X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বালিশের নিচে পিস্তল নিয়ে ঘুমাতেন জর্জ অরওয়েল

মধুসূদন মিহির চক্রবর্তী
২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৬আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৬

তিনি ছিলেন সর্বগ্রাসীতাবাদের আতঙ্ক। তিনিই একমাত্র লেখক যিনি বিশ্বকে বিগ ব্রাদার, নিউজপিক, ডাবলথিঙ্ক এবং ‘সত্য মন্ত্রণালয়’ ইত্যাদি শব্দবন্ধের সাথে পরিচিত করেছেন। কিন্তু জর্জ অরওয়েল তার প্রত্যন্ত স্কটিশ দ্বীপ জুরায় বসবাসকালে নিজ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। এ কারণে তিনি তার বালিশের নিচে একটি পিস্তল নিয়ে ঘুমাতেন। প্রাণহানি বিষয়ে তার ভয়ের যুক্তিসংগত কারণও ছিল। স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় প্রজাতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ হয়ে জাতীয়তাবাদী স্বৈরাচারী সেনানায়ক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার কারণে অরওয়েল (আসল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার), তার প্রথম স্ত্রী আইলিন ও’শাওনেসি এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টির অন্যান্য সদস্যদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। তারপর ১৯৪৬ সালে ব্যাঙ্গাত্মক উপন্যাস অ্যানিমেল ফার্মের প্রকাশনার পর থেকে বিখ্যাত হয়ে ওঠা অরওয়েল প্যারিসে বসবাসকালীন সহচর লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ধার করেন। পরে তিনি আগ্নেয়াস্ত্রটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু স্কটল্যান্ডের নির্জন জুরা দ্বীপের বার্নহিলের কটেজে বসে যখন তিনি তাঁর উপন্যাস ’নাইনটিন এইটি ফোর’ রচনার কাজ শুরু করেন তখন অরওয়েল নিজ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন।

লেখক নরম্যান বিসেল তার সদ্য রচিত ’বার্নহিল’ গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন যে অরওয়েলের গৃহকর্মী সুসান ওয়াটসনের প্রেমিক ডেভিড হলব্রুক ছিলেন গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। অরওয়েল তাকে গুপ্তচর বলে সন্দেহ করেছিলেন।
“জুরাতে প্রথম বছরে, অরওয়েল ’নাইনটিন এইটি ফোর’ গ্রন্থটির মাত্র পঞ্চাশ পৃষ্ঠা লিখেছেন– কিন্তু হলব্রুক অরওয়েলের অজান্তেই এর কিছু অংশ পড়ে নিয়েছিলেন।
“এনিমেল ফার্ম ছিল একটি বিশাল সাফল্য। এর প্রকাশের পর সোভিয়েত নেতৃত্ব চটে গিয়েছিল। তারা জানতে চেয়েছিল অরওয়েল পরবর্তীতে কী লিখছে। খুন হওয়ার ভয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণও ছিল তার। তিনি নিজের  নিরাপত্তার জন্য বার্নহিলে তার বালিশের নিচে একটি লোডেড লুগার প্যারাবেলাম পিস্তল নিয়ে ঘুমাতেন।”
“আপনাকে মনে রাখতে হবে যে আততায়ী কর্তৃক ট্রটস্কিকে হত্যা করার পর তিনিই ছিলেন স্ট্যালিনের পথের সবচেয়ে বড় কাঁটা।”

বিসেল লিখেছেন, "তিনি বার্নহিলে ট্রটস্কির মতো হত্যার শিকার হতে চাননি। কিন্তু তিনি সুসানকে হারাবেন- এই দুশ্চিন্তায়ও চিন্তিত ছিলেন কারণ মেয়েটি অরওয়েলের একমাত্র ছেলের যত্ন নিতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুসানের সাথে অরওয়েলের বোন এভ্রিলের একটি বিশাল বিরোধ বাধে। এর ফলে সুসান এবং হলব্রুক বার্নহিল ত্যাগ করেন। ‘নাইনটিন এইটি ফোর’ উপন্যাসে কী আসছে সে সম্পর্কে হলব্রুকের ধারণা ছিল। আমি মনে করি অরওয়েল নিশ্চিত ছিলেন যে তাকে হত্যা করা হতে পারে। তার ভয়টি ন্যায্য ছিল। তিনি সর্বোপরি শীতল যুদ্ধ শব্দটি উদ্ভাবন করেছিলেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ত্রাস সম্পর্কে চিন্তাভাবনা গঠনে একটি বড় প্রভাব রেখেছিলেন।"

অরওয়েলকে অকালেই মরতে হয়েছিল, সেই মৃত্যুর কারণ ছিল তখনকার সময়ের দুরারোগ্য রোগ যক্ষ্মা। ১৯৫০ সালের জানুয়ারীর বিকেলগুলোতে উত্তর ব্লুমসবারি স্কোয়ার হয়ে কতিপয় দর্শনার্থীকে দেখা যেত ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছেন। তাদের অনেকেই অতি বিষণ্ন মনে জর্জ অরওয়েলকে দেখতে যেতেন। এদের অনেকেই ছিলেন বরেণ্য সাহিত্যিক। উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঝুঁটিবাঁধা কোঁকড়া চুলের  দীর্ঘদেহী ইংরেজ কবি ও প্রাবন্ধিক স্টিফেন স্পেন্ডার, অরওয়েলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিউজিক অফ টাইম উপন্যাসখ্যাত অ্যান্থনি পাওয়েল এবং অরওয়েলের সমবয়সি ইংরেজ সাংবাদিক ও ব্যঙ্গকার থমাস ম্যালকম মুগারিজ। শেষোক্ত দুজনেই হাসপাতালের কাছাকাছি রিজেন্ট পার্ক এলাকায় থাকতেন। বিবিসি বা বামপন্থী সংবাদপত্রের সাথে সম্পৃক্ত আরো অনেকেই আসতেন। মাঝেমধ্যে একটি ছোট বালককে নিয়ে আসা হত। এক মুহূর্তের জন্য তাকে দেখিয়েই আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত অরওয়েল এতটাই আতঙ্কিত থাকতেন যে তিনি তার পুত্রকে নিজের ছোঁয়াচ থেকে দূরে রাখতে চাইতেন, স্পর্শও করতেন না। তার শেষ দিনগুলিতে অরওয়েলের প্রধান উদ্বেগের মধ্যে একটি ছিল তার পুত্র রিচার্ড, যাকে তিনি তার প্রথম স্ত্রী আইলিন বেঁচে থাকতে দত্তক নিয়েছিলেন। সংক্রমণের ভয়ে পুত্রকে কাছে নিয়ে আদর করতে পারতেন না বলেও অরওয়েলের মনে ভয়ানক হতাশার সৃষ্টি হয়। মৃত্যুর পর অরওয়েলের বোন এভ্রিলের কাছে রিচার্ড লালিতপালিত হন। ১৯৫০ সালের জানুয়ারি অবধি অরওয়েল প্রায় চার মাস ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে ছিলেন। তিনি মূলত আগের বছরের শুরু থেকেই হাসপাতালে ছিলেন। দুই দশকের দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের সমস্যা অবশেষে যক্ষ্মা রোগ বলেই প্রমাণিত হয়েছিল। এর মাস ছয়েক আগে তিনি প্রায় মরেই যাচ্ছিলেন। গ্লুচেস্টারশায়ারের একটি স্যানিটোরিয়ামে বিশিষ্ট বক্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু মরল্যান্ডের চিকিৎসায় তিনি লন্ডনে স্থানান্তরিত হওয়ার মতো কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রকাশক ফ্রেড ওয়ারবার্গের পরামর্শেই তিনি অ্যান্ড্রু মরল্যান্ডের কাছে চিকিৎসা নেন। তিনি পুরোপুরি নিরাময়ের আশা করেননি, ভেবেছিলেন বাড়তি যত্ন ও চিকিৎসায় তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। হয়ত ক্ষীণভাবে দিনে কয়েক ঘণ্টা বসে লেখালিখি করতে পারবেন। তার বেঁচে থাকার একটি অপেক্ষাকৃত ভাল সুযোগ রয়েছে বলে অরওয়েলকে জানানো হয়েছিল। অনেক কাজ বাকী রয়ে গেছে তাই আরও একবার কলম তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অরওয়েল জানতেন তিনি মারা যাচ্ছেন। তার চিকিৎসক মরল্যান্ডের ভরসা পেয়ে তিনি অন্তত আরও কয়েক বছর বাঁচার জন্য আশায় বুক বেঁধেছিলেন। মরল্যান্ড এর আগে ডিএইচ লরেন্সের যক্ষার চিকিৎসা করেছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হননি।

মরল্যান্ড অরওয়েলকে একান্ত ব্যক্তিগত রোগী হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেভানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা তখনও তেমনভাবে চালু হয়নি। সৌভাগ্যবশত অরওয়েলের অর্থভাগ্য তখন অনুকূলে, যার প্রতিকূলতা তাকে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের বেশিরভাগ সময় কষ্ট দিয়েছে। আগের বছর জুনে প্রকাশিত নাইনটিন এইটি ফোর উপন্যাসটি আটলান্টিকের উভয় তীরে একটি বিশাল সাফল্য পেয়েছে। ইংল্যান্ডে ইতোমধ্যে ২৫০০০ কপি বিক্রি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসকশ্রেনীর আনুকূল্য পেয়ে বুক অফ দ্য মান্থ ক্লাব  এর বাছাই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।  অরওয়েল তখন অত্যন্ত বিখ্যাত, সৌভাগ্য তার দ্বারে। জীবনের শেষ মাসে অরওয়েলের সম্পত্তির মূল্য দাঁড়ায় ১২০০০ পাউন্ড। তখন গড় সাপ্তাহিক মজুরি ছিল ১০ পাউন্ডের নিচে। হাসপাতালের রুটিনের কঠোরতা সত্ত্বেও তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে খুশি ছিলেন।

ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে নিয়মিত দর্শনার্থী ছিলেন সোনালি চুলের অতীব সুন্দরী এক নারী। তার অনামিকায় সদ্য পাওয়া একটি বিয়ের আংটি জ্বলজ্বল করত। তিনি সোনিয়া ব্রাউনেল। অরওয়েল সোনিয়া ব্রাউনেলকে চিনতেন। সিরিল কনোলির মাসিক ম্যাগাজিন হরাইজনে বেশ কয়েক বছর ধরেই কাজ করছিলেন সোনিয়া। নিজের চাইতে বয়সে ষোল বছরের ছোট সোনিয়ার দুইজন প্রাক্তন প্রেমিকের বিষয়েও অরওয়েল জানতেন। যাদের মধ্যে শিল্পী লুসিয়ান ফ্রয়েড এবং উইলিয়াম কোল্ডস্ট্রিম অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অরওয়েলের দ্বিতীয় স্ত্রীর ভূমিকায় সোনিয়া ছিলেন বড্ড বেমানান। ১৯৪০ এর দশকের শেষের দিকে বিপত্নীক অরওয়েল দ্বিতীয় দার পরিগ্রহের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। স্পষ্টত প্রেমের সম্পর্ক নেই এমন একজন গুরুতর অসুস্থ মানুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার কারণটি আদতে অস্পষ্টই রয়ে গেছে। মৃত্যু পরবর্তী ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করার অভিযোগটিও অমূলক। সোনিয়ার সঙ্গে বাগদানের সময় তিনি যে সাহিত্যিক কিংবদন্তিতে পরিণত হতে চলেছেন এমন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। গবেষক অ্যান্থনি পাওয়েল সবসময় যুক্তি দ্বারা সমর্থন করেছেন যে সোনিয়ার বিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা সিরিল কনোলির কথাতেই তিনি অরওয়েলকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন।

