X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিজয় সরকার জীবনীনাট্য

দয়াল তোমার আসল নামটা কী || পর্ব-৪

সাইমন জাকারিয়া
১৫ মে ২০১৬, ১৬:২৭আপডেট : ১৫ মে ২০১৬, ১৭:০৫

কবিয়াল বিজয় সরকার পূর্ব প্রকাশের পর

শ্যামল সরকার সেই ভয়াবহ রোষের ভেতর থেকে বিজয় সরকারকে বের করে নিয়ে গেলেন ঝালকাঠি জেলার শুয়াকাঠি গ্রামের নকুল দত্তের বাড়ি। শুধু তাই নয়, শ্যামল সরকার ভেঙে বললেন বিজয়ের দুর্গতির কথা। নকুল দত্ত তা শুনে বললেন—

— দেখো, উন্নতমুখী কোনো শিক্ষার্থীকে এমন বিপত্তির সম্মুখে ফেলানো মোটেই উচিৎ নয়। শোনো বিজয়, তুমি মন খারাপ করো না, কোনো সরকার তোমার সঙ্গে যদি গান না গায়, তবে আমি তোমাকে নিয়ে জোঠে গান গাইবো। দরকার হলে অন্য কোনো দলের সাথে আমি গান গাইবো না, দেখি তোমায় কে ঠেকিয়ে রাখতে পারে।
— আপনার মতো খ্যাতিমান সরকারের সাথে গান করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।
— শ্যামল, তুমি না হয় তোমার বাড়িতেই বিজয়ের জন্য একপালা কবিগানের আয়োজন কর।
— তা না হয় করলাম, কিন্তু বিজয়ের জোট সরকার কাকে বলবো?
— নিশিকান্ত সরকারকে বলতে পারো। সে যেহেতু প্রকাশ্যে বিজয়কে সমর্থন দিয়েছে। কাজেই তাকেই বিজয়ের বিপক্ষের সরকার হিসেবে আমন্ত্রণ করা যায়। বিজয়, এতে নিশ্চয় তোমার কোনো আপত্তি নেই।
— না, আপনারা যা বলবেন, আমি তাতেই রাজি।

বিজয়-নিশির প্রথম আসরের দিনক্ষণ এলো। নিশিকান্ত সরকারই প্রথম আসরে অবতীর্ণ হয়ে ত্রিপদী ছন্দে একটি মুখপাঁচালী গেয়ে প্রশ্ন করলেন। আসরে তখন বেশ ভাবের সঞ্চার হয়েছে। এরমধ্যে বিজয় সরকার আসরে দাঁড়িয়ে অভিনব একটি ভূমিকা গ্রহণ করলেন, কবিগানের আসরে গানের ধূয়া হিসেবে গ্রহণ করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও জসীম উদ্দীনের বিভিন্ন গানের প্রথম অন্তরা। প্রথমেই বিজয় সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আসরে স্মরণ করলেন এভাবে—

— ঋষিকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণীর ঝঙ্কার যখন পৌঁছে গেছে বিশ্বের দরবারে তখন আমরা আর তাঁর থেকে বিমুখ থাকি কেন! আমার চেতনার গভীরে এসে তিনি তাই আকুল হয়ে সুর দিয়ে যান, এই শুনুন তাঁর তান—

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান॥

এরপর আমি নিজের গভীর চেতনালোকে বসে বাঁধতে থাকি নিজের মতো তাঁরই কথা নতুন ব্যাখ্যায়—

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান
আমায় রাধা সম বাধা দিয়ে
রেখেছে সংসার আয়ান॥

কালস্য কুটিলা গতি অতি ভয়ানক
দুর্মতি জুটিলা যেমন জ্বলন্ত পাবক
আমায় কারাগৃহে করে আটক
রাখে সারা দিন মান॥

দেখুন কি আশ্চার্য এই জীবনের কার্যকরণ— এখানে কালস্য মানে কাল তথা সময়ের গতি অতিশয় ভয়ানক, সে ধেয়ে আসছে, প্রতিনিয়ত তার কুটিলতায় আমার প্রাণ ক্ষয়ে যাচ্ছে, আর আমাদের দুর্মতি সেও তো জুটিলা কম নয়, সে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে জ্বলন্ত আগুনের দিকে, যেখানে স্বস্তি নাই, শান্তি নাই। আর এদের চক্রান্তে আমি কারারুদ্ধ হয়ে আছি। সারাজীবন সেই কারারুদ্ধ সংসারে খেটে মরছি, কিন্তু আমাদের প্রাপ্তি কী? একবার ভেবে বলুন তো—

খেটে খেটে কেটে গেল সারাটি জীবন
তবু কেন পাইলাম না তো এ সংসারের মন
সংসার যে স্বার্থপর এমন,
করি নাই তাই অনুমান॥

অজানা দিনের খবর নহে বিদিত
ইহাই জানি তুমি একদিন আসবে নিশ্চিত
হব তোমার ভাবে সমাহিত,
ছেড়ে জাতি কুল মান॥

পাগল বিজয় বলে বসে বসে ভাবি নীরবে
দেশে যাওয়ার শেষের বাঁশি বাজাবে কবে
আমার জীবন যৌবন সবই হবে
তোমার হাতে অবসান॥

এই মরণই যখন আমাদের শেষ পরিণতি, তখন আর এতো সংসার প্রীতির কী আছে? যদি এর কোনো যোগ্য উত্তর কেউ দিতে পারেন, তবে নিশ্চয় আমরা সংসারের কাজে আনন্দ অনুভব করবো! কিন্তু কে দেবেন এর যোগ্য উত্তর? যিনি দেবেন তিনি তো ঘুমিয়ে পড়েছেন।

— ডাক দিন তাঁকে, এর উত্তর আমাদের চাই?
— শ্যামলবাবু, ডেকে তুলুন নিশিকান্ত সরকারকে।
— নিশিদা, উঠুন, এবার আপনার উত্তরের পালা। উঠুন।
— পণ্ডিত মহাশয়, আমার ভয়ানক পেটে ব্যথা আরম্ভ হয়েছে, শরীর ও মন আমার কোনোটাই এই মুহূর্তে সুস্থ নেই, তাই আমার পক্ষে আজ গান গাওয়া অসম্ভব।
— বিজয়, আজ তুমিই শেষ টানো, নিশি বড় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
— আমি বুঝি, শ্যামলবাবু, উত্তর হারিয়ে গেলে সরকার মহাশয় অসুস্থতার ভান করেন। আশীর্বাদ করি, তিনি পরের আসরের জন্য সুস্থ হয়ে উঠুন।
— বিজয়, তুমি আমায় চিনবে কি-না জানি না! আমি শ্যামলাল বায়, পেশাগতভাবে ইন্ডিয়া মিউজিয়াম সোসাইটির এজেন্ট। আজ তোমার গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি। আমার একটা অনুরোধ আছে তোমার কাছে।
— কী সেই অনুরোধ?
— তুমি বায়না না গেয়ে, কিছু দিন শাস্ত্র অধ্যায়ন কর।
— কিন্তু শাস্ত্র-গ্রন্থাদি বা তার পণ্ডিত পাবো কোথায়?
— শাস্ত্র-গ্রন্থের উপর আমার কিছু অধিকার আছে, তুমি চাইলে আমার কাছ থেকেও শিখতে পারো।
— ঠিক আছে, আপনি যদি রাজি থাকেন তো আমিও রাজি আছি!

এরপর বিজয় সরকার শ্যামলাল রায়ের বাড়ির কাছারি ঘরে বসে বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যায়ন করেন। কোরাআন, বেদ, বাইবেল, ষড় দর্শনের ভাষ্য, উপনিষদ প্রভৃতি শাস্ত্র অধ্যায়ন করেন। শাস্ত্রীয় বিচার বিশ্লেষণে তিনি সত্যধর্ম প্রতিষ্ঠাতা মহাত্মা গুরুনাথ সেনগুপ্তের সাধনসিদ্ধ অনুসারী নিবারণচন্দ্র পাণ্ডে, সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, ভুবনমোহন গাঙ্গুলী, কুঞ্জবিলাস সমাজপতি, পবিত্র মুখার্জী, রবীন্দ্রনাথ সেনপুপ্ত, যতীন্দ্রনাথ বিশ্বাস প্রমুখ জনের সঙ্গ লাভ করেন। অতএব, দেখা যাচ্ছে— কবিগানের আসরে আলোচনা করার মতো শাস্ত্রবিদ্যা, বেদ-উপনিষদ-কোরআন-পুরাণ বিষয়ক আলোচনা করবার জ্ঞানও কবিয়াল বিজয় সরকার ভালোভাবেই অর্জন করেছিলেন। সার্বিক বিচারে বিজয় সরকারকে কবিয়াল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে তাহলে আর কোনো বাধা থাকে না।

