃষ্টির গন্ধ মাখা সাগর একটু বেশিই সুন্দর কিন্তু! 

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা