X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমীর রায়চৌধুরীর গল্প কবিতা

.
২২ জুন ২০১৬, ১২:৩৪আপডেট : ২২ জুন ২০১৬, ১৩:১৯

সমীর রায়চৌধুরীর গল্প কবিতা হাংরি আন্দোলনের পুরোধা সমীর রায়চৌধুরী আজ ২২ জুন সকাল সাতটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন। কলেজ জীবনে কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, ১৯৬১ সালের নভেম্বরে তিনি ছোট ভাই মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও দেবী রায়-এর সঙ্গে হাংরি আন্দোলন শুরু করেন। হাংরি আন্দোলনের শতাধিক বুলেটিনের অধিকাংশ তাঁরই খরচে প্রকাশিত হয়েছিল। এই আন্দোলনের কারণে ১৯৬৪ সালে তিনি গ্রেফতার হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তরুণদের বিপথগামী করছেন। তাঁর ছোটগল্পের বই: সিগারেটের তিরোভাব ও অন্যান্য, ছাতা হারানোর বর্ষাকালীন দুঃখ, পোস্টমডার্ন গল্পগুচ্ছ, খুল যা সিমসিম। কাব্যগ্রন্থ: ঝর্নার পাশে শুয়ে আছি, আমার ভিয়েতনাম, জানোয়ার, মাংসের কস্তুরীকল্প, পোস্টমডার্ন কবিতাগুচ্ছ, বিদুরের খড়ম, নির্বাচিত কবিতা। প্রবন্ধের বই: কবিতার আলো অন্ধকার, পোস্টমডার্ন কবিতা বিচার, পোস্টমডার্ন বিড়ালের সন্ধানে, উত্তরাধুনিক প্রবন্ধ সংগ্রহ।

এই বিতর্কিত কবি, ছোট-গল্পকার ও ভাবুক জন্মগ্রহণ করেন ১ নভেম্বর, ১৯৩৩। শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ১টি গল্প ও ৫টি কবিতা প্রকাশ করা হলো।  

 



মানুষবাজার

রিক্সা করে পাটনা সচিবালয়ে যাচ্ছি–। স্টেট ব্যাঙ্কের সচিবালয় শাখা থেকে পেনশন তুলি। যখন যেখানে থাকি এটিএম কার্ড সঙ্গে থাকে, তবে প্রত্যেক বছর নভেম্বর মাসে বেঁচে থাকার ‘এই তো আছি’ জানাতে আসি। কিন্তু আসার আসল উদ্দেশ্য ছেলে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কটা দিন কাটিয়ে যাওয়া আর পুরোনো বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা। তবে মাঝে-মাঝে বহুকালের ভুলে-যাওয়া সম্পর্কের হঠাৎ রিনিউয়াল ঘটে। রিক্সা চলেছে, কাজকর্ম মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছি, যাতে মিস না করি। হঠাৎ উল্টো দিক থেকে আসা নীল ইন্ডিকা গাড়ি পথ আগলে দাঁড়িয়ে পড়েছে, জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে, হ্যাঁ, আমাকেই—
…এই…এই…সুকুমার…আবে…আবে…
ইদানিং হয়তো বয়সের জন্য আমার ভাবা-মন ইচ্ছে মতো বা রিফ্লেক্সে সাড়া দেয় না, একটু সময় লাগে। এখন প্রথম অভ্যাস না চেনা, না-করনের ডাঠা আর বসত। পেছোতে পেছোতে স্কুলজীবনে।
আরে শ্রীবাস্তব !
রিক্সার ভাড়া দিয়ে খুচরো ফেরত নিতে ভুলে যাই। নেমে পড়ি। স্কুল জীবনের বন্ধু। পড়াশোনায় ভালো ছিল। সারাক্ষণ স্বপ্ন দেখত নতুন কিছু করবে। শ্রীবাস্তব আমারই বয়সী, অথচ এখনও স্বপ্নময় মুখ, বেশ হাট্টাকাট্টা। স্কুলের শেষ ক্লাস পেরিয়ে হঠাৎ একদিন রওনা দিল বম্বেতে। তখনও মুম্বাই হয়নি। ওর এক দূর সম্পর্কের কাকা থাকেন ভেরসোভায়। তখনও সমুদ্রের ধারে মেছোদের গ্রাম, একটু একটু শহরের অংশ হয়ে উঠছে। আজকের ভেরসোভার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। শ্রীবাস্তব হাফপ্যান্ট পরেই পাটনা থেকে ভেরসোভা। কী যে করছে ,বন্ধুবান্ধবরা কেউ জানতে পারিনি বহুকাল। কেউ কেউ বলত চলতা-পুরজা। শ্রীবাস্তবকে এভাবেই বারবার দেখতে পেয়েছি। দেখেছি, বন্ধুবান্ধবের কথা ঠিক নয়। তার ভাবনা-চিন্তার ফসল বেশ ঈর্ষাজনক, অভিনবত্ব তার সহজ দখলে।
কবে পাটনা এসেছিস ?
—আরে স্থায়ীভাবে মুম্বাই ছেড়ে বেশ কয়েক বছর আগে পাটনা চলে এসেছি। মুম্বাইতে ফিল্মে এক্সট্রা মানুষজন সাপ্লাইয়ের কাজ করছি। তবে অন্য এলাকায়। ইদানিং মানুষ সাপ্লাই করি মিছিলের জন্য… আনুষঙ্গিক জিনিস, পতাকা…ফেসটুন…এসব রাখি...
কোন রাজনৈতিক দলের মিছিল?
—প্রায় সব দলকেই জোগান দিই…যার যত লাগে…হঠাৎ প্রতিবাদে এদের মানুষ জোটাতে বেশ অসুবিধে হয়…
একই লোক সবার মিছিলে দিস, নাকি আলাদা ব্যবস্থা আছে?
…একই লোক বলতে পারিস…বেকার মানুষের তো অভাব নেই…আর কিছু লিঙ্কম্যান আছে…তাদের মাধ্যমেও মানুষ জোটাই…
মতাদর্শের কী হয়?
–সে আবার কি জিনিস
জেডিইউ…বিজেপি…আরজেডি…কংগ্রেস…কত সব দল আছে…
—মতাদর্শ নেতাদের ঝক্কি…দ্যাখ সব হিন্দু যেমন হিন্দুত্ববাদী নয়…সব বামপন্থী যেমন একরকম নয়…সব কংগ্রেসি একরকম নয়…সাধারণ মানুষের কী যায় আসে…তার সমস্যা বেঁচে থাকা…
আর নেতাদের সমস্যা ক্ষমতাদখল…তাই কী…
—চল অফিস এসে গেছে
শ্রীবাস্তবের গ্রাউন্ডফ্লোরে অফিস…মাটির তলায়…মালপত্তর রাখতে গোডাউন…বেশ সাজানো গোছানো…বেশ কয়েকজন কর্মচারী…আলমারি, সাজানো ফাইল…রেজিস্টার
—এই যে লিংকম্যানদের রেজিস্টার…সকলের ঠিকানা…ফোন নাম্বার
সব দল সব সময়েই কী মানুষ জোটানোর জন্য তোর কাছে আসে?
—কেউ কেউ জিনিসপত্তরের জন্য আসে…আবার যে ক্ষমতায় থাকে তাদের সবসময় মানুষ সাপ্লাই করতে হয় না। ক্ষমতার আসেপাশে মানুষ ঘুরঘুর করে…
কলকাতায় আছি…পাড়ায় অবশ্য দেখছি…এক ভাই তৃণমূলে আর এক ভাই সিপিএমে– আবার পাশের পাড়ায় দেখছি কিছু মানুষ একদল থেকে আরেক দলে ঢলে গেল…ক্ষমতায় যে দল, সবাই সেদিকে ভিড়ে যাচ্ছে…কাগজেও পড়ি…টিভি নিউজেও দেখছি…তবে রাজনীতি বা রাজনীতির ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই
—নেতাদের মধ্যে কিন্তু এখনও কিছু-কিছু সৎ, আদর্শবান মানুষ আছে…তবে সংখ্যায় কম…যাকগে নিজের কথা বল…মুম্বাইতে তুই যখন চার্চগেটের কাছে পিজি হস্টেলে ছিলিস…সেই দিনগুলোর কথা মনে আছে…
অত কাছ থেকে সেই প্রথম শুটিং দেখি…বোধহয় মালা সিনহার একটা ফিল্ম…টুকিটাকি ভিড়ভাড়…নাচাগানা…ডবলবডি…ডামি…এসব লোকজন তুই দিতিস
—ফিল্ম লাইনের কমোডিটি বলতে পারিস
তোর কাজ-কারবার নিরালি…তুলনা হয় না…তবে পাড়ায় দেখেছি কিছু-কিছু মিস্ত্রি বাড়ি তৈরির লাইনে…শহরে কাজকর্মে লোকের জোগান দেয়…আয়া সেন্টার…গাড়িচালকের সেন্টার…বাঁশদ্রৌণীতে আছে…ফোন করলেই আয়া বা গাড়িচালক পাওয়া যায়…আজকাল অনেকের গাড়ি আছে তবে মাস মাইনের লোক রাখে না…প্রয়োজনমতো সেন্টার থেকে লোক নেয়
—সে তো মানুষবাজারের অনেক লাইন…তুই অত-শত জানিস না
তবে তোর লাইন দুটোতেই একটা এলিমেন্ট কমন…
—হ্যাঁ, অভিনয়
ব্যাপারটা আরো মডার্ন
—তোদের লাইনে যেমন একজন লেখক আর টেক্সটের বক্তব্য এক নাও হতে পারে
আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে অনেকেকেই দেখেছি যে, লোকটা ব্যক্তিজীবনে যা আর তার লেখায় যা, তা এক নয়
—তোদের ফণীশ্বরনাথ ‘রেণু’ তো সোস্যালিস্ট ছিলেন, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করার সময়ে বলেননি যে গ্রামে তাঁর আরেক পরিবার আছে…সত্য গোপন করেছিলেন…
সে তো ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার রেণু সংখ্যায় লতিকাদির লেখায় আছে…তিনি নিজেই সেসব কথা লিখেছিলেন…তাঁর কেনা পাটনার বাড়িতে তো এখন প্রথম স্ত্রীর ছেলে থাকেন…যিনি বিজেপির এমএলএ…এগুলো মডার্নিটির ব্যাধি বলতে পারিস…তা না, প্রায়ই তো দেখি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দলবদল
—আজকাল অবশ্য আইন বদলেছে…তাই কম ঘটছে…তবে মানুষবাজারের ব্যাপার, ঐ যে বললি মডার্নিটির জন্যে মানুষের মধ্যে অভিনয়ের এলিমেন্ট…
শুধু ঐ কথায় সবটা বলা হয় না রে…দ্যাখ জন্মসূত্রে আর বহুকালের বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ জেনেছে যে ভাষার আড়ালে লুকোনো যায় নিজেকে…
—হ্যাঁ, জীবজন্তু তো যে যার মতো লুকোয়…নানা…গর্তে…ছদ্মবেশে…প্রকৃতির নানা ধরনের আড়ালে
সে আড়াল বাহ্যিক হতে পারে বা স্বভাবজ ভেতরের ব্যাপার…মানি স্বজ্ঞাত হতে পারে তবে মানুষের মেইন আড়াল তার ভাষা, তার নিজস্ব যুক্তিপদ্ধতি
—সে তো ভালোভাবেই জানি…সে দিক থেকে ফিল্মের বা প্রকৃত অভিনেতারা সন্মানীয়…তাই নয় কি?
হ্যাঁ, তার অবস্থান স্বচ্ছ..আর এতে তোর চলে যায়? মুম্বাই থেকে চলে এলি কেন?
—মুম্বাইতে আমার একটা ফ্ল্যাট আছে…ছেলে ওখানে চাকরি করে….মেয়ের বিয়ে বিহারেই দিয়েছি।
এখানে রাজনীতিতে জাতপাত তো একটা ফ্যাক্টার…
—তা তুইও তো জানিস…তবে কোলকাতিয়া দলগুলোর মতো শাসকদল এখানে কথায় কথায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে না…নীতিশকুমার কাজ করছে…লোকে মানছে…
ক্ষমতা যাদের হাতে তাদের তুই বিশ্বাস করিস?
—ক্ষমতা দূর্নীতির মূল…তবে কমবেশির তফাত আছে…নীতিশ সাফসুতরা…তা তার বিরোধীরাও মানে…
মানুষবাজারে মানুষকে তোর কমোডিটি মনে হয়…বাজারে আর সব প্রডাক্টের মতো…?
—হ্যাঁ…কাঁচের জিনিসের বাজারের মতো।
শ্রীবাস্তবের অফিসে তার বসার চেয়ারের পেছনের দেওয়ালে ওমকারের ছবি…ওম থেকে উঠে আসছে আগুনের শিখা….বিহারে বেশ কমন…ভ্রামরী আসন বহুকাল আগেই বিহারের মানুষ জানে…দ্বারভাঙ্গাতে থাকার সময়েও দেখেছি…ধ্বনি আর আগুনের সম্পর্ক…মানুষের ভেতরে তাপ সঞ্চার করে…উম দেয়…
তুই কি নিয়মিত যোগব্যায়াম করিস …? ওটা আমাদের পরিবারে বহুকাল থেকে চলে আসছে…তুই করিস কি…?
—হ্যাঁ, একটা আত্মবিশ্বাস দেয়।
মেয়েমানুষ আর নাবালক পাচারকারীরাও মানুষবাজারের অবৈধ কমোডিটি, তবে তোর মানুষজনকে বৈধ কমোডিটি বলা যায়…
—মানুষবাজারের এলাকা আর সব বাজারের থেকে আলাদা নয়…
সেখানে কি বাজারদরের ওঠানামার নিয়ম কাজ করে…?
—ফিল্মলাইনে সে চান্স পাওয়া যেত, তবে মিছিল ক্ষমতাবাজ তুখোড়দের ব্যাপার, বেশি ঘাঁটানো বিপজ্জনক…এখন আমার আর কোনো দায়দায়িত্ব নেই…আমি এবং আমার স্ত্রী, আর মা কখনও আমার কাছে কখনও ছোটোভাইয়ের কাছে গিয়ে থাকেন…
যোগব্যায়ামের ক্যাম্প করেও আজকাল মানুষবাজার থেকে টাকা তোলা হচ্ছে…
—তবে কারো মানুষবাজার বাড়তে থাকলে ক্ষমতার লোভ বাড়তে পারে…সাবধানে না ব্যবহার করলে হাত পুড়তে পারে…
আমার ইচ্ছে করছে প্রত্যেক দলের মিছিলে যোগ দিই…ব্যাপারটা নিজে ফিল করি…
—তা করতেই পারিস…তবে তোকে নিয়ে মুশকিল…তোর মুখ ভিড়ের মুখের মতো নয়…শিল্পীদের এই একটা মুশকিল…তার মুখ…দৃষ্টি…ক্রমশ ভিড় থেকে আলাদা হয়ে যায়…সিনেমায় অভিনয়ের জন্য দরকার পড়ে মেকআপ ম্যানের…যে তার ছিরিছাঁদ বদলে দেয়, আর সে নিজে চলনে-বলনে পার্ধক্য আনে পরিচালকের সাজেশান জেনে নিয়ে…লুকোনোর জায়গা এগুলো।
তাহলে যত বহুত্ব নিয়ে সে খেলে তত তার একক পরিচিতির বাড়বাড়ন্ত হয়…
—অতশত বুঝি না, মানুষবাজারের চেয়ে আর ভালো বাজার নেই, সব চেয়ে কম লগ্নীর ব্যবসা।
আর দ্যাখ, বাজার কাউকে ছাড়ে না ।


 

কবিতা

 

ষাট বছরের তেরছা ওম

 

ষাট বছরের জমাখরচের হিসেব রেখে
কবিতার শব্দ গা ঢাকা দিয়েছে সন্ত্রাসবাদী শিবিরে
স্রোত যেতে চায় সমুদ্রের দিকে মাছেরা যায় স্রোতের বিরুদ্ধে
মতান্তর নিয়ে পরিযায়ী স্বভাব আসে সীমান্ত পেরিয়ে
পকেটে জালনোট নিয়ে কমরেড ফুচকা খায় শহিদমিনারে
নীল পাগড়ির আড়ালে এলোচুলের বেহিসাব গোপন রাখে জনশীর্ষ
নকশালেরা করিডর গড়ে চলেছে সন্তর্পণে
সাদা পাউডার বেচছে বাড়ির কাজের মেয়ের মেজছেলেটা
ব্রেকিং নিউজে উঠে আসছে বমধামাকা আতঙ্কবাদী হামলা
নিম্নচাপে উড়ে আসা মেঘ জানে জল তার চক্রে ফিরে যাবে
উচ্চতার দখল মেনে সিয়াচিনের নির্জন বরফের বুকে তেরঙ্গা উড়ছে
বিপন্নতার অনুপাতে কবিতার কাগজের সংখ্যা বাড়ছে—
কবি ভাবছেন রবিশষ্য ভাষান্তরে সমধ্বনিমনস্কতা মেনে কর্ন
যে কী তবে নিখোঁজ স্বজনের খোঁজ সীমান্ত পেরিয়ে
সূর্যেরব ঔরসে যেভাবে মহাকাব্যে দেখা দেয় কুন্তীপুত্র কর্ণ
জ্যামিতির শর্ত নিয়ে সময়-নিরপেক্ষ শব্দের অন্তরে…
জমিজিরাত।

 

নিত্যযাত্রী

 

যেভাবে একফালি মেঘের জলদেশে কিছুকাল থেকে আসে
ঝর্ণার আপেলবাগান পেরিয়ে যাওয়া
গা-বাঁচানো যানজট বা সাজানো পথ অবরোধের সঙ্গে পেরোতে চাওয়া
সময়ের সম্পর্কের কথা আমরা জানি;
কেননা শেষাবধি ঈশ্বরও তো দুরকমের, হয় সে মানুষের মতো দেখতে
নয়তো কোনো কিছুরই মতো দেখতে নয়, অর্থাৎ যাকে বলা হয় নিরাকার–
সাবঅ্যাটমিক লেভেলে বাড়তে থাকে ফাঁক দিয়ে গলে যাওয়ার মনোভাব
ন’টা পঁচিশের যানজটে আটকে যায় রিঙ্কুদের স্কুলে যাঔবার সময়
মিস্টার সান্যালের অফিসটাইম ভবতোষবাবুর কার্যক্রম
পিছিয়ে যায় পথের ধারের গাছটিতে ফুল আসার সময়
আর বেশ কিছু সময়মনস্ক কীটপতঙ্গের বিলিব্যবস্থা,
যেভাবে ফল ঠোকরানো পাখিদের তোড়জোড়
স্থিরভুলুনি প্রজাপতিদের উড়ে যাওয়ার দিকে লক্ষ রাখে–
গণিতেও একই সঙ্গে কথা ওঠে সসীম অসীম আর অপরিমেয় সূক্ষ্মের
গাড়িঘোড়া শব্দটি থেকে ঘোড়া বেরিয়ে চলে যায় নিখিলের আস্তাবলে
তবু জানা হয়ে ওঠে না অনিত্যযাত্রী নারদের বাহন কেন ঢেঁকি শীতলার গাধা
যান চলাচল ইশারাময় করে তোলে ট্র্যাফিকসংকেত পেছনে খালাসি
পথঅবরোধের সঙ্গে দূরদর্শীরা মিলিয়ে দেন পারানির কড়ি—
মর্ত্যধামে মার খাচ্ছে সুধীরের অটোরিক্সার খেপ তার কামাবার সময়
তবু সম্পর্কের জটিলাতার ঈষৎ হদিস দিতে
পেছনে লেখা আছে ‘বৌদির আশীর্বাদ’

 

টেক্কা বিষয়ক জটিলতা


যাঁরা নিয়মিত তাস খেলেন বা তাসখেলার মারপ্যাঁচ দেখে আসছেন
তাঁরা লক্ষ করেছেন ব্রিজ রামি ব্রে তিনতাস
বিন্তি ফিস টোয়েন্টিনাইন তাসের অনেক ভূবন
কখনো বিশ্বজয়ী তুরুপের তাস
কখনো গোলামের চেয়ে খাটো আবার দহলার চেয়ে মনমর্জিতে বেশি
কখনো হরতনের টেক্কা চিড়িতনের টেক্কার চেয়ে কেউকেটা
কখনো কাগাবগা চুনোপুঁটি
যত খেলা বদল হয় পালটায় টেক্কার কদর আর তার প্রাণ প্রাচুর্য
যে কোনো রাউন্ড খেলার শেষে শুরু হয়ে যেতে পারে
রুইতনের টেক্কা নিয়ে ভয়ংকর বিতর্ক
একটা অবস্থানকে বলা যেতে পারে ইসকাপনের টেক্কা ফেলার যথাসময়
একটা খোপকে সনাক্ত করা যায় হরতনের টেক্কা পাশ করে যাওয়ার অবসর
মনে হতে পারে পিট পাওয়া নিয়ে শুরু হয়ে গেছে
হাইজেনবার্গ আর শ্রোয়েডিংগারের মধ্যে জগৎ বিচারের মৌল মতান্তর
আমরা জেনে গেছি দুরকমের উঠকিস্তি প্রত্যেক রাউন্ডে আসংখ্য সম্ভাবনা
কখনো মানুষ উঠবঢ সিঁড়ি থেকে যাবে স্থির
কখনো সিঁড়ি ক্রমাগত উঠে যাবে মানুষ নড়বে না
তবে ক্রমশ এভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় চারটে টেক্কার
কোনো সুনিশ্চিত হাতযশ নেই
আর তাসখেলা কোনো সরলতা পরখ করার আয়োজন নয়
কেননা শেষাবধি সংশয় থেকে যেতে পারে
চিড়িতনের পাঁচ পিটের পর হরতনের টেক্কা বের করা ঠিক ছিল কিনা–

 

কুকুরের গল্প

 

একটি টিনের চাদর ঘষটানি থেকে উঠে আসছে একটি কুকুরের আর্ত চিৎকার
আর্ত শব্দের মধ্যে থেকে যাচ্ছে একটি বিপন্ন রেফ
একটি সংঘর্ষের পরিমিত ধ্বনিবাহিকতা
আততায়ী বা অমসৃণ দ্বিতীয়পক্ষের উপস্হিতি
যেভাবে ধাতু সম্পর্কে নিহিত রয়েছে গোলাপের বর্ণসংকেত
কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বেন চিদানন্দ সোম
তিনি যেহেতু সারা জীবন কুকুর পুষেছেন
তাঁর বিশ্বচরাচরের গল্পে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায় এক মহাজাগতিক অলৌকিক ছিটকুকুর
সে গল্প চিদানন্দকে পোষ মানায়—
আর্ত শব্দটির প্রতি সমর্থন তুলে নেওয়ার মুহূর্তে
টিনের চাদরের ঘযটানির সংবাদ থেমে যেতে চায়—

 

ছন্দ

 

প্রত্যেক বাক্যের মধ্যে কিছু শব্দ পাশ ফিরে থাকে
প্রত্যেক শব্দের মধ্যে কিছু অক্ষর থেকে যায় স্বল্প উচ্চারণে
কিছু উপসর্গ প্রত্যেক ধাতুর সম্পর্কে থেকে যায় অর্থবিহীন
বুঝ আর অবুঝের মধ্যে বোঝাপড়া রাখে কার্যসাধিকা
নীলুদের সংসারে ছোটমাসি মুখ বুজে কাজ করে যায়—
জটিলতার কাছে সোপর্দ রয়েছে
গতির অরৈখিক নকশা
অংশ-প্রীতি, ঘুম
যেভাবে বিশৃঙ্খলা ছন্দের মুখোশ ।




সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়