X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাংলাদেশি মিষ্টি অনেক বেশি স্বাদের’

হাসনাত নাঈম
২৯ জুলাই ২০১৮, ১৮:১৩আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৮, ১৮:২০

‘বাংলাদেশি মিষ্টি অনেক বেশি স্বাদের’ সম্প্রতি রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল লা মেরিডিয়ান ঢাকা'য় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল 'রাজস্থানি খাদ্য উৎসব'। আর এই উৎসবটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রাণবন্ত করতে লা মেরিডিয়ান ঢাকা'র আমন্ত্রণে ভারতের রাজস্থানের জয়পুর থেকে এসেছিলেন শেফ কপিল দত্ত সেন ও শেফ গীতাম সিং। বাংলাদেশ ও রাজস্থানি খাবারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় তাদের দুজনের সঙ্গে।

শেফ হয়ে উঠার পেছনের গল্প...

কপিল দত্ত: আমি গত বিশ বছর যাবৎ রাজস্থানের জয়পুরে আছি। ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি আমার আগ্রহ ছিলো। রান্নার প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি রান্নাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এই বিষয়ে আমি এইচএম ডিপ্লোমা করেছি। ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১১ সালে আমি আমার প্রথম চাকরি শুরু করি হোটেল রামাড়াতে। এরপর জয়পুরের হোটেল হলিডেতে কাজ করি। গত ৮ বছর যাবৎ আমি রাজস্থানি খাবার তৈরি করছি।

গীতাম সিং: আমি মূলত মিষ্টান্নতেই দক্ষ। ২০০৫ সালের দিকে আমার নিজেস্ব মিষ্টির দোকান ছিলো। যেখানে আমিই মিষ্টি বানাতাম। যদিও সেটা পরবর্তীতে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। প্রথম দিকে ক্যাটারিং এর কাজ করতাম। তারপর হোটেলে কাজ করা শুরু করি। বর্তমানে এই পেশায় আমার প্রায় ১৫ বছরের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা। আমি আগ্রার মানুষ হলেও গত প্রায় ২০ বছর যাবৎ আছি রাজস্থানের জয়পুরে।

এই পেশায় বাধা...

কপিল দত্ত: পরিবার থেকে কোন বাধা আসেনি। বরং আমার পরিবার থেকে আমি যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি। আমার শেফ হওয়ার পেছনে সবচাইতে বেশি অবদান আমার মায়ের। ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিলো শেফ হবার। মা নিরলস ভাবে আমাকে তার সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়ে গেছেন। তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন যাতে আমি আমার শখকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।

গীতাম সিং: আমার বড় ভাই শেফ। এ পেশায় আসার ক্ষেত্রে ভাইয়ের অনুপ্রেরণা অনেক সাহায্য করেছে। আর পারিবারিক সহায়তা সবসময়ই ছিল।

নিজেদের বিশেষ বৈশ্যিষ্ট...  

কপিল দত্ত: আমার মূল দক্ষতা রাজস্থানি খাবারে। তাই আমার স্পেশাল রাজস্থানি আইটেম হচ্ছে লাল মান্স। লাল মান্স হচ্ছে কচি ভেড়ার মাংস দিয়ে এক ধরনের খাবার। মাথানিয়া রেড চিলি এবং বিভিন্ন রকম ভারতীয় মসলা দিয়ে আমি আমার এই সিগ্নেচার ডিশটি বানাই। রাজস্থানে এই খাবারটি দারুন জনপ্রিয়। রাজস্থানের বাইরেও যেখানেই এই খাবারটি আমি তৈরি করেছি সেখানেই অনেক প্রশংসা পেয়েছি।

গীতাম সিং: আমার বিশেষত্ব হচ্ছে রসমালাই তৈরিতে। আমার আরও কয়েকটি বিশেষ আইটেম হচ্ছে, ‘মালাই-গেভর' আর 'মিশ্রি-মাওয়া' যেগুলো একেবারে গরুর খাঁটি দুধ থেকে প্রস্তুত করা হয়।

‘বাংলাদেশি মিষ্টি অনেক বেশি স্বাদের’ ঢাকাবাসীর কাছে রাজস্থানী খাদ্য...

কপিল দত্ত: রাজস্থানি খাদ্য উৎসবে আমরা খাঁটি রাজস্থানি খাবার পরিবেশন করেছি। যা মূলত রাজস্থানের বাইরে আসলে সেভাবে কোথাও পাওয়া যায়না। উৎসবে আগত অতিথিরা আমাদের খাবার খেয়ে তাদের ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের ঝোল জাতীয় খাবারের সাথে আমাদের রান্নার মিল থাকলেও উপকরণের ব্যবহারিক মাত্রা ও রন্ধণপ্রনালির কারণে রাজস্থানি খাবারে স্বাদ আসলে একেবারেই অন্যরকম। ভাত এবং রুটি দিয়ে মাংসের খাবারগুলো আমাদের অতিথিরা খুব পছন্দ করেছেন, অতিথিদের অনেকেই নিজেরা এসে প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে লাল মান্স, পাঁপড়ের সবজি পছন্দ করেছেন অনেকেই।

এটা আমার প্রথমবারের মত বাংলাদেশ ভ্রমন। রাজস্থানি খাদ্য উৎসব উপলক্ষ্যে খুব স্বল্প সময়ের জন্য এখানে থাকা হয়েছে। এরমধ্যে আমরা দুজন পুরান ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়েছি। ভারতীয় কাচ্চি থেকে বাংলাদেশী কাচ্চির স্বাদ আলাদা এবং বেশ মজার। এবার অল্প সময়ের জন্য এসেছি তাই ঢাকা ঘুরে দেখার সেভাবে সুযোগ হয়নি। পরেরবার ইচ্ছে আছে ভালোভাবে ঢাকা ঘুরে দেখার।

গীতাম সিং: এই স্বল্প সময়ে আমাদের ঢাকা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ভালো লেগেছে। সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হচ্ছে এখানকার মানুষদের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব। সহকর্মী হিসেবে তারা অসাধারণ। বর্ষা মৌসুমে আসার কারণে প্রচুর বৃষ্টি দেখছি। লা মেরিডিয়ানের পুলসাইডে বসে মনে রাখার মত বৃষ্টিমুখর কিছু সময় কাটিয়েছি।

বাংলাদেশ ও রাজস্থানি খাবারের পার্থক্য...

কপিল দত্ত:  বাংলাদেশি খাবারের সঙ্গে রাজস্থানি খাবারের পার্থক্য তো আছেই। আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশি খাবারের তুলনায় রাজস্থানি খাবারে দুধ এবং দই এর ব্যবহার প্রচুর। এছাড়া, রাজস্থানি খাবারে আমরা ব্যবহার করি রেড চিলি। ভারতীয় খাবারে তুলনামূলকভাবে মসলার ব্যবহার অনেক বেশি। ঝালের ব্যবহার বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে অনেক বেশি। তাছাড়া রাজস্থানি আমরা প্রচুর তেল ব্যবহার করি। রসুনের ব্যবহারেও আছে বৈচিত্র। 

গীতাম সিং: ভারতীয় মিষ্টান্নর সাথে বাংলাদেশি মিষ্টান্নর প্রস্তুতের কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, বাংলাদেশে মিল্ক পাউডার দিয়ে মিষ্টি বানানো হয়। সেজন্য মিষ্টি অনেক বেশি স্পঞ্জি ও মজার হয়। তাছাড়া এখানকার মানুষ খাওয়ার পর মিষ্টি খায়, আর আমরা খাওয়ার আগে মিষ্টি খাই। প্রথমে মুখ মিষ্টি হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষ মসলাদার খাবার আরও বেশি রুচি নিয়ে খায়। 

ছবি: রায়হান পরাগ।

 

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