শাস্ত্রাদি অধ্যায়নের পর বিজয় সরকারের সাথে প্রথম জোট হয় নকুল দত্তের, স্থান মোড়েলগঞ্জ থানার বলভদ্র গ্রামে। বিরাট প্রতিভাবান ব্যক্তি নকুল দত্ত, তৎকালীন কবিগানের জগতে দত্ত মহাশয়ের বাক্পটুতা, প্রশ্ন-জবাবের গভীর জ্ঞান সমৃদ্ধতার খ্যাতিতে নবীন কবিয়াল বিজয় সরকারের শরীর কেঁপে ওঠে। বিজয় আসরে গিয়ে দেখেন অগনিত দর্শক-শ্রোতা তার দিকে তাকিয়ে নকুল দত্তের বিপক্ষের স্বরূপ আবিষ্কার করছে। শেষ পর্যন্ত বিজয় ঈশ্বরকে নির্ভর করে আসরে অবতীর্ণ হন এবং মনে মনে ভাবতে থাকেন— ‘আমার গুরু রাজেন্দ্র সরকারের নির্দেশে সমগ্র সরকারগণ যখন আমাকে ত্যাগ করেছেন, তখন একমাত্র এই ব্যক্তিই আমাকে ঠাঁই দিয়েছেন। কাজেই আজ যদি আমি কৃতিত্বের পরিচয় দিতে না পারি, যদি শ্রোতাগণ আমাকে গ্রহণ না করেন, আমার বিফলতায় যদি দত্ত মহাশয় আমাকে অপাংক্তেয় মনে করে এড়িয়ে যান। তাহলে, কোথাও আর আমার কোনো স্থান হবে না। অতএব, আমাকে আজ কৃতিত্বের পরিচয় দিতেই হবে।’
এই ভেবে বিজয় সরকার হৃদয়ের গভীর থেকে কণ্ঠে তুলে নিলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদ্দীনের কবিতা ও গানের অংশবিশেষ, সেগুলি প্রয়োগেই তিনি কবিগানের ধূয়া সৃষ্টি করলেন। আসরের দর্শক-শ্রোতা কবিগানের আসরে অভিনব এই গানের সুর-বাণীর সংযোগ শুনে মোহিত হলেন এবং বিজয় সরকার অভিনন্দিত হলেন নকুল দত্তের সাথে প্রথম আসরেই।
এই ফাঁকে রাজেন্দ্র সরকারের কাছে পৌঁছে গেল নকুল-বিজয়ের জোটের কথা। তিনি বিষাদিত হয়ে উঠলেন—

— কি এতো বড় কথা, নকুল দত্ত ওই পামর বিজয়ের সাথে জোট বেঁধেছে! না না, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি এ কিছুতেই মানতে পারি না। আমাকে এর প্রতিশোধ নিতেই হবে। কিন্তু কীভাবে নেবো এই প্রতিশোধ? হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার মনে পড়েছে। আগামী সপ্তাহেই খুলনার সাধুর বটতলায় নকুল দত্তের সাথে আমার বায়না আছে। সে বায়নায় আমি নকুলের সাথে গাইবো না। এটাই হবে নকুলের প্রতি আমার প্রতিশোধ। ম্যানেজার, ম্যানেজার?
— জ্বি, সরকার মহাশয়।
— তুমি এখনই বিজয়ের কাছে যাও, ওকে বলে আসো— সাধুর বটতলায় নকুলের সাথে আমার যে বায়না আছে তাতে আমি গাইবো না, বিজয়কে ওই বায়না গাইতে হবে।
— এ কি বলছেন সরকার মহাশয়! এটা তো আমাদের বার্ষিক বাধা বায়না, এই বায়না আপনি বিজয়কে কেন দেবেন?
— ম্যানেজার, এটা নকুলের উপর আমার প্রতিশোধ।

রাজেন্দ্র সরকারের নির্দেশমত ম্যানেজার এসে বিজয়কে সাধুর বটতলার বায়নায় নকুলের সাথে কবিগান গাইতে বলে যান। বিজয় সরকার যথাসময়ে দলের সদস্যদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

— এখানে রাজেন্দ্র সরকারের আসার কথা! তুমি এসেছো কেন?
— তিনিই তো আমাকে তাঁর পরিবর্তে পাঠিয়েছেন!
— শোনো মশাই, তুমি কার সাথে গান করতে এসেছো! তুমি কি নকুল দত্তকে চেনো? তার সামনে রাজেন্দ্র সরকারের মতো পণ্ডিত কবিয়ালই টিকতে পারে না, আর তুমি কি-না সামান্য এক ছোকরা হয়ে এখানে এসেছো!
— এই ছোকরা তুমি কি গাইবে শুনি! তার চেয়ে গানের নামে আজকের প্রহসন বন্ধ থাকুক।
— শুনলে তো ছোকরা, এই জন মানুষের কথা। এখন তাহলে যাও, চলে যাও, তোমাকে দিয়ে আমাদের কবিগান হবে না। জনগণ চাইছে না।

কর্তৃপক্ষের এমন কটাক্ষে বাধ্য হয় বিজয় সরকার আশাহত হয়ে দলসহ সে গ্রামের এক বাড়িতেই আশ্রয় নিলেন। ওই বটতলার পূজো উপলক্ষে ফুটবল মাঠে এক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা ছিল। বিজয় বাল্যকাল থেকে ফুটবলের প্রতি খুবই আকৃষ্ট ছিলেন, তাই বিষাদিত মনের মধ্যেও ফুটবল মাঠে গেলেন। সেখানে একজন যুবক সরকার বিজয়কে দেখে তাকে একদল যুবকের মধ্যে নিয়ে গেলেন—

— বিজয়, আমি জানি সব কথা! আপনার এখন গানের আসরে থাকার কথা ছিল। আর সেই আপনি এখন ফুটবল মাঠে। আপনার জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে, মন চাইছে কিছু একটা করতে।
— কি আর করবেন দাদা!
— আপনি হতাশ হবেন না, চলুন না, একটু চেষ্টা করে দেখি আপনাকে নিয়ে, চলুন।
— কি চেষ্টা আর করবেন!
— আপনি আমার সাথে আসুন। আমাদের গ্রামের কিছু রসিক ছেলেপেলে আছে, একবার আপনাকে নিয়ে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, চলুন।
— আচ্ছা, চলুন।
— ওই তো ওরা ওখানে বসে রয়েছে। আসুন, পরিচয় করিয়ে দেয়। এই যে দাদারা, আমি আজ তোমাদের সাথে একজন কবি সরকারের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। এই যে, ইনি হলেন বিজয় সরকার। আমাদের এই সাধুর বটতলায় নকুল দত্তের সাথে কবিগান গাইতে এসেছেন। কিন্তু...
— কিন্তু আবার কি! ইনি গাইবেন।
— না, বিষয়টা তেমন সহজ না, গান গাইবার কথা ছিল, ইনার গুরু রাজেন্দ্র সরকারের, তিনি না এসে বিজয়কে পাঠিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ধারণা নকুলের সাথে বিজয় জোট গাইতে পারবে না, তাকে তিরস্কার করে বিদায় জানিয়েছেন। এখন তোমাদের একটা কিছু করতে হবে...
— নিশ্চয় আমরা কিছু করবো। কিন্তু তার আগে জানতে চাই...
— বলো, বলো?
— না ওটা আপনার কাছে নয়, ওই বিজয় সরকারের কাছে।
— বলুন?
— আপনি কি নকুল দত্তের বিপক্ষে গান গাইতে সাহস করেন?
— জ্বি, আমি কিছুদিন আগে নকুল দত্তের বিপক্ষে একপালা কবিগান করেছি। সেই অভিজ্ঞতার উপর ভর করে এটুকু বলতে পারি যে, নকুল দত্তের বিপক্ষে গান করে আমি আপনাদের যথেষ্টই আনন্দ দিতে পারবো। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন যেন আমাকে অপছন্দ করেছেন। এখন কি করে সেই গান আমি গাইতে পারি?
— আমরা আপনাকে দিয়ে গান গাওয়াতে পারি, যদি আপনি বিনিময়ে কোনো প্রকার টাকার দাবী না করেন।
— দয়া করে সত্যি যদি তা করে দিতে পারেন তো আমি শুধু বায়নার টাকা নয়, আমি আমার আসা-যাওয়ার কোনো খরচের জন্যেও দাবী করবো না।
— তাহলে চলুন, আমরা আপনার কর্তৃপক্ষকে বলে দিচ্ছি।

যুবকেরা এসে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলো—
— হারান কাকা, আমাদের বিশেষ অনুরোধ, বিজয় সরকারকে নকুল দত্তের বিপক্ষে গান করার সুযোগ দিন, সে কোনো বায়নার টাকা নেবে না, এমনকি তার আসা-যাবার খরচও নেবে না। আমরা তার সাথে আলাপ করে এভাবেই রাজি করিয়েছি, এখন আপনারা রাজি হলেই হয়। আমরাও শুনবো তার গান।
— হারান মশাই, আমি নকুল দত্ত বলছি, ওর বিপক্ষে গান গাইতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনারা বিজয়কে দিয়ে গান করান। আমার বিশ্বাস কোনো অসুবিধা হবে না। সে আমার সাথে আগেও আসর করেছে, ভাল গেয়েছে।
— দেখুন মশাই, এখানে কে গান করবে সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আপনি কোনো অভিমত দিতে পারেন না।
— তাহলে আমার বায়নার টাকা এখনই পরিশোধ করুন, আমরা চলে যাই।
— হারান কাকা, আমরা একটা কথা বলি, একটু মন দিয়ে শুনুন, আমরা আর কোনো অনুরোধ করবো না, শুধু একটা প্রস্তাব রাখছি, যা সিদ্ধান্ত সে তো আপনি নেবেন।
— বলো?
— গান না হলেও যখন নকুল দত্তকে টাকা দিতে হবে, তখন গান হতে দেওয়ায় তো ভাল; তাছাড়া, বিজয় সরকার তো আমাদের বলেছেনই— এই গানে তিনি কোনো পারিশ্রমিক দাবী করবেন না।
— ঠিক আছে, বিজয় যদি কোনো পারিশ্রমিক না নিয়ে গান করতে রাজি থাকে তো গান হতে পারে।
— বিজয়, আসো তাহলে গান শুরু করি, এখন রাত ১০টা বেজে গেছে, আর দেরি করা ঠিক হবে না। আগে না হয় তুমিই শুরু করো।
— সাধুগুরুদের চরণে ভক্তি জানিয়ে তাহলে শুরু করছি আমার গান—

দুই দিনের দুনিয়া রে মুসাফির ফিরে চলো ঘরে
দেখি সংসার মাঝে সকাল সাঁঝে—
কত সাজে, সাজে নারী নরে॥

কেহ পিতামাতার ভূমিকায়, ভগ্নি ভ্রাতা কন্যা কি তনয়
পরিজনের কত পরিচয়, ঘটল ছায়াছবির মায়াভিনয়
সংসার নাট্যে জীবন মঞ্চ পরে॥

ঘটিলে পরিবার পরিবেশ, তখনই হয় পরিচয়ের শেষ
থাকে না কোনো সম্পর্কের লেশ, যখন শেষ নিঃশ্বাস হইবে নিঃশেষ
রইবে কোন অজানা লোকান্তরে॥

অর্থ সম্পদ যা কিছু সম্বল, এ জীবনের সংগ্রহ সকল
সবই পড়ে রইবে মহীতল, কেবল পথের সম্বল স্বকর্মের ফল
যেও না যে ফল বিফল করে॥

পড়িয়ে প্রবল পিপাসায়, বারি ভ্রমে ভ্রমে সাহারায়
হরিণী মরে মরীচীকার, পাগল বিজয় ঘোরে বারির আশায়
মায়া মোহের মরু বালুচরে॥

এই তো জীবনের প্রকৃত পরিচয়। মুসাফিরের জীবনে কত গৌরব, অহঙ্কার বুকে নিয়ে অন্যকে নিরন্তর কষ্ট দিয়ে ফিরছি। আমি আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনে কাউকে কখনো দুঃখ-কষ্ট দিবো না। আর যারা আমার কোনো পূর্বাচারণে কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছ থেকে আমি চেয়ে নেবো ক্ষমা। যদি আমি ক্ষমা না পাই তবে তো এ জীবনের অসারতা প্রকাশ পাবে। আপনারা সকলে মিলে আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন— আমি যেন এই মর জীবনের অসারতা দূর করতে সক্ষম হই।

[বিজয়ের এই কথার মধ্যে আবেগে গদগদ হয়ে হারান চৌধুরী বলে ওঠেন—]

— বিজয় তোমার প্রতি ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমার মনে যে ব্যথা দিয়েছি তাতে আমরা অনুতপ্ত। তোমার থেকে বয়সে আমি অনেক বড় তাই ক্ষমা চেয়ে তোমাকে অসম্মান করবো না; তবে অনুরোধ তোমার বায়নার টাকা তুমি গ্রহণ করো। সেই সাথে আরও একটি টাকা তোমাকে বেশি দিয়ে সাধুর বটতলায় বার্ষিক হিসেবে তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত তুমি থাকবে এবং এই সাধুর বটতলা থাকবে, তোমার বায়না এখানে বাধা রইলো।

বিজয় সরকারের কবিগানের সুনাম ও সুখ্যাতি এবার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু একজন জনপ্রিয় কবিয়াল হয়েও বিজয়ের মনে মর্মবেদনা বিষাক্ত তীরের মতো বিদ্ধ হয়ে আছে। কেননা, তিনি রাজেন্দ্র সরকারের ক্ষমা লাভে বঞ্চিত রয়েছেন। এই বঞ্চনার নিরাশ আঁধারের মধ্যে তাঁর মনে একদিন হঠাৎ উজ্জ্বল আলোর ছলকানী হয়ে ভেসে উঠল পাকুড়িয়া আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা রাই রসরাজ গোস্বামীর মুখ। রাজেন্দ্র সরকার যখন মস্তিষ্কবিকৃতি জনিত ব্যাধিতে পথে পথে ছুটাছুটি করে বেড়াতেন, তখন এই রাই রসরাজ ঠাকুর তাকে সঙ্গে রেখে প্রকৃতিস্থ করেছিলেন। তাই রাজেন্দ্র সরকার তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন, শুধু তাই নয়— রাজেন্দ্র সরকার তাঁর একজন একনিষ্ঠ ভক্তও বটে। রাই রসরাজ আবার বিজয়কেও স্নেহ করেন। সেই স্নেহের দাবীকে বুকে নিয়ে বিজয় রাই রসরাজের কাছে গিয়ে রাজেন্দ্র সরকার ও তার মধ্যের ভুল বোঝাবুঝির আনুপূর্বিক ঘটনা বর্ণনা করে এর মীমাংসা প্রার্থনা করলেন।
রথযাত্রার দিন পাকুড়িয়া আশ্রমে এসে রাজেন্দ্র সরকারসহ অনেক জ্ঞানীগুণী রাই রসরাজের কাছে আশীর্বাদ গ্রহণ করলেন। এর মধ্যে রাই রসরাজ ভক্ত রাজেন্দ্র সরকারকে উদ্দেশ্য করে বললেন—

— রাজেন, তোমার শিষ্য বিজয়, আত্মত্রুটিতে অনুতপ্ত হয়ে তোমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি কামনা করি, তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও এবং প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ আবার এক সাথে গান করো।
— বিজয়ের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত এখনও অনেক বাকি আছে।
— গুরুজি আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনার সাথে আমি আন্তরিকভাবেই গান গাইতে ইচ্ছুক।
— বিজয়, গান গাওয়া দূরে থাক, আগামী মাসে আমার অভিশাপে তোমার মৃত্যু অবধারিত।
— রাজেন, কি বললে! তোমার মতো পাগল আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। আরে পাগল, তোর কি মনে নেই— ন্যাংটা হয়ে পথে পথে দৌড়াদৌড়ি করতি, শিকলে আবদ্ধ হয়ে ঘরে বসে বুকফাটা চিৎকার করতি, তখন তোর কোন বাবা তোকে রক্ষা করেছিল! এতো বড় স্পর্ধা তোর! তোর কথায় বিজয়ের মৃত্যু? এই বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীর মাটি দিয়ে আমি ওর মরণ মুছে দিলাম। সেই সাথে এও জেনে রাখ, আজ বিজয় যেমন সেধে তোর সাথে গান গাইতে চায়ছে, একদিন তোকেও এমনি বিজয়কে সেধে গান গাইতে ডাকতে হবে।

নতুন করে বিজয় সরকার আবার মর্মাহত হন। কিন্তু কবিগানের আসর ছাড়েননি। তাঁর গানের প্রতি অনেকের মুগ্ধতা ও সমাদরের মধ্যেও তিনি রাজেন্দ্র সরকারের নির্মম ব্যবহারকে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারেন না।
এর মধ্যে বিজয় একদিন জানতে পারেন, দেশবরণ্য কবিয়াল হরিবর সরকার, মনোহর সরকার, নিশিকান্ত সরকারসহ রাজেন্দ্র সরকার কবিগানের প্রচারার্থে নিজের বাড়ি তৈরি করার সমস্ত ইট বিক্রি করে কলকাতা যাচ্ছেন।
কলিকাতা গিয়ে তাঁরা বিভিন্ন স্থানে কয়েকপালা কবিগান পরিবেশন করেন। কিন্তু দর্শক-শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হন। অগত্যা রাজেন্দ্র সরকার কলিকাতার দর্শক-শ্রোতাদের রুচি ও চাহিদা লক্ষ করে দলের ম্যানেজারকে বলেন—

— আজ যদি আমি বিজয়কে সাথে আনতে পারতাম তাহলে যে উদ্দেশ্যে এসেছি সে আশা পূর্ণ হতো। কিন্তু তার সাথে আমি যে ব্যবহার করেছি তাতে সে কি আসবে?
— তবু আপনি একটা চিঠি লিখে তাকে অনুরোধ করে দেখতে পারেন। যদি সে রাজি হয়, তাহলে তো ভাল।
— ঠিকই বলেছিস, আমি এখনই একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি, তুই এই চিঠি নিয়ে গিয়ে বিজয়কে একবার আনতে চেষ্টা কর।

রাজেন্দ্র সরকারের ম্যানেজার সেই চিঠি নিয়ে বিজয় সরকারের বাড়িতে আসেন। বিজয় চিঠির হস্তাক্ষর দেখে বিস্মিত হন—

— এতো আমার গুরু রাজেন্দ্র সরকারের হাতের লেখা!
— হ্যাঁ, তিনি নিজে হাতেই লিখেছেন। আর আপনাকে সঙ্গে করে আমায় নিয়ে যেতে বলেছেন। দয়া করে আপনি দ্বিমত করবেন না।
— আমার গুরু রাজেন্দ্র সরকার লিখেছেন, আর আমি দ্বিমত করবো মানে। চলুন, এখনই চলুন।

বিজয় সরকার কলিকাতা পৌঁছে জানতে পারেন— আগেই চারপালার বায়না স্থির হয়ে আছে। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন আলবার্ট হলের বর্হিদ্বারে দাঁড়িয়ে একটি চোঙে মুখ দিয়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা দিচ্ছেন—

— পূর্ববঙ্গের ভাব ও সাহিত্যে সমৃদ্ধ অপূর্ব সৃষ্টি কবিগান। আসুন, আসুন, উপভোগ করুন। এই কবিগান হবে ছড়া ও ছন্দে নিপুণ। আসুন আসুন। আজকের কবিগান পরিবেশন করবেন— ওপার বাংলার কবিয়াল তিনজন। আসুন উপভোগ করুন, কবিগান, কবিগান, অমৃত এই গান।

পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের এই ঘোষণায় সন্ধ্যার পর লোক সমাগমে আলবার্ট হল ভরে যায়। সেদিনের আসরে উপস্থিত হয়েছিলেন বাংলার শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী আব্বাসউদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তাফা, হাবিবুল্লাহ বাহার প্রমুখ। বিজয় সরকার সেদিনের আসরে সাহিত্যের সাথে কবিগানের সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলে জসীম উদ্দীনের নক্শীকাঁথার মাঠ আখ্যানকাব্যকে গীতে রূপান্তর করে তাৎক্ষণিকভাবে আসরে উপস্থাপন করেন—

— আমি আজ এখানে বাংলার লোকজীবনের পরম বান্ধব পল্লীকবি জসীম উদ্দীনকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়েছি। আর সেই আবেগ থেকে মনে পড়েছে তাঁর রচিত অমর আখ্যানকাব্য ‘নক্শী কাঁথার মাঠে’র কথা। আপনারা জানেন, যে কাব্যের আখ্যানে আছে— গ্রাম্য যুবক রূপাই আর গ্রামীণ তরুণী সাজুর কথা, পল্লীকবি সেই সাজু-রূপাইয়ের প্রেম গাঁথাকে বিরহের মাধুরী দিয়ে বেঁধে রেখেছেন— আমার গানেরও উৎপত্তি সেই বিরহের অনল থেকে, এবার শুনুন—

নক্শী কাঁথার মাঠে রে—
সাজুর ব্যথায় আজো কাঁদে রূপাই মিঞার বাঁশের বাঁশি।
তাদের আশার বাসা ভেঙে গেছে রে
তবু যায়নি ভালোবাসাবাসি॥

কত আশা বুকে নিয়ে বেঁধেছিল ঘর
কত সুখে মিশেছিল মিলন-মঞ্চ ’পর
হঠাৎ আসিয়া এক বৈশাখী ঝড় রে
সে ঘর কোথা গেল ভাসি॥

সাজুর কবরের এক পাশে নক্শী কাঁথা গায়
রূপাই মিঞা শুয়ে আছে মরণের শয্যায়
তারা আছে চির নীরবতায় রে
তাদের দুইটি হিয়া পাশাপাশি॥

অকরুণ দারুণ বিধি বিচার তোর কেমন
তোর বুঝি ভালবাসার কেউ নাহি রে এমন
তাইতে বুঝিস না তুই বিরহীর মন রে
(হা রে) কেন তাদের কান্না-হাসি॥

পল্লীকবি জসীমউদ্দীন বেদনার ছায়ায়
নক্শী কাঁথা লিখেছেন তার মনের মায়ায়
ভাবুক কবিগণ আনে কল্পনায় রে
যত সত্য লোকের তত্ত্বরাশি॥

নক্শী কাঁথার মাঠে লোকে আজো শুনতে পায়
সাজুর ব্যথায় রূপাই মিঞা বাঁশরী বাজায়
পাগল বিজয় বলে পরাণে চায় রে
আমি একবার গিয়ে শুনে আসি॥

বিজয় সরকারের কণ্ঠে এই গান শুনে কবি জসীম উদ্দীন আর স্থির থাকতে পারেন না। তিনি আবেগে কান্না জড়িত কণ্ঠে আসরের সব দর্শক-শ্রোতাদের সামনে বিজয় সরকারকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন—

— বিজয়, ওরে বিজয়, এ তুই কি করলি, আমার সৃষ্টিকে তুই এভাবে আপনার করে নিলি! আমি জানি, এখন থেকে তোর এই সুর আর বাণীর ভেতর দিয়েই আমার নক্শী কাঁথার মাঠের কথা বাংলার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে।

এরপর কলিকাতা অবস্থানকালে কবিয়াল বিজয় সরকার একদিন ড. ধীরেন্দ্রনাথ সেনের সাথে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যান। সেখানে সেদিন কবিগুরুর সান্নিধ্য লাভের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন বর্ধমানের রাজকুমারী, কুচবিহারের রাজকুমারী, মাইশোরের রাজকুমারী প্রমুখ বিদূষীগণ। তাঁদের সুসজ্জিত বৃত্তের মধ্যে স্নিগ্ধ ও প্রশান্ত চোখে বসেছিলেন কবিগুরু। বিজয় সেই কক্ষে প্রবেশ করে কবিগুরুর চরণে প্রণত হয়ে বললেন—

— গুরুদেব, আমি বিজয় সরকার, গ্রামে গ্রামে কবিগান গেয়ে ফিরি। আপনার কবি-চরণ আমার পরম ভরসার আশ্রয়।

কবিগুরু বিজয়ের পরিচয় আশীর্বাদের ভাষায় বললেন—

— তোরাই কবি, তোরাই কবি।

বিজয় সেদিন অনুভব করলেন— যেন এই কণ্ঠস্বরের সাথে বিশ্বকবির বিশ্বদৃষ্টি তাঁর উপর বর্ষিত হয়েছে, আর তিনি যেন তাঁর তেজপূর্ণ দৃষ্টিশক্তি দিয়ে বিজয়ের দেহের সমস্ত আবরণ, আভরণ ভেদ করে সমস্ত কিছুই দেখতে পাচ্ছেন।
কবিগুরুর এই সাক্ষাৎ আশীর্বাদের কথা কবিয়াল বিজয় সরকার কোনোদিন বিস্মৃত হতে পারেননি। তাই তো গেয়েছেন গান—

পাগল বিজয় বলে শুভ লগ্নে জনম ধরেছি
একাধিকবার কবির চরণ পরশ করেছি॥

শুনলেন তো কবিয়াল হিসেবে বিজয় সরকারের কীর্তিগাঁথা। কবিয়াল হিসেবে এই বিজয় সরকারের আর কত পরিচয় দেবো! শত শত আসরে তাঁর যশকীর্তি বন্দিত হয়েছে। কিন্তু সাধক হিসেবে বিজয় সরকারকে স্বীকৃতি দেবার এমন কোনো পথ কি আছে? যদি তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত বিপক্ষের গায়কের নিকট থাকে তাহলে তিনি তা প্রকাশ করলে আমরা বড়ই প্রীত হবো।

.........................................................................................................................

আরো পড়তে ক্লিক করুন :

দয়াল তোমার আসল নামটা কী || পর্ব-১

দয়াল তোমার আসল নামটা কী || পর্ব-২

দয়াল তোমার আসল নামটা কী || পর্ব-৩

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অ্যাটলেটিকোকে বিদায় করে ১১ বছর পর সেমিফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগঅ্যাটলেটিকোকে বিদায় করে ১১ বছর পর সেমিফাইনালে ডর্টমুন্ড
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগঅবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
ডিপ্লোমাধারীদের বিএসসির মর্যাদা দিতে কমিটি
ডিপ্লোমাধারীদের বিএসসির মর্যাদা দিতে কমিটি