১৯৪৯ সালের ১৩ অক্টোবরে হাসপাতালের কক্ষে বিশেষ অনুমতি গ্রহণের মাধ্যমে সোনিয়া ব্রাউনেল এবং জর্জ অরওয়েলের বিয়ে হয়। হাসপাতালের যাজক রেভারেন্ড ডব্লিউএইচ ব্রেইন, সোনিয়ার বন্ধু জেনেটা কী, অ্যান্থনি পাওয়েল, ম্যালকম মুগারিজ এবং অরওয়েলের একজন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে অবজারভার সংবাদপত্রের প্রধান এবং অরওয়েলের দীর্ঘদিনের সমর্থক ডেভিড অ্যাস্টর কন্যা দান করলেন। অতিথিরা তারপরে ঐতিহ্যবাহী পাঁচতারকা হোটেল রিটজে নৈশভোজ উদ্‌যাপন করতে চলে যান। এদিকে বর বিছানায়ই রয়ে গেল। তার বেশ কয়েকজন বন্ধু উল্লেখ করেছেন এই বিয়েটি তার উদ্দীপনা বাড়িয়ে দিয়েছিল। অ্যান্থনি পাওয়েলের মতে, “এটা তাকে অত্যন্ত আনন্দিত করেছে...কয়েকটি দিক থেকে সে আমার দেখা পূর্বেকার অবস্থার চেয়ে ভালো ছিল।" এর আগেই সে অত্যন্ত শীর্ণকায় এবং এতটাই ওজন হারিয়েছিল যে হাইপোডার্মিক সূঁচ ঢোকাবার জন্য পর্যাপ্ত মাংসপেশী খুঁজে পেতে ডাক্তারদের সমস্যা হতো। বিয়ের পর তাকে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল।

অরওয়েলের উন্নতির ক্ষীণ লক্ষণ দেখামাত্রই তাকে সুইস আল্পসের বিশুদ্ধ পার্বত্য আবহাওয়ায় একটি স্যানিটোরিয়ামে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তিনি আবারও ভয়ঙ্করভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, আরও অত্যধিক ওজন হ্রাস এবং শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকল। এর এক বছর আগে নতুন আবিষ্কৃত মার্কিন বিস্ময়কর ঔষধ স্ট্রেপ্টোমাইসিন দেয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রকাশক ফ্রেডরিক ওয়ারবার্গ তার মার্কিন প্রকাশকদের অরোমাইসিন সরবরাহে সাহায্য চেয়ে অনুনয় করেছিলেন। কিন্তু এটি ছিল যক্ষ্মা নিরাময়ের শুরুর দিকের কথা। অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে, স্ট্রেপ্টোমাইসিন অরওয়েলের আঙ্গুলের নখগুলিকে নষ্ট করে দেয়- এবং রোগমুক্তির কোন সম্ভাবনা দেখা যায় না।

ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে সোনিয়া ব্রাউনেল প্রতিদিন হাসপাতালে আসতেন এবং মাঝে মাঝে তার স্বতঃসিদ্ধ প্রগলভতা দেখে অন্য দর্শনার্থীগণ বিরক্ত হতেন। অরওয়েলকে একদিন সোনিয়া বলেন যে তাকে একটি ককটেল পার্টিতে যেতে হবে এবং সেই সন্ধ্যায় ফিরবেন না। অরওয়েল ক্ষীণ আপত্তি জানালে সোনিয়া তাড়াহুড়ো করেন। ক্রিসমাস ডেতে পাওয়েলের সাথে মুগারিজ তার কক্ষে পৌঁছে চারদিকে বড়দিনের সাজসজ্জার মাঝে নিঃসঙ্গ অরওয়েলকে মৃতবৎ ও হতভাগ্যের মতো পড়ে থাকতে দেখেন। তার মুখটি কার্যত নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছিল।

