X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হক ভাই বইমেলায় আমাদের দেখা হবে

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
২৬ জুন ২০১৬, ১৪:২৭আপডেট : ২৬ জুন ২০১৬, ১৪:৩১

হক ভাই বইমেলায় আমাদের দেখা হবে আমি রাহমান ভাইকে বিষয়টা জানালাম। তিনি সরল শিশুর মতো হাসলেন। আমি বার্তা বাহকের মতো হক ভাইকে ফোন করে জানালাম, রাহমান ভাই রাজী। তবে আমি যাচ্ছি না। আপনি গাড়ি পাঠিয়ে দিন। তিনি যাবেন। আপনাদের বন্ধুতের জয় হোক

আমার একটা ‘পাগলা’ ফাইল আছে, ঢাকায়। একমাত্র রিটন জানে, সেই ফাইলে কী কী বোমা আছে! আমাদের লেখকদের আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড, মুখোশ নিয়ে তাদের কাছে লেখা আমার কিছু চিঠি। সেখানে সৈয়দ শামসুল হকও আছেন।
*
কিন্তু হক ভাই ব্যক্তি হিসেবে নয়; একজন উঁচু মাপের লেখক হিসেবে আমি তাঁর অনুরাগী মুগ্ধ পাঠক। তিনি যেখানে হাত দেন, সেখানেই যেন সোনা ফলে! কি কবিতায়, কলামে, গল্পে, গানে, নাটকে, উপন্যাসে। তাই তাঁকে একবাক্যে বলা হয়, সব্যসাচী। এই ‘সব্যসাচী’ শব্দটা একমাত্র সৈয়দ হকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তাঁর সাথে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। কখনো মধুর, কখনো শীতল, কখনো নাতিশীতোষ্ণ। তবে তিনি যে আমাকে বিশেষভাবে পছন্দ করেন, তা টের পাই। তার একটি দৃষ্টান্ত দেই-
স্বৈরাচার এরশাদ পতনের পর জাতীয় কবিতা পরিষদ বন্ধ করার পক্ষে(আরো কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে) রাহমান ভাই(কবি শামসুর রাহমান) বিবৃতি দেন আর হক ভাই তার বিপক্ষে অবস্থান নেন। মোহন রায়হান ছিলেন হক ভাইয়ের ডান হাত। তখন সংবাদে তাঁর ‘হৃৎ কলমের টানে’ মোহনের রোদ-ঝলসানো প্রতিবাদী কবিতা নিয়ে কলামও লিখেন।
জাতীয় কবিতা পরিষদ নিয়ে রাহমান-হকের বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরে, দূরত্ব বাড়ে। তখন মনের দুঃখে রাহমান ভাই দৈনিক সংবাদে লিখলেন যে, আমার কিছু কিছু বন্ধু জীবিত। কিন্তু তাঁরা আমার হৃদয়ে মৃত, আবার যাঁরা চির বিদায় নিয়ে চলে গেছেন; তাঁরা এখনো আমার স্মৃতিতে জীবন্ত জ্বলজ্বল করছে। তারপর অনেক দিন এই দুই বন্ধুর মধ্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
রাহমান ভাইয়ের সাথে আমার মধুর সম্পর্কের কথা জানতেন। কোনো এক ২৬ ডিসেম্বরে হক ভাইয়ের জন্মদিনের আগের দিন আমাকে ফোন করে বললেন, ‘দুলাল, তুমি একটা উপকার করো। কাল তুমি রাহমানকে ম্যানেজ করে তাঁকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসো। জন্মদিনে আড্ডা দেবো।’
আমি রাহমান ভাইকে বিষয়টা জানালাম। তিনি সরল শিশুর মতো হাসলেন। আমি বার্তা বাহকের মতো হক ভাইকে ফোন করে জানালাম, রাহমান ভাই রাজী। তবে আমি যাচ্ছি না। আপনি গাড়ি পাঠিয়ে দিন। তিনি যাবেন। আপনাদের বন্ধুতের জয় হোক।
তাঁদের বন্ধুত্বে জোড়া লাগানো সামান্য যোগসূত্র ছিলাম। সেই ভূমিকার কারণেই হোক বা স্নেহের কারণেই হোক, দু’এক বছর পর ঢাকায় গেলে হক ভাইয়ের আন্তরিকতা টের পাই। আমার লেখালেখির খোঁজ খবর নেন। ২০০৯ বইমেলায় আমার বই বের হলো- ‘কানাডায় যাবেন, কেনো যাবেন’। বইটি নিয়ে হঠাৎ করে বাংলা একাডেমীর বটমূলে কবি নাসির আহমেদ অন্য একজনের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনে আমাকে ডেকে বসলেন এবং হক ভাইও কাছে টেনে নিয়ে বইটি তুলে ধরে আমার সম্পর্কে একটু বাড়িয়ে বললেন। মুগ্ধ হলাম। আবার ২০১৫ সালের বইমেলায় কাছে ডেকে নিয়ে ‘কানাডার কাশিমপুরে খুনি চৌধুরী’ বইটি খুব আগ্রহ নিয়ে দেখলেন। খুঁটিনাটি জানতে চাইলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার এই খুনি সম্পর্কে!
*
হাসান ফেরদৌস লিখেছেন, ৮১ বছরের যুবক, পরনে ঝলসে যাওয়া জিনস, পাটভাঙা রঙিন জামা, সে জামার নিচে সুতোর মতো সোনার চেইন। হাজার জনের মধ্যেও এমন একজন মানুষকে চিনে নেওয়া যায়।... ‘সব্যসাচী লেখক’ ৬০ বছরের অধিক সাহিত্যজীবনে বারবার নিজেকে আবিষ্কার করেছেন, ভেঙেছেন-গড়েছেনএই দুই লাইনেই তিনি তাঁর ‘জীবন ও সাহিত্য’ তুলে ধরেছেন চমৎকার ভাবে। আগেই বলেছি, তিনি যেখানে হাত দেন, সেখানেই যেন সোনা ফলে! কারণ, তাঁর হাতের কলমটা যেনো সোনারূপার জাদুর কাঠি!
একটি বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি না যে, তিনি এক অসাধারণ গীতিকার। তাঁর প্রতিটি গানই জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়ে আছে। হক ভাই বলেন, আমি তো গীতিকার নই। নানা কারণে মাঝে মধ্যে লিখতে হয়েছে। এ সম্পর্কে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “আমার লেখা প্রথম গান ছিল সুতরাং ছবির ‘তুমি আসবে বলে, কাছে ডাকবে বলে, ভালোবাসবে বলে শুধু মোরে।’ এই ছবির চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং সবগুলো গান আমার লেখা। প্রথম গানটি লিখেছিলাম ফরাশগঞ্জে একটি বাড়ির চিলেকোঠায় বসে ১৯৬১ সালে। সেখানে একটি মেসে থাকতেন সত্য সাহা। গানটি একসঙ্গে বসেই করা। আমি এক লাইন লিখেছি, আর সত্য সেটা সুর করেছেন। এভাবেই তৈরি হয় গানটি। শুনে পরিচালক সুভাষ দত্ত বললেন, ‘আঞ্জুমান আরা বেগম গানটি ভালো গাইবেন"।(দ্রঃ আমি কখনো গান লিখতে চাইনি, দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫, ঢাকা।)
তাঁর রচিত অন্যান্য জনপ্রিয় গানের সাথে প্রায় সকলেই বহুল পরিচিত। যেমনঃ ‘নদী বাঁকা জানি, চাঁদ বাঁকা জানি, তাহার চেয়ে আরও বাঁকা তোমার ছলনা’, ‘এই যে আকাশ, এই যে বাতাস’, ‘যার ছায়া পড়েছে মনেরও আয়নাতে, সে কি তুমি নও ওগো তুমি নও’, ‘অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন কেটে যায়, মিছে তারে শিকল দিলাম রাঙা দুটি পায়’, ‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘কারে বলে ভালোবাসা কারে বলে প্রেম, মিলনে বিরহে আমি জানলেম’-‘চাঁদের সঙ্গে আমি দেব না তোমার তুলনা’, ‘তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া, রাস্তা দিয়া হাইটা চলে রাস্তা হারাইয়া’, ‘এমন মজা হয় না, গায়ে সোনার গয়না, বুবুমণির বিয়ে হবে বাজবে কত বাজনা, ইত্যাদি! শুধু গীতিকার হিসেবেই হক ভাই অপ্রতিদ্বন্দ্বি। অথচ আমরা অনেকেই তাঁর এই দিকটা ততটা জানি না।
*
আজ তিনি অসুস্থ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে আছেন যুক্তরাজ্যে, লন্ডনের এক হাসপাতালে। আমাদের আরেক জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে হুমায়ুন আহমেদকে দেখতে যান। এবারও শেখ হাসিনা লন্ডনে হক ভাইকে দেখতে গেলেন। লেখকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এই উদারতা আর আন্তরিকতার তুলনা নেই। তিনি হক ভাইয়ের আরোগ্য কামনা করেছেন। তাঁর ভাষায় আমারও একই কাম্য- দ্রুত ফিরে আসুন। ঢাকায় বইমেলায় আমাদের দেখা হবে। আপনার জাদুকরী হাতে লেখা হবে কোনো এক অসাধারণ গ্রন্থ।

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি