X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সওগাত ও আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্গতি || ফিরোজ আহমেদ

.
২৫ মে ২০১৬, ১৬:৫২আপডেট : ২৫ মে ২০১৬, ১৭:৪১

সওগাত ও আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্গতি || ফিরোজ আহমেদ মাহবুব মোর্শেদের লেখা পছন্দ, তার একটা বড় কারণ পর্যবেক্ষণের নতুন নতুন দৃষ্টিকোণ, আর বিশেষ করে তার বিদ্রুপের শক্তি। সব সময় যে একমত হতে পারি, তা না। মত ভিন্নতা আছে, তার এমন মন্তব্যেও প্রায়ই বুদ্ধিমত্তার সেই প্রকাশটা টের পাওয়া যায়, যেমন নূরজাহান বেগম ও নাসিরউদ্দীনকে নিয়ে তার সাম্প্রতিক মূল্যায়ন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কল্যাণে সেটিতে চোখ পড়লো। প্রাসঙ্গিকভাবেই এলো আরও কিছু ভাবনা। প্রিয় কবি কাজী নজরুলের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই সুযোগটা কাজে লাগানো যাক :
১. “কলকাতা থেকে ঢাকায় আসা বাংলাভাষী মোহাজির মুসলমানরা আদতে কলকাতার উনিশ শতকের রেনেসাঁ মারফত দূর থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন। দেশভাগের আগে ও পরে কলকাতার নবজাগরণ দিয়ে প্রভাবিত হলেও তারা ছিলেন সর্বদাই পেছনের সারিতে। জাগরণের সঙ্গে সম্পর্ক কী, লড়াইটা কোথায়, এর কী নেওয়া যায়, কী নেওয়া যায় না- তা ঠিক হওয়ার আগেই পেছনের সারির এই লোকগুলো ঢাকায় চলে এলেন। আধা গ্রাম আধা শহর ঢাকায় এই মানুষগুলোই তখন প্রথম সারিতে। তারা শুরু থেকে ঢাকার শিল্প-সংস্কৃতি-বুদ্ধিবৃত্তির পরিসরকে তাদের স্বপ্নের কলকাতার আদলে সাজানোর উদ্যোগ নিলেন।’’

এখানে একটা সহজ প্রশ্ন আসে, কলকাতার নবজাগরণের সাথে সম্পর্কের বেলাতে, কি নেয়া যাবে, কি নেয়া যাবে না, তা নির্ধারণের বেলাতে সকল মুসলমান কি একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? বা নেয়া সম্ভব ছিল? না। তাদের শ্রেণি, মতাদর্শ, অবস্থান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন সারবস্তু তারা নিয়েছেন এবং বর্জনও করার চেষ্টা করেছেন। এই কারণেই হুমায়ুন কবীর থেকে গেলেন ভারতেই, কংগ্রেসী হয়ে, মুজফফর আহমদও থাকলেন কমুনিস্ট পার্টিতে। আবুল মনসুর আহমেদরা একটা মুসলমানী সমালোচনা হাজির করলেন সংস্কৃতির, এবং আরও অনেকে এলেন পূর্ব বাঙলায়। তখনকার দিনের যে কোন স্মৃতিচারণে বোঝা যাবে কত বহুমুখী টানের ভেতর দিয়ে মুসলমানরা (হিন্দুরাও) গিয়েছেন। ফলে তাদের লেনাদেনাতেও, দেয়া নেয়ার হিসেবেও ছিল অজস্র প্রবণতা, ঝোঁক ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় একটা বর্গ হিসেবে মুসলমানদের দেখতে পাওয়া তাই কঠিন, প্রায় অসম্ভব। দেশভাগের প্রশ্নটা ছাড়া আর কিছুতে তাই হিন্দু ও মুসলমান, কারও বেলাতেই নির্ণায়ক কোনও অবস্থান পাওয়া যাবে না।

২. মাহবুব বলেছেন, এই মোহাজিররা কলকাতায় ছিলেন পিছিয়ে, আধা গ্রাম আধা শহর ঢাকায় তারাই প্রথম সারিতে। কথাটা অর্ধসঠিক। সত্যি যে, কলকাতায় তারা পিছিয়ে ছিলেন। 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' থাকার পরও আলাদা করে 'মুসলিম সাহিত্য সমিতি' গড়ে তোলার উদ্যোগ কেন নিতে হয়েছিল, তার ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ যা লিখেছেন, সেটুকুই পর্যাপ্ত হবে পরিস্থিতিটা বোঝার জন্য :

“আমরা কজন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য ছিলাম। সেখানে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন না থাকলেও বড়লোকের ঘরে গরিব আত্মীয়ের মত মন-মরা হয়ে তার সভায় যোগদান করতাম। আমাদের মনে হলো বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সম্পর্ক বিলোপ না করেও আমাদের একটি নিজস্ব সাহিত্য-সমিতি থাকা উচিত।”

কিন্তু পিছিয়ে থাকাটি তো সর্বদাই একটি আপেক্ষিক ধারণা। বিকাশ রহিত অথচ ইতিমধ্যে মহীরূহে পরিণত বৃক্ষের সাথে সাথে উদীয়মান কিশলয়ের সম্পর্ক নির্ধারণে তাই প্রায়ই আমরা ভুল হিসাব করি। প্রায়ই উদীয়মানের বিকাশ দ্রুততর হয়, কেননা অপরের কাছ থেকে সে দ্রুতই বহু কিছু নিতে পারে, তার অভিজ্ঞতাকেও নিজের অভিজ্ঞতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এবং তাকে ছুঁয়ে ফেলার স্তরে পৌঁছেও যেতে পারে। যেমন কবি গোলাম মোস্তফা। নজরুলের কবিতাকে প্রয়োজনে সম্পাদনা করে মুসলমানী করার আতকে ওঠার মতো প্রস্তাবও দিয়েছিলেন যিনি। এহেন গোলাম মোস্তফাও রীতিমত পিয়ানো বাজিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পছন্দ করতেন, এটা বেশ কয়েকজন উল্লেখ করেছেন তাদের স্মৃতিচারণে। আরও বহু ব্যক্তির জন্যই এটা সত্য। হিন্দু-মুসলমান বিভাজন সত্যেও বাঙলা ভাষাটা উভয়ের যৌথ সম্পত্তি ছিল বলেই পিছিয়ে থাকা বাঙালি মুসলমান এগিয়ে যাবার মইটিকে হাতের কাছে বেশ খানিকটা তৈরি দশাতেই পেয়েছিলেন।(অবশ্য তর্কটা এ নিয়েও কেউ কেউ করে থাকেন যে, পরের মইটি ব্যবহারেই বাঙালি মুসলমানের সর্বনাশ ঘটলো কি না!)

গোটা রোমান সাম্রাজ্যের বিকাশ এত দ্রুত ঘটেছিল, কেননা তা আত্মসাৎ করতে পেরেছিল তৈরি থাকা গ্রিক সভ্যতার দর্শনকে। মধ্যযুগে আরবদের এত দ্রুত বিকাশের প্রধান কারণ ছিল গ্রিক-ল্যাতিন-সংস্কৃত-ফারসি যাবতীয় সাহিত্যকে দ্রুত আত্মসাৎ করণে। আর বাঙালি মুসলমানের জন্য তা ছিল নিজ ভাষাতেই অন্য সম্প্রদায়ের সাহিত্য থেকে গ্রহণের প্রশ্নটি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই বিকাশকে আরও দ্রুততরই করেছিল। এবং রাজনীতি ও সাহিত্যের অভিজ্ঞতাতে এই বিভেদ যে দ্রুতই ঘুচে আসছিল, তার ভরবেগটা আমরা টের পাবো পাকিস্তান আমলেই এত দ্রুত সার্থক অনেক ঔপন্যাসিকের আবির্ভাবে।

কেবল ‘পিছিয়ে থাকা’ দিয়ে তাই সম্পর্কটা বোঝা যাবে না। পিছিয়ে থাকার আপেক্ষিকতাটাকেই বুঝতে হবে। আগে থেকেই হাজির থাকা হিন্দু মধ্যবিত্তের সাথে উদীয়মান মুসলমান মধ্যবিত্তের যে সংঘাত, সেটাই নাসিরউদ্দীনদের কলকাতা থেকে এনে ফেলেছিল ঢাকাতে, সেটাই আনে বাঙলাভাগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুভূতি এই পর্যায়ে গিয়েছিল যে, জয়া চট্টপাধ্যায় তার ‘বেঙ্গল ডিভাইডেড’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন হিন্দু মধ্যবিত্তের, তার বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই আর বিকাশমান (এবং সংখ্যাগুরুও বটে) মুসলমানদের সাথে একত্রবাস সম্ভব মনে করলেন না। বাংলায় উত্থান ঘটলো হিন্দু মহাসভার, মুসলমানদের নেতৃত্ব চলে এলো মুসলিম লীগের হাতে।

৩. এরপরই মাহবুব যা বললেন, সেটাই আসলে মূল বিষয়, এতক্ষণ যা নিয়ে আলাপ হলো তা বাড়তি মাত্র :
“ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া থেকে না এসে চিন্তা-দর্শন-সাহিত্য-শিল্প কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেনে করে ঢাকায় পৌঁছেছিল।
কলকাতা থেকে উৎপাটিত বাঙালি মোহাজিররা ঢাকায় এসে যে (ইনফিরিয়র/মিনিয়েচার/ছোট/দ্বিতীয়) কলকাতা স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন তারই অগ্রপথিকদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও তার কন্যা নূরজাহান বেগম। এবং তাদের অনুসারিরাই এখন ঢাকার মেইনস্ট্রিম শিল্প-সংস্কৃতি।”

সত্যি, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন কলকাতা থেকে এসেছিলেন। কিন্তু এও তো সত্যি, তিনি কলকাতা গিয়েছিলেন চাঁদপুর থেকে, স্টিমারে করেই বোধহয়। নিজের এলাকায় বীমার দালালি করেছেন, অন্য মুসলমানেরা এই ব্যবসা করতে চাইতো না ধর্মীয় কারণে। অথচ নাসিরউদ্দীনের সমাজ চিন্তায় নিজ ধর্ম সম্প্রদায়ের মঙ্গল চিন্তাই একমাত্র না হলেও প্রধানতম বিষয় ছিল। আরও যারা এসেছিলেন কলকাতা থেকে, তাদের একটা বড় অংশও তো ওই কলকাতায় গিয়েছিলেন ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া (এবং ফরিদপুর থেকে, যেমন শেখ মুজিবুর রহমান) প্র্রভৃতি জনপদের মানুষ হিসেবেই। কলকাতায় তারা সে কারণেই যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, যেমন আজ এই জেলাগুলো থেকে ঢাকায় আসাটা মাহবুবের কাছেও কাম্য। সেখানে প্রায় সর্বদা তারা মোকাবেলা করেছেন রূঢ়, বিদ্বেষপূর্ণ এবং তাচ্ছিল্যে ভরা কলকাতাকে, মুসলমান বলেই সে শুধু দূরে ঠেলে দেয় না, উপহাস করে বাঙালও বলে, এবং সেখানে তাদের মিথষ্ক্রিয়া এই অনেকগুলো পরিচয়ের মানুষ হিসেবেই। সেখান থেকেই তাদের আবার আগমন কিছুতেই তাই কলকাতার ঢাকায় আসা হতে পারে না। ঢাকায় যারা ইতিমধ্যেই মোটামুটি জাঁকিয়ে বসেছিলেন, তারাও কিন্তু ছিলেন, যেমন কেরানীগঞ্জের অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক। ছিলেন মোহাম্মদ তোয়াহা, তাজউদ্দীনের মতো তরুণ কর্মীরা। আসাম থেকে এসেছিলেন পরাক্রমশালী মওলানা ভাসানী। তিনিও গিয়েছিলেন সেখানে সিরাজগঞ্জ থেকে।

কেউই কি শুধু নেয় একটা নগর থেকে, দেয় না কিছুই? তবে যে রবীন্দ্রনাথ দেখলেন কলকাতার ভাষার বহু বৈশিষ্ট্যকে পরাজিত করছে বাঙালের কথ্যভাষা? এবং এই নেয়া দেয়ার, অথবা উর্ধতন-অধস্তনের বিষয়টা কি শুধু স্থানিক? শ্রেণি/সম্প্রদায় কোনও ভূমিকা রাখে না? পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান কিংবা পূর্ববাঙলার হিন্দু, তারাও কি সর্বদা সন্তুষ্ট ছিলেন কলকাতার এই আধিপত্যে? প্রথমজনের প্রশ্ন ওঠে, কেননা ঢাকা তো পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানের আরাধ্য ছিল না কখনো। দ্বিতীয়জনের কথাও ওঠে, কেননা ঘটি বনাম বাঙালের যুদ্ধটাই বাঙলা সাহিত্যে প্রধান বিবাদের বিষয় ছিল সাম্প্রদায়িক সমস্যাটি ওঠার আগে। এই বহুমুখী দ্বন্দ্ব আপাতকালের জন্য চাপা পড়ে গিয়েছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থানে।

নাসিরউদ্দীন কেবল একতরফা নেননি কলকাতা থেকে, অধস্তন ব্যক্তিত্ব হয়ে সেখানে তারা নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা ছিলেন না। তাদের কাজের ভুলশুদ্ধ অজস্র ছিল, সেই পর্যালোচনা আমাদের আরও বহু বছর করতে হবে। কিন্তু বাংলা ভাষা তার কাছে ঋণী যে ‘সওগাত’ নামের পত্রিকাটির জন্য, তা নিছকই কলকাতাগন্ধী নয়। সওগাত বাংলা ভাষাকেই স্থায়ীভাবে বদলে দেয়ার অনুঘটক হিসেবেও ভূমিকা রেখেছিল। পূর্ববাঙলার চাঁদপুর শহর থেকে নাসিরউদ্দীন যাচ্ছেন কলকাতায়, লক্ষ্য লোকসান দেয়া সওগাতকে কলকাতা থেকে আরেকবার চালু করা। ব্যবসাবুদ্ধি তার মন্দ ছিল না, কিন্তু ঢের বেশি ছিল নিজ সম্প্রদায়ের জন্য কিছু করার তীব্র আকুতি। সওগাত নামটাতেই মুসলমানী গন্ধ, কিন্তু ইসলামী নয় সে কিছুতেই। প্রতিপক্ষ মাওলানা আকরম খাঁর ‘মোহাম্মদী’ একই সাথে ইসলামী এবং সাম্প্রদায়িকও। এই দুই পত্রিকার রেষারেষি ছিল কিংবদন্তীতুল্য। দিন যতই গড়াতে থাকলো ’৪৭ পর্যন্ত ক্রমাগত মোহাম্মদীরই ‘আপাত’ রাজনৈতিক জয় ঘটলো। কিন্তু সাহিত্যসৃষ্টিতে ওটির অবদান যৎসামান্য, এক নজরুলের তুলনাতেই তা তুচ্ছ। ’২৮ সালে নজরুল যোগ দিলেন সওগাতে, নাসিরউদ্দীন তাকে প্রস্তাব করলেন মুসলমানী বাগবিধি সাহিত্যে তুলে আনতে। ‘সওগাত ও নজরুল ইসলাম’ নামের প্রবন্ধে নাসিরউদ্দীনেরই বর্ণানুযায়ী :

“মুসলমানদের প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য কমছে না। এখন মুসলমানরা তাদের সাহিত্যে নিজস্ব ভাবধারা ফুটিয়ে তুলতে চায়। তাদের নিজস্ব সমাজচিত্র ও নিত্যকথিত শব্দাবলী তারা সাহিত্যে প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। হিন্দু দেব-দেবীর উপমা দিয়ে আপনি যেসব কবিতা-গান লিখেছেন, তাতে কাব্যরস যথেষ্ট থাকলেও বিরূপ মনোভাবের দরুণ মুসলমান সমাজের পাঠকগণের কাছে সমাদৃত হয়নি। মুসলিম সমাজে ধর্মীয় আচারনিষ্ঠা পালনকারী লোকের সংখ্যায় বেশি। তাদের অধিকাংশই নিজেদের ঐতিহ্য ও কথিত শব্দাবলির প্রতিফলন তাদের সাহিত্যে দেখতে চায়।”

নজরুল খুবই বিরক্ত হন :

“আবার হিন্দু মুসলমানের কথা তুললেন কেন? কোনো জাতি বা ধর্ম নিয়ে কবিতা লিখলে সেটা আর যাই হোক, সাহিত্য হবে না।”

নাসিরউদ্দীন কিন্তু পাল্টা যুক্তি দেন :

“আপনার দেব-দেবীর উপমা দিয়ে লেখা কবিতা ও গানগুলিতে তো কাব্যের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রয়েছে। হিন্দু-মুসলমান উভয়ের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য নিয়েই হবে বাংলা সাহিত্য। এতে হিন্দুদের ন্যায় মুসলমানদেরও চেতনাবোধের উপকরণ থাকতে হবে। মুসলমানদের সমাজচিত্র ও মুখের ভাষা বাদ দিলে বাংলার গণসাহিত্য গড়ে উঠবে না কোনোদিন।”

এরপর নাসিরউদ্দীনের ভাষায়, “গণসাহিত্যের কথা বলার পর নজরুল আমার সাথে একমত হলেন।” কিন্তু সাথে সাথেই জানিয়ে দিলেন,

“দেশের মঙ্গলের জন্য সাহিত্য-সংস্কৃতির মাধ্যমে মুসলমানদের জাগাবার প্রয়োজন একটা আমি স্বীকার করি; কিন্তু ধর্মের নামে, সমাজের নামে আর দেশের নামে যারা ভণ্ডামি করে বেড়াচ্ছে, যারা মানবতার শত্রু—তাদের বিরুদ্ধে আমার কলম ক্ষান্ত হবে না।”

বাঙলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমান নেই, কৈশোরের এই দুঃখের কথা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বহুবার উল্লেখ করেছেন। মধ্যযুগে বাঙালি মুসলমান বাঙলা সাহিত্যে বিপুল অবদান রাখলেও ঊনিশ শতকের আধুনিক সাহিত্যে তার অনুপস্থিতির কাজটা পূরণ করায় নেতৃত্ব দিয়েছিল সওগাত। এই প্রথম আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের বাগান ভরে উঠতে থাকলো এমন সব শব্দ, ভাবনা ও বোধ দিয়ে, বাঙালী সংস্কৃতির যে অর্ধাংশের কথা এর আগে আধুনিক বাঙলা সাহিত্যে আসেনি।

সওগাত ও নাসিরউদ্দীনের মূল্যায়ন তাই এভাবে করা যেতে পারে যে, সে বাঙলা সাহিত্য একটা নতুন যুগের সৃষ্টি করেছে, স্থায়ী অভাব মোচনের একটা কাজ সে করেছে। কিন্তু কোনোভাবেই কলকাতার (যদি সেটা হিন্দু মধ্যবিত্তের বা বাবু সংস্কৃতির প্রাধান্যের প্রতীক হয়ে থাকে) অন্ধ অনুকরণে নিজেকে সীমিত রাখেনি। সওগাতের আর একটি তাৎপর্য হলো বিশেষ করে মুসলমানকে উদ্দিষ্ট করে তার আধুনিকতার প্রয়াস। এ নিয়েও গল্পটাও বলে ফেলা যাক :
সওগাতে ১৮টি ছবি ছাপা হলো, বিশিষ্ট মুসলমানদের। সেই প্রথম। চারদিকে দারুণ হৈ চৈ। হাজী শরীয়াতুল্লাহর নাতি, পূর্ববঙ্গের প্রভাবশালীতম পীর বাদশা মিয়া পত্র লিখলেন, ছবিওয়ালা কাগজ ঘরে রাখলে নামাজ হবে না। নাসিরউদ্দীন জবাবে লিখলেন যদি ইংল্যাণ্ড রাজার ছবিওয়ালা টাকা ঘরে থাকতে পারে তবে সওগাত থাকলে কেন নামাজ হবে না!
জাঁদরেল বাদশা মিয়াও সওগাতের গ্রাহক হলেন।

শুধু সওগাত বা নাসিরউদ্দীন কেন? তুলনামূলকভাবে সম্প্রদায়ের চিন্তায় অনেক কম বিভোর ছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। কলকাতার ‘জাগরণের’ একটা পর্বে পুঁথি সংগ্রহের যে হিড়িক পড়লো, তারই একটা দূর টানে যুবক আবদুল করিম পুঁথি সংগ্রহ করতে করতে আবিষ্কার করে ফেললেন মধ্যযুগ ভরা মুসলমানের সাহিত্যর্কীর্তি, তিনিই প্রথম ঘোষণা করলেন আলাওল বা শাহ্ মুহাম্মদ সগীর অর্বাচীন কালের কবি নন। তাদের নিখুঁত রচনাকাল নির্ধারণ বাঙালি মুসলমানের মাঝে বাংলা ভাষার প্রতি যে অধিকারের বোধটি জাগিয়ে তুলেছিল, তার অজস্র নমুনা সমকালীন সাহিত্যে পাওয়া যাবে। চতুর্দিকের এই আলোড়ন এবং আত্মবিশ্বাসের বোধটি তাদের পিছিয়ে থাকার অনুভূতিটাকে দ্রুতই বিলীন করে, বরং এর পরই এলো সর্বনাশা অথচ প্রায় অনিবার্য প্রতিদ্বন্দ্বিতারই যুগ।

সওগাত প্রেস ও বেগম পত্রিকার অফিস ৪. “কলকাতা থেকে উৎপাটিত বাঙালি মোহাজিররা ঢাকায় এসে যে (ইনফিরিয়র/মিনিয়েচার/ছোট/দ্বিতীয়) কলকাতা স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন তারই অগ্রপথিকদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও তার কন্যা নূরজাহান বেগম। এবং তাদের অনুসারিরাই এখন ঢাকার মেইনস্ট্রিম শিল্প-সংস্কৃতি।
এই শিল্প-সংস্কৃতি ব্যর্থ হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই ব্যর্থতার দায়ভার মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও নূরজাহান বেগমকে পুরো দেয়া ঠিক হবে না। আমাদের সবার উচিত এর ব্যর্থতার দায় ভাগ করে নেয়া।’’
আজকে ‘আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্দশার সূচনা ওইখানে’- ওই প্রায় একশ বছর আগে কলকাতা নগরীতে পিছিয়ে থাকাকে স্থায়ী ধরে নেয়াটাই কি মাহবুব এই উপলদ্ধির কারণ?
বুদ্ধিবৃত্তিকে মাপবার মাপকাঠিও ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়, পূর্বোক্ত নানান কারণেই। কিন্তু বিশ-তিরিশের দশকে বাঙলা ভাষায় মুসলমান মধ্যবিত্তের সাহিত্য চেষ্টার সূচনা চল্লিশের দশকে যে রীতিমত জোয়ার পেলো, পঞ্চাশ আর ষাটের দশকে ফুলে-ফলে পল্লবিত হলো, এই মোহাজেরতত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা কি করা সম্ভব? ইতিহাস রচনা-অনুবাদের প্রনোদনা সহ সংস্কৃতির আরও বহু ক্ষেত্রে ও এটা সত্য। ষাটে কলকাতা একবারই ফিরে এসেছিল, কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্র বাঙালি মুসলমানের বাঙালি পরিচয়টাকে মুছে ফেলবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কলকাতার অধস্তন সে আর কখনোই হয়নি। অনুবর্তিতার যে ঝোঁক মুক্তিযুদ্ধের পর কিছুটা প্রবল হলো, তার প্রধান কারণ বাংলাদেশের সরকারগুলো কখনোই একে ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতিকে কখনোই প্রধান দায়িত্ব হিসেবে, রাষ্ট্রীয় প্রকল্প হিসেবে নেয়নি, ফলাফল হলো জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতেই এর বিকাশ ঘটেছে। বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা স্বীকৃতি চেয়েছেন বা সমর্থন খুঁজেছেন কলকাতার প্রতিষ্ঠার শক্তির কাছে। ইতিহাস সম্ভবত ভবিষ্যতে পূর্ব বাঙলাকেই বাঙলা ভাষার ভবিষ্যত কেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করবে, সেটা স্বাধীন রাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া অর্থনৈতিক রূপান্তরের অনুষঙ্গ হিসেবেই। এই রূপান্তরটাই আরও দ্রুত ঘটতে পারতো রাষ্ট্র মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার দ্রুত বিস্তার ঘটলে, সকল শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার বন্দোবস্ত হলে। আজকে আলাওল বলি আর রবীন্দ্রনাথ বলি, অথবা নজরুল, কিংবা সমকালের কোনও কবি— পড়ছেটা কে?


এইভাবে, আজকে যদি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিতে কোনও দুর্দশা সমাগত হয়ে থাকে, তার মূল কারণ আমাদের আশু বর্তমানের ভেতরে খোঁজাই হয়তো বেশি কার্যকর হবে। নিশ্চয়ই, কলকাতার ঊনিশ শতকের জাগরণের পশ্চাৎটানাগুলো নিয়মিত বিরতিতে দেখা দেয়, কিন্তু তা দেখা দিতে পারে কেবল আমাদের নিজেদের দুর্বলতাতেই। রাষ্ট্র ও সমাজের তেমন মৌলিক রূপান্তর আমরা ঘটাতে পারিনি বলেই হয়তো এগুলো ফিরে ফিরে আসে। এবং এ কারণেই আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আমাদের বর্তমান দুর্দশার প্রধান কারণ স্বাধীনতা পরবর্তীকালের জাতীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি, শিক্ষার-সংস্কৃতির কোনও মৌলিক রূপান্তরের অভাব। একটা সমাজ, সে যদি ভেতর থেকে তাড়িত হয় কোনও মতাদর্শে, সেটা প্রগতিশীল তেভাগা হোক, হোক সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্ব কিংবা পাকিস্তান রাষ্ট্রে আত্ম আবিষ্কারের প্রয়াস, তার শিল্প-সাহিত্যে তার ছাপ পড়বে, বুদ্ধিবৃত্তিকে তা আলোড়িত করবে এবং তার পক্ষে-বিপক্ষে চিন্তাশীলতার জোয়ার আনবেই। হয়তো, আমাদের দুর্দশার আজকের কারণ কয়েক দশক জুড়ে জাতির বড় অংশকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আলোড়িত করার মত, স্বপ্ন দেখাবার মত কোনও জাতীয় প্রেরণার অনুপস্থিতি।

হয়তো সওগাত এবং বিকাশমান মুসলমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য হয়তো বিকাশের এমন কোনও সড়ক ছিল, যেটা হবে কলকাতার প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। কিন্তু আমরা নিঃসংশয়ে বলতে পারি, সেই পথের খোঁজটা তারা পাননি। এখনো তেমন কেউ গ্রহণযোগ্য তেমন কোনও সম্পূর্ণ নতুন পথের কথা পস্ট করে এখনো কেউ দেখিয়ে দিতে পারেননি, যার জন্য পূর্বসূরীদের আমরা অভিযুক্ত করতে পারি। তাদের সামনে অল্প কিছু বিকল্প ছিল, কমুনিস্ট পার্টিতে যাওয়া, কংগ্রেসী হওয়া, দেওবন্দী হওয়া, ওয়াহাবী হওয়া, মুসলিম লীগার হওয়া, উদারতাবাদী অথচ সম্প্রদায় কেন্দ্রিক হওয়া। এবং মোটামুটি এই রাস্তাগুলোতেই তারা ঘুরেছেন, ফিরেছেন, এরই সমন্বয় ও বিন্যাসে নিজেদের সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি ভাবনার সৌধটি গড়েছেন। হয়তো তেমন প্রতিভাবান কারও সাক্ষাত পেলে শুধু কলকাতা কেন, মানব ইতিহাসের বিকাশের ধারায় বাইরে একদম নতুন কিছু, একদম বাইরের কিছুও হলেও হতে পারতো। এমনিতে আমাদের সাধারণ জ্ঞান এই বলে যে, একটা সমাজ যে সঙ্কটে পতিত হয়, মানুষ তারই পরিত্রাণ খুঁজতে পারে। মুজফফর আহমদ, নজরুল, নাসিরউদ্দীন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, আকরম খাঁ, গোলাম মোস্তফা কিংবা জসীমউদ্দীনরা তাই নিয়ে তাড়িত হয়েছেন, যেগুলো ছিল সময়ের সঙ্কট। সংস্কৃতির যদি কোনও অচলায়তনে আমরা আজ পড়ে থাকি, সেটার কারণও মূলত আমাদের আজকের চারপাশেই খুঁজতে হবে। সমাধানও। নাসিরউদ্দীন কিংবা নূরজাহান বেগমদের দায়ভার এতে অতি সামান্যই, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের দুর্গতির দায় তাই আমাদের নিজেদের ব্যর্থতার কাঁধেই নিতে হবে, তা অতিক্রমেরও চেষ্টা করতে হবে।

মাহবুব মোর্শেদের আলোচ্য পর্যালোচনাটি এই:
গ্রামের বাড়িতে ৮৭/৮৮ সালের দিকে আমি বেগম পত্রিকা দেখছিলাম। পরে আর দেখি নাই। সাওগাত পত্রিকার ছবিই শুধু দেখছি, বাস্তবে কখনো দেখি নাই। বেগম পত্রিকা হাতে ধরে দেখছি। দু'একটা লেখা পড়েও থাকতে পারি। বাংলাদেশে নারীদের সাহিত্যের যে দুরবস্থা তার সূচনা বেগমেই ঘটেছিল। পুরুষের সাহিত্যের দুরবস্থার সূচনাও হয়তো সাওগাতে ঘটেছিল।
কলকাতা থেকে ঢাকায় আসা বাংলাভাষী মোহাজির মুসলমানরা আদতে কলকাতার উনিশ শতকের রেনেসাঁ মারফত দূর থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন। দেশভাগের আগে ও পরে কলকাতার নবজাগরণ দিয়ে প্রভাবিত হলেও তারা ছিলেন সর্বদাই পেছনের সারিতে। জাগরণের সঙ্গে সম্পর্ক কী, লড়াইটা কোথায়, এর কী নেওয়া যায়, কী নেওয়া যায় না- তা ঠিক হওয়ার আগেই পেছনের সারির এই লোকগুলো ঢাকায় চলে এলেন। আধা গ্রাম আধা শহর ঢাকায় এই মানুষগুলোই তখন প্রথম সারিতে। তারা শুরু থেকে ঢাকার শিল্প-সংস্কৃতি-বুদ্ধিবৃত্তির পরিসরকে তাদের স্বপ্নের কলকাতার আদলে সাজানোর উদ্যোগ নিলেন।
আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের দুগর্তির সূচনা ওইখানেই।
ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া থেকে না এসে চিন্তা-দর্শন-সাহিত্য-শিল্প কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেনে করে ঢাকায় পৌঁছেছিল।
কলকাতা থেকে উৎপাটিত বাঙালি মোহাজিররা ঢাকায় এসে যে (ইনফিরিয়র/মিনিয়েচার/ছোট/দ্বিতীয়) কলকাতা স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন তারই অগ্রপথিকদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও তার কন্যা নূরজাহান বেগম। এবং তাদের অনুসারিরাই এখন ঢাকার মেইনস্ট্রিম শিল্প-সংস্কৃতি।
এই শিল্প-সংস্কৃতি ব্যর্থ হবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই ব্যর্থতার দায়ভার মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও নূরজাহান বেগমকে পুরো দেয়া ঠিক হবে না। আমাদের সবার উচিত এর ব্যর্থতার দায় ভাগ করে নেয়া।

 

ফিরোজ আহমেদ, কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!