এরপর এলো নববর্ষ। ভ্রমণের তারিখ নির্ধারিত হল ২৫ জানুয়ারি। ব্যক্তিগত চার্টার্ড বিমানে এই ভ্রমণে অরওয়েলের সঙ্গী হবেন সোনিয়া ব্রাউনেল এবং লুসিয়ান ফ্রয়েড। এক সপ্তাহ পরে কবি ও অপরাধ বিষয়ক লেখক জুলিয়ান সাইমনস তাকে সুইস যাত্রার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখেন। দীর্ঘবিলম্বিত সাহিত্য পরিকল্পনার বিষয়েও অরওয়েল তার সাথে কথা বলেন। আরেক বন্ধু, নৈরাজ্যবাদী কবি পল পোটস তাকে ২০ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেলে উপহার হিসাবে একটি ছোট চায়ের প্যাকেট সাথে নিয়ে এলেন। দরজায় কাটা কাঁচের চৌকো দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন অরওয়েল ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাকে বিরক্ত না করাই ভালো ভেবে তিনি চায়ের প্যাকেটটি লিন্টেলের সামনে রেখে চুপিসারে চলে গেলেন। বলা হয়ে থাকে লুসিয়ান ফ্রয়েডের সাথে নাইটক্লাবে সন্ধ্যা কাটাচ্ছিলেন সোনিয়া। ২১ জানুয়ারি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা লেখক নিঃসঙ্গ অবস্থায় লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালের ৬৫ নম্বর কক্ষে মারা যান, বয়স ছিল মাত্র ৪৬ বছর।

২১শে জানুয়ারি শনিবারের সেই ক্ষণে সোনিয়াকে টেলিফোনের মাধ্যমে ট্র্যাক করা হয়। তাকে জানানো হয়, ফুসফুসের ব্যাপক রক্তক্ষরণে মারা গেছেন অরওয়েল। সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে মৃত্যুসংবাদটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুর তিন দিন আগে অরওয়েল সোনিয়া ব্রাউনেল এবং তার প্রথম স্ত্রীর বোন গুয়েন ও'শাওনেসির উপস্থিতিতে একটি উইল করেন। অরওয়েল নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাকে যেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের রীতি অনুসারে সমাহিত করা হয়। আর তার মৃতদেহকে যেন নিকটতম সুবিধাজনক সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়। ডেভিড অ্যাস্টর প্রভাব খাটিয়ে অক্সফোর্ডশায়ারের সাটন কোর্ট অল সেইন্টস চার্চের সমাধিস্থলে একফালি ভূমির ব্যবস্থা করেন। ম্যালকম মুগারিজ তার ডায়েরিতে ভ্লাদিমির লেনিনের জন্মদিনে অরওয়েলের প্রয়াণ এবং অ্যাস্টরদের দ্বারা সমাহিত হওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন, “যা আমার কাছে তার জীবনের পুরো পরিসরকে অতিক্রম করে গেছে বলে মনে হয়"। বৃহস্পতিবার ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০ সালে লন্ডনের আলবানি স্ট্রিট এর ক্রাইস্ট চার্চে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পাওয়েল এবং মুগারিজ উভয়ের কাছেই এই অনুষ্ঠানটিকে অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। পাওয়েল কর্তৃক ওল্ড টেস্টামেন্ট-এর উপদেশক গ্রন্থ থেকে বেছে নেওয়া শ্লোক পাঠ মুগারিজের হৃদয়ে গভীরভাবে অনুপ্রাণন তুলল : “তারপর, ধূলিকণা পৃথিবীতে রয়ে যাবে এবং আত্মা সেই ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাবে, যিনি এটি দিয়েছেন”। সাটন কোর্টের অল সেইন্টস কবরস্থানে তিনি তার মা-বাবার দেয়া ‘এরিক আর্থার ব্লেয়ার’ নামে সমাহিত আছেন।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
দেশ ও জাতির মুক্তির একমাত্র উপায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন: ড. কামাল হোসেন
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী?
